হার্বার্ট মারকুস মার্কসবাদবিরোধী আবর্জনা সৃষ্টিকারী জার্মান-মার্কিন দার্শনিক

হার্বার্ট মারকুস (১৮৯৮-১৯৭৯) জার্মান-মার্কিন দার্শনিক এবং সমাজতাত্ত্বিক ফ্রাঙ্কফোর্ট স্কুলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। তিনি বিশের দশক থেকে সত্তরের দশক অবধি বিকশিত সমাজ-বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন মার্ক্সবাদের (critical marxism) ধারণা প্রবর্তন করেন। ষাটের দশকে মারকুস ‘নতুন বাম চিন্তা’র (father of the new left) পিতা হিসেবে সুপরিচিত হয়ে ওঠেন।

১৯২৮ সন থেকে ১৯৩২ সনের মধ্যে হার্বার্ট মারকুস প্রপঞ্চতত্ত্ব, অস্তিত্ববাদ, মার্ক্সবাদ, হেগেলবাদ সম্পর্কে কয়েকটি গ্রন্থ লেখেন। ১৯১৪ সনে তিনি নাজিবাদের তাড়া খেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গমন করেন। জীবনের অবশিষ্ট সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অতিবাহিত করেন। ১৯৪১ সনে প্রকাশিত তার বিখ্যাত গ্রন্থ Reason and Revolution-এ মার্ক্স, হেগেল এবং আধুনিক সমাজতত্ত্বের উৎস সম্পর্কে মারকুস অনুসন্ধান করেন। তার গ্রন্থে হেগেল ও মার্ক্সের মতাদর্শের সাদৃশ্যও তুলে ধরা হয়। তিনি ১৯৪১-৫০ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাজ করেন, তার উদ্দেশ্য ছিল ফ্যাসিবাদকে প্রতিবাদ জানানো এবং এর বিরুদ্ধে অব্যাহত সংগ্রাম বজায় রাখা।

একটি ভিডিও দেখুন

১৯৫৫ সনে তিনি Eros and Civilization গ্রন্থ প্রকাশ করেন। এতে তিনি মার্ক্স ও ফ্রয়েডের চিন্তাদর্শ মিলিত করে পীড়নহীন সমাজের রূপরেখা বিশ্লেষণ করেন। মারকুস সোভিয়েত সমাজকে সমালোচনা করেন (Soviet Marxism, 1958) এবং প্রাগ্রসর পুঁজিবাদ ও কম্যুনিস্ট সমাজকেও সমালোচনা করেন (One-Dimensional Man, ১৯৬৪)। তার শেষোক্ত গ্রন্থটিতে পুঁজিবাদী সমাজে বিপ্লবের অবসান এবং নতুন ধরনের সামাজিক নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়। তার এই ধারণাকে মার্ক্সবাদের গোড়া তাত্ত্বিক এবং অন্যান্য রাজনৈতিক চিন্তাবিদদের পক্ষ থেকে প্রবলভাবে আক্রমণ করা হয়। তবু সোভিয়েত সমাজ এবং পুঁজিবাদী সমাজ সম্পর্কে বীতশ্রদ্ধদের অনেকেই তার প্রদর্শিত পথকে সমর্থন করেন। যদিও তার চিন্তায় দুঃখবাদ যথেষ্ট। তার Repressive Tolerance (১৯৬৫), An Essay on Liberation (১৯৬৯) এবং Counter Revolution and Revolt (১৯৬৯) গ্রন্থে তিনি বুর্জোয়া সমাজকে সমালোচনা করেন এবং নতুন বাম রাজনৈতিক চিন্তার বিকাশ ঘটান।

অবশ্য মারকুস সৌন্দর্যজিজ্ঞাসা সম্পর্কেও লেখেন (The Aesthetic Dimension, ১৯৭৯), তিনি ‘উচ্চ সংস্কৃতির’ (‘high culture’) সৌন্দর্যতাত্ত্বিক আঙ্গিকের মুক্ত সারবত্তাকে বিশ্লেষণ করেন। মারকুস সমাজের আমূল পরিবর্তনকে বিরোধিতা করেন, সমালোচনা করেন সাম্প্রতিক বুর্জোয়া সমাজকে। তার চিন্তার জটিল বহুমুখিনতার এবং মূল্যের বিচারে তাকে তুলনা করা যায় আর্নেস্ট ব্লক, গিওর্গ লুকাস, থিয়োডর এডোরনো এবং ওয়াল্টার বেঞ্জামিনের সঙ্গে।

আরো পড়ুন

তথ্যসূত্র:

১. আফজালুল বাসার; বিশ শতকের সাহিত্যতত্ত্ব; বাংলা একাডেমী, ঢাকা; ফেব্রুয়ারি, ১৯৯১; পৃষ্ঠা ৩১৪-৩১৫।

Leave a Comment

error: Content is protected !!