অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক পরমত সহিষ্ণু গণতন্ত্রমনা সমাজচিন্তক

সৈয়দা নাজনীন আখতার,
লেখক ও গবেষক

অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক স্যার নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক, অনুসন্ধিৎসু গবেষক, বিশুদ্ধ সমাজ চিন্তক এবং শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ। তাঁর চিন্তা ভাবনা নির্মল। তিনি পরমত সহিষ্ণু, গণতন্ত্রমনা, উদার হৃদয়ের অধিকারী। শত দুঃখ-কষ্ট ও যন্ত্রণায় তিনি অবিচল লোভ লালসা প্রশংসা কোন কিছুই তাঁকে স্পর্শ করতে পারে না। ব্যক্তিগত জীবনের সুখ দুঃখের চেয়ে, তিনি বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সুখ-দুঃখকে বড় করে দেখেন। শ্রেয়ের সাধক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক ভোগবাদী অথনৈতিক সমাজ ও অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার বিপক্ষে অবস্থান করেন।

তিনি নানা বিষয় নিয়ে ভাবেন, চিন্তা করেন, অনুসন্ধান করেন, বিশ্লেষণ করেন, পড়েন, লেখেন ও বলেন। এর মূলে প্রোথিত মানুষ ও তার উন্নতি। তাঁর লেখায় নানা বিষয়ের বিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। তিনি মানুষের উৎপত্তি ও বিস্তার, ভারতবর্ষের মানুষ, ভারতবর্ষে বহিরাগতদের আগমন জীবনযাপন ধর্ম ও সংস্কৃতির পরিবর্তন পরিবর্ধন, মেলবন্ধন, নানা সময়ের প্রতিবাদ-প্রতিরোধ, বিক্ষোভ-বিদ্রোহ আন্দোলন, শ্রেণি দ্বন্দ্বের কারণ ও তার প্রতিকার, ভারতবর্ষের গণতান্ত্রিক রাজনীতির উদ্ভব- বিকাশ ,ব্রিটিশ উপনিবেশবাদ ও ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক অত্যাচার অনাচার, উপনিবেশবাদ বিরোধী আন্দোলন, বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিা, মুসলিম সাহিত্য সমাজের উদ্ভব বিকাশ ও প্রভাব, বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন, লাহোর প্রস্তাব ,ভারত বিভাগ, ঢাকা ও কলকাতায় হিন্দু মুসলিম দাঙ্গাসহ উপনিবেশকালীন বহুবিধ বিষয়ে লিখেছেন।

এছাড়া তিনি পাকিস্তানের নয়া উপনিবেশবাদ, একুশে ফেব্রুয়ারি আন্দোলন, চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, পাকিস্তানের সংবিধান প্রণয়ন, আইয়ুব খানের সামরিক শাসন ,শিক্ষা আন্দোলন, চৌষট্টির বাঙালি-বিহারি দাঙ্গা, ছয় দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের সাধারণ নির্বাচন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী রাজনৈতিক সামাজিক অবস্থা, গণহত্যা ও অন্যান্য হত্যাকাণ্ড, হত্যাকাণ্ড পরবর্তী রাজনৈতিক, সামাজিক সমস্যা শ্রেণিদ্বন্দ্ব, ধর্মের কুপমন্ডুকতা-আস্ফালন, রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার, ধর্মের অপব্যাখ্যা, সংস্কৃতিকে ধর্মের শৃংখলে আবদ্ধ করা সংক্রান্ত অনেক বিষয়ে বিশ্লেষণমূলক চিন্তা হাজির করেছেন। বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার নামে সাম্রাজ্যবাদের ছত্রছায়ায় সুশীল সমাজ ও এনজিওর আত্মপ্রকাশ।

গভীর অনুধ্যায়ী এই গবেষক মনে করেন, মানুষ প্রকৃতির বিস্ময়কর সৃষ্টি। অপার তার সম্ভাবনা।সৃষ্টির আদি লগ্ন থেকে মানুষ নিজেকে কর্ম ও বুদ্ধির দ্বারা পরিচালিত করেছে। অন্য সকল হিংস্র প্রাণীদের থেকে নিজেদেরকে আলাদা করতে সক্ষম হয়েছে। জীবন যাপনের জন্য বিরূপ প্রকৃতির সঙ্গে সংঘবদ্ধভাবে সংগ্রাম করেছে। স্বীয় চেষ্টায় শিরদাঁড়া সোজা করেছে। দীর্ঘকালের প্রচেষ্টায় ইশারা-ইঙ্গিত এর মাধ্যমে ধ্বনি শিখেছে গড়ে তুলেছে ভাষা ও সংস্কৃতি। উন্নত জীবন যাপনের জন্য অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক সুস্থ সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দেন। তিনি নানা সময়, নানা লেখায়, আলোচনা আড্ডায় সংস্কৃতির ব্যাখ্যা দেন। তিনি মনে করেন, সংস্কৃতি কেবল কাব্য-নাটক বা সাহিত্য নয় ,সংস্কৃতি হলো মানুষের আর্থসামাজিক ,রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক অবস্থায় সমন্বিত রূপ।

হোমিনিড থেকে হোমো স্যাপিয়েন্স অর্থাৎ আজকের আধুনিক মানুষ এরা নিজের বুদ্ধি-বিবেচনার দাঁড়া উন্নতি লাভ করেছে। এই চিন্তাশীল প্রাণী সৃষ্টির ঊষালগ্নে কোন বৃত্তাবদ্ধ চিন্তার অধিকারী ছিল না। লক্ষ লক্ষ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরে, এরা নানান মত ও পথের সন্ধান পায়। শুরু হয় বিভাজন, কলহ-বিবাদ, হানাহানি, রক্তপাত ও রাজ্য দখল। এরূপ অশান্ত পরিস্থিতিতে জন্ম নেয় ধর্ম। ধর্ম সৃষ্টির লক্ষ্য ছিল অশান্ত উশৃংখল উদ্ভ্রান্ত মানুষদের শান্ত ও সংযমী করে গড়ে তোলা। এক্ষেত্রেও তৈরি হল প্রতিবন্ধকতা । সমস্যা প্রকট রূপ ধারণ করল । একদল মানুষ আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে নিয়তি ও দৈবের সঙ্গে সমঝোতা করল এবং সাধারণ মানুষের উজ্জ্বল দৃষ্টিকে অন্ধ করে দিল। অন্য দল মুক্তবুদ্ধির চর্চা, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও তত্ত্ব দর্শনের পথে অগ্রসর হল। আরেক দল মানুষ সংশয়বাদী হয়ে উঠলো।

অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক মনে করেন ধর্ম কতগুলো বিধিব্যবস্থা। মানুষের উন্নত জীবন যাপনের জন্য ধর্মীয় জ্ঞান বা শিক্ষা একমাত্র পন্হা নয়। “কালের যাত্রার ধ্বনি” গ্রন্থে তিনি বলেন, ‘ধরমের বাইরে আদর্শের মধ্যেও মানুষ ভালো জীবনের নির্দেশ পায়। আদর্শ মানুষের সৃষ্ট, আদর্শে অলৌকিক কিছু নেই। তবে আদর্শ কল্পিত ,বাস্তব নয়। মানুষ আদর্শকে বাস্তবায়িত করতে চায়। ব্যক্তি ও সমাজের জন্য সবচেয়ে ভালো, সবচেয়ে সুন্দর, সবচেয়ে কল্যাণকর, সকলের- জন্য কল্যাণকর ,কল্পিত এক ঊর্ধ্বতন বাস্তব হল আদর্শ। যেমন _গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র। মানুষ আদর্শের বাস্তবায়ন চায়। আদর্শের বাস্তবায়ন দ্বারা মানুষ একদিন পরম কল্যাণ ,পরম সুন্দর, পরম ন্যায় ও পরম সমৃদ্ধিতে পৌঁছাবে বলে আশা করে। মানুষের স্বভাব জটিল। সকলের স্বভাব এক রকম নয়। এজন্য আদর্শ নিয়ে ও দেখা যায় অনেক সমস্যা। এত সব জটিলতা নিয়েও মানুষ অতি মন্থর গতিতে এগিয়ে চলছে উন্নতির দিকে।’

ধর্ম ও আদর্শ পৃথিবীর অন্য সবকিছুর মতোই পরিবর্তনশীল। কিছু মানুষ শোষণ-শাসন, অর্থ,বিত্ত -বৈভবের বিস্তারে ধর্মকে অবিনশ্বর করে তোলে। বিচক্ষণ তাত্ত্বিক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন,”ধর্ম ও আদর্শের ইতিহাস লক্ষ করলে দেখা যায়, কোনো ধর্মই,কোনো আদর্শই চিরস্থায়ী নয়। ইতিহাসে এমন দৃষ্টান্তের অভাব নেই যে, যে-আদরশ,যে-ধরম এককালে মানুষের জীবনের চাহিদা পুরনে বিরাটভাবে সফল হয়েছে, কালান্তরে সেই আদর্শই, সেই ধর্মই মানুষের চাহিদা মেটাতে দারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। সাদ্দাদ, নমরুদ, ফেরাউনের রাজ্যে যে ধর্ম বা জীবনাদর্শ মানুষের চাহিদা মেটাতে নিদারুণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছিল, তাদের অব্যবহিত পূর্বে সেই ধর্ম বা জীবনাদর্শই দীর্ঘকাল ধরে সমাজ ও ব্যক্তিজীবনের বৈষয়িক ও আত্মিক প্রয়োজন মিটিয়ে আসছিল। অপরদিকে মুসা, দাউদ, ইব্রাহিম ,মুহম্মদ প্রমুখ মহান ধর্মপ্রবরতকেরা নিজ নিজ কালের প্রচলিত ধর্ম বা জীবনাদর্শকে উৎখাত করে যে নতুনভাবে ধর্ম বা জীবনাদর্শ প্রতিষ্ঠা করে বিভিন্ন স্থান-কালে নবযুগের সূচনা করেছিলেন , তাঁদের পরবর্তী যুগের বিভিন্ন মতবাদের প্রবক্তাদের হাতে সেই ধর্ম বা জীবনাদর্শগুলোও অপসৃত হয়েছিল।’

করোনা অতিমারির মতো রাজনীতিও আজ অতিমারির শিকার। ভারতবর্ষে বহু ধর্ম -বর্ণ , গোত্র ও ভাষার মানুষের বাস। কিন্তু এখানকার রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িক শক্তির জয়জয়কার। মধ্যযুগে রাজনীতি ছিল রাজতান্ত্রিক, সাহিত্য-সংস্কৃতি ছিল ধর্ম ও রাজতন্ত্র আচ্ছাদিত। ব্রিটিশ শাসনামলে ইউরোপীয় রেনেসাঁসের অভিঘাতে মানুষের বোধ- বুদ্ধি ধর্মের গন্ডি থেকে বেরিয়ে আসে। উদ্ভব ঘটে শিক্ষিত বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর।  সাহিত্যে নব যুগের উন্থান ঘটে।  সূচিত হয় গণতান্ত্রিক রাজনীতির পথ। ১৮৮৫ সালে কংগ্রেস গঠিত হয় এবং ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ আত্মপ্রকাশ করে। কিন্তু ভারত বিভাগ হয় ধর্মের ভিত্তিতে। এই কলঙ্কজনক বিভাজন প্রসঙ্গে ,অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ‘জিন্নাহ ইসলামপন্থী ছিলেন না, তিনি ছিলেন সারা ভারতের মুসলমানদের জাগতিক স্বার্থের পতাকাবাহী-মুসলিম সাম্প্রদায়িকতাবাদী। তিনি ভারতের মুসলমানদের জন্য আলাদা রাষ্ট্রের দাবি তুলে তাতে সফল হন।

জিন্নাহ ও নেহেরুর মধ্যে ছিল ক্ষমতা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা। প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিণতিতে দেশ ভাগ করে নেহেরু স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন ,আর জিন্নাহ ইসলামপন্থী স্বাধীন পাকিস্তানের প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে গভর্নর জেনারেল হন। এর মধ্যে ধর্মের ব্যাপার ছিল না ছিল সাম্প্রদায়িক স্বার্থের ব্যাপার। দুজনের একজনও ধার্মিক ছিলেন না। ধর্মের নাম এসেছে সাম্প্রদায়িক স্বার্থে। ভারত উপমহাদেশের ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতা ছিল আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ইংরেজ শাসকদের কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের কাছে নেহেরু ও জিন্নাহর কাছে শাসন ক্ষমতা হস্তান্তর।’

বাংলাদেশ আজ চলছে অসাম্প্রদায়িক চেতনার নেপথ্যে সাম্প্রদায়িক, রাজতান্ত্রিক – রাজনীতির চর্চা। কিছুসংখ্যক মানুষ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে রাজনীতিকে নিষ্ক্রিয় করবার প্রয়াসে নানা বিধ সামাজিক কর্মকান্ডে তরুণ শ্রেণীকে উদ্বুদ্ধ করছে। যার ফলে তুখোড় ছাত্রনেতা বা রাজনৈতিক নেতৃত্ব গড়ে উঠছে না। সংসদে বিরোধী দল নেই, তাই কোন জবাবদিহিতাও নেই। সরকার নিজের ইচ্ছাধীন কাজকর্ম করে চলেছে।

জ্ঞান তাপস ও ভাষা চিন্তক অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক জাতির মোহাচ্ছন্নতা দূর করতে কিছু শব্দের সুতীক্ষ্ণ ব্যাখ্যা দিয়েছেন নানা সময়ে। যেমন: রাষ্ট্র ও সরকার,ক্ষয় ও অবক্ষয়, উন্নতি ও উন্নয়ন। তিনি তাঁর “রাজনীতিতে ধর্ম মতাদর্শ ও সংস্কৃতি” গ্রন্থে রাষ্ট্র ও সরকার সম্পর্কে বলেছেন রাষ্ট্র ও সরকার অবশ্যই এক নয়। রাষ্ট্র গঠিত হয় ভৌগোলিকভাবে সন্নিহিত সুনির্দিষ্ট ভূভাগ, সেই ভূভাগের জনগণ, সেই জনগণের সরকার, এবং আন্ত রাষ্ট্রিক সম্পর্কের বেলায় সেই জনগণের নিজেদের ও নিজেদের- ভূভাগের ব্যাপারে সার্বভৌমত্ব নিয়ে জনগণকে হতে হয় রাষ্ট্র গঠনের অভিলাষী ও ও অন্য সরকার হলো রাষ্ট্রের গঠনে অভিলাষী ও ঐক্যবোধ সম্পন্ন। সরকার হলো রাষ্ট্রের গঠনকর উপাদান সমূহের মাত্র একটি। কেবল সরকারই রাষ্ট্র নয়। সরকারকেই মনে করা হলে এবং রাষ্ট্রের অন্য উপাদানগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া না হলে রাষ্ট্রীয় সকল ব্যাপারে বিভ্রান্তি ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। কিন্তু আজকের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রাস্ট্র একটি অকার্যকর যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। আমলাতন্ত্র রাষ্ট্রব্যবস্থাকে রাজনীতিকে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে অজগর সাপের মতো গ্রাস করেছে।

অধ্যাপক আবুল কাসেম জলুল হকের একটি বক্তৃতা শুনুন ইউটিঊব থেকে

২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ তারিখে আহমদ শরীফ স্মারক পুরস্কার ২০১৫ প্রদান অনুষ্ঠানে

অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক তাঁর “অবক্ষয় ও উত্তরণ” গ্রন্থে ‘ক্ষয় ‘ও ‘অবক্ষয়’ শব্দের চমৎকার ব্যাখ দিয়েছেন প্রকৃতির নিয়মে যা বিলীন হয়ে যায় বা নিঃশেষ হয়ে যায় তাহলো ক্ষয় আর জোর জবরদস্তি করে যাকে নিঃশেষ করে দেয়া হয় তার নাম অক্ষয় তিনি তাঁর “বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন ও উত্তরকাল” গ্রন্থে উন্নতি ও উন্নয়ন সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিয়েছেন‌ ‘উন্নতি’ মানে উপরে ওঠা, আর ‘উন্নয়ন’ হলো উপরে তোলা। উন্নতি নিজের শক্তিতে, নিজের বুদ্ধিতে, নিজেকে করতে হয়; তাতে অন্যের সহায়তা, যতটা সম্ভব ,নিজের স্বাধীনতা ও কর্তৃত্ব বজায় রেখে নিজেকে নিতে হয়। আরেকদল উন্নয়ন পরনির্ভর।

বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক অর্থতহবিল, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি এবং ধনী রাষ্ট্রসমূহের অর্থলগ্নিকারী বিভিন্ন সংস্থার সুদের ব্যবসা বাণিজ্যনীতি কূটনীতি ও গোয়েন্দা নীতির সঙ্গে গরিব রাষ্ট্রসমূহের উন্নয়ন সম্পূর্ণ বাংলাদেশ সরকার বৈদেশিক ঋণ ও সাহায্য এখন অনেক কম নেয় এখন সাহায্য নেয় এনজিওরা এবং সিভিল সোসাইটিগুলো যার প্রকৃত হিসেব সরকার কিংবা দেশবাসী কাউকেই জানানো হয় না এনজিও সিভিল সোসাইটিগুলো হলো বাংলাদেশের ভেতরে বিদেশি সরকার দ্বারা পরিচালিত সংস্থা আন্তর্জাতিক অর্থনীতি সংস্থাগুলো এখন দাতা সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগী নাম নিয়ে দুর্বল রাষ্ট্রসমূহের রাজনীতি প্রশাসন অর্থনীতি ও শিক্ষা-সংস্কৃতি ইত্যাদি সবকিছুর উপর নির্মিত নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ আজ এমন এক অবস্থায় পৌঁছেছে যে তার গুরুত্বপূর্ণ সবকিছু নির্ধারিত হচ্ছে বিদেশি অর্থ লগ্নিকারীদের ও কূটনীতিকদের আদেশ-নির্দেশ দ্বারা যে মূল নীতি অনুসারে তারা তারা কাজ করে তাহলে আধিপত্য ও নির্ভরশীলতা নীতি এই নীতির কবলে পড়ে দুর্বল রাষ্ট্রগুলো আরো দুর্বল হচ্ছে এবং স্বাধীনতা হারাচ্ছে স্বাধীনতা হারানো আর নিঃস্ব হওয়া একই কথা স্বাধীনতা হারালে নিজের দেহ মনের উপর নিজের অধিকার থাকে না।

চিন্তাবিদ আবুল কাসেম ফজলুল হক নানান বিষয়ের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করে জাতিকে সচেতন করতে সদা ততপর। তিনি মনে করেন অপব্যাখ্যা, অপপ্রচার ও  অপসংস্কৃতি এই জাতিকে বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা থেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে।  ধর্মীয় উন্মাদনা ও ভোগবিলাস জনসাধারনকে  অনৈতিক জীবন যাপনে উদ্বুদ্ধ করছে। তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন যে, শুভবুদ্ধির উদয় হোলে, সমাজ থেকে, রাষ্ট্র  থেকে তথা পৃথিবী থেকে হত্যা, নৈরাজ্য, শোষণ, সন্ত্রাস, অন্যায় ও  অবিচার দূর হবে। হত্যাকারীদের হাত হতে মুক্ত হবে পৃথিবী। তাঁর ৭৭তম জন্মবার্ষিকীতে আমি তাঁর  শতবর্ষ আয়ু কামনা করছি।

Leave a Comment

error: Content is protected !!