নোয়াম চমস্কি (১৯২৮) রূপান্তরমূলক ব্যাকরণের (transformational grammer) স্রষ্টা মার্কিন ভাষাবিদ। তার Syntactic Structures (১৯৫৭) গ্রন্থে এই নতুন ব্যাকরণের সূচনা ঘটে। ভাষাবিজ্ঞানের ইতিহাসে বিশেষত তাত্ত্বিক ভাষাবিজ্ঞানের ইতিহাসে এ এক বৈপ্লবিক ঘটনা। চমস্কি বর্ণনামূলক ভাষাবিজ্ঞানের লক্ষ্য স্থির করেন সুস্পষ্টভাবে। তার মতে ভৌত বিজ্ঞানের তত্ত্ব প্রমাণের জন্য যেমন উপায় এবং পরীক্ষা প্রয়োজন ভাষিক তত্ত্বও তদ্রূপ প্রামাণ্য হওয়া বাঞ্ছনীয়। ১৯৬০ এর দিকে আমেরিকার ভিয়েতনাম নীতির বিরোধিতা করার ফলে চমস্কি সারা দুনিয়ায় পরিচিত হয়ে ওঠেন।
প্রাথমিক জীবন ও কর্মজীবন
চমস্কি এক প্রখ্যাত হিব্রু পণ্ডিতের ঔরসে ১৯২৮ সনের ৭ ডিসেম্বর ফিলাডেলফিয়াতে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষাবিজ্ঞান এবং দর্শন পাঠ করেন। এ সময়ে তিনি ভাষাবিদ জেলিগ হ্যারিস দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হন। ১৯৫৫ সনে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করলেও তার প্রধান গবেষণা কর্মগুলো হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই সম্পন্ন হয়েছিল। তিনি দীর্ঘকাল আধুনিক ভাষা ও ভাষাবিজ্ঞানে শিক্ষকতা করেন।
নোয়াম চমস্কি-এর গ্রন্থসমূহ
তার প্রধান গ্রন্থগুলো হচ্ছে Aspects of the Theory of Syntax (১৯৬৫), Cartesian Linguistics (১৯৬৬), The Sound Pattern of English (১৯৬৮)। এ ছাড়া তিনি মরিস হালের সঙ্গে মিলিতভাবে রচনা করেন Language and Mind (১৯৬৮), Reflections on Language (১৯৭৬) এবং Rules and Representations.
একটি ভিডিও দেখুন
সংগঠন বিষয়ক বক্তব্য
তার মতে বাক্যের দুটি সংগঠন থাকে: আপাত সংগঠনে থাকে শ্রবিত বা কথিত শব্দাবলি এবং ‘গভীর সংগঠনে’ থাকে তাৎপর্য। উভয় সংগঠনই বাক্য দ্যোতিত করে। অবশ্য গভীর সংগঠনের তাৎপর্য অনেক সময় প্রায় বিমূর্ত হয়ে থাকে এবং আপাত সংগঠনে ঐ তাৎপর্য প্রতিভাত হয় না। চমস্কির মতে কোনো ব্যক্তি ‘রূপান্তরমূলক বিধি’ নামক ক্রম-প্রক্রিয়া দ্বারা তার স্বকীয় স্তরের সংবাদকে অন্যের নিকট প্রতিভাত করেন। এই প্রক্রিয়া অসংজ্ঞানেই ঘটে যায়। বক্তা কথা বলার সময় কিংবা শ্রোতা শ্রবণকালে তার দ্বারা কৃত রূপান্তর প্রক্রিয়া সম্পর্কে আদৌ সচেতন থাকেন না। অথচ এক বিমূর্ত সূত্ররাশি তার মধ্যে যেন ভাষার রূপান্তর সাধন করে। চমস্কির মতে মানস সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্তঃস্থিত রূপান্তরিত ঐ সংগঠনসমূহ আবিষ্কার এবং বর্ণনা করাই ভাষাবিজ্ঞানের লক্ষ্য।
আরো পড়ুন
- নোয়াম চমস্কি সাম্রাজ্যবাদবিরোধী মার্কিন দার্শনিক
- মার্শাল ম্যাকলুহান ছিলেন কানাডীয় প্রতিক্রিয়াশীল দার্শনিক
- হার্বার্ট মারকুস মার্কসবাদবিরোধী আবর্জনা সৃষ্টিকারী জার্মান-মার্কিন দার্শনিক
- জ্যাক দেরিদা ছিলেন প্রতিক্রিয়াশীল ফরাসি দার্শনিক
- অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক পরমত সহিষ্ণু গণতন্ত্রমনা সমাজচিন্তক
- আবুল কাসেম ফজলুল হক বাংলাদেশের দার্শনিক ও চিন্তাবিদ এক প্রজ্ঞার প্রতিমূর্তি
- জোসেফ স্তালিন সোভিয়েত রাষ্ট্রনায়ক এবং মানবেতিহাসের মহত্তম নেতা
- মাও সেতুং ছিলেন চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এবং সাম্যবাদী বিপ্লবী
- আল্লামা মহম্মদ ইকবাল ছিলেন একজন মুসলিম লেখক, দার্শনিক ও রাজনীতিবিদ
- লেনিন ছিলেন বিশ শতকের ইউরোপের মহত্তম মানব এবং মার্কসবাদের উত্তরসূরি
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন বাংলা ভাষার লেখক, কবি দার্শনিক ও চিন্তাবিদ
- মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ছিলেন ভারতের মুৎসুদ্দি বুর্জোয়া শ্রেণির নেতা
- মানবেন্দ্রনাথ রায় ছিলেন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা, বিপ্লবী ও তাত্ত্বিক
- কাউন্ট লেভ নিকোলায়েভিচ তলস্তয় ছিলেন রাশিয়ার সবচেয়ে প্রতিভাধর লেখক
তথ্যসূত্র:
১. আফজালুল বাসার; বিশ শতকের সাহিত্যতত্ত্ব; বাংলা একাডেমী, ঢাকা; ফেব্রুয়ারি, ১৯৯১; পৃষ্ঠা ৩০৬-৩০৭।
২. দোলন প্রভা, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, “নোয়াম চমস্কি সাম্রাজ্যবাদবিরোধী মার্কিন দার্শনিক”, রোদ্দুরে ডট কম, ঢাকা, ইউআরএলঃ https://www.roddure.com/biography/noam-chomsky/
দোলন প্রভা বাংলাদেশের একজন কবি, লেখক, প্রাবন্ধিক, সম্পাদক ও উইকিপিডিয়ান। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। তার জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯ তারিখে বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার রেলওয়ে নিউ কলোনিতে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বাংলাদেশের আনন্দমোহন কলেজ থেকে এমএ সম্পন্ন করেছেন। তিনি ফুলকিবাজ এবং রোদ্দুরে ডটকমের সম্পাদক।