The Gutenberg Galaxy(১৯৬৪)-খ্যাত মার্শাল ম্যাকলুহান (১৯১০-১৯৮০) গণযোগাযোগের গুরুত্ব ও ভূমিকা ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে অন্যতম বিখ্যাত চিন্তাবিদ হিসেবে সুপরিচিত।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং বিশ্ববিদ্যালয় বহির্ভূত অঙ্গনেও বিশেষ পরিচিত। লেখা, লেখা ছাপানো, সেখান থেকে ইলেকট্রনিক মাধ্যম অবধি বিভিন্ন যোগাযোগের মাধ্যম এবং প্রযুক্তি সমাজে-সংস্কৃতিতে কি প্রভাব সৃষ্টি করেছে এ বিষয়ে তার চিন্তা সুবিদিত; একজন। সাহিত্যের শিক্ষক হিসেবে তার যোগাযোগতত্ত্ব আরো বেশি মর্যাদা পেয়ে যায়। তিনি টেলিভিশন-যোগাযগে এবং উত্তর আমেরিকার বিশেষত কানাডার যোগাযোগে এবং প্রযুক্তির ঐতিহ্য সম্পর্কেও গবেষণা করেন।
মার্শাল ম্যাকলুহান তার সহকর্মী টরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক ইতিহাস বিষয়ের অধ্যাপক হ্যারলড জে. ইন্নিসকৃত প্রাচীন ও মধ্যযুগের সমাজ-সংস্কৃতি-অর্থনীতির বিবর্তনে যোগাযোগের মাধ্যম পরিবর্তনের এ সম্পর্কে গবেষণা কর্ম দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হন। ইন্নিসের বক্তব্য ছিল এই, প্রতিটি মাধ্যমের স্বকীয় প্রয়োগ, প্রবণতা এবং প্রভাব রয়েছে। এই প্রবণতা সংবাদ প্রেরণের স্বার্থেও যেমন তেমনি অন্যান্য বিষয়কেন্দ্রিকও হতে পারে, এমন কি এইসব প্রবণতা বিশেষ সমাজকেও আনুকূল্য প্রদান করে। ইন্নিসের এই ধারণায় উজ্জীবিত হয়ে ম্যাকলুহান কাছাকাছি আদর্শে যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণবাদ (communication determinism) সৃষ্টি করেন। এতে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয় টেলিভিশনের চিত্রিক মাধ্যমের এবং মুদ্রণের মাধ্যমের স্বাতন্ত্র্যকে। এখানে চিত্রিক মাধ্যম বা মুদ্রণ মাধ্যম দর্শকের অনুভূতিশীলতা এবং কম্পনাধর্মিতার সঙ্গে সম্পর্কিত। এই মাধ্যমের যৌক্তিকতা ঐকিক অনুক্রমিক (linear, sequential logic) এবং এদের প্রবণতা হচ্ছে যুক্তিবাদের দিকে, মনুষ্যত্বের দিকে এবং ব্যক্তিবাদ ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্রের দিকে।
একটি ভিডিও দেখুন
ম্যাকলুহানের বক্তব্য তার এই প্রবচনেই স্পষ্ট হয়ে যায় ‘মাধ্যমই সংবাদ’। অবশ্য তার মতামত নিয়ে বিতর্কও রয়েছে। কিন্তু তার সজীব কল্পনা, আকর্ষণীয় এবং সারগর্ভ বিশ্লেষণ, প্রাতিষ্ঠানিক গণ্ডীকে অতিক্রম করতে পারা, তার ব্যক্তিত্বের সৌন্দর্য এবং অপ্রতিদ্বন্দ্বী অধ্যাপনার প্রভাবকে কিছুতেই অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু তিনি প্রচলিত বা অন্য কোনো পদ্ধতিতত্ত্ব মাফিক লেখেন নি বলে তার রচনা মূল্যায়নে অনেক অসুবিধা। ইলেকট্রনিক যোগাযোগের এই যুগে এতদ্বিষয়ক তার চিন্তা ও তত্ত্বকে প্রাসঙ্গিক এবং মূল্যবহ না ভেবে উপায় নেই। ম্যাকলুহানের মতে, প্রকাশের বা প্রচারের ধরনটি এর মাধ্যমে বাহিত সংবাদের চেয়ে গুরুত্ববহ হয়ে ওঠে।
আরো পড়ুন
- নোয়াম চমস্কি সাম্রাজ্যবাদবিরোধী মার্কিন দার্শনিক
- মার্শাল ম্যাকলুহান ছিলেন কানাডীয় প্রতিক্রিয়াশীল দার্শনিক
- হার্বার্ট মারকুস মার্কসবাদবিরোধী আবর্জনা সৃষ্টিকারী জার্মান-মার্কিন দার্শনিক
- জ্যাক দেরিদা ছিলেন প্রতিক্রিয়াশীল ফরাসি দার্শনিক
- অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক পরমত সহিষ্ণু গণতন্ত্রমনা সমাজচিন্তক
- আবুল কাসেম ফজলুল হক বাংলাদেশের দার্শনিক ও চিন্তাবিদ এক প্রজ্ঞার প্রতিমূর্তি
- জোসেফ স্তালিন সোভিয়েত রাষ্ট্রনায়ক এবং মানবেতিহাসের মহত্তম নেতা
- মাও সেতুং ছিলেন চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এবং সাম্যবাদী বিপ্লবী
- আল্লামা মহম্মদ ইকবাল ছিলেন একজন মুসলিম লেখক, দার্শনিক ও রাজনীতিবিদ
- লেনিন ছিলেন বিশ শতকের ইউরোপের মহত্তম মানব এবং মার্কসবাদের উত্তরসূরি
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন বাংলা ভাষার লেখক, কবি দার্শনিক ও চিন্তাবিদ
- মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ছিলেন ভারতের মুৎসুদ্দি বুর্জোয়া শ্রেণির নেতা
- মানবেন্দ্রনাথ রায় ছিলেন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা, বিপ্লবী ও তাত্ত্বিক
- কাউন্ট লেভ নিকোলায়েভিচ তলস্তয় ছিলেন রাশিয়ার সবচেয়ে প্রতিভাধর লেখক
তথ্যসূত্র:
১. আফজালুল বাসার; বিশ শতকের সাহিত্যতত্ত্ব; বাংলা একাডেমী, ঢাকা; ফেব্রুয়ারি, ১৯৯১; পৃষ্ঠা ৩১১-৩১২।
দোলন প্রভা বাংলাদেশের একজন কবি, লেখক, প্রাবন্ধিক, সম্পাদক ও উইকিপিডিয়ান। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। তার জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯ তারিখে বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার রেলওয়ে নিউ কলোনিতে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বাংলাদেশের আনন্দমোহন কলেজ থেকে এমএ সম্পন্ন করেছেন। তিনি ফুলকিবাজ এবং রোদ্দুরে ডটকমের সম্পাদক।