মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ছিলেন ভারতের মুৎসুদ্দি বুর্জোয়া শ্রেণির নেতা

গান্ধী বা মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী, প্রতিবিপ্লবীদের দেয়া নাম মহাত্মা গান্ধী (ইংরেজি: Mohandas Karamchand Gandhi; ২ অক্টোবর, ১৮৬৯ – ৩০ জানুয়ারি, ১৯৪৮) ছিলেন ভারতের মুৎসুদ্দি বুর্জোয়া শ্রেণি এবং সামন্ত প্রভুদের নেতা এবং ভারতের বিপ্লবী সশস্ত্র সাম্যবাদী আত্মনিয়ন্ত্রণকামী স্বাধীনতা আন্দোলনের ঘোরতর বিরোধী একজন গণশত্রু। তিনি ছিলেন গান্ধীবাদ নামক এক প্রতিক্রিয়াশীল মতবাদের স্রষ্টা এবং অছিবাদের অনুসারী এক সামন্তপ্রভু।

গান্ধীর জন্ম হয় ভারতের কাথিয়াবাড় প্রদেশের পোরবন্দর নামক স্থানে এক প্রাচীন বেনিয়া পরিবারে ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দের ২রা অক্টোবর। তার পিতার নাম কাবা গান্ধী এবং মাতা পুতলী বাঈ। মোহনদাসের পূর্বপুরুষগণ বংশানুক্রমে কাথিয়াবাড় প্রদেশের পোরবন্দর নামক স্থানের দেওয়ান ছিলেন। বাল্য ও শৈশবের শিক্ষা কাথিয়াবাড়ে সমাপ্ত করেন মোহনদাস। এরপর বিলাতে গিয়ে ব্যারিস্টারি অধ্যয়ন করেন। পরে দেশে ফিরে এসে বোম্বাই হাইকোর্টে আইন ব্যবসা আরম্ভ করেন।

১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাসকারী ভারতীয়দের একটি জটিল মামলার প্রয়োজনে তিনি নেটাল যাত্রা করেন। পরে সেখান থেকে ট্রান্সভাল যাত্রা করেন। ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে মোহনদাস মুষ্টিমেয় ভারতীয়দের নিয়ে নেটাল ইণ্ডিয়ান কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেন। এই সময় নেটাল সরকার এশিয়াটিক এক্সকুশন অ্যাক্ট অর্থাৎ এশিয়াবাসী বিতাড়ন নামক একটি আইন পাস করেন। মোহনদাস এই আইনের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে প্রবাসী ভারতীয়দের ধন্যবাদভাজন হন।

নেটালে ও ট্রান্সভালে ভারতীয়দের দুরবস্থার বিষয় সাধারণকে এবং সরকারকে জানাতে ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে মোহনদাস ভারতে আসেন। তার ফলে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণ বৈষম্যবাদী আধুনিক বর্বর শ্বেতাঙ্গরা তাঁর প্রতি অত্যন্ত রুষ্ট হয়।

দক্ষিণ আফ্রিকায় ওলন্দাজদের উপনিবেশ স্থাপিত হয়েছিল দীর্ঘকাল আগে। তাদের বংশধরদের একাংশ বুয়র নামে পরিচিত ছিল।এই বুয়রদের অধিকাংশেরই উপজীবিকা ছিল কৃষি! ট্রান্সভালে তাদের একটি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই অঞ্চলে ইংরাজদের ক্ষমতা ও প্রভাব যথেষ্ট ছিল। তারা একটি নিরঙ্কুশ ইংরাজ উপনিবেশ গড়ে তোলার চেষ্টায় সচেষ্ট ছিল।

১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দে ক্রীতদাস প্রথা বিলুপ্ত হওয়ায় বর্বর বুয়ররা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এরপর ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে জুলুদের সঙ্গে বর্বর ইংরেজদের বিরোধ বাঁধলে, বুয়রদের সঙ্গেও বিরোধ বাঁধে। পরিণতিতে ট্রান্সভালের বুয়রদের প্রজাতন্ত্রটি ইংরাজ উপনিবেশের অন্তর্ভুক্ত হয়। এর ফলে ১৮৮০-৮১ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয় প্রথম বুয়র যুদ্ধ। দ্বিতীয় ইংরেজ-বুয়র যুদ্ধ শুরু হয় ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে এবং শেষ হয় ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে। ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে যুদ্ধ শুরু হলে মোহনদাস সেখানকার ভারতীয়দের নিয়ে ইণ্ডিয়ান এমবুলেন্স কোর গঠন করেন।

১৯০১ খ্রিস্টাব্দে মোহনদাস ভারতে ফিরে এসে বোম্বাই হাইকোর্টে পুনরায় ব্যারিস্টারি শুরু করেন। কিছুকাল পরে মিস্টার চেম্বারলেন নেটাল পরিদর্শনে এলে সে সেখানে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরুদ্ধ হয়ে পুনরায় দক্ষিণ আফ্রিকায় চলে যায়। এরপরে মোহনদাস ট্রান্সভালের সুপ্রীম কোর্টের এটর্নির কাজে নিযুক্ত হন। ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি ট্রান্সভাল ব্রিটিশ ইণ্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে জোহান্সবার্গে ভারতীয় পল্লীতে প্লেগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। মোহনদাস রোগীদের শুশ্রুষার জন্য সেখানে একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন এবং নিজেই রোগাক্রান্ত রোগীদের পরিচর্যা করেন বলে মিথ্যা গল্প প্রচার করেন। কিছুকাল পরে মোহনদাস নেটালে ইণ্ডিয়ান ওপিনিয়ন নামে একটি সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে ট্রান্সভালে এশিয়াটিক ল এমেন্ডমেন্ট অর্ডিন্যান্স জারি হয়। গান্ধীজি এই অর্ডিন্যান্সের বিরুদ্ধে তীব্র বিরোধিতা করে জনমত গঠন করে আন্দোলন শুরু করেন। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে মোহনদাস ও তাঁর কতিপয় সহচরকে কারারুদ্ধ করা হয়।

দেশে ফিরে এসে তিনি আহমেদাবাদে একটি সত্যাগ্রহ আশ্রম স্থাপন করেন। এই সময়ই সমগ্র ভারতবর্ষ সম্পর্কে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা লাভের জন্য তিনি দেশের প্রধান প্রধান স্থানগুলি পরিদর্শন করেন। তার মিথ্যাচার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বর্বর ব্রিটিশ সরকার মোহনদাসকে কাইজার-ই-হিন্দ পদক দিয়ে সম্মানিত করে।

ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে নীলকর সাহেবদের অত্যাচারে ক্ষোভ বিক্ষোভ প্রকাশ পেতে থাকে। ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে বিহারের চম্পারন জেলায় সেখানকার কৃষক সম্প্রদায়ের সঙ্গে নীলকর সাহেবদের বিবাধ বাঁধে। মোহনদাস সেখানে গিয়ে বিবাদ মীমাংসার চেষ্টা করেন। ইতিমধ্যে কায়রায় দুর্ভিক্ষ উপস্থিত হলে গান্ধীজি সেখানে পৌঁছে দুর্গতদের সেবায় নিযুক্ত হন এবং দুর্ভিক্ষ নিবারণের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেন।

১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে সন্ত্রাসী মন্টেগু চেমসফোর্ড এদেশে আসেন। তখন মোহনদাসের ঐকান্তিক চেষ্টায় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে তাঁকে একখানি আবেদনপত্র প্রদান করা হয়। এভাবেই সে ব্রিটিশদের এক অনুগত চরে রূপান্তরিত হয়। এই সময় রাউলাট বিল নামক একটি আইন বিধিবদ্ধ করার প্রস্তাব হয়। এতে ভারতীয়দের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা নাশের আশঙ্কায় দেশজুড়ে তুমুল আন্দোলন উপস্থিত হয়। অন্যদিকে খেলাফৎ সমস্যাও জটিল হয়ে ওঠে। এই সব সমস্যা সমাধানের জন্য মোহনদাস বড়লাটকে একটি পত্র লেখেন। এই সময় মোহনদাসের নেতৃত্ব লাভ করে ভারতের জনগণের শত্রু সংগঠন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ব্রিটিশ বেনিয়া ও ভারতীয় মুৎসুদ্দিদের প্রানের সংগঠনে পরিণত হয়।

এই সময় পাঞ্জাব ও দিল্লীতে রাউলাট আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালিয়ে ব্রিটিশ সরকার অমানবিক হত্যাকান্ড চালায়। এই দুঃখজনক ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েও কোনো প্রতিকার হয় না। খেলাফৎ সমস্যা ও জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের জন্য গান্ধীজি সরকারের সঙ্গে সবরকম সহযোগিতা বর্জন করার আহ্বান জানান। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে তিনি তার সরকার প্রদত্ত কাইজার-ই-হিন্দ পদক ফিরিয়ে দেন।

১৯২০ খ্রিস্টাব্দে  নাগপুর অধিবেশনে মোহনদাস কংগ্রেসকে ব্রিটিশদের অনুগত করে এবং ঘোষণা করে, ন্যায়সঙ্গত ও শান্তিপূর্ণ পথে পূর্ণ স্বরাজ লাভই হলো কংগ্রেসের লক্ষ। কংগ্রেস তার দাবি আদায়ের জন্য অহিংসা ও অসহযোগের ভিত্তিতে আন্দোলন চালিয়ে যাবে। শ্রমিক এবং কৃষকগণ যাতে কোনোভাবেই ক্ষমতা দখল না করতে পারে, সেজন্য মোহনদাস ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখেন। জনগণ যাতে অনুশীলন ও যুগান্তর দলের দিকে না চলে যায় সেজন্য তিনি ইংরাজ শাসনের বিরুদ্ধে একটি মেকি ও প্রতারণামূলক ব্রিটিশবিরোধী ভান করেন।  মোহনদাস ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। ভারতের মুসলমান সম্প্রদায়কেও জাতীয় আন্দোলনের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য এই সময়ে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে খেলাফৎ আন্দোলনকে সমর্থন করা হয়।

১৯২২ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে রাজদ্রোহমূলক বিবেচিত হওয়ায় সেসনের বিচারে মোহনদাসের ছয় বৎসরের বিনাশ্রম কারাদন্ডহয়। দুই বৎসর কারবাসের পর সরকার তাকে মুক্তি দেয়। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে মোহনদাস দেশজুড়ে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করেন। ব্রিটিশ সরকার দমনমূলক নীতি গ্রহণ করে কঠোর হাতে এই আন্দোলন দমন করে। কয়েকজন জননেতাসহ মোহনদাসকেও কারারুদ্ধ করা হয়। ফলে সমগ্র ভারত জুড়ে ব্রিটিশবিরোধী অনুভূতি উত্তাল হয়ে ওঠে এবং আন্দোলন চলতে থাকে।

এরপর গোলটেবিল বৈঠক উপলক্ষ্যে মোহনদাস বিলাতে গিয়ে প্রধান প্রধান রাজনীতিকদিগকে এবং মন্ত্রিবর্গকে ভারতের দাবির কথা জানান। এরপর বিলেত থেকে দেশে ফিরে এসে মোহনদাস আবার কারারুদ্ধ হন। এই সময়ে তিনি হরিজন আন্দোলন ও পল্লী-উন্নয়নের কাজে নিজেকে সমর্পণ করেন।

১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে মোহনদাস পুনরায় দ্বিতীয়বার গোলটেবিল বৈঠকে যোগদানের জন্য ইংলন্ড যান। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে তার নেতৃত্বে কংগ্রেস দেশব্যাপী ভারত ছাড় আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলনে মোহনদাস সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে ব্রিটিশ ও মিত্রপক্ষ জয়লাভ করে। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে মীরাট অধিবেশনে কংগ্রেস আবার পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি জানায়।

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট গান্ধী-নেহরুর ষড়যন্ত্রে ভারত বিভক্তির মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার অবৈধ কংগ্রেসের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। সেই বছরেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য সাম্প্রাদায়িক মোহনদাস নোয়াখালি সফর করে, কিন্তু বিহারের দাঙ্গায় নিশ্চুপ থাকে। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ৩০ জানুয়ারী দিল্লিতে এক প্রার্থনা সভায় মোহনদাস আরেক সাম্প্রাদায়িক আততায়ীর হাতে নিহত হন।

উপসংহার

ব্রিটিশের অনুগত আপোষমুখী এই মোহনদাস গান্ধীর জীবন ও দর্শন ভারতের জনগণের মুক্তি সংগ্রামে এক বড় বাঁধা হিসেবে আজো বিরাজমান। ভারতের জনগণের এই শত্রুর চিন্তাধারা ভারতকে আজো সামন্তবাদ ও পুঁজিবাদের নিগড়ে বন্দি করে রেখেছে। সংক্ষেপে বলা যায়, গান্ধী হচ্ছে মানবেতিহাসের সর্বনিকৃষ্ট ভণ্ড, শয়তান, জোচ্চোর, মিথ্যুক, কপট ও লোভী এক সাক্ষাত বদমাশ। মানবেতিহাসের সমস্ত শয়তানিকে তার মতো একত্রে অভিনয় করে আর কেউ দ্বিতীয়বার দেখাতে পারেনি। ঐ হারামিটা একদিকে ব্রিটিশদের দালালি করছে, অন্যদিকে টাটা বিড়লাদের কাছ টাকা নিচ্ছে, কিন্তু টাকা নিজ হাতে নিচ্ছে না, নিজে খরচও করছে না, অনুসারীদের হাতে সেই টাকা যাচ্ছে, এবং যাতে সেই টাকা নয় ছয় হয় তার সুযোগও গান্ধী করে দিচ্ছে।

তথ্যসূত্র

১. যাহেদ করিম সম্পাদিত নির্বাচিত জীবনী ২য় খণ্ড, নিউ এজ পাবলিকেশন্স, ঢাকা; ২য় প্রকাশ আগস্ট ২০১০, পৃষ্ঠা ৮৫৮-৮৬১।

Leave a Comment

error: Content is protected !!