লন্ডন, ১৮০২ বা মিল্টনের প্রতি (ইংরেজি: London, 1802 অথবা To Milton) কবিতাটি ইংরেজ রোমান্টিক কবি উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ রচিত একটি সনেট কবিতা। ওয়ার্ডসওয়ার্থ এই কবিতায় ইংরেজ জনগণকে নিশ্চল এবং স্বার্থপর বলে কটাক্ষ করেছেন এবং সপ্তদশ শতকের কবি জন মিল্টনের প্রশংসা করেছেন।
কবিতাটিতে কবি উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ জন মিলটনকে রূপায়িত করার সাথে সাথে উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থের সময়কার ইংল্যান্ডের রূপায়ন করেছেন। তিনি তাঁর সময়কার ইংল্যান্ডের অবস্থা দেখে হতাশ হয়ে জন মিলটনের মতো মহৎ লোকের অভাব অনুভব করেছেন। যেখানে মিল্টন হলো আদর্শ, নৈতিক, রীতিসিদ্ধ, ধর্মপ্রাণ মানুষের প্রতীক। কবি আশা করেন যাতে মিল্টন ফিরে এসে ঘুমন্ত অনৈতিক জাতিকে জাগ্রত করে মুক্তির পথ দেখান।
ফরাসী বিপ্লব চলাকালে উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ এই বিপ্লবকে সমর্থন করেন। বিপ্লব চলাকালীন সময়ে ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ ফ্রান্সে গমন করেন। এখানে এসে তিনি এই বিপ্লবের প্রকৃত রূপটি দেখতে পান। তিনি দেখতে পান মানুষ ধর্মকর্ম ভুলে অনৈতিক হয়ে পড়েছে।
ফরাসি বিপ্লবীরা যে আদর্শ নিয়ে বিপ্লব শুরু করেছিল আসলে তা মূল আদর্শ ছিল না। তারা নিজেরাই নিজেদের মাঝে সংগ্রামে লিপ্ত ছিল। এসব দেখার পর উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থের মনে যাতনা শুরু হয়। তিনি বুঝতে পারেন যে, জাতি আজ ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছে। হৃদয়ে যন্ত্রণা নিয়ে তিনি ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দেই ফ্রান্স ছেড়ে ইংল্যান্ডে চলে আসেন।
ইংল্যান্ডের লন্ডন শহরে ফিরে এসে তিনি দেখতে পান যে, মানুষ সেখানেও হানাহানি, টাকা নিয়ে টানাটানি, অনৈতিক জীবন ধারা ও ধর্মীয় অবক্ষয়ে ডুবে গেছে। এই সীমাহীন যন্ত্রণায় ভুগে ও এমন পরিস্থিতি থেকে মুক্তির পথ হিসাবে মিল্টনের মতো আদর্শবান লোকের প্রত্যাবর্তন কামনা করে এবং ততকালীন লন্ডনের চিত্র রূপায়িত করে কবি “London – 1802” অথবা “To Milton” সনেটটি রচনা করেছেন। এখানে তিনি পথ হারা জাতির জন্য পথ খুঁজে বের করতে মিল্টনের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেছেন।
আসলে, এই কবিতাটি কবির হতাশার একটি বহিঃপ্রকাশ। এখান তাঁর হতাশার মাধ্যমে ফুটে উঠে লন্ডনের হ-য-ব-র-ল অবস্থা, মানুষের অনৈতিক দিক, দুর্নীতি, যন্ত্রণাপূর্ণ জীবনের প্রতিচ্ছবি। এমন অবস্থায় এই জাতির মুক্তির জন্য কবি তীব্রভাবে মিল্টনের মতো আদর্শবান লোকের অভাব বোধ করেন যিনি এসে জাতিকে মুক্তির পথ দেখাতে পারবেন।[১]
লন্ডন, ১৮০২ কবিতার ইংরেজি কথা
London, 1802.
By William Wordsworth
Milton! thou should’st be living at this hour:
England hath need of thee: she is a fen
Of stagnant waters: altar, sword, and pen,
Fireside, the heroic wealth of hall and bower,
Have forfeited their ancient English dower
Of inward happiness. We are selfish men;
Oh! raise us up, return to us again;
And give us manners, virtue, freedom, power.
Thy soul was like a Star, and dwelt apart:
Thou hadst a voice whose sound was like the sea:
Pure as the naked heavens, majestic, free,
So didst thou travel on life’s common way,
In cheerful godliness; and yet thy heart
The lowliest duties on herself did lay.
লন্ডন, ১৮০২ কবিতার বাংলা আলোচনা শুনুন ইউটিউব থেকে
তথ্যসূত্র
১. কল্যাণী ব্যানার্জী সম্পাদিত ও সৈয়দ আহমেদ রুবেল অনূদিত, নির্বাচিত ইংরেজি রোমান্টিক কবিতা, দি বুক সেন্টার, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ জুলাই ২০১৬, পৃষ্ঠা ২০৪-২০৫।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক ও গবেষক। তাঁর লেখা ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা এগারটি। ২০০৪ সালে কবিতা গ্রন্থ প্রকাশের মাধ্যমে তিনি পাঠকের সামনে আবির্ভূত হন। ‘সমাজতন্ত্র’ ও ‘মার্কসবাদ’ তাঁর দুটি পাঠকপ্রিয় প্রবন্ধ গ্রন্থ। সাহিত্য ও রাজনীতি বিষয়ে চিন্তাশীল গবেষণামূলক লেখা তাঁর আগ্রহের বিষয়।