ভাষার মৃত্যু বা ভাষার বিলুপ্তি (ইংরেজি: Language death) হচ্ছে ভাষাতাত্ত্বের আলোচনার বিষয় যাতে কোনো ভাষায় তার শেষ স্থানীয় কথকের মৃত্যু ঘটে। সংযোজিত অর্থে, ভাষার মৃত্যু বা ভাষার বিলুপ্তি হলো যখন ভাষাটি দ্বিতীয় ভাষীদের কাছেও আর জ্ঞাত নয়। অন্যান্য অনুরূপ যেসব শব্দ বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে সেগুলো হচ্ছে ভাষাহত্যা (ইংরেজি: linguicide), প্রাকৃতিক বা রাজনৈতিক কারণে কোনও ভাষার মৃত্যু, এবং খুব কমই ব্যবহার হয় ভাষাগ্রাস (ইংরেজি: glottophagy) যার অর্থ একটি বৃহত্তর ভাষার দ্বারা একটি ক্ষুদ্রতর ভাষার আত্তীকরণ বা প্রতিস্থাপন।[১]
ভাষাবিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই সমাজ বাঁধার বৃত্তি রয়েছে ভাষা সৃষ্টির মূলে। তাই বলা যেতে পারে, ব্যক্তি-মানুষের মন ও চিন্তা এবং সমাজবদ্ধ মানুষের ভাব-বিনিময়ের ইচ্ছা — এই দুয়ের জন্যই ভাষার সৃষ্টি। এজন্যই আমাদের মনন, সমাজ ও সংস্কৃতির প্রতিটি দিকে ভাষার ধারা-উপধারা বহমান। এই সমস্ত দিক থেকে প্রবাহিত ধারা একত্রিত হয়ে ভাষা-নদী প্রবাহিনী।
বিশ শতকের শূন্য দশক পর্যন্ত, মোট প্রায় ৭,০০০ স্থানীয় কথ্য ভাষা বিশ্বজুড়ে বিদ্যমান ছিল। এর বেশিরভাগগুলোই বিলুপ্তির ঝুঁকির মধ্যে থাকা ছোট ছোট ভাষা; ২০০৪ সালে প্রকাশিত একটি প্রাক্কলন অনুমান করেছিল যে বর্তমানের প্রায় ৯০% কথ্য ভাষা ২০৫০ সালের মধ্যে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
ভাষার মৃত্যু
মানুষের জীবনের প্রয়োজনে ভাষা-নদীর সৃষ্টি, আবার মানুষের সামাজিক প্রয়োজনেই ভাষা-নদী খাত পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়। এটাকেই ভাষাবিজ্ঞানে বলা হয় ভাষার বিবর্তন। এই বিবর্তন ঘটতে ঘটতে কখনো কখনো ভাষা-নদী মরুপথে হারিয়ে যায়। তাকেই বলা যেতে পারে ভাষার মৃত্যু। তবে ভাষার মৃত্যু’ অভিধাটি আরো বিশদ আলোচনা সাপেক্ষ।[২]
মানুষের মৃত্যু হলে তবুও মানব থেকে যায়; অতীতের থেকে উঠে আজকের মানুষের কাছে প্রথমত চেতনার পরিমাপ নিতে আসে। আবহমান মানব-ধারা অব্যাহত থাকে ঠিকই, তবে সমাজ-জীবনের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চেতনায় আসে নতুন সমাজ-নির্ভর শব্দাবলি । Lexico-Statistics অনুসারে দেখা যায়, একই ভাষায় যুগে যুগে বহু শব্দাবলির আগমন হয় এবং প্রায় সমসংখ্যক শব্দাবলির বিলুপ্তি ঘটে। প্রাচীন বাংলায় (খ্রিষ্টীয় নবম শতাব্দী থেকে দ্বাদশ শতাব্দী) এমন বহু শব্দাবলি ছিল যা আজ আর নেই।
আলোকচিত্রের ইতিহাস: অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী মাগটি কে ভাষার শেষ তিন কথক। আলোকচিত্রী Neddy.
তথ্যসূত্র
১. অনুপ সাদি, ১৫ আগস্ট ২০১৯, “ভাষার মৃত্যু বা ভাষার বিলুপ্তি প্রসঙ্গে”, রোদ্দুরে ডট কম, ঢাকা, ইউআরএল https://www.roddure.com/literature/language-death/
২. কেশব আড়ু, সুধীর চক্রবর্তী সম্পাদিত, বুদ্ধিজীবীর নোটবই, নবযুগ প্রকাশনী, বাংলাবাজার, ঢাকা, প্রথম সংস্করণ ফেব্রুয়ারি ২০১০, পৃষ্ঠা, ৪৯৪-৪৯৫।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক ও গবেষক। তাঁর লেখা ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা এগারটি। ২০০৪ সালে কবিতা গ্রন্থ প্রকাশের মাধ্যমে তিনি পাঠকের সামনে আবির্ভূত হন। ‘সমাজতন্ত্র’ ও ‘মার্কসবাদ’ তাঁর দুটি পাঠকপ্রিয় প্রবন্ধ গ্রন্থ। সাহিত্য ও রাজনীতি বিষয়ে চিন্তাশীল গবেষণামূলক লেখা তাঁর আগ্রহের বিষয়।