অনাথ নকরেক ছিলেন নেত্রকোণা জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা

অনাথ নকরেক ছিলেন নেত্রকোণা জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার ভরতপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা দেওনা মানখিন। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রাক্কালে তার  বয়স ছিল ২২ বছর। জ্বালানী কাঠ সংগ্রহ ও বিক্রয় করে তিনি তার  জীবিকা নির্বাহ করতেন।

স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে অনাথ নকরেক সপরিবারে মার্চের শেষের ধাম্বুক আশ্রয় শিবিরে অবস্থান গ্রহণ করেন। তিনি ২২শে আগষ্ট মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। যুদ্ধে যোগদানের পরপরই তিনি ভুরাতে এসএমজি, এলএমজি রাইফেল ইত্যাদি চালনা শিক্ষা লাভ করেন। ২১ দিন ট্রেনিং লাভের পর তাঁকে মুক্তিযুদ্ধের ১১নং সেক্টরে প্রেরণ করা হয়। উইং কমান্ডার (অবঃ) হামিদুল্লাহ খান ছিলেন সেক্টর কমাণ্ডার। এ সেক্টরের অধীনে ইলিয়াস কম্পানীতে তিনি যুদ্ধ করেন। কম্পানী কমাণ্ডারের নাম ইলিয়াস চৌধুরী। তার  অপারেশন এরিয়া ছিল বিজয়পুর, কলমাকান্দা, ধাবরাম, টাঙ্গাটি ও নেত্রকোণা। তিনি ৬টি অপারেশনে অংশগ্রহণ করেন। তন্মধ্যে ৩টি অপারেশনে জয়লাভ করেন। কলমাকান্দায় এক অপারেশনে তাঁরা পাক বাহিনীর লোকজন হত্যা করেন। 

স্বাধীনতার পর নকরেক অস্ত্র ত্যাগ করে আবার হাতে কুড়োল ধরেন জ্বালানী সংগ্রহ ও তা বিক্রয়ের জন্য। পাশাপাশি কৃষি কাজও তিনি মাঝে মধ্যে করে থাকেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট পেয়েছিলেন। শেখ মুজিবর রহমান (তৎকালীন রাষ্ট্রপতি) ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের এক সমাবেশ আহ্বান করেন। উক্ত সমাবেশে যোগদানের পথে ট্রেন ডাকাতির কবলে পড়ে তার  নিকট রক্ষিত মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেটটি হাত ছাড়া হয়।

আরো পড়ুন

আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের মূল্যায়ণ প্রসঙ্গে অনাথ নকরেকের বক্তব্য, “বিভিন্ন সময়ে সরকার আমাদের টিন, ঘর, লুঙ্গি, কাপড়ের আশ্বাস দিলেও শেষ পর্যন্ত বাস্তবে ওগুলোর কিছুই আমরা পাইনি। এখন আমরা হতাশ।” তাঁদের এ হতাশা দুর করার ব্যবস্থা সত্ত্বরই গ্রহণ করা প্রয়োজন।

তথ্যসূত্র

১. অনুপ সাদি, দোলন প্রভা, নেত্রকোণা জেলা চরিতকোষ, টাঙ্গন, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ, জুন ২০২৪, পৃষ্ঠা ৩২১।

Leave a Comment

error: Content is protected !!