সাহিত্য হচ্ছে মানুষের চিন্তাভাবনা ও অনুভূতির লিখিত অথবা মুদ্রিত বিষয়

ব্যাপক অর্থে সাহিত্য (ইংরেজি: Literature) হচ্ছে যে কোনো লিখিত অথবা মুদ্রিত বিষয়। বিশেষ অর্থে সাহিত্য হচ্ছে মানুষের চিন্তাভাবনা ও অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ। সাহিত্যকে মানব অভিজ্ঞতার নন্দনতাত্ত্বিক বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখা হয়। এই অর্থে উপন্যাস, ছোটোগল্প, মহাকাব্য, গীতিকবিতা এবং নাটক সাহিত্যের পর্যায়ে পড়ে।[১] এক কথায় বলা যায়, ইন্দ্রিয় দিয়ে ধারণকৃত পার্থিব বা মহাপার্থিব বা অপার্থিব চিন্তা চেতনা, অনুভূতি, সৌন্দর্য্য ও শিল্পের লিখিত রূপ বা লেখকের জীবনের পারিপার্শ্বিক ভাবনার লিখিত রূপ হচ্ছে সাহিত্য।

ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক ও লেখক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সাহিত্যকে বিশ্লেষণ করেছেন বহুবিধ দিকে নজর রেখে। তিনি মানব জীবনের দিকে তাকাতে গিয়ে দেখেছেন সাহিত্য নায়কপ্রধান। তবে বিশ্বসাহিত্যের মহান শিল্পী-লেখকগণ তাঁদের পুরুষ প্রাধান্যকে তুলে ধরলেও সাহিত্যে নারীরাও এসেছে নানাভাবে। তাঁর মতে:

সেটাই স্বাভাবিক। কেননা সাহিত্য পুরুষের সৃষ্টি, প্রধানত। তাছাড়া সত্য তো এটাও যে, ঐতিহাসিক যে-কালে সাহিত্য রচিত হয়েছে সে-কালে সমাজে আধিপত্য পুরুষেরই। … প্রাধান্য নায়কের, তবু নায়িকারা রয়েছে। … বিভিন্ন সময় ও সংস্কৃতি থেকে তারা এসেছে। সেদিক থেকে তাদের মধ্যে পার্থক্য স্বাভাবিক, এবং সেটা সামান্য নয়। এরা প্রত্যেকেই অনন্য, সেই সঙ্গে নিজ নিজ সংস্কৃতি ও সময়েরও তারা প্রতিনিধি বটে। … সাহিত্যের নায়িকারাও পুরুষেরই কল্পনা ও সৃষ্টি। জ্ঞাতে হোক অজ্ঞাতে হোক, পুরুষের দৃষ্টিকোণ থেকেই তাদেরকে দেখা হয়েছে। নরনারীর সম্পর্কের ব্যাপারটি একেবারেই প্রাথমিক। এই সম্পর্কের মধ্যে রয়েছে প্রেম, বিবাহ এবং বিবাহ-বহির্ভূত যোগাযোগ। এই সম্পর্কগুলো নানাভাবে এসেছে মহাকাব্য, নাটক ও উপন্যাসে।[২]

ব্যুৎপত্তিগত অর্থে সাহিত্য

সহিত শব্দ থেকে বাংলায় সাহিত্য শব্দটি গঠিত হয়েছে। প্রাচীন ব্যাকরণবিদ পাণিনি এরকম ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। তবে প্রশ্ন হচ্ছে কিসের সহিত কি মিলেছে। এই প্রসঙ্গে অনেকের মত হচ্ছে শব্দের সাথে অর্থের মিলনে সাহিত্য সৃষ্টি হয়। আবার কেউ মনে করেন সাহিত্যিকের হৃদয়ের সাথে পাঠকের হৃদয়ের মিলনে সাহিত্য জন্মায়। তবে রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন যে, মানুষের সহিত মানুষ মিলেছে, তাই মানুষের মিলনের ফলেই জন্মেছে সাহিত্য।[৩]

বিভিন্ন ধরনের সাহিত্য

কবিতা

কবিতা বা পদ্য (ইংরেজি: Poetry) হচ্ছে শব্দ এবং ছন্দের আন্তঃব্যবহারের উপর ভিত্তি করে রচিত একধরণের সাহিত্য। এটি প্রায়শই ছড়া এবং ছন্দ নিয়োগ করে (প্রতিটি লাইনে শব্দাংশের সংখ্যা এবং বিন্যাস পরিচালনা করে এমন নিয়মের একটি ঝাঁক)। কবিতায় ধ্বনিগুলি শব্দ, চিত্র এবং ধারণাগুলি গঠনের জন্য একত্রিত হয় যা সরাসরি বর্ণনার ক্ষেত্রে খুব জটিল বা বিমূর্ত হতে পারে।

অর্থাৎ কবিতা হলো একধরণের সাহিত্যের রূপ যা ভাষার নান্দনিক এবং ছন্দযুক্ত গুণাবলী যেমন ধ্বনিসৌন্দর্যতত্ত্ব, প্রতীকবাদ এবং ছন্দ ব্যবহার করে দৃশ্যমান সাধারণ অর্থের পরিবর্তে অনিবার্য ভাবার্থের অর্থ বোঝাতে উপমা-উৎপ্রেক্ষা-চিত্রকল্পের মাধ্যমে ব্যবহৃত হয়।

গল্প

গল্প সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। গল্প উপন্যাসের চেয়ে ছোট। কোনো ঘটনাকে কাহিনী আকারে পাঠকের কাছে উপস্থাপন করা হয় গল্পে। গল্পে বিভিন্ন চরিত্র, ঘটনা, পরিবেশ, প্রকৃতি, সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়ে হয়ে থাকে।

নাটক

নাটক হচ্ছে সাহিত্যের একটি অংশ। কোনো সাধারণত বা কাল্পনিক ঘটনার লিখিত রূপ বা পাণ্ডুলিপিকে মুখস্ত করে কলাকুশলীর মাধ্যমে উপস্থাপন করা নাটক। বিভিন্ন চরিত্র, ঘটনাকে দর্শকের সামনে নানা আবেগ, ভঙ্গির মাধ্যমে তুলে ধরে। যেকোনো নাটক লেখা হয় সেটা অভিনয় করার জন্য। তাই নাটক লেখার আগেই লেখকে খেয়াল রাখতে হয়, সেটা অভিনয় করার যোগ্য করার দিকে। নাটকে স্থান, সময় ও পরিবেশের বর্ণনা ছাড়াও সংলাপ লেখা থাকে। সংলাপ বলেই একজন অভিনেতা নাটকের বিভিন্ন বিষয়ে বলে থাকেন। তবে সংলাপই শেষ কথা নয়। সংলাপবিহীন অভিনয়ও নাটকের অংশ।

সাহিত্যের দুটি বিষয় নিয়ে অনুপ সাদির আলোচনা

প্রবন্ধ

প্রবন্ধ শব্দের অর্থ হচ্ছে প্রকৃষ্ট বা ভালো রূপে বন্ধন। এই প্রকৃষ্ট বা ভালো বন্ধনে বিষয়বস্তু ও চিন্তার ধারাবাহিক বন্ধনকে বোঝায় । খুব বেশি বড় না; তবে সুবিন্যস্ত গদ্যের মতো রচনাকে প্রবন্ধ বলে। প্রবন্ধ রচনার বিষয়, ভাব, ভাষা প্রতিটিই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এটি সাহিত্যে বর্ণনামূলক গদ্য। প্রবন্ধ সাহিত্যের অন্যতম একটি শাখা। এর সমার্থক শব্দগুলো হলো – সংগ্রহ, রচনা, সন্দর্ভ।[৩]

তথ্যসূত্র

১. সুরভি বন্দ্যোপাধ্যায়, সাহিত্যের শব্দার্থকোষ, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, ৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯, পৃষ্ঠা ১০৮।
২. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ধ্রুপদী নায়িকাদের কয়েকজন, অবতরণিকা, অশোক পুস্তকালয়, পুনর্মুদ্রণ এপ্রিল ২০১১, কলকাতা, পৃষ্ঠা ১১-১২
৩. হেমন্তকুমার গঙ্গোপাধ্যায়, সমাজ সাহিত্য ও দর্শন, সংস্কৃত পুস্তক ভাণ্ডার কলকাতা, প্রথম প্রকাশ জ্যৈষ্ঠ ১৩৬৭, পৃষ্ঠা ৩৮।

রচনাকাল: ৩১ জুলাই, ২০১৯, নেত্রকোনা, বাংলাদেশ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!