বিপ্লব সম্পর্কে তত্ত্ব কয়েক ধরনের তত্ত্ব প্রসঙ্গে আলোচনা

বিপ্লব সম্পর্কে তত্ত্ব (ইংরেজি: Theories of revolution) সামাজিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে গভীরভাবে আলোচিত হয়ে থাকে। রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক বিপ্লবসমূহকে বিশেষ করে সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং ইতিহাসে অধ্যয়ন করা হয়েছে। সেই এলাকার নেতৃস্থানীয় পণ্ডিতদের মধ্যে ছিলেন ক্রেন ব্রিনটন, চার্লস ব্রকেট, ফারিদেহ ফারহি, জন ফোরান, জন ম্যাসন হার্ট, স্যামুয়েল হান্টিংটন, জ্যাক গোল্ডস্টোন, জেফ গুডউইন, টেড রবার্টস গুর, ফ্রেড হ্যালিডে, চালমারস জনসন, টিম ম্যাকড্যানিয়েল, ব্যারিংটন মুর, জেফরি পেইজ, ভিলফ্রেডো পেরেটো, টেরেন্স রেঞ্জার, ইউজেন রোজেনস্টক-হুয়েসি, থেডা স্কোকপল, জেমস স্কট, এরিক সেলবিন, চার্লস টিলি, এলেন কে ট্রিমবার্গার, কার্লোস ভিস্তাস, জন ওয়ালটন, টিমোথি উইকহাম-ক্রোলি এবং এরিক উলফ।[১] কতকগুলি মানদণ্ডের ভিত্তিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সমাজবিজ্ঞানীরা বিপ্লবকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করেন। সেগুলি হচ্ছে

  • বিপ্লবের উদ্দেশ্য 
  • অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ও প্রকৃতি
  • রণকৌশল
  • ব্যপ্তিকাল 
  • জনগণের অংশগ্রহণের মাত্রা
  • আদর্শগত অঙ্গীকারের মাত্রা 

হ্যারল্ড ল্যাসওয়েল ও আব্রাহাম কাপ্লান বিপ্লবকে তিনভাগে ভাগ করেন—প্রাসাদ বিপ্লব, রাজনৈতিক বিপ্লব ও সামাজিক বিপ্লব। স্যামুয়েল হান্টিংটন চার ধরনের যুদ্ধের কথা বলেন—অভ্যন্তরীণ যুদ্ধ, বিপ্লবী ক্ষমতা দখল, সংশোধনমূলক ক্ষমতা দখল ও প্রাসাদ ক্ষমতা দখল।

১৯৭২ সালে Journal of Political Science এ মাইকেল ফ্রিম্যান বিপ্লবের তত্ত্বের উপর একটি রিভিউ নিবন্ধে বলেন যে বিপ্লবের তত্ত্বের ইতিহাস রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ইতিহাসের বিভিন্ন ধারার সাথে মেলে। প্রথম পর্যায় ক্লাসিকাল তাত্ত্বিকদের প্লেটো থেকে কার্ল মার্কস। দ্বিতীয় পর্যায় মার্কস থেকে ওয়েবার—এমন একটা সময় যখন তাত্ত্বিকরা মূল্য নিরপেক্ষ জ্ঞানের সন্ধানে চালাচ্ছিলেন এবং পরীক্ষামূলক তত্ত্ব গড়েছিলেন। এই সময়ে উল্লেখযোগ্য ছিলেন সরোকিন, এডুয়ার্ডস, পেটি ও ব্রিন্টন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের তৃতীয় পর্যায় ‘functionalism’ বা ক্রিয়াবাদের এবং ‘quantification’ বা পরিসংখ্যাকরণের। এবং বিপ্লবের তত্ত্বের উপর এর প্রভাব পড়ে।

বিপ্লব সম্পর্কে চার প্রজন্মের তত্ত্ব

জ্যাক এ গোল্ডস্টোন বিপ্লবের গবেষণার চার ‘Generation’-এর কথা বলেন। প্রথমটি হলো ১৯০০-১৯৪০ এর তাত্ত্বিকরা। তাদের দৃষ্টি ছিল মূলত বিবরণমূলক; বিপ্লবের ব্যাখা সামাজিক মনোবিজ্ঞান ঘেঁষা। যথা, চার্লস এ এলউড বা পিটিরিম সরোকিন।

দ্বিতীয় Generation তাত্ত্বিকদের দেখা যায় ১৯৪০-১৯৭৫-এ। বিপ্লব কেন ও কখন হয় সে বিষয়ে তারা বিস্তারিত তত্ত্ব গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালান। তাঁদের বিশ্লেষণ জটিল সামাজিক ব্যবহার বিষয়ক তত্ত্বের উপর দাঁড় করানো হয়। মনোবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান ও রাজনৈতিক আলোচনা পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়। তাদের মধ্যে আছেন টেড রবার্ট গুর, চ্যামার, জনসন, নীল স্মেলসার, চার্লস টিলি ও স্যামুয়েল হান্টিংটন।

দ্বিতীয় Generation তাত্ত্বিকদের সমালোচনা করে তৃতীয় Generation উঠে আসে এমনটাই দাবি করেন গোল্ডস্টোন। এটি হয় ১৯৭৫ সাল থেকে। একই ধরনের চিন্তা দেখা যায় পেজ ট্রিমবার্গার, থেডা স্কচপল ও আইসেন্টস্টাট-এর মাধ্যে।

১৯৮০-র শেষ থেকে নতুন ধাঁচের তাত্ত্বিক কাজ তৃতীয় প্রজন্মের তত্ত্বগুলির আধিপত্যকে প্রশ্নের মুখে ফেলে। এছাড়া নতুন তৈরি হওয়া বৈপ্লবিক পরিস্থিতি পুরাতন তত্ত্বগুলিকে ধাক্কা দেয় কারণ সেই তত্ত্বগুলি এইসব বৈপ্লবিক অবস্থার যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে পারছিল না।[২]

তথ্যসূত্র

১. Jeff Goodwin, No Other Way Out: States and Revolutionary Movements, 1945-1991. Cambridge University Press, 2001, p.5
২. দেবী চ্যাটার্জী, রাষ্ট্রচিন্তার বিষয়সমূহ, নেতাজী সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় পুনর্মুদ্রণ ডিসেম্বর ২০১৯, পৃষ্ঠা ১৩৫-১৩৬।

Leave a Comment

error: Content is protected !!