কমরেডগণ, যুক্তফ্রন্ট সংহত করার পক্ষে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তর হবে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ট্রেড ইউনিয়ন ঐক্য প্রতিষ্ঠা।
আপনারা জানেন সংস্কারবাদী নেতাদের বিভেদমূলক কৌশল সবচেয়ে মারাত্মকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে ট্রেড ইউনিয়নের ক্ষেত্রে। তার কারণ খুব স্পষ্ট। এখানে তাদের বুর্জোয়াদের সঙ্গে শ্রেণী সহযোগিতার নীতি কারখানায় কারখানায় চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করেছে, যার ফলে শ্রমিকশ্রেণীর গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অবশ্য কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে বিপ্লবী শ্রমিকরা এর খুব কঠোর সমালোচনা ও প্রতিরোধ করেছেন। সেই জন্য কমিউনিজম ও সংস্কারবাদের মধ্যে সংঘর্ষ সবচেয়ে বেশি বেধেঁছে ট্রেড ইউনিয়নগুলিতে।
পুঁজিবাদের পক্ষে অবস্থা যতই কঠিন ও জটিল হয়েছে, আমস্টার্ডাম ইউনিয়নগুলির[১] কেন্দ্রীয় দপ্তরে আন্তর্জাতিক ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের নেতাদের নীতিও ততোই বেশি প্রতিক্রিয়াশীল হয়েছে, ট্রেড ইউনিয়নের মধ্যেকার সমস্ত বিরোধীদের বিরুদ্ধে তারা ততো মারমুখী নীতি অবলম্বন করেছে।…
আমস্টার্ডাম ইউনিয়নের নেতাদের ব্যবহার শ্রেণীসংগ্রামে যত অসুবিধাই সৃষ্টি করুক না কেন, আমরা নেতার ব্যক্তিগত আচরণের ভিত্তিতে আমাদের কৌশলকে ঠিক করব না, আমাদের ভিত্তি হবে প্রধানত কোথায় শ্রমিক জনগণকে পাওয়া যাবে তার উপর। আর এখানে আমাদের অবশ্যই প্রকাশ্যে ঘোষণা করতে হবে যে, সমস্ত কমিউনিস্ট পার্টির কাজের দুর্বলতম ক্ষেত্রটি হল ট্রেড ইউনিয়নে কাজ। আমরা ট্রেড ইউনিয়নের কাজে সত্যিকার পরিবর্তন আনবো এবং ট্রেড ইউনিয়ন ঐক্যের জন্য সংগ্রামের প্রশ্নটিকেই কেন্দ্রীয় প্রশ্ন করে তুলব।・・・
“আমরা অবশ্যই প্রত্যেক দেশে এবং আন্তর্জাতিক স্তরে ট্রেড ইউনিয়ন ঐক্যের পুনঃপ্রতিষ্ঠার পক্ষে। আমরা প্রত্যেক শিল্পে একটি করে ইউনিয়নের পক্ষে।‘’
“আমরা প্রত্যেক দেশে ট্রেড ইউনিয়নগুলির একটি যুক্ত ফেডারেশনের পক্ষে”, আমরা এক একটি শিল্পভিত্তিতে সংগঠিত “ট্রেড ইউনিয়নগুলির একটি আন্তর্জাতিক ফেডারেশন গঠনের পক্ষে।”
“আমরা শ্রেণীসংগ্রামের ভিত্তিতে ট্রেড ইউনিয়নগুলির একটি আন্তর্জাতিকের পক্ষে। আমরা পুঁজিবাদ ও ফ্যাসিবাদের আক্রমণের বিরুদ্ধে শ্রমিকশ্রেণীর একটি প্রধান দুর্গ হিসেবে ঐক্যবদ্ধ শ্রেণীভিত্তিক টেড ইউনিয়নের পক্ষে। ট্রেড ইউনিয়নগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য আমাদের। একমাত্র শর্ত হলো: পুজির বিরুদ্ধে সংগ্রাম, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম এব ট্রেড ইউনিয়নে আভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র।”
সময় থেমে থাকে না। আমাদের কাছে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মাপকাঠিতে ট্রেড ইউনিয়ন ঐক্যের প্রশ্নটি হল শ্রেণীশত্রুর বিরুদ্ধে আমাদের শ্রেণীকে একটিমাত্র শক্তিশালী টেড ইউনিয়ন সংস্থায় ঐক্যবদ্ধ করার মতো মহান কাজের প্রশ্ন।
এই বছরে পয়লা মে’র ঠিক আগে শ্রমিক ইউনিয়নগুলির লাল আন্তর্জাতিক আমস্টার্ডাম আন্তর্জাতিকের কাছে বিশ্ব ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনকে ঐক্যবদ্ধ করার শর্ত, উপায় ও রূপের প্রশ্নটি যৌথভাবে বিবেচনা করার প্রস্তাব রেখেছে-এই ঘটনাটিকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। আমস্টার্ডাম আন্তর্জাতিকের নেতারা এই প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন এই বস্তাপচা যুক্তি দেখিয়ে যে, একমাত্র আমস্টার্ডাম আন্তর্জাতিকের মধ্যেই ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের ঐক্য সম্ভব। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, মাত্র কয়েকটি ইয়োরোপীয় ছাড়া প্রায় কেউই তার অন্তর্ভুক্ত নয়।
কিন্তু যেসব কমিউনিস্ট ট্রেড ইউনিয়নে কাজ করছেন তাঁদের অক্লান্তভাবে ট্রেড ইউনিয়নের ঐক্য প্রতিষ্ঠা করার অবশ্যই চেষ্টা করা উচিত। ট্রেড ইউনিয়নগুলি এবং শ্রমিক ইউনিয়নগুলির লাল আন্তর্জাতিকের কর্তব্য তাদের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে ফ্যাসিবাদ এবং পুঁজির আক্রমণের বিরুদ্ধে সমস্ত ট্রেড ইউনিয়নের যৌথ লড়াইয়ের সময়কে ত্বরান্বিত করা, আমস্টার্ডাম আন্তর্জাতিকের প্রতিক্রিয়াশীল নেতাদের প্রবল প্রতিরোধ সত্ত্বেও একটি যুক্ত ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন স্থাপন করা। এ বিষয়ে লাল ট্রেড ইউনিয়নগুলির এবং লাল আন্তর্জাতিকের ঐকান্তিক সমর্থন আমাদের পেতেই হবে।
যে সমস্ত দেশে ছোট ছোট লাল ট্রেড ইউনিয়ন আছে যেখানে আমরা বড় সংস্কারবাদী ইউনিয়নগুলির অন্তর্ভুক্ত হবার চেষ্টা করার সুপারিশ করছি, কিন্তু তাদের নিজেদের মতামত রক্ষা করার এবং বিতাড়িত সদস্যদের পুনঃপ্রতিষ্ঠার ওপর জোর দিতে হবে। কিন্তু যেসব দেশে বড় বড় সংস্কারবাদী টেড ইউনিয়নের পাশাপাশি বৃহৎ লাল ট্রেড ইউনিয়ন রয়েছে সেখানে পুজিবাদী আক্রমণের বিরুদ্ধে সংগ্রামের মঞ্চের ভিত্তিতে ঐক্য কংগ্রেস ডাকার জন্য এবং ট্রেড ইউনিয়নের গণতন্ত্র রক্ষা করার জন্য আমাদের কাজ করতে হবে।
আরো পড়ুন
- যুক্তফ্রন্ট ও যুবসমাজ
- ট্রেড ইউনিয়ন ঐক্যের জন্য সংগ্রাম
- ময়মনসিংহে সাম্প্রতিক বর্ণবাদচর্চা
- ফ্যাসিবাদ-বিরোধী গণফ্রন্ট
- যুক্তফ্রন্টের সারবস্তু ও রূপ
- যুক্তফ্রন্ট-বিরোধীদের প্রধান যুক্তি
- যুক্তফ্রন্টের গুরুত্ব
- ফ্যাসিবাদ একটি হিংস্র কিন্তু অস্থিতিশীল শক্তি
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উৎস ও চরিত্র
- ফ্যাসিবাদের জয় কি অনিবার্য?
- বিজয়ী ফ্যাসিবাদ জনগণের জন্য কী বহন করে আনে?
- ফ্যাসিবাদের শ্রেণি চরিত্র
- সুভাষচন্দ্র বসুর জাতীয়তাবাদী চিন্তা হচ্ছে আগ্রাসনবিরোধী ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী
- সুভাষচন্দ্র বসুর রাষ্ট্রচিন্তা হচ্ছে স্বাধীনতা, সমাজতন্ত্র, ফ্যাসিবাদ ও জাতীয় মুক্তি
একথা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলা দরকার যে, যে কোন কমিউনিস্ট কর্মী যে কোন বিপ্লবী কর্মী, যিনি তার নিযের শিল্পের গণ ট্রেড ইউনিয়নের মধ্যে নেই, যিনি সংস্কারবাদী ট্রেড ইউনিয়নকে সত্যিকার শ্রেণী ট্রেড ইউনিয়ন সংস্থায় পরিণত করার জন্য সংগ্রাম না করেন, যিনি শ্রেণী সংগ্রামের ভিত্তিতে ট্রেড ইউনিয়ন ঐক্যের জন্য লড়াই না করেন, এইরকম একটি কমিউনিস্ট কর্মী, এইরকম একটি বিপ্লবী কর্মী তাঁর প্রাথমিক প্রলেতারীয় কর্তব্য পালন করেন না।
টিকা:
১. মাঝে মাঝে আমস্টার্ডাম আন্তর্জাতিক বলে অভিহিত করা হত।
ফুলকিবাজ ডট কমে অতিথি লেখক হিসেবে রাজনৈতিক বিশ্লেষণ, কলাম, অনুবাদ, নিবন্ধ ও প্রবন্ধ লেখায় সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন পূরবী সম্মানিত, ইভান অরক্ষিত, রনো সরকার, দিল আফরোজ, অনাবিলা অনা এবং রণজিৎ মল্লিক। এছাড়াও আরো অনেকের লেখা এখানে প্রকাশ করা হয়।