ফ্যাসিবাদ-বিরোধী গণফ্রন্ট

জর্জি দিমিত্রভ
জর্জি দিমিত্রভ

ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে মেহনতি জনগণের সমাবেশের জন্য সর্বহারার যুক্তফ্রন্টের ভিত্তিতে একটি ব্যাপক ফ্যাসিবাদ-বিরোধী গণফ্রন্ট গঠন হলো একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য। একদিকে সর্বহারা এবং অপরদিকে মেহনতি কৃষক ও শহরের পেটি বুর্জোয়াদের মৌল অংশের, যারাই এমনকি শিল্পোন্নত দেশের জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ, তাদের মধ্যে সংগ্রামী মোর্চা গঠন, সর্বহারাদের সামগ্রিক সংগ্রামের সাফল্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত।

ফ্যাসিবাদ তার আন্দোলনে এই জনসমষ্টিতে নিজের পক্ষে নিয়ে আসার অভিপ্রায়ে পেটি বুর্জোয়াদের লাল জুজুর ভয় দেখিয়ে শহরের ও গ্রামাঞ্চলের মেহনতি জনগণকে বিপ্লবী সর্বহারাদের বিরুদ্ধে স্থাপন করার চেষ্টা করে। আমাদের এই সূচীমুখকে বিপরীত দিকে ফেরাতে হবে এবং প্রকৃত বিপদ কোন দিক থেকে আসে তা মেহনতি কৃষক, কারিগর ও খেটে খাওয়া বুদ্ধিজীবীদের দেখিয়ে দিতে হবে।

তাদের আমাদের দেখিয়ে দিতে হবে বাস্তবক্ষেত্রে কারা কৃষকের ওপর করের ও শুল্কের বোঝা চাপিয়ে দেয়, তার কাছ থেকে নিংড়ে অত্যধিক তেজারতি সুদ আদায় করে, সবচেয়ে ভাল জমির মালিকানা ও সব রকমের ধনসম্পদ উপভোগ করা সত্ত্বেও কারা কৃষক ও তার পরিবারবর্গকে তার ক্ষুদ্র জমিখণ্ড থেকে বিতাড়িত করে তাকে বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের গভীরে নিক্ষেপ করে। বাস্তবের ওপর ভিত্তি করে আমাদের ব্যাখ্যা করতে হবে, ধৈর্য ও অধ্যবসায় সহকারে বিশ্লেষণ করতে হবে কারা খাজনা, শুল্ক, অত্যধিক ভাড়া ও প্রতিযোগিতার অসহনীয় ভারে কারিগর ও ছোট ছোট শিল্পীদের বিনাশ ডেকে আনছে, কারাই বা খেটে খাওয়া বুদ্ধিজীবীদের ব্যাপক অংশকে কর্মচ্যুত করে তাদের রাস্তায় নিক্ষেপ করছে।

কিন্তু এও সব নয়।

ফ্যাসিবাদ-বিরোধী গণফ্রন্ট গঠনের মূল ভিত্তি ও চূড়ান্ত বিষয় হলো এইসব স্তরের, বিশেষ করে মেহনতি কৃষকদের দাবিগুলির সমর্থনে বিপ্লবী সর্বহারার অটল সংগ্রাম—যে দাবীগুলি সর্বহারার স্বার্থের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ এবং এই সংগ্রামের প্রক্রিয়ায় এই দাবিগুলির সঙ্গে শ্রমিক শ্রেণির দাবীগুলিকেও যুক্ত করতে হবে।

ফ্যাসিবাদ-বিরোধী গণফ্রন্ট গঠনে, মেহনতি কৃষক ও শহরের পেটি বুর্জোয়াদের বেশ বড় অংশ যাদের অন্তর্ভুক্ত, সেইসব পার্টি ও সংস্থা সম্পর্কে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গী গ্রহণের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।

আরো পড়ুন

পুঁজিবাদী দেশগুলিতে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক এইসব পার্টি ও সংস্থার বেশির ভাগ এখনও বুর্জোয়াদের প্রভাবাধীন রয়েছে এবং তাদেরই অনুসরণ করছে। এইসব পার্টি ও সংস্থাগুলি পাঁচমিশালী সামাজিক স্তর নিয়ে গঠিত। তাদের মধ্যে ভূমিহীন কৃষকদের সঙ্গে বিত্তবান কৃষকরা (কুলাকরা) রয়েছে এবং ছোট ছোট দোকানদারের সঙ্গে বড় বড় ব্যবসায়ীরা রয়েছে, যদিও নিয়ন্ত্রণ থাকে বিত্তবান শ্রেণির হাতে যারা বৃহৎ পুঁজির প্রতিনিধি। এই সমস্ত সংস্থায় প্রায়শঃই বেশির ভাগ সভ্য তাদের নেতৃত্বের সঠিক রাজনৈতিক চরিত্র বুঝতে পারে না, এই কথা মনে রেখেই এই সব সংস্থা সম্পর্কে আমাদের ভিন্নতর অন্যরকম দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা কর্তব্য। বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে এই সব পার্টি ও সংস্থা অথবা তাদের কোনো কোনো বিশেষ অংশকে, তাদের বুর্জোয়া নেতৃত্ব সত্ত্বেও, ফ্যাসিবাদ-বিরোধী গণফ্রন্টের সামিল করার জন্য আমরা চেষ্টা চালাতে পারি এবং আমরা নিশ্চয়ই তা করব। কৃষক, কারিগর ও শহরের পেটি বুর্জোয়া জনগণকে নিয়ে গঠিত ভাইসব পার্টি ও সংস্থা সম্পর্কে যে উপেক্ষা বা ঘৃণার মনোভাব বাস্তব ক্ষেত্রে প্রায়ই দেখা যায়, তা আমাদের সম্পূর্ণ পরিহার করতে হবে।

Leave a Comment

error: Content is protected !!