সমাজতন্ত্র ও ধর্ম

বর্তমান সমাজের ভিত্তি বিপুলসংখ্যক শ্রমিক শ্রেণির শোষণের উপর স্থাপিত। জনসমষ্টির অতিক্ষুদ্র এক অংশ—জমিদার ও পুঁজিপতি শ্রেণির দ্বারা তারা শোষিত। এ সমাজ দাস সমাজ। কারণ ‘মুক্ত’ শ্রমিকেরা সারা জীবন পুঁজির জন্য কাজ করে জীবিকানির্বাহের যেটুকু উপকরণের ‘অধিকার লাভ করে’ তা শুধু দাসপালনের পক্ষে একান্ত অপরিহার্য এবং এরাই পুঁজিবাদী দাসত্বের নিরাপত্তা ও চিরন্তনতার জন্য মুনাফা উৎপাদন করছে।

শ্রমিকদের অর্থনৈতিক পীড়নের জন্য অনিবার্য পরিণতি অজস্র প্রকার রাজনৈতিক পীড়ন ও সামাজিক অবমাননা, জনগণের আধ্যাত্মিক ও নৈতিক জীবনের কার্কশ্য ও অন্ধকার। অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য সংগ্রামার্থে শ্রমিকদের পক্ষে অল্পবিস্তর রাজনৈতিক স্বাধীনতা লাভ সম্ভব, কিন্তু পুঁজিকে ক্ষমতাচ্যুত না করে কোনো স্বাধীনতাই দারিদ্র, বেকারি এবং পীড়ন থেকে তাদের মুক্তিলাভ অসম্ভব। ধর্ম আধ্যাত্মিক পীড়নের অন্যতম প্রকার বিশেষ। চিরকাল অন্যের জন্য খাটুনি, অভাব ও নিঃসঙ্গতায় পীড়িত জনগণের উপর সর্বত্রই তা চেপে বসে। শোষকদের বিরুদ্ধে শোষিত শ্রেণির সংগ্রামের অক্ষমতা থেকেই অনিবার্যভাবে উদ্ভুত হয় মৃত্যু-পরবর্তী উত্তম জীবনের প্রত্যয়, যেমন প্রকৃতির বিরুদ্ধে সংগ্রামে আদিম মানুষের অক্ষমতা থেকে উদ্ভূত হয় ঈশ্বর, শয়তান, অলৌকিকত্ব, ইত্যাদিতে বিশ্বাস। যারা সারা জীবন খাটে আর অভাবে নিমজ্জিত থাকে, ধর্ম এ পৃথিবিতে তাদের নম্রতা ও সহিষ্ণুতার শিক্ষাদান করে স্বর্গীয় পুরস্কারের সান্তনা দেয়। কিন্তু যারা অন্যের শ্রমশোষক, ধর্ম তাদের পার্থিব জীবনে বদান্যতা অনুশীলনের নির্দেশ দেয়। এভাবেই শোষক হিসেবে নিজেদের অস্তিত্বের নায্যতা সপ্রমাণের জন্য ধর্ম খুবই সস্তা সুযোগ দেয় ও পরিমিত মূল্যের টিকিটে স্বর্গবাসে তাদের স্বাচ্ছন্দ্যবিধানের ব্যবস্থা করে। ধর্ম জনগণের পক্ষে আফিমস্বরূপ। ধর্ম এক প্রকার আধ্যাত্মিক সুরাবিশেষ এবং এরই মধ্যে পুঁজিদাসদের মনুষ্য-ভাবমূর্তি এবং অল্পবিস্তর মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার দাবি নিমজ্জিত।

কিন্তু যে-দাস নিজের দাসত্ব সম্পর্কে সচেতন এবং নিজের মুক্তির জন্য সংগ্রামে উদ্যোগি তার অর্ধেক দাসত্ব ইতিমধ্যেই অবলুপ্ত। বৃহদায়তন শিল্পকারখানায় পালিত এবং নাগরিক জীবনে আলোকপ্রাপ্ত আধুনিক সচেতন শ্রমিক ঘৃণাভরে ধর্মীয় কুসংস্কারকে প্রত্যাখ্যান করেছে। পুরোহিত ও বুর্জোয়া ভণ্ডদের জন্য স্বর্গ ছেড়ে দিয়ে তারা নিজেরা এ পৃথিবীতে উন্নততর জীবন জয়ে উদ্যোগি। আজকের প্রলেতারিয়েত সমাজতন্ত্রের পক্ষে আসছে। ধর্মের কুহেলিকার বিরুদ্ধে সংগ্রামে সমাজতন্ত্র বিজ্ঞানকে টেনে আনছে এবং এ পৃথিবিতে উন্নততর জীবনের জন্য সত্যকার সংগ্রামে শ্রমিকদের একত্রীভূত করে মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের প্রত্যয় থেকে তাদের মুক্ত করছে।

ধর্মকে ব্যক্তির নিজস্ব ব্যাপার বলে ঘোষণা করা উচিত। এ উক্তিতেই সাধারণত ধর্ম সম্পর্কে সমাজতন্ত্রীদের মনোভঙ্গি অভিব্যক্ত। কিন্তু কোনোরূপ বিভ্রান্তির সম্ভাবনা পরিহারের জন্য এসব শব্দাবলীর অর্থ সুস্পষ্টভাবে নির্ধারিত হওয়া দরকার। রাষ্ট্রের সংগে সম্পর্কের প্রেক্ষিতেই আমরা ধর্মকে ব্যক্তির নিজস্ব ব্যাপার বলে বিবেচনার দাবি করছি। কিন্তু আমাদেরই পার্টির ক্ষেত্রে আমরা ধর্মকে ব্যক্তির নিজস্ব ব্যাপার বলে বিচার করতে পারি না। ধর্ম নিয়ে রাষ্ট্রের কোনো গরজ থাকা চলবে না এবং ধর্মীয় সংস্থাসমূহের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার সংগে জড়িত হওয়া চলবে না। যে কোনো ধর্মে বিশ্বাস অথবা কোনো ধর্মই না মানায় ( অর্থাৎ নাস্তিক হওয়া—যেমন প্রতিটি সমাজতন্ত্রী) সকলেই থাকবে সম্পূর্ণ স্বাধীন। ধর্মবিশ্বাসের জন্য নাগরিকদের অধিকারে কোনো প্রকার বৈষম্য কোনোক্রমেই সহ্য করা হবে না। এমনকি সরকারি নথিপত্রে যেকোনো নাগরিকের ধর্মের উল্লেখমাত্রও প্রশ্নাতীতভাবে বর্জিত হবে। রাষ্ট্রানুমোদিত গির্জাকে কোনো অর্থ-মঞ্জুরি অথবা ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক সংস্থাকে কোনো প্রকার সরকারি বৃত্তিদান করা চলবে না। এগুলোকে হতে হবে সমমনোভাবাপন্ন ব্যক্তিদের সম্পূর্ণ স্বাধিন, সরকারি সংশ্রব-বর্জিত প্রতিষ্ঠান। এসব দাবির সম্পূর্ণ বাস্তবায়নের মাধ্যমেই শুধু লজ্জাকর ও অভিশপ্ত সেই অতিতের অবসান সম্ভব—যখন গির্জা ছিলো রাষ্ট্রের সামন্ততান্ত্রিক অধীনতায় এবং রুশ নাগরিক ছিলো রাষ্ট্রীয় গির্জার সামন্ততান্ত্রিক অধীনতায়, যখন মধ্যযুগীয় যাজকি বিচার আইন (আজও যা আমাদের ফৌজদারি আইন সংবিধি গ্রন্থে বর্তমান) প্রচলিত ও প্রযুক্ত হত, বিশ্বাস বা অবিশ্বাসের জন্য যা নিগ্রহ করত লোককে, বিবেক দলিত হতো, আরামদায়ক সরকারি পদ ও সরকারি আয়ের সংগে যোগ করত রাষ্ট্রানুমোদিত গির্জার কোনো-না-কোনো কারণবারি বিতরণ। গির্জা ও রাষ্ট্রের সম্পূর্ণ পৃথকীকরণ—এই হলো আধুনিক রাষ্ট্র ও আধুনিক গির্জার কাছে সমাজতান্ত্রিক প্রলেতারিয়েতের দাবি।

রাজনৈতিক স্বাধীনতার অপরিহার্য অঙ্গরূপে এটা বাস্তবায়িত করতে হবে রুশ বিপ্লবকে।[১]।  এ দিক থেকে রুশ বিপ্লব বিশেষ সুবিধাজনক অবস্থায় স্থিত, কেননা পুলিসনির্ভর সামন্ততান্ত্রিক স্বৈরশাসনের জঘন্য আমলাতন্ত্রের জন্য এমনকি যাজক সম্প্রদায়ের মধ্যেও অসন্তোষ, বিক্ষোভ ও ক্রোধের সৃষ্টি হয়েছে। রুশ সনাতনী যাজক সম্প্রদায় যত দুর্দশাগ্রস্ত আর অজ্ঞই হোক, এমনকি তারাও এখন রাশিয়ার মধ্যযুগীয় সমাজব্যবস্থার পতন শব্দে জাগরিত। এখন তারাও মুক্তির দাবিতে যোগ দিচ্ছে, আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও আধিকারিকতার স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে ‘ঈশ্বরের সেবাদাসদের’ উপর চাপিয়ে দেয়া পুলিসি গুপ্তচর বৃত্তির বিরুদ্ধে তারা আজ প্রতিবাদমুখর। আমরা, সমাজতন্ত্রীরা অবশ্যই এ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানাবো, যাজকদের সত্যনিষ্ঠ ও অকপট অংশের দাবিকে শেষ অবধি এগিয়ে নিয়ে যাবো, স্বাধীনতা সম্পর্কিত দাবিতে অনড় থাকতে তাদের সাহায্য করবো এবং দাবি জানাবো, যাতে ধর্ম ও পুলিশের সকল যোগাযোগ তারা ছিন্ন করে। হয় আপনারা সত্যনিষ্ঠ, সেক্ষেত্রে আপনাদের অবশ্যই গির্জা ও রাষ্ট্র, স্কুল ও গির্জার সম্পূর্ণ পৃথকীকরণ এবং ধর্মকে একান্ত ও সম্পূর্ণভাবে ব্যক্তির বিষয় হিসেবে ঘোষণার দাবি সমর্থন করতে হবে। নয়তো আপনারা এই সঙ্গতিপূর্ণ স্বাধীনতা দাবির বিরোধি,— এর অর্থ আপনারা এখনো স্পষ্টতই ধর্মীয় বিচারসভার ঐতিহ্যে বন্দি, আপনারা এখনো আরামদায়ক সরকারি পদ ও সরকারি আয়ে প্রলুব্ধ, আপনারা অস্ত্রের আধ্যাত্মিক শক্তির প্রতি অবিশ্বাসি এবং এখনো আপনারা রাষ্ট্রের কাছ থেকে উতকোচ গ্রহণ করে চলছেন, সেক্ষেত্রে সারা রাশিয়ার সচেতন শ্রমিক আপনাদের বিরুদ্ধে নির্মম যুদ্ধ ঘোষণা করছে।

কিন্তু সমাজতান্ত্রিক প্রলেতারিয়েতের পার্টি যতখানি সংশ্লিষ্ট তাতে ধর্ম নিজস্ব ব্যাপার নয়। আমাদের পার্টি হলো শ্রমিক শ্রেণির মুক্তির জন্য শ্রেণি-সচেতন আগুয়ান যোদ্ধাদের সমিতি। ধর্মবিশ্বাসের আকারে শ্রেণি-চেতনার অভাব, অজ্ঞতা কিংবা তমসবাদ সম্বন্ধে এমন সমিতি নির্বিকার থাকতে পারে না, নির্বিকার থাকা চলতে পারে না। আমরা চাই রাষ্ট্রের সংগে গির্জার পূর্ণ কাটান-ছিঁড়েন, যাতে বিশুদ্ধ ভাবাদর্শগত এবং শুধু ভাবাদর্শগত অস্ত্রেরই সাহায্যে, আমাদের প্রকাশন আর মুখের কথা দিয়ে ধর্মীয় কুয়াশার বিরুদ্ধে আমরা লড়তে পারি। শ্রমিকদের উদ্দেশে প্রত্যেকটা ধর্মীয় ধোঁকার বিরুদ্ধে ঠিক এইরকম সংগ্রাম চালাবার জন্য আমরা প্রতিষ্ঠা করি আমাদের সমিতি—রুশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক শ্রমিক পার্টি। আর আমাদের পক্ষে ভাবাদর্শগত সংগ্রাম নিজস্ব ব্যাপার নয়, এটা গোটা পার্টির ব্যাপার, সমগ্র প্রলেতারিয়েতের ব্যাপার।

সমাজতন্ত্র নিয়ে একটি আলোচনা দেখুন

যদি তাই হয়, তবে আমাদের কর্মসূচীতে আমরা নিজেদের নাস্তিক বলে ঘোষণা করছি না কেন? কেন খ্রিস্টান ও ঈশ্বরবিশ্বাসীদের আমাদের পার্টিতে যোগ দিতে আমরা নিষেধ করছি না?

বুর্জোয়া ডেমোক্র্যাট ও সোশ্যাল-ডেমোক্রাটরা যেভাবে ধর্ম প্রসঙ্গকে উপস্থাপিত করে এ প্রশ্নের উত্তর থেকেই তাদের অতি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্যের ব্যাখ্যা মিলবে।

আমাদের কর্মসূচি সম্পূর্ণভাবে বৈজ্ঞানিক এবং অধিকন্তু, বস্তুবাদি বিশ্ববীক্ষাভিত্তিক। সুতরাং, ধর্মীয় কুহেলিকার সত্যকার ঐতিহাসিক ও অর্থনৈতিক মূলের ব্যাখ্যাও আমাদের কর্মসূচি ব্যাখ্যার অন্তর্ভুক্ত। আমাদের প্রচারে নাস্তিক্যবাদের প্রচারও আবশ্যক। তাছাড়া, স্বৈরাচারি-সামন্তবাদি রাষ্ট্রক্ষমতা কর্তৃক এযাবত কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ও নিগৃহীত যথোপযুক্ত বৈজ্ঞানিক সাহিত্য প্রকাশনা এখন পার্টির অন্যতম কর্মক্ষেত্র হওয়া উচিত। সম্ভবত, একদা জার্মান সমাজতন্ত্রীদের উদ্দেশে প্রদত্ত এঙ্গেলসের উপদেশ এখন আমাদের অনুসরণ করতে হবে, যথাঃ অষ্টাদশ শতকের ফরাসি জ্ঞানপ্রচারক ও নাস্তিকদের সাহিত্য অনুবাদ ও এর ব্যাপক প্রচার[২]।

ধর্মীয় প্রশ্নকে বিমূর্ত, আদর্শবাদি কায়দায়, শ্রেণি-সংগ্রামের সংগে সম্পর্কহীন ‘বুদ্ধিবাদি’ প্রসঙ্গরূপে উপস্থাপিত করার বিভ্রান্তিতে আমরা কোনো অবস্থায়ই পা দেব না— বুর্জোয়াদের রেডিক্যাল ডেমোক্র্যাটগণ প্রায়ই যা উপস্থাপিত করে থাকে। শ্রমিক জনগণের অন্তহীন শোষণ ও কার্কশ্য যে-সমাজের ভিত্তি, সেখানে বিশুদ্ধ প্রচার মাধ্যমে ধর্মীয় কুসংস্কার দূরীকরণের প্রত্যাশা বুদ্ধিহীনতার নামান্তর। মানুষের উপর চেপে থাকা ধর্মের জোয়াল যে সমাজমধ্যস্থ অর্থনৈতিক জোয়ালেরই প্রতিফলন ও ফল, এটা বিস্মৃত হওয়া বুর্জোয়া সংকীর্ণতারই শামিল। পুঁজিবাদের তামস শক্তির বিরুদ্ধে স্বীয় সংগ্রামের মাধ্যমে চেতনালাভ ব্যাতীত যে কোনো সংখ্যক কেতাব, কোনো প্রচারে প্রলেতারিয়েতকে আলোকপ্রাপ্ত করা সম্ভব নয়। পরলোকে স্বর্গ সৃষ্টি সম্বন্ধে প্রলেতারিয়েতের মতৈক্য অপেক্ষা পৃথিবীতে স্বর্গ সৃষ্টির জন্য নির্যাতিত শ্রেণির এই সত্যকার বৈপ্লবিক সংগ্রামের ঐক্য আমাদের কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ।

এ কারণেই আমাদের কর্মসূচিতে আমরা আমাদের নাস্তিক্যবাদ ঘোষণা করিনি, করা উচিৎও নয়। এ কারণেই যেসব প্রলেতারীয় আজও অতীত কুসংস্কারের কোনো-না-কোনো জের বজায় রেখেছে তাদের আমাদের পার্টির কাছাকাছি আসা নিষিদ্ধ করা হয়নি, করা উচিৎও নয়। আমরা সব সময়ই বৈজ্ঞানিক বিশ্ববীক্ষা প্রচার করব, নানাবিধ ‘খৃষ্টানের’ অসঙ্গতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম আমাদের প্রয়োজন। এর অর্থ মোটেই এই নয় যে ধর্মের প্রশ্নকে আমাদের সর্বাধিক প্রাধান্য দেয়া উচিত, যা তার প্রাপ্য নয়। এর অর্থ এই নয় যে সত্যকার বৈপ্লবিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংগ্রামের শক্তিসমূহকে আমরা বিভক্ত করবো কোনো তৃতীয় স্থানের গুরুত্বের মতামত বা প্রলেপের খাতিরে, যার রাজনৈতিক গুরুত্ব দ্রুত ক্ষীয়মাণ, যথাযথ অর্থনৈতিক বিকাশের ধারায় আবর্জনার মতো যা দ্রুত অপসৃতপ্রায়।

সত্যকারের গুরুত্বপূর্ণ ও মূলগত যেসব অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানে নিজেদের বিপ্লবী সংগ্রামে কার্যত ঐক্যবদ্ধ সমগ্র রুশ প্রলেতারিয়েত এখন সক্রিয়, তা থেকে ধর্মীয় বিবাদের দিকে জনগণের মন টানার জন্য প্রতিক্রিয়াশীল বুর্জোয়া সর্বত্রই সচেষ্ট, আমাদের এখানেও তারা এখন সচেষ্ট হতে শুরু করেছে। প্রলেতারীয় শক্তিকে বিভক্ত করার এই প্রতিক্রিয়াশীল নীতির আজকের আত্মপ্রকাশ প্রধানত কৃষ্ণশতকী দাঙ্গায়[৩], হয়তো আগামীকালই তা আরো সুক্ষতর কৌশল আবিষ্কার করবে। যে কোনো ক্ষেত্রেই আমরা তার প্রতিরোধ করবো প্রলেতারীয় ঐক্য ও বৈজ্ঞানিক বিশ্ববীক্ষার সুস্থির, দৃঢ়, ধৈর্যশীল প্রচার মাধ্যমে, যার কাছে গৌণ মতভেদের যেকোনো উসকানিই বিজাতীয়।

বিপ্লবী প্রলেতারিয়েত এইটে আদায় করবে, যাতে রাষ্ট্রের কাছে ধর্ম সত্যি করেই হয় ব্যক্তির বিষয়। মধ্যযুগীয় ছত্রাকমুক্ত এই রাজনৈতিক ব্যবস্থায় প্রলেতারিয়েত এক ব্যাপক ও প্রকাশ্য সংগ্রাম চালাবে অর্থনৈতিক দাসত্ব থেকে মুক্তির জন্য— যা ছিলো এতদিন মানুষের ধর্মীয় ধোকাবাজির মৌল উৎস।

‘নভায়া জিজন’, নং ২৮

৩ ডিসেম্বর ১৯০৫।[৪]

আরো পড়ুন

টিকা

১. ১৯০৫-১৯০৭ সালের প্রথম রুশ বিপ্লবের সময়ে প্রবন্ধটি লেখা হয়।
২. দিদেরো, হলবাক, হেলভেশিয়াস এবং অন্যান্য ফরাসি বস্তুবাদি দার্শনিকদের সম্বন্ধে ‘Fluchtlings-Literatur’ (দেশান্তরি সাহিত্য) শীর্ষক প্রবন্ধের কথা বলা হচ্ছে। এই সম্বন্ধে এঙ্গেলস বলেন, ‘পূর্ববর্তী শতাব্দীর চমতকার ফরাসি বস্তুবাদি সাহিত্য শ্রমিক সাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে দেবার জন্য যত্নবান হওয়া দরকার, ঐ সাহিত্য এখনো রূপ আর মর্মবস্তু উভয়ত ফরাসি মানসের মহত্তম সাধনসাফল্য, আর তখনকার বিজ্ঞানের মান বিবেচনায় থাকলে সেটার মর্মবস্তু অদ্যাবধি রয়েছে বিপুল উচ্চ স্তরে, আর সেটার রূপ রয়ে গেছে অতুলনীয়।
৩. কৃষ্ণশতক— বৈপ্লবিক আন্দোলনের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য জারের পুলিস থেকে গড়া রাজতান্ত্রিক গুণ্ডাদল। তারা বিপ্লবিদের খুন করত, প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীদের উপর হামলা চালাত, ইহুদিবিরোধী দাঙ্গা সংগঠিত করতো।
৪. সমাজতন্ত্র ও ধর্ম নামে এখানে লিখিত প্রবন্ধটি ভ. ই. লেনিন-এর ধর্ম প্রসঙ্গে নামে প্রকাশিত গ্রন্থের প্রথম প্রবন্ধ যা ন্যাশনাল বুক এজেন্সি প্রা. লি. কলকাতা থেকে প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ২০০৬ মুদ্রণ থেকে নেয়া হয়েছে। প্রবন্ধটি ফুলকিবাজ.কমে প্রকাশের পূর্বে ১৫ আগস্ট ২০১৭ তারিখে রোদ্দুরে.কমে প্রকাশিত হয়েছিল। সেখান থেকে হুবহু এখানে প্রকাশ করা হলো।

Leave a Comment

error: Content is protected !!