বর্ণবাদ কাকে বলে

বর্ণবাদ (ইংরেজি: Racism) হচ্ছে এমন বিশ্বাস যাতে বলা হয় যে মানুষের দলগুলি উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত বৈশিষ্ট্যগুলির সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন আচরণগত বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করে এবং এসবের ফলে একটি জাতির উপর অন্য জাতির শ্রেষ্ঠত্বের ভিত্তিতে বিভক্ত হতে পারে। বর্ণবাদ অর্থ হতে পারে কুসংস্কার, বৈষম্য, বা অন্য লোকেদের বিরুদ্ধে পরিচালিত বৈরিতা কারণ তারা একটি ভিন্ন বর্ণ বা নৃত্ত্বের গোষ্ঠী। বর্ণবাদের আধুনিক রূপগুলি প্রায়শই মানুষের মধ্যে জৈবিক পার্থক্যের সামাজিক ধারণার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।

বর্ণবাদের দৃষ্টিভঙ্গিগুলি সামাজিক ক্রিয়াকলাপ, অনুশীলন বা বিশ্বাস, বা রাজনৈতিক ব্যবস্থার রূপ নিতে পারে যেখানে বিভিন্ন বর্ণকে একে অপরের থেকে স্বভাবতই উন্নত বা নিকৃষ্ট হিসাবে স্থান দেওয়া হয় এবং অনুমিত উত্তরাধিকারযোগ্য বৈশিষ্ট্য, ক্ষমতা বা গুণাবলীর ভিত্তিতে ভাগ করা হয়। বৈজ্ঞানিক উপায়ে বর্ণবাদী বিশ্বাসকে বৈধ করার চেষ্টা করা হয়েছে, যেমন বৈজ্ঞানিক বর্ণবাদ, যা পুরোপুরি ভিত্তিহীন।

কয়েকটি গান শুনুন

বর্ণবৈষম্য (ইংরেজি: Apartheid) হচ্ছে রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বৈষম্যমূলক চর্চা যা আইনের মাধ্যমে কুসংস্কার বা বিদ্বেষ প্রকাশকে সমর্থন করে। বর্ণবাদী মতাদর্শের সাথে যুক্ত সামাজিক দিক যেমন স্থানীয়বাদ, অজ্ঞাতব্যক্তিভীতি, অন্যতা, বিচ্ছিন্নতা, শ্রেণিবদ্ধ মর্যাদাক্রম এবং শ্রেষ্ঠত্ববাদ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

নৃতাত্ত্বিকেরা স্থায়ী শারীরিক লক্ষণের ভিত্তিতে মানবগোষ্ঠীর মধ্যে বংশানুক্রমিক স্বাতন্ত্র্য অনুযায়ী এক একটি মানব-পরিবারকে বিভিন্ন গোষ্ঠী বা বর্ণতে (race) বিভক্ত করেন এবং বিভিন্ন মানবগোষ্ঠীর আচার-ব্যবহার, জীবনযাত্রা ও সমাজ গঠনের প্রণালী প্রত্যক্ষ করে শ্রেণিবিভাগ করেন ।

জাতিগত উচ্চনীচ মনোভঙ্গি ত্রিশের দশকে দেখা দেয়। বলা হয় যে জাতিকূল অনুযায়ী সংস্কৃতি গঠিত হবার ফলে উচ্চনীচ বর্ণসমূহের মধ্যে মান-মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা সমান হওয়া সঙ্গত নয়। এই বৈষম্যমূলক মানসিকতা আবেগ-প্রসূত, কারণ কিছু মানুষকে বহিরাগত হিসাবে বিবেচনা করা হয়, তবে সেটা সব সময় শারীরিক লক্ষণের নিরিখে নয়। যেমন ইহুদি-বিদ্বেষের পিছনে নানারকম যুক্তি দেখানো হয়। ক্রীতদাস-পদবাচ্য শ্রমিকদের অর্থনৈতিক শোষণের প্রয়োজনে চিহ্নিত করার জন্যও নিচু বর্ণের প্রত্যয় কাজে লাগানো হতো। আধুনিক কালেও নানা ধরনের বর্ণবাদ তথা জাতিবিদ্বেষ ও বৈষম্যের পরিচয় পাওয়া যায় । কৃষ্ণাঙ্গরা এই মনোভঙ্গির এক মস্ত ভুক্তভোগী। অনেক দেশে আইনের মাধ্যমে বর্ণবাদ রদের নানান প্রয়াস দেখা যায়।

আরো পড়ুন

তথ্যসূত্র

১. সৌরেন্দ্রমোহন গঙ্গোপাধ্যায়, রাজনীতির অভিধান, আনন্দ পাবলিশার্স প্রা. লি. কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ, জুলাই ২০১৩, পৃষ্ঠা ১১৪।

Leave a Comment

error: Content is protected !!