জনমত কাকে বলে?

জনমত (ইংরেজি: Public Opinion) হচ্ছে একটি সমাজের সাথে প্রাসঙ্গিক একটি নির্দিষ্ট বিষয় বা নির্বাচিত করবার অভিপ্রায়ের সম্মিলিত মতামত। এটা জনগণকে প্রভাবিত করা সংক্রান্ত তাদের নিজস্ব মতামত। জনজীবনে সক্রিয় লোকের সরব মতামতই জনমত হিসাবে পরিগণিত হয়, সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকের মতামত নয়।

জনমত বুঝে চলাই হচ্ছে রাজনীতিকের একটি প্রধান কাজ। জনমতের দর্পণে রাজনৈতিক কাজ ও ভাবনার গুণাগুণ বিবেচিত হয়। জাগ্রত জনমতের অভিব্যক্তি হলো গণতন্ত্রের গতিশীলতার লক্ষণ। ফরাসি বিপ্লবের গোড়ায় জনমতের গুরুত্ব সম্পর্কে ভাবনার প্রথম পরিচয় জাঁ জ্যাক রুশোর চিন্তায় পাওয়া যায়।

রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসাবে জনমতের উত্থান সপ্তদশ শতকের শেষের দিকে, তবে মতামতকে অনেক আগে থেকেই একক গুরুত্ব হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছিল। মধ্যযুগীয় fama publica (জন খ্যাতি) বা vox et fama communis (সাধারণ কণ্ঠ এবং প্রতিবেদন)-এর  দ্বাদশ এবং ত্রয়োদশ শতকের পর থেকে অনেক আইনি এবং সামাজিক গুরুত্ব ছিল। পরে, উইলিয়াম শেকসপিয়র জনমতকে “সাফল্যের পত্নী” বলে অভিহিত করেছিলেন এবং ব্লেইস প্যাসকেল মনে করেছিলেন যে এটি “বিশ্বের রানী”।

একটি ভিডিও দেখুন

প্রথম পর্যায়ে নেতৃস্থানীয় কিছু ব্যক্তি জনমত গঠনের জন্য কোনও চিন্তা ব্যক্ত করেন; তারপর সেটা সর্বজনের মধ্যে প্রচার করা হয়। লোকে যখন সেটা বুঝে গ্রহণ করে তখনই তা জনমতে পরিণত হয়। ওয়ালটার লিপম্যানের মতে, জনমতের প্রতীক সাধারণত মানুষের স্বার্থ ও চাহিদার ভারসাম্য রক্ষার চিহ্ন বহন করে। নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের বিদ্যাবত্তা ও শুভবুদ্ধি অনেকাংশ উন্নত জনমতের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। সরকারের অনুকূলে উপযোগী জনমত বলতে লোকের মধ্যে এমন একটা দৃঢ়মূল মনোভঙ্গি বোঝায় যেটা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তাদের বিশেষ জ্ঞানের পরিচয় দেয় ।

তবে জনজীবনে লোকের বিশেষ কোনও বিষয়ে সম্ভাব্য আচরণ ও প্রবণতা নির্ণয় সংক্রান্ত নানাবিধ পরিসংখ্যানগত পদ্ধতি, নির্বাচন সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী ইত্যাদির সঙ্গে জনমতের কোনও সঙ্গতির প্রশ্নে মতদ্বৈধ থাকলেও একথা বলা চলে যে বিজ্ঞানসম্মত পরীক্ষানিরীক্ষা সাপেক্ষ জনমত বিষয়টি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অন্তর্গত।

জনমত গঠন ও প্রকাশের প্রধান সহায়ক হচ্ছে: ১. মুদ্রণযন্ত্র ও সংবাদপত্র, ২. রেডিও, টেলিভিশন ও সিনেমা, ৩. রাজনৈতিক দল, ৪. সভাসমিতি, ৫. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। সমাজতন্ত্রী দেশে সরকার এইসব সহায়ক সংস্থাগুলিকে পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে চালিত করে। সে-কারণে জনমত শ্রমিক ও কৃষকদের ইচ্ছাক্রমে গঠিত হয়। অন্যদিকে পুঁজিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী দেশসমূহে এসব মাধ্যমকে গণহত্যা, লুন্ঠন ও শোষণে কাজে লাগানো হয়।

আরো পড়ুন

তথ্যসূত্র

১. সৌরেন্দ্রমোহন গঙ্গোপাধ্যায়, রাজনীতির অভিধান, আনন্দ পাবলিশার্স প্রা. লি. কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ, জুলাই ২০১৩, পৃষ্ঠা ১১২।

Leave a Comment

error: Content is protected !!