জনগণতান্ত্রিক ছাত্র সঙ্ঘ গণবিরোধী স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের পদত্যাগ দাবি করেছে। ছাত্র সঙ্ঘ প্রচারিত এক লিফলেটে গতকাল ৩ আগস্ট শনিবার একথা জানানো হয়। লিফলেটে ছাত্র সঙ্ঘ আরো বলেন, সকল বিদেশি-দেশী শাসক শোষক ও সেনা নিয়ন্ত্রিত সরকার নয় , ছাত্র জনতার গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য গণ-সংগ্রাম করুন। এলাকায় এলাকায় সকল বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছাত্র জনতার কমিটি গঠন করুন -আন্দোলন বেগবান করুন।
বাংলাদেশ আজ প্রকৃতই মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ এক স্বৈরাচারে পরিনত হয়েছে। বাংলাদেশের কৃষক-শ্রমিক ও সাধারণ জনগণের শত্রুদের ঠিকাদারি দল হিসেবে বাংলাদেশের সরকারে বসে আমাদের গোলামে পরিণত করেছে। বিদেশী প্রভুদের আশির্বাদে পুষ্ট হয়ে দেশের জনগণকে দাসে পরিণত করেছে। যখন ছাত্ররা এই শত্রুদের এতদিনের সাজানোর কোটার ছক নিয়ে কথা বলেছে, তখনই ফুঁসে উঠেছে। রাত-দিন নারকীয় হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে যখন সারাদেশের ছাত্র-জনতা একাত্ম হয়েছে তখনই এই ভূখন্ডকে পরিণত করেছে হত্যাক্ষেত্রে।
এই আওয়ামী স্বৈরাচারী সরকার তার বাহিনী দিয়ে যে জল্লাদের উল্লাসমঞ্চ তৈরি করেছে, তাতে প্রত্যহ খুন-গুম-গণগ্রেপ্তার চলছে। লাশের মিছিল পেরিয়ে গেছে কয়েক শতাধিক, আর এই জল্লাদেরা বৈষয়িক সম্পদের পাল্লায় মানুষের লাশ মেপে জনগণকে বন্দি করছে মিথ্যা মামলায়। সারাদেশে ১০ সহস্রাধিক রাজবন্দী, অন্যায্য মামলায় বন্দি।
আওয়ামী স্বৈরাচার জুলাই মাসের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তাদের নারকীয় হত্যাযজ্ঞের যে নজির রেখেছে, তাতে মানবাধিকার বিষয়টি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার তো দূরের কথা ন্যূনতম মানবাধিকার এখানে অবশিষ্ট নেই। যত্রতত্র তাদের পুলিশ বাহিনী গ্রেপ্তার করছে, মুঠোফোন কেড়ে নিচ্ছে, তুলে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ ভ্যানে। আন্দোলনকারী থেকে পথচারী, রিকশা আরোহী কেউ বাদ যাচ্ছেনা। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সাজোয়া যান তাক করে আছে মানুষের দিকে। হেলিকপ্টার থেকে গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে খুন করছে শিশু থেকে বৃদ্ধ যেকোনো মানুষকে। বিভিন্ন পেশাজীবী, সাংবাদিকসহ সকলেই এই খুনে বাহিনীর গুলিতে বিপন্ন।
কৃষক-শ্রমিক-ছাত্র-মেহনতি জনতা ও মধ্যবিত্ত নাগরিকদের ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করতে এই রাষ্ট্র ও তার সরকার দীর্ঘদিন যাবৎ ব্যর্থ। যার ক্ষোভ গোটা দেশের শহর থেকে গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে ছাত্র আন্দোলনকে উপলক্ষ্য করে। কোটা সংস্কারের পক্ষে চলমান আন্দোলনে রাষ্ট্র ছাত্রদের উপর গুলি চালিয়ে ক্ষুব্ধ করে তোলে ছাত্র-জনতাকে। তারা প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলতে গেলে রাষ্ট্র এমন এক হিংস্র জান্তব রূপ নেয় যা এই ভূখন্ডের মানুষ আগে কখনও দেখেনি। একে একে এই স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকার তার স্বরূপ উন্মোচন করে এবং বর্তমানে তা নগ্নভাবে পৃথিবীর সম্মুখে উন্মোচিত। যদিও দীর্ঘদিনের সুবিধাভোগী আওয়ামী দালালরা এই ঘটনাকে ইনিয়ে-বিনিয়ে বলতে চায়। কিন্তু জনগণ দ্ব্যর্থহীনভাবেই জানে এই আওয়ামী স্বৈরাচার জনগণের শত্রু। জনগণ একে বিতারিত করতে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।
কিন্তু দীর্ঘদিনের গোলামির জিঞ্জির তাকে আবদ্ধ করে রেখেছে। আবার বিদেশী প্রভুদের পারষ্পরিক ষড়যন্ত্রে জনগণ দ্বিধান্বিত। দীর্ঘদিনের দিল্লির গোলামি ও ওয়াশিংটন, বেইজিং, মস্কোর মাতব্বরিতে এই ভূখন্ড যেনো একটুকরো মাংসখন্ড। এই বিদেশী শক্তিসমূহ একে নিয়ে যাচ্ছেতাইভাবে কামড়াকামড়ি জারি রেখেছে। এর ফলেও জনগণ ভীত ও শঙ্কিত। কিন্তু ছাত্রদের এই স্ফুলিঙ্গ জনগণের মধ্যে যে আশার সংকেত দেখাচ্ছে তাতে এই গোলামির জিঞ্জির ভাঙা অতি আসন্ন।
এই ভূখন্ডের জনগণ ঔপনিবেশিকদের ভাগ-বাটোয়ারা পর্বের পর থেকেই সকল আধিপত্য ও আগ্রাসণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। এই ভূখন্ডে এযাবৎকালের সকল গণ-সংগ্রাম ও আন্দোলন ছিলো স্বৈরাচার ও সেনাশাসনের বিরুদ্ধে। তাই ঐতিহাসিকভাবেই এই জনগণ জানে স্বৈরাচার ও সেনাশাসন তার এক ও অভিন্ন শত্রু।
পাহাড় থেকে সমতলে এই ভূখন্ডের মানুষ যে লড়াই চালিয়ে আসছে তা আজকের ছাত্রদের স্ফুলিঙ্গের ভেতর দিয়ে ছাত্র-জনতার এক দাবানলে রূপান্তরিত হচ্ছে। এই মুহুর্তে প্রয়োজন এই দাবানলকে প্রকৃতই এক বিশাল দাবানলের মতো ছড়িয়ে দেয়া। তাই শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা জোট বেঁধে এই স্বৈরাচারী ও গনশত্রুদের সর্বাত্মক বয়কট করুন। গার্মেন্টস থেকে শুরু করে সকল কলকারখানার শ্রমিক , গ্রামের কৃষক ,শহরের সকল বস্তি থেকে উদ্বাস্তু মানুষ, সাধারণ চাকুরিজীবী থেকে বুদ্ধিজীবী সবাই গ্রাম-নগর-মাঠ-পাথার-বন্দরে সকলে এলাকায় এলাকায় ছাত্র জনতার কমিটি গঠন করুন। এলাকার ক্ষমতা গ্রহণ করুন। প্রয়োজনে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনকে বেগবান করতে এগিয়ে আসুন।
আরো পড়ুন
- সাম্যবাদী দলসমূহের বিবৃতিতে হাসিনা সরকারের পদত্যাগ দাবি
- জনগণতান্ত্রিক ছাত্র সঙ্ঘ স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের পদত্যাগ দাবি করেছে
- ছাত্র-জনতার খুনী হাসিনা সরকারের অবিলম্বে পদত্যাগ দাবি
- ফুলবাড়ি উন্মুক্ত কয়লাখনি বিরোধী আন্দোলন হচ্ছে এক মহান কৃষক সংগ্রাম
- আলতাব আলী ছিলেন প্রগতিশীল রাজনীতিক ও শ্রমিক-কৃষক আন্দোলনের নেতা
- বাংলাদেশের গণযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে স্বাধীনতার জন্য চালিত সশস্ত্র সংগ্রাম
- আবু তাহের ছিলেন সাম্রাজ্যবাদের যুগের বামপন্থী সমাজগণতন্ত্রী বিপ্লবী
- বাঙালির আত্মপরিচয় ও নবজাগরণ সম্পর্কে আবুল কাসেম ফজলুল হক
- রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিতে ঘরে বাইরে একটি গোষ্ঠী অপেক্ষায় আছে
- মধ্যবিত্ত কেন রাজনীতিবিমুখ?
আমরা দেখেছি বারবার জনগণের গণ আন্দোলন বা শহুরে অভ্যুত্থান সরকার পরিবর্তনে ভূমিকা রাখলেও শেষ পর্যন্ত শাসকের-সরকারের পরিবর্তন হলেও জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার অর্জন করা যায় না। তার কারণ সর্বদা আন্দোলনে জনগণ প্রাণ দিলেও সাম্রাজ্যবাদ, ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ ও সরকার বিরোধী শোষক শ্রেণীর অন্য অংশ নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার, জাতীয় সরকার বা সেনাশাসিত সরকারের নামে পুনরায় জনগণের উপর চড়াও হয়। তাই সকল মুক্তিকামী গণতান্ত্রিক সংগঠন সমূহকে এই হাসিনার স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে ছাত্র জনতার গণতান্ত্রিক সরকার ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জনগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র সমাজ ব্যবস্থার দিকে ধাবিত হওয়া ছাড়া এইসব শহীদের মৃত্যুর দোষীদের শাস্তি দেয়া যাবে না।
সারাবিশ্বের সকল সাম্রাজ্যবাদ ও সম্প্রসারণবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক জনগণকে ছাত্র-জনতার গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের পক্ষে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাই। আওয়ামী স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে জনতার জয় নিশ্চিত। স্বৈরাচার বিরোধী লড়াকু ছাত্র-জনতা জিন্দাবাদ। কৃষক-শ্রমিক-ছাত্র-জনতার সংগ্রাম জিন্দাবাদ।
বিশেষ প্রতিবেদক হিসেবে ফুলকিবাজের সঙ্গে রয়েছেন ফুলকিবাজ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অঞ্চলের শুভানুধ্যায়ী ব্যক্তিবর্গ। তারা দেশ ও সমাজের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয়ে আমাদেরকে প্রতিবেদন ও সংবাদ প্রদান করলে আমরা সেগুলোকে প্রকাশ করে থাকি।