সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে মহাজোটের পুনর্গঠিত নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রীদের দফতর বণ্টন চূড়ান্ত করা হয়েছে। এতে প্রধানমন্ত্রীসহ ২৯ সদস্যের মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে নতুন ছয়জনসহ ২১ জন মন্ত্রী এবং নতুন দুজনসহ সাতজন প্রতিমন্ত্রী। বিরোধী দল বলছে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী যে সরকার গঠিত হয়েছে তা সর্বদলীয় নয়। এটি মূলত নৌকা আর লাঙ্গলের সরকার। দৃশ্যত ৪টি দলের সরকারের কথা বলা হলেও সংসদীয় ব্যবস্থার নির্বাচনে দলীয় প্রতীকই হচ্ছে দলের পরিচয়। নবম জাতীয় সংসদে নৌকা আর লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচিতরাই সর্বশেষ পুনর্গঠিত মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। এটাকে সর্বদলীয় সরকার বলা যায় না।
এদিকে বাংলাদেশের আগামী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে প্রধান দুই দলের বিপরীতমুখী অবস্থান এবং ক্রমবর্ধমান সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে মার্কিন কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার বিরোধী দলকে বাদ দিয়ে নির্বাচনের যে চেষ্টা করছে তাতে পরিস্থিতি আরও সংঘাতময় হয়ে উঠবে। এই সহিংস পরিস্থিতিতে সন্ত্রাসবাদ মাথাচাড়া দিতে পারে বাংলাদেশে। এদিকে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানে এবং সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সকল রাজনৈতিক দল ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আস্থাশীল ও নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের আহ্বান জানানোর প্রস্তাব অনুমোদন করেছে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ পার্লামেন্ট ইউরোপীয় পার্লামেন্ট।
এ অবস্থায় নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে সর্বাত্মক আন্দোলনের দিকেই এগোচ্ছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দলের সাক্ষাতের পরদিন সংসদে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের পর দলটির নেতারা মনে করছেন, আওয়ামী লীগ সংলাপ বা সমঝোতা চায় না। তাই দাবি আদায়ে সরকারের ওপর বড় ধরনের চাপ প্রয়োগের জন্য কঠোর আন্দোলনের বিকল্প নেই। বর্তমান এ রাজনৈতিক সংকটের ফলে দেশে নানা জটিলতা, অস্থিরতা ও সংঘাতে অবধারিত বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট সমাজচিন্তক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। সাম্প্রতিক দেশকাল-এর পক্ষ থেকে সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন মনীরুজ্জামান।
মনীরুজ্জামান: একদিকে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন। দুই দলের মধ্যে সংলাপের উদ্যোগ। এরই মাঝে নির্বাচনের প্রস্তুতি। সার্বিক অবস্থাকে কিভাবে বিশ্লেষণ করবেন?
আবুল কাসেম ফজলুল হক: সর্বদলীয় সরকার নিয়ে প্রধান বিরোধী দলের সঙ্গে কোনোরূপ আলোচনা ছাড়াই মন্ত্রিপরিষদে নতুন করে আটজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে একে বলা হচ্ছে সর্বদলীয় সরকার। কিন্তু বিদ্যমান বাস্তবতায় একে বর্তমান মন্ত্রিপরিষদের বর্ধিত রূপ বলাই ভালো। এমনকি একে আলাদা করে নির্বাচনী সরকার বলারও সুযোগ নেই। প্রধান বিরোধী দলের অংশগ্রহণ ছাড়া সর্বদলীয় সরকার তো নয়ই।
আওয়ামী লীগ পঞ্চদশ সংশোধন অনুযায়ী নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী কখনো কখনো বলছেন, বাংলার মাটিতে নির্বাচন হবেই। এমন কোনো শক্তি নেই যা নির্বাচন বন্ধ করতে পারে। তাছাড়া এ দলের নেতারা বলছেন, বিএনপি নির্বাচন প্রতিহত করার ক্ষমতা রাখে না। তাদের হুমকি-ধামকি অযথা। অপরদিকে বিএনপি থেকে বলা হচ্ছে, পঞ্চদশ সংশোধনী একদলীয় বাকশাল কায়েম করার জন্য করা হয়েছে। এ ব্যবস্থায় সুষ্ঠু, অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়া সম্ভব না। তাই নির্বাচন করেতে দেওয়া হবে না। জনগণকে সাথে নিয়ে প্রহসনের নির্বাচন প্রতিহত করা হবে। একতরফা নির্বাচন করে সরকারকে পুনরায় কোনোভাবেই ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হবে না। তাদের দাবী, নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে তার অধীনে নির্বাচন করতে হবে। আওয়ামী লীগ একতরফা নির্বাচন করার আয়োজন করছে। অন্যদিকে বিএনপি একতরফা নির্বাচনকে প্রতিহত করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাচন কমিশন এরই মাঝে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফলশ্রুতিতে দেশে অনিবার্যভাবে এ অশান্তির সৃষ্টি হয়েছে। সিভিল সোসাইটি মহল থেকে ক্রমাগত বলা হচ্ছে বিএনপিকে বাইরে রেখে একতরফা নির্বাচন করা হলে দেশে রক্তক্ষয়ী অবস্থার সৃষ্টি হবে। বিশিষ্ট নাগরিকরা সব দলের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে নির্বাচন করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ ইউরোপের বেশিরভাগ দেশ বাংলাদেশের রাজনীতির গতি-প্রকৃতি গভীরভাবে লক্ষ্য করছে। মার্কিন কংগ্রেস এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন জানিয়ে দিয়েছে সব দলের অংশগ্রহণে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে হবে। বিশেষ করে প্রধান বিরোধীদল বিএনপি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। ভারতও সব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচন করার কথা বলছে। খবরে প্রকাশ, ভারত চাইছে আওয়ামী লীগ নির্বাচিত হয়ে আবার ক্ষমতায় আসুক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চাইছে বিএনপি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসুক। বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে এ মুহূর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভীষণভাবে সক্রিয়।
মনীরুজ্জামান: বর্তমান অবস্থায় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে তার কোনো সমাধান আশা করা যায়?
আবুল কাসেম ফজলুল হক: শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়া জেদাজেদির এবং একরোখা যে অবস্থান নিয়ে আছেন তাতে তাদের মধ্যে সমঝোতার কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। টকশো বা বিভিন্ন সেমিনারে সিভিল সোসইটি এ নিয়ে আশাবাদের কখা শোনালেও তা অনেকটা কৃত্রিম। দুই নেত্রী টেলিফোনে যেভাবে কথা বলেছেন তা শুনেই আমরা অনুমান করতে পারি তারা দুজন কোনো সংলাপে মুখোমুখি হলে একইভাবে কথা বলবেন। ফলে সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচনের আশা করা কঠিন। দুজনই যে রকম একরোখা অবস্থান নিয়ে চলছেন তাতে কোনো একজনের পক্ষেই নমনীয় কিংবা মুল্যবোধ এবং যৌক্তিক পথ অবলম্বন করা সম্ভব না। শেখ হাসিনা যা কিছু করছেন বা ভাবছেন তার সব কিছুই যে কোনোভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য। আর খালেদা জিয়ার ধারণা পক্ষপাতমুক্ত নির্বাচন হলে বিএনপি বিরাট ব্যবধানে জয়লাভ করবে। আর এ কারণে তাদের দাবী হাসিনা মুক্ত নির্বাচন। তবে সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের জন্য শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিলে এবং প্রধানমন্ত্রী এবং অন্য মন্ত্রীদের মধ্যে ক্ষমতা পুনর্বিন্যাস করা হলে বিএনপি নির্বাচনকালীন সরকারে যোগ দিতে পারে এবং নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। কিন্তু শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়ার কোনো সম্ভাবনা দেখা যায় না।
মনীরুজ্জামান: যদি আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মধ্যে সমঝোতা না হয় তা হলে নির্বাচন প্রতিহত করার জন্য বিএনপি যে আন্দোলন করবে তাতে অনেক রক্তপাতের আশঙ্কা করা হয়। যদি অবস্থা সে রকম হয় তাহলে এর সম্ভব্য পরিণতি কি?
আবুল কাসেম ফজলুল হক: রক্তক্ষয়ী সংঘাত যাতে না হয় তার জন্য সরকারকে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে হবে। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি আর আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগের কর্মীবাহিনী দিয়ে তা হবে না। তাতে অবস্থার আরো অবনতি হবে। দুই পক্ষের রাজপথ দখলের লড়াইয়ে সাধারণ মানুষের জীবন যাবে। তাই সব পক্ষকে যুক্তি এবং মুল্যবোধের রাজনীতি করতে হবে। সবাইকে মনে রাখতে হবে রাজনৈতিক এ অস্থিরতার সুযোগ নেওয়ার জন্য দেশে এবং দেশের বাইরে একটি গোষ্ঠী অপেক্ষায় আছে। যদি তাই হয় তাহলে গণতন্ত্র বাধাগ্রস্ত হবে।
মনীরুজ্জামান: মূল্যবোধ ও যুক্তির রাজনীতির পথে দুই দলের অবস্থান কোথায় ?
আবুল কাসেম ফজলুল হক: মূল্যবোধ ও যুক্তির পথ অবলম্বন না করায় দেশ সংঘাত ও সহিংসতার দিকে অবধারিতভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতা ছাড়াই একটি নির্বাচনের পথে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। জনগণ উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত। বাংলাদেশে তো বটেই, আন্তর্জাতিকভাবেও এই নির্বাচন অগ্রহণযোগ্য হবে। যদি প্রাণহানি হতে থাকে তাহলে পশ্চিমা বিশ্ব ও বৃহৎ শক্তিবর্গ জাতিসংঘকে নিয়ে মানবাধিকার রক্ষার নামে এগিয়ে আসবে। সংঘাত বাধলে বাংলাদেশসহ এই অঞ্চল অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে, সহিংসতা বাড়বে এবং মানবাধিকারের লঙ্ঘন চরম রূপ নেবে। নির্বাচনোত্তর সহিংসতার সম্ভাব্য পরিণতি মারাত্মক হতে পারে। তখন রক্তক্ষয়ী পরিবেশের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে তারা বাধা দেবে। জাতিসংঘের বাধা অতিক্রম করে কি সরকার নির্বাচন করে ফেলতে পারবে? যদি নির্বাচন করে হাসিনা পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় আসেন তবে সে সরকার কি টিকে থাকবে? সাধারণ হিসেবেই বলা যায় আন্তর্জাতিক শক্তির প্রভাব উপেক্ষা করা আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর পক্ষে অসম্ভব।
মনীরুজ্জামান: তাহলে পরবর্তীতে কি হতে পারে?
আবুল কাসেম ফজলুল হক: আমাদের সামনে সিরিয়ার দৃষ্টান্ত আছে। সিরিয়ায় পশ্চিমা শক্তিসমূহের সমর্থিত যে সরকার বিরোধী শক্তি আন্দোলন করে আসছে তার প্রধান সংগঠন আল কায়দা। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র ও তার সহযোগী শক্তিসমূহের সমর্থন নিয়ে হয়তো জামায়াতে ইসলামী আল কায়দার ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে। শেখ হাসিনা বাশার আল আসাদের মতো ক্ষমতা রক্ষা করে কতটা টিকে থাকতে পারবে তা এখন বলা যায় না। তবে সে রকম যুদ্ধাবস্থা দেখা দিলে জনগনের দুর্ভোগ ভীষণভাবে বাড়বে। একটা পর্যায়ে সাধারণ জনগণ সব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসবে এবং সব অনিষ্টকে প্রতিহত করবে। বাইরের শক্তির বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করাকে দুর্ভাগ্যজনক আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, এটা খুবই হতাশাজনক যে বিদেশি শক্তিগুলো আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নাক গলাচ্ছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দেউলিয়াপনার ও দুর্বৃত্তায়নের সুযোগে তারা এসব করতে পারছে।
মনীরুজ্জামান: প্রতিবার নির্বাচনের আগে জনগণ বারবার ভুগতে থাকে। রাজনীতির স্বীকার হয় সাধারণ জনগণ। এ অবস্থায় তাদের কি করার আছে?
আবুল কাসেম ফজলুল হক: জনগণ ভুগবে কারণ তারা সৎ, যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করতে পারে না। তারা বেশিরভাগ সময় হুজুগে সাড়া দেয়। আশির দশক থেকে রাজনীতিতে হীন-স্বার্থান্বেষীরা জনগণকে মাতিয়ে হুজুগ সৃষ্টি করে তাদের হীন স্বার্থ হাসিল করে আসছে। জনগণ বারবার ভুল করে স্বেচ্ছাচারী নেতার জন্ম দিয়ে তারা নিজেদের দুর্ভোগ সৃষ্টি করে। তাই তাদের আরো বাস্তবভিত্তিক, ন্যায়সংগত আচরণ করতে হবে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে। সমস্যা আমাদের দুটি রাজনৈতিক দলেরই সৃষ্টি। নাগরিকরা দলগুলোর সিদ্ধান্তের শিকার বা ভুক্তভোগী। তাই দলগুলো যেন দ্রুততার সঙ্গে নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কিত সমস্যাটির সমাধান করে নাগরিকদেরকে স্বস্তি দেয়। একই সঙ্গে এ দাবিতে নাগরিকদেরকেও সোচ্চার হতে হবে। কারণ নাগরিকরা সক্রিয়, সোচ্চার এবং প্রতিবাদী না হলে রাজনীতিবিদরা এ দাবির প্রতি ভ্রুক্ষেপও করবেন না।
মনীরুজ্জামান: যে সংকটের মধ্য দিয়ে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে তা থেকে পরিত্রাণের উপায় কি?
আবুল কাসেম ফজলুল হক: মুক্তি পেতে হলে নতুন রাজনীতি লাগবে। নতুন রাজনৈতিক নেতৃত্ব লাগবে। যতদিন নতুন রাজনীতি ও নতুন নেতৃত্ব না আসবে ততদিন শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার বংশানুক্রমিক রাজনীতি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না। দেশে চিন্তাশীল অনেক মানুষ আছে যারা মুক্ত ও বাস্তব চিন্তার মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিতে পারে। তবে শুধু চিন্তাশীল লোক হলেই হবে না একই সাথে সৎ ও ন্যায়পরায়ণ হতে হবে। বর্তমান আর্থ-সামাজিক অবস্থায় সে রকম লোক কাজ করতে পারবে কিনা সেটা অবশ্য ভিন্ন আলোচনার বিষয়। আমাদের সব আলাপ-আলোচনাই যেন আজ নির্বাচনের মধ্যে আটকে গেছে। অবশ্যই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন যথাসময়ে হতে হবে, সবার অংশগ্রহণে হতে হবে এবং নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবেই হতে হবে। কিন্তু সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন হলেই আমাদের সমস্যার সমাধান হবে না। নির্বাচনের পরই পরাজিত দল নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলতে এবং ফলাফল মেনে নাও নিতে পারে। তাই স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করার লক্ষ্যে আমাদের দুই প্রধান দলের বাইরেও বৃহত্তর পরিসরে সংলাপ হতে হবে। অন্যান্য রাজনৈতিক দল, ব্যবসায়িক সম্প্র্রদায়, গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা এ সংলাপে অংশ নিতে পারেন।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: আবুল কাসেম ফজলুল হকের এই সাক্ষাতকারটি “রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিতে দেশে এবং দেশের বাইরে একটি গোষ্ঠী অপেক্ষায় আছে” শিরোনামে সাম্প্রতিক দেশকাল পত্রিকায় ২৮ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে প্রকাশিত হয়। সেখান থেকে ফুলকিবাজ ডট কমে শিরোনামে কিছুটা পরিবর্তন করে প্রকাশ করা হলো।
আবুল কাসেম ফজলুল হক (৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৪০) বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত লেখক, প্রাবন্ধিক, গবেষক, অনুবাদক, ঐতিহাসিক, সমাজবিশ্লেষক, সাহিত্য সমালোচক ও রাষ্ট্রচিন্তাবিদ। ‘আশা আকাঙ্ক্ষার সমর্থনে’ ও ‘রাষ্ট্রচিন্তায় বাংলাদেশ’ তাঁর গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ।