সাম্যের নয়া উদারবাদী ভাবনা হচ্ছে ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদী মুক্ত বাজারী প্রতিযোগিতা

সাম্যের নয়া উদারবাদী ভাবনা বা সাম্যের নব্য উদারতাবাদী ধারণা (ইংরেজি: Neo-liberal ideas on equality) হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীকালে সাম্রাজ্যবাদী ও পুঁজিবাদী আধুনিক বর্বর রাষ্ট্রসমূহের শোষণ ও গণহত্যার সমর্থনকারী বুদ্ধিজীবীদের ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদী মুক্ত বাজার অর্থনীতি টিকিয়ে রাখার সাম্য সংক্রান্ত চাপাবাজী বকবকানি।

সাম্যের নয়া উদারবাদী ভাবনা

সাম্যের উদারবাদী ভাবনা এবং সাম্যের মার্কসবাদী ভাবনা সরাসরি বিরোধীতার মুখে পড়েছে এই নয়া-উদারবাদী প্রতিবিপ্লবী গণশত্রুদের ব্যাখ্যায়। এই আধুনিক বর্বরতার সমর্থকদের মতে, সমাজের বাস্তব ও যুক্তিসঙ্গত পুনর্গঠন হবে সাম্যের মূল্যে নয়, স্বাধীনতার কথা মাথায় রেখে। উদারবাদের প্রচলিত ফরাসি, ব্রিটিশ বা স্কটিশ ধারায় নয়, এমনকি হবহাউস, গ্রিন বা কল্যাণকামী রাষ্ট্রভাবনা নয়, এঁদের কাছে প্রাধান্য পেল ব্যক্তি স্বাধীনতাকে প্রসারিত করার প্রয়োজনে রাষ্ট্রকে প্রয়োজন মতো ব্যবহার করার নীতি। 

সমতার নীতি নয়, মুক্ত বাজার হলো নয়া-উদারবাদীদের কাছে স্বাধীনতার শর্ত। আধুনিক বর্বরতার মুখরোচক তাত্ত্বিক জন রলস (২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯২১ – ২৪ নভেম্বর, ২০০২) স্বাধীন ও স্বতঃস্ফূর্ত জীবনের জন্য সাংবিধানিক গণতন্ত্রের নীতিতেই আস্থা প্রকাশ করেছেন। নজিক মনে করেন বোঝাপড়া ও সহযোগিতার নীতি ছেড়ে উদ্যমী ব্যক্তির সঠিক ভাবে অর্জিত সম্পত্তিকে সুরক্ষিত করার কাজে রাষ্ট্র হবে সুরক্ষার শক্তি (Protective agency)। অন্যদিকে আধুনিক বর্বরতার আরেক সমর্থক রবার্ট নজিকের (১৬ নভেম্বর, ১৯৩৮ – ২৩ জানুয়ারি, ২০০২) মতে, নৈতিকতার এই নতুন সমাজে সমতা নয়, প্রতিযোগিতা, উদ্যোগ, ন্যায্যভাবে সম্পত্তি অর্জনই হলো প্রধান কাজ। রাষ্ট্র এই মুক্ত পরিবেশ গড়ে দেবার কাজে নিযুক্ত থাকবে। ইতিপূর্বে ফ্রিডরিখ হায়েকও (৮ মে ১৮৯৯ – ২৩ মার্চ ১৯৯২) বলেছেন প্রতিযোগিতার মধ্যেই আছে সামাজিক উন্নতি, অগ্রগতির উপযুক্ত পথ (হায়েক, The Constitution of Liberty 1961, Law, Legislation and Liberty, 1982).

রাজনীতি বিষয়ে অনুপ সাদির একটি সাক্ষাতকার দেখুন

প্রশ্ন হল নজিক বা হায়েকের তত্ত্ব সাম্যের তত্ত্ব নয়, স্বাতন্ত্র্যবাদী ও ভোগবাদী জীবনের এক ধর্ম। এঁদের তত্ত্বে রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক হলেও প্রতিযোগিতা ও মুক্ত সমাজের স্বার্থে সীমিত। সমতাভিত্তিক স্বাধীনতার এক তত্ত্ব জন রলস পেশ করেছেন ঠিকই তবে সেখানে মার্কিন গণতন্ত্রের উদারবাদী নীতিই হয়েছে ন্যায় তথা সাম্যভিত্তিক সমাজের আদর্শ।

কৌতূহলের বিষয় হলো নজিক বা হায়েকের ভাবনায় রলসীয় নীতি একেবারেই মূল্য পায় না, মূল্য পায় না সমান সংরক্ষণের নীতি বা নাগরিক বোঝাপড়া ও সহযোগিতার নীতি। ঘুরে ফিরে আসে মুক্ত সমাজ, ব্যক্তিগত সম্পত্তির স্বার্থ, যা মার্কসীয় ধারার তো বটেই, রলসীয় ধারার সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে অবস্থান করে। বিস্ময়কর হলো সাংবিধানিক রাষ্ট্র হবে মুক্ত বাজারের গ্যারান্টি—সমতা নয়, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যই নতুন সমাজের শক্তি। প্রশ্ন ওঠে এই নতুন সমাজের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে, এই নতুন সমাজের প্রতি মানুষের আনুগত্যের ভিত্তি নিয়ে।

আরো পড়ুন

তথ্যসূত্র

১. দেবাশীষ চক্রবর্তী, রাষ্ট্রচিন্তার বিষয়সমূহ, নেতাজী সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় পুনর্মুদ্রণ ডিসেম্বর ২০১৯, পৃষ্ঠা ৫৩।

Leave a Comment

error: Content is protected !!