ময়মনসিংহে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন

সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের উচ্ছেদ করে শ্রমিক-কৃষক-জনগণের সরকার ও সংবিধান প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে গত ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে ময়মনসিংহ কার্যালয়ে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে। জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ’র ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ময়মনসিংহ জেলা এনডিএফ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তাগণ বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রকে উৎখাত করে গণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করার আহ্বান জানান।

সংগঠনের আহ্বায়ক মাহতাব হোসেন আরজুর সভাপতিত্বে জেলা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভা পরিচালনা করেন জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক এডভোকেট হারুন-অর-রশিদ। সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রগতিশীল লেখক ও বুদ্ধিজীবী অনুপ সাদি, জাতীয় ছাত্রদলের জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক জোবায়ের আহমেদ উৎসব, সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজের প্রভাষক রেজাউল করিম, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির জেলা সংগঠক আজহারুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের জেলা সাধারণ সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন।

আলোচনা সভায় অনুপ সাদি বলেন গণতান্ত্রিক বিপ্লবের প্রধান শর্ত হচ্ছে ভূমির উপর কৃষকের মালিকানা, যা এখনো বাংলাদেশে কার্যকর নয়। এছাড়াও এদেশ হতে বিভিন্ন ধরনের পরজীবীদের নিশ্চিহ্ন করা যায়নি। তাই গণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করবার গুরুদায়িত্ব এখন আমাদের কাঁধে রয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য বক্তাগণ বলেন, সাম্রাজ্যবাদ ও দেশীয় মুৎসুদ্দি পুঁজির ধারক বাহকরা ১৯৪৭ এবং ১৯৭১ সালে দুই দুইবার স্বাধীনতার প্রচার দিলেও প্রকৃতপক্ষে সাম্রাজ্যবাদ সামন্তবাদকে উচ্ছেদ করে এদেশে কখনো জাতীয় মুক্তি, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র আসেনি। ফলে জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব এদেশে অসমাপ্ত থেকে গেছে।

আলোচনা সভায় বক্তাগণ আরো বলেন, সাম্রাজ্যবাদীদের আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্বের প্রভাবে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি দিনকে দিন অস্থিতিশীল হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে বিনা বিচারে রাষ্ট্রীয় হত্যা ও জনজীবনের নিরাপত্তার অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

গণতান্ত্রিক বিপ্লবের বক্তাগণ আরো বলেন, কৃষি খাতকে স্থবির করে রাখা হচ্ছে, বাজেটে যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে তা মূলত কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ ও আধুনিকায়নের নামে অবাধ লুটপাটের জন্য। এছাড়াও দেশীয় মুৎসুদ্দি শাসকগোষ্ঠীর কর্ম সংস্থান সৃষ্টি ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের জন্য কৃষি ভিত্তিক শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারেও কোনো সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নেই। শুধু তাই নয় প্রতি অর্থ বছরে উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নের নামে সরকার দলীয় এমপি-মন্ত্রী, নেতা-কর্মি, আমলাদের লুটপাটের এক মহাউৎসব চলে। অন্যদিকে সকল বাজেটই আমাদের দেশের কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ জাতীয় ও জনস্বার্থের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো শুধু উপেক্ষিতই হয় না সাম্রাজ্যবাদী প্রভুর স্বার্থে লগ্নিপুঁজির সর্বোচ্চ মুনাফার হাতিয়ারে পরিণত হচ্ছে। সাম্রাজ্যবাদীদের বিশ্বযুদ্ধ প্রস্তুতির প্রেক্ষিতে প্রতিরক্ষা খাতের বাজেট দিন দিন বৃদ্ধি করে চলেছে।

আরো পড়ুন

সবশেষে নেতৃবৃন্দ বলেন, শ্রমিক-কৃষক তথা ব্যাপক জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার পূর্ব শর্ত হচ্ছে এক সাম্রাজ্যবাদের বদলে আরেক সাম্রাজ্যবাদ নয়, এক দালালের পরিবর্তে আরেক দালাল নয়। প্রয়োজন হচ্ছে সকল সামন্তবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালাল বিরোধী শ্রমিক-কৃষক-জনগণের রাষ্ট্র-সরকার ও সংবিধান প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম বেগবান করা।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: খবরটি ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ তারিখে ময়মনসিংহ থেকে প্রকাশিত দৈনিক জাহান পত্রিকার প্রথম ও তৃতীয় পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়। ফুলকিবাজ.কমে খবরটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনা করে ১২ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে পুনরায় সামান্য বর্ধিত আকারে প্রকাশ করা হলো।

Leave a Comment

error: Content is protected !!