জাতি কাকে বলে?

জাতি (ইংরেজি: Nation) হচ্ছে ভাষা, ইতিহাস, নৃগোষ্ঠী, সংস্কৃতি এবং/অথবা সমাজের মতো ভাগ করা বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়ের ভিত্তিতে গঠিত মানুষের একটি সম্প্রদায়। একটি জাতি হচ্ছে এইভাবে এসব বৈশিষ্ট্যগুলি দ্বারা সংজ্ঞায়িত হিসাবে মানুষের একটি গোষ্ঠীর সম্মিলিত পরিচয়। কিছু জাতিকে নৃগোষ্ঠীর সাথে সমীকরণ করা হয় এবং কিছুকে একটি সামাজিক ও রাজনৈতিক সংবিধানের সাথে যুক্ত করা হয়। একটি জাতি সাধারণত একটি নৃগোষ্ঠীর চেয়ে বেশি প্রকাশ্যে রাজনৈতিক হয়। একটি জাতিকে একটি সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক সম্প্রদায় হিসাবেও সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে যেটি তার স্বায়ত্তশাসন, ঐক্য এবং বিশেষ স্বার্থ সম্পর্কে তাঁদেরকে সচেতন করেছে।

পণ্ডিতদের মধ্যে ঐকমত্য হল যে জাতিগুলি সামাজিকভাবে নির্মিত এবং ঐতিহাসিকভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ইতিহাস জুড়ে, মানুষ তাদের আত্মীয় গোষ্ঠী এবং ঐতিহ্য, আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ এবং তাদের স্বদেশের সাথে একটি সংযুক্তি বোধ করেছে। কিন্তু জাতীয়তাবাদ হচ্ছে এই বিশ্বাস যে রাষ্ট্র এবং জাতি একটি জাতিরাষ্ট্র হিসাবে জোটবদ্ধ হওয়া উচিত। যদিও এই ধারণা অষ্টাদশ শতকের শেষ পর্যন্ত একটি বিশিষ্ট আদর্শ হয়ে উঠতে পারেনি। .

একটি গান শুনুন ও নাচ দেখুন

নির্দিষ্ট কোনও ভৌগোলিক এলাকার জনগণ যখন একই বংশ, ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতির ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ এবং সুখ-দুঃখ, ত্যাগ, আবেগ, ঐতিহ্য ও গৌরববোধে অভিন্ন হৃদয় হয়ে একই সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক লক্ষ্যে উপনীত হতে চায় এবং অন্যান্য জাতিত্ব থেকে নিজেদের পৃথক মনে করে, ও সংগঠিতভাবে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য সচেষ্ট হয় তখন তাদের জাতি সত্তা দানা বাঁধে। কিন্তু কোনও জাতির সার্বভৌমত্ব থাকে না। সার্বভৌম ক্ষমতা আয়ত্ত হলে জাতি একটি রাষ্ট্র হিসেবে পরিগণিত হয়। জাতি সম্পূর্ণ স্বাধীন হলে সেটা একটি রাষ্ট্র গঠন করে। তবে জাতিগড়ে উঠলেই যে রাষ্ট্র গড়ে উঠবে তার নিশ্চয়তা নেই। কোনও জাতি সম্পূর্ণ স্বাধীন না হলেও জাতিত্ব থাকে, কিন্তু রাষ্ট্রকে স্বাধীন ও সার্বভৌম হতেই হবে। তবে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলেও স্বতন্ত্র জাতিত্বের ভিত্তিতে জাতি গঠিত নাও হতে পারে। আবার রাষ্ট্রের অবলুপ্তি ঘটলে জাতির অস্তিত্ব চলে যায় না। ইদানীং স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রকে জাতি হিসেবে অভিহিত করা হয় যার ভিত্তিতে গড়ে উঠছে ইউনাইটেড নেশনস অর্গানাইজেশন (রাষ্ট্রসংঘ)।

জাতির উল্লিখিত বৈশিষ্ট্য বা লক্ষণগুলি সর্বত্র সমানভাবে খাটে না। একই জাতিকে যেমন একাধিক রাষ্ট্রে বিভক্ত দেখা যায়, তেমনি একই রাষ্ট্রে দুই বা বহু জাতির মিলিত অবস্থান চোখে পড়ে। ফরাসি ভাবুক রেনা নেশন অর্থাৎ জাতির উপাদান হিসাবে ভাষা, ধর্ম, সংস্কৃতি ও ভৌগোলিক ঐকাত্ম্যকে মানতেন না। তাঁর মতে সবার মনে অতীতের স্মৃতিসম্পদের গরিমাবোধ এবং একসঙ্গে বসবাসের দৃঢ় ইচ্ছাই জাতিগঠনের শ্রেষ্ঠ উপাদান।

আরো পড়ুন

তথ্যসূত্র

১. সৌরেন্দ্রমোহন গঙ্গোপাধ্যায়, রাজনীতির অভিধান, আনন্দ পাবলিশার্স প্রা. লি. কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ, জুলাই ২০১৩, পৃষ্ঠা ১১২-১১৩।

1 thought on “জাতি কাকে বলে?”

Leave a Comment

error: Content is protected !!