নারীমুক্তির প্রশ্নে লেনিনবাদ (ইংরেজি: Leninism on Freedom of Women) প্রলেতারিয়েতের মুক্তির অধীন নারী ও পুরুষ উভয়ের মুক্তিকে সূত্রায়িত করে এবং সামন্তবাদ, পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ ও সব ধরনের শোষণ, নিপীড়ন ও অধীনতা থেকে মুক্তির নির্দেশনা দেয়। লেনিনবাদের প্রবক্তা ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন নারীমুক্তির ক্ষেত্রে মূল সূত্রসমূহ লিপিবদ্ধ করে গেছেন। তিনি দেখিয়েছেন
“দুনিয়ার সমস্ত পুঁজিবাদি, বুর্জোয়া প্রজাতন্ত্রেই শিক্ষা, সংস্কৃতি, সভ্যতা, স্বাধীনতা_এইসব জাঁকালো কথার সংগে সংগে থাকে মেয়েদের অসমান অবস্থার অত্যন্ত ঘৃণিত, বিরক্তিকর, নোংরা এবং পাশবিক রকমের আইন।”[১]
লেনিন নারীকে সাংসারিক বাঁদিগিরি একঘেয়ে কাজ থেকে মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন, তাঁর কাছে নারীমুক্তি ছিল ক্ষুদে মালিকানার ক্ষুদে কাজ থেকে বৃহৎ সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির কর্মী হিসেবে নারীকে গড়ে তোলা। পুঁজিবাদ যেখানে নারীর শ্রম ও নারীর দেহকেই পণ্য করেছে সেখানে লেনিনের বৈপ্লবিক সংগ্রাম ছিল নারীকে তুচ্ছ ঘরকন্নার কাজ থেকে মুক্ত করা।
“সমস্ত সভ্য দেশে, এমনকি সবচেয়ে অগ্রণী দেশেও মেয়েদের অবস্থা এমনই যে তাদের সাংসারিক বাঁদি বলা হয়, আর সেটা অকারণে নয়। কোনো পুঁজিবাদি রাষ্ট্রেই এমনকি সবচেয়ে মুক্ত প্রজাতন্ত্রেও নারীদের পূর্ণ সমাধিকার নেই।”
লেনিন সেই মানুষ, যিনি নারীকে পণ্য করতে চাননি। লেনিন সেই মানুষ, যিনি নারীকে দাসিগিরি থেকে মুক্ত করে সমাজের উৎপাদনশীল কাজে যুক্ত করেছেন, পুঁজিবাদীর শৃঙ্খল থেকে বেরিয়ে নারীকে অর্থনৈতিক মুক্তির পথ দেখিয়েছেন। লেনিন সেই মানুষ যিনি নারীকে রান্নাঘর ও আঁতুড়ঘর থেকে কারখানায় এনেছেন, মিছিলে এনেছেন, পাঠশালায় এনেছেন। তিনি বলেছেন,
“বুর্জোয়া গণতন্ত্র শুধু মুখে মুখেই সাম্য ও স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি দেয়। কাজের বেলায় একটি বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক দেশে, এমন কি সবচেয়ে উন্নত দেশেও মানবজাতির অর্ধেক যে নারী সমাজ তাদের আইনত পুরুষের সমান অধিকার অথবা পুরুষদের শাসন ও দমন থেকে মুক্তি দেয়নি।
বুর্জোয়া গণতন্ত্র শুধু জাঁকালো গালভরা কথার বড় বড় প্রতিশ্রুতির আর স্বাধীনতা ও সাম্যের নামে আড়ম্বর ভরা ধ্বনির গণতন্ত্র। কিন্তু কাজের বেলায় এই গণতন্ত্র নারীদের স্বাধীনতাহীনতা ও নিকৃষ্ট অবস্থা, এবং শ্রমিক ও শোষিতের স্বাধীনতাহীনতা ও নিকৃষ্ট অবস্থাকে ঢাকা দিয়ে রাখে।”[৩]
নারীমুক্তির প্রশ্নে লেনিনসহ সকল মার্কসবাদীগণ দেখান যে, পুরুষতান্ত্রিক সমাজে লেখা দিয়ে সমাজ পাল্টায় না। সমাজ পাল্টায় অর্থনৈতিক নিয়মে। সেই অর্থনীতি সৃজন করতে হবে যেখানে নারীরা হবে সমাজের অর্থনৈতিক চালিকাশক্তিতে পুরুষের সমান অংশীদার।
তথ্যসূত্র
১. ভি আই লেনিন, সোভিয়েত রাজ ও মেয়েদের অবস্থা।
২. ভি আই লেনিন, নারী-শ্রমিকদের প্রথম সারা রুশ কংগ্রেসে বক্তৃতা; ১৯ নভেম্বর, ১৯১৮
৩. ভি. আই. লেনিন, নারীমুক্তি, প্রগতি প্রকাশন, মস্কো; তারিখহীন, পৃষ্ঠা, ৮৭।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক ও গবেষক। তাঁর লেখা ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা এগারটি। ২০০৪ সালে কবিতা গ্রন্থ প্রকাশের মাধ্যমে তিনি পাঠকের সামনে আবির্ভূত হন। ‘সমাজতন্ত্র’ ও ‘মার্কসবাদ’ তাঁর দুটি পাঠকপ্রিয় প্রবন্ধ গ্রন্থ। সাহিত্য ও রাজনীতি বিষয়ে চিন্তাশীল গবেষণামূলক লেখা তাঁর আগ্রহের বিষয়।