ধর্ম প্রসঙ্গে গ্রন্থের রুশ সংস্করণের ভূমিকা

এই প্রবন্ধ সংকলনের লেখা আর বক্তৃতাগুলিতে লেনিন ধর্ম বিষয়ে প্রলেতারিয়েতের পার্টির কাজগুলি তুলে ধরেছেন। তিনি পুরোপুরি খুলে ধরেছেন ধর্মের সামাজিক শিকড়; ধর্ম আর বিজ্ঞানসম্মত বিশ্ববীক্ষা কিছুতেই খাপ খাওয়ান যায় না তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন; আর দেখিয়েছেন কিভাবে অতিক্রম করা যায় ধমীয় বদ্ধধারণা।

লেনিন বলেছেন, গণতন্ত্রের জন্যে সংগ্রামে প্রলেতারিয়েতের পার্টির একটা মূল দাবি হলো বিবেকের স্বাধীনতা, রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে এবং ধর্ম থেকে বিদ্যালয়কে বিচ্ছিন্ন করা। রাষ্ট্রের দিক থেকে দেখলে, ধর্মকে ব্যক্তির নিজস্ব ব্যাপার বলে ঘোষণা করা উচিত। 

তার মানে অবশ্য এই নয় যে, প্রলেতারিয়েতের পার্টি ধর্ম সম্পর্কে নির্বিকার থাকতে পারে। প্রলেতারিয়েতের পার্টির দৃষ্টিতে ধর্ম নিজস্ব ব্যাপার হতে পারে না, এই মার্কসীয় নীতিটিকে লেনিন বিকশিত করেন। প্রলেতারিয়েতের পাটির যথাযথ বিজ্ঞানসম্মত বিশ্ববীক্ষায় ধর্মের বিরুদ্ধে অনমনীয় এবং সুমঞ্জস মতাদর্শগত সংগ্রাম অবশ্যপ্রয়োজনীয়। 

লেনিন লিখেছেন, সমাজতান্ত্রিক প্রলেতারিয়েতের পার্টি যতখানি সংশ্লিষ্ট তাতে ধর্ম নিজস্ব ব্যাপার নয়। আমাদের পার্টি হলো শ্রমিক শ্রেণির মুক্তির জন্যে শ্রেণি-সচেতন, আগুয়ান যোদ্ধাদের সমিতি। ধর্মবিশ্বাসের আকারে শ্রেণি-চেতনার অভাব, অজ্ঞতা কিংবা তমসবাদ সম্বন্ধে এমন সমিতি নির্বিকার থাকতে পারে না, নির্বিকার থাকা চলতে পারে না। আমরা চাই রাষ্ট্রের সঙ্গে ধর্মের পূর্ণ কাটান-ছিঁড়েন, যাতে বিশুদ্ধ মতাদর্শগত এবং শুধু মতাদর্শগত অস্ত্রেরই সাহায্যে, আমাদের প্রকাশন আর মুখের কথা দিয়ে ধর্মীয় কুয়াশার বিরুদ্ধে আমরা লড়তে পারি। শ্রমিকদের উদ্দেশে প্রত্যেকটা ধমীয় ধোঁকার বিরুদ্ধে ঠিক এইরকম সংগ্রাম চালাবার জন্যে আমরা প্রতিষ্ঠা করি আমাদের সমিতি –  রুশ সোশ্যাল-ডিমোক্রাটিক শ্রমিক পার্টি। আর আমাদের পক্ষে মতাদর্শগত সংগ্রাম নিজস্ব ব্যাপার নয়, এটা গোটা পার্টির ব্যাপার, সমগ্র প্রলেতারিয়েতের ব্যাপার।

আরো পড়ুন

সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতন্ত্রের বিজয় এবং শোষক শ্রেণিগুলো লোপ পাবার ফলে ধর্মের সামাজিক জড় এবং গির্জার প্রধান অবলম্বন নষ্ট হয়ে গেছে। মার্কসবাদ-লেনিনবাদের মহান ভাব-ধারণা অনুসারে শিক্ষাদীক্ষা-পাওয়া সোভিয়েত মানুষের মানসতা একেবারে নতুন ছাঁচের। তবু পুঁজিবাদের অবশেষ, ধর্মীয় ভাবাদর্শ, বদ্ধধারণা আর কুসংস্কারের অবশেষ রয়ে গেছে কিছু মানুষের মনে, তাতে তাদের সাংস্কৃতিক বিকাশ এবং সাম্যবাদ গড়ায় সক্রিয় অংশগ্রহণ ব্যাহত হয়। এইসব বদ্ধধারণা নাছোড়, সেগুলো শেষ হয়ে যাবে না আপনা-আপনি, সেগুলোর বিরুদ্ধে চালান চাই অটল সংগ্রাম। কমিউনিস্ট পার্টি লাগাতার চেষ্টা করে বিজ্ঞানসম্মত বিশ্ববীক্ষা সঞ্চারিত করে সোভিয়েত মানুষের মনে, আর সারমর্মের দিক থেকেই ধর্ম অবৈজ্ঞানিক বলে সেটার বিরুদ্ধে চালায় মতাদর্শগত লড়াই। ধর্মীয় বদ্ধধারণাগুলো অতিক্রম করাটা হলো মানুষের কমিউনিস্ট তালিমের শিক্ষাদীক্ষার একটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-উপাদান।

স্বাধীনতা প্রসঙ্গে একটি আলোচনা শুনুন

এইসব রচনায় লেনিন খুলে ধরেছেন ধর্মের শিকড়, দেখিয়েছেন কিভাবে পরাস্ত করতে হয় ধর্মকে – এগুলি হলো ধর্মীয় বদ্ধধারণার বিরুদ্ধে সংগ্রামের, বিজ্ঞানসম্মত নাস্তিকতা প্রচারের ধারাল মতাদর্শিক-অস্ত্র। লেনিন দেখিয়েছেন ধর্মীয় অবশেষগুলো অতিক্রম করা যায় শুধু ধৈর্য ধরে, লাগাতার মতাদর্শগত তালিম শিক্ষাদীক্ষা দিয়ে, মার্কসবাদী বিজ্ঞানসম্মত বিশ্ববীক্ষার ব্যাপক প্রচার দিয়ে। মানুষের ধর্মীয় আবেগের অবমাননা করা চলবে না, এটা লেনিন খুব জোর দিয়ে বলেছেন, কেননা তার ফলে তাদের বদ্ধধারণা শুধু বদ্ধমূলই হতে পারে আরও।

এই প্রবন্ধ-সঙ্কলনে মালমশলা সাজানো হয়েছে কালক্রমানুসারে। 

সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির অধীন মার্কসবাদ-লেনিনবাদ ইনস্টিটিউট।

Leave a Comment

error: Content is protected !!