সাম্যের গুরুত্ব (ইংরেজি: Importance of equality in Social Life) তাৎপর্য রয়েছে রাষ্ট্র ও সমাজের অভ্যন্তরে সাম্য প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক অনুশীলনে। সামাজিক মানুষের জীবনে সাম্যের গুরুত্ব উপলব্ধি হয়েছে দাস সমাজ সৃষ্টির ঐতিহাসিক কাল থেকেই। বৈষম্য সৃষ্টির প্রারম্ভ থেকেই সাম্য সংক্রান্ত চিন্তা দানা বাঁধতে শুরু করে। রাষ্ট্রচিন্তা ও রাষ্ট্রতত্ত্বের এক বহুল আলোচিত ধারণা হচ্ছে এই সাম্য। সুষম ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় সাম্যের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে সাম্যের ধারণাটির গুরুত্ব বা তাৎপর্য পায় প্রধানত তিনটি কারণে
(১) অসাম্য প্রতিরোধ: সমাজ ও রাষ্ট্র-রাজনীতির জগতে অসাম্য, বৈষম্য, অন্যায় যেভাবে গভীর ক্ষতের মতো বাসে গিয়েছে তার প্রেক্ষিতেই সাম্যের প্রশ্নকে বিচার করা জরুরি। সাম্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই অন্যায়ের উপসম সম্ভব। অসাম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনগুলির মাধ্যমেই অন্যায় ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিকারের চেষ্টা হয়েছে, যদিও সবক্ষেত্রে পুরোপুরি সাফল্য আসে নি। ইতিহাসে প্রমিথিউস ও স্পার্টাকাসের লড়াই, ইংরেজ বিপ্লব, আমেরিকার বিপ্লব, ফরাসি বিপ্লব, রুশ বিপ্লব, এশিয়া ও আফ্রিকার গণসংগ্রাম, লাতিন আমেরিকার মুক্তিযুদ্ধ সবকিছুর অভিজ্ঞতা থেকেই সাম্যের তাৎপর্যকে চিহ্নিত করা যায়।
(২) মুক্তির পথ: সাম্য যে ন্যায়নির্ভর সমাজের ভিত্তি, সাম্যের তাত্ত্বিক ও গবেষকের মতামত থেকেই শিক্ষার্থী সে ধারণা পেতে পারেন। রাষ্ট্রচিন্তার বিকাশে সাম্য যে শুধুমাত্র একটি মূল্যবোধযুক্ত বিষয় হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে তা নয়, রাজনৈতিক ভাবধারার বিবর্তনে এর অবদানকে সামনে রেখেও প্রশ্নটিকে বিচার করা যায়। সমতা নতুন জীবনধারা, বিশ্ববোধ, বিশ্ববীক্ষার প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি করে, মানবমুক্তির সম্ভাব্য গ্যারান্টি বলে পরিচিতি পায়, এক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও নাগরিকের দায়িত্ব কী সেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নকে তুলে ধরে।
(৩) সাম্যের প্রয়োগ: সমতার তাৎপর্য শুধু তত্ত্বে নয়, প্রয়োগেও। ন্যায়ের খাতিরে সমতার বিচার বা সমতা দিয়ে স্বাধীনতার বিচার নিঃসন্দেহে যুক্তিযুক্ত, তবে সমতাকে স্বাধীন চিন্তা ও মানবিকতার প্রেরণা হিসাবে দেখা সম্ভব কিনা এ বিষয়টিকে শিক্ষার্থী পাঠক তার বিবেচনায় স্থান দেবেন আশা করা যায়। সমতার যে একটা নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও মৌলিকতা আছে এই বাস্তব সত্য আবিষ্কারের মধ্যেই আছে এর প্রকৃত তাৎপর্য।[১]
(৪) গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা: রাষ্ট্রে ও সমাজে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠায় সাম্যের গুরুত্ব অপরিসীম। আইনী সাম্যের দ্বারা রাষ্ট্রে বুর্জোয়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব, তেমনি সামাজিক সাম্যের দ্বারা সমাজজীবনে সামাজিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব। সাম্য গণতান্ত্রিক সমাজে সুযোগ সুবিধা ভোগের সাংবিধানিক নিশ্চয়তা দেয়। সুতরাং সাম্য ব্যতীত বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাও সম্ভব নয়।[২]
তথ্যসূত্র
১. দেবাশীষ চক্রবর্তী, রাষ্ট্রচিন্তার বিষয়সমূহ, নেতাজী সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় পুনর্মুদ্রণ ডিসেম্বর ২০১৯, পৃষ্ঠা ৪৭-৪৯।
২. মো. আবদুল ওদুদ ও আলেয়া পারভীন, রাজনৈতিক তত্ত্বের পরিচিতি, মনন পাবলিকেশন, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ আগস্ট ২০১১, পৃষ্ঠা ১৪৯।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক ও গবেষক। তাঁর লেখা ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা এগারটি। ২০০৪ সালে কবিতা গ্রন্থ প্রকাশের মাধ্যমে তিনি পাঠকের সামনে আবির্ভূত হন। ‘সমাজতন্ত্র’ ও ‘মার্কসবাদ’ তাঁর দুটি পাঠকপ্রিয় প্রবন্ধ গ্রন্থ। সাহিত্য ও রাজনীতি বিষয়ে চিন্তাশীল গবেষণামূলক লেখা তাঁর আগ্রহের বিষয়।