অক্টোবর বিপ্লবের চতুর্থ বার্ষিকী উপলক্ষে

২৫ অক্টোবরের (৭ নভেম্বরের) চতুর্থ বার্ষিকীর দেরি নেই। এই মহান দিনটি যত দূরে সরে যাচ্ছে ততই পরিস্কার হয়ে উঠছে রাশিয়ায় প্রলেতারীয় বিপ্লবের তাৎপর্য আর ততই গভীরভাবে আমাদের কাজটার সমগ্র ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে।

খুবই সংক্ষেপে — এবং বলাই বাহাল্য, একান্ত অসম্পূর্ণ ও অনিখুঁত রেখায় — এই তাৎপর্য ও এই অভিজ্ঞতা হাজির করা যায় নিম্নোক্ত রূপে।

রাশিয়ায় বিপ্লবের সরাসরি ও আশু কর্তব্যটা ছিলো বুর্জোয়া-গণতান্ত্রিক: মধ্যযুগীয়তার অবশেষগুলোর উচ্ছেদ, সেগুলোকে শেষপর্যন্ত চূর্ণ করা, রাশিয়া থেকে এই বর্বরতা, এই লজ্জা, আমাদের দেশের সমস্ত সংস্কৃতি ও সমস্ত প্রগতির এই প্রচন্ডতম বাধাটার বিলুপ্তি।

এবং সঙ্গতভাবেই আমরা এই গর্ব বোধ করতে পারি যে বিলুপ্তির সেই কাজটা আমরা করেছি। ১২৫ বছরের আগেকার মহান ফরাসী বিপ্লবের চেয়েও বেশি দৃঢ়ভাবে, বেশি দ্রুত, বেশি সাহস ও সাফল্যের সঙ্গে এবং জনগণের উপর প্রতিক্রিয়ার দিক থেকে বেশি ব্যাপক ও গভীরভাবে।

নৈরাজ্যবাদীরা ও পেটি-বুর্জোয়া গণতন্ত্রীরা উভয়েই (অর্থাৎ এই আন্তর্জাতিক সামাজিক ধরনটির রুশ প্রতিনিধি হিসেবে মেনশেভিক ও সোশ্যালিস্ট-রেভলিউশনারিরা) সমাজতান্ত্রিক (অর্থাৎ প্রলেতারীয়) বিপ্লবের সঙ্গে বুর্জোয়া-গণতান্ত্রিক বিপ্লবের সম্পর্কের প্রশ্নে অবিশ্বাস্য রকমের গোলমেলে কথা বহু বলেছে ও বলছে। এইক্ষেত্রে আমাদের মার্কসবাদ বিষয়ক বোধের সঠিকতা, প্রাক্তন বিপ্লবগুলির অভিজ্ঞতা সম্পর্কে আমাদের খতিয়ানের সঠিকতা গত চার বছরে পুরো প্রমাণিত হয়েছে। বুর্জোয়া-গণতান্ত্রিক বিপ্লবকে আমরা শেষপর্যন্ত চালিয়েছি, যা কেউ আগে করে নি। পুরোপুরি সচেতন, দৃঢ় ও অটলভাবে আমরা এগিয়ে চলেছি সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবে, এটা জেনে রেখে যে বুর্জোয়া-গণতান্ত্রিক বিপ্লব থেকে তা কোনো চীনের প্রাচীরে আলাদা হয়ে নেই, এটা জেনে রেখে যে (শেষ বিচারে) কতটা আমরা সামনে এগুতে পারব, অপরিমেয় বৃহৎ কর্তব্যটার কতটা অংশ পূরণ করব, বিজয়ের কতটা অংশ আমরা সংহত করতে পারব, তার ফয়সালা হবে কেবল সংগ্রামেই। বেচে থাকলে তা দেখে যাব। কিন্তু এখনই আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, সমাজের সমাজতান্ত্রিক রূপান্তরের ব্যাপারে একটা উচ্ছন্ন, জর্জরিত ও পশ্চাৎপদ দেশের পক্ষে বিপুল কিছুটা করা হয়েছে।

তবে, আমাদের বিপ্লবের বুর্জোয়া-গণতান্ত্রিক সারবস্তুর কথাটা এখন থাক। তার মানে কী সেটা মার্কসবাদীদের কাছে বোধগম্য হওয়ার কথা। বুঝিয়ে বলার জন্য কিছু জাজ্বল্যমান দৃষ্টান্ত নেব।

বিপ্লবের বুর্জোয়া-গণতান্ত্রিক সারবস্তুর অর্থ হলো মধ্যযুগীয়তা থেকে, ভূমিদাসপ্রথা থেকে, সামন্ততন্ত্র থেকে দেশের সামাজিক সম্পর্কের (ব্যবস্থধারার, প্রতিষ্ঠানের) পরিশুদ্ধি।

১৯১৭ সাল নাগাদ রাশিয়ায় ভূমিদাসপ্রথার প্রধান অভিব্যক্তি, জের, অবশেষ কী ছিলো? রাজতন্ত্র, সম্প্রদায়-ব্যবস্থা, ভূম্যধিকার, ভূমিবন্দোবস্ত, নারীদের অবস্থা, ধর্ম, জাতিসত্তার পীড়ন। এই যে ‘অজিয়াসীয় আস্তাবলটাকে’ — প্রসঙ্গত, ১২৫, ২৫০ ও আরও বেশি বছর আগে (ইংলন্ডে ১৬৪৯ সালে) তাদের বুর্জোয়া-গণতান্ত্রিক বিপ্লব সাধনের সময় সমস্ত অগ্রণী রাষ্ট্রই বহুলাংশে পূর্ণ_পরিষ্কৃত না করেই রেখে দিয়েছিলো, সেই অজিয়াসীয় আস্তাবলের যে-কোনটাকে ধরুন, দেখবেন, আমরা তা পুরো সাফ করে ছেড়েছি। ১৯১৭ সালের ২৫ অক্টোবর (৭ নভেম্বর) থেকে শুরু করে সংবিধান সভা ভেঙে দেওয়া অবধি (৫ জানুয়ারি, ১৯১৮) এই গোটা দশেক সপ্তাহের মধ্যেই এক্ষেত্রে আমরা যা করেছি তা বুর্জোয়া গণতন্ত্রী ও উদারনীতিকেরা (কাদেতরা) এবং পেটি-বুর্জোয়া গণতন্ত্রীরা (মেনশেভিক ও সোশ্যালিস্ট-রেভলিউশনারিরা) তাদের ক্ষমতার আট মাসে যা করেছিলো তার হাজার গুণ বেশি।

এই কাপুরুষ, বাক্যবীর, আত্মপ্রেমী নার্সিসাস[১] ও হাম-বড়া হ্যামলেট-রা তাদের পীচবোর্ডোর তরোয়াল আস্ফালন করে—অথচ রাজতন্ত্রটাও বিলুপ্ত করে নি! রাজতান্ত্রিক সমস্ত জঞ্জালটা আমরা এমনভাবে ঝোঁটিয়ে সাফ করি যা কেউ করে নি, কখনো করে নি। সম্প্রদায়-ব্যবস্থার যুগযুগের ইমারতটার একটা পাথর, একটা ইটও আমরা বাকি রাখি নি (ইংলন্ড, ফ্রান্স, জার্মানির মতো সবচেয়ে অগ্রণী দেশেও আজ পর্যন্ত সম্প্রদায়-ব্যবস্থার চিহ্ন মোছে নি!)। সম্প্রদায়-ব্যবস্থার সবচেয়ে গভীর মূল অর্থাৎ ভূমিস্বত্বে সামন্তবাদ ও ভূমিদাসপ্রথার জের আমরা পুরোপুরি উৎপাটিত করে দিয়েছি। মহান অক্টোবর বিপ্লবের কৃষিসংস্কার থেকে শেষপর্যন্ত’ কী দাঁড়াবে তা নিয়ে ‘তর্ক করা যেতে পারে’ (সে তর্কে ব্যস্ত থাকার মতো লেখক, কাদেত, মেনশেভিক ও সোশ্যালিস্ট-রেভলিউশনারি বিদেশে যথেস্টই আছে)। আপাতত এই তর্কে সময় নষ্ট করার ইচ্ছা আমাদের নেই। কেননা এই তর্কের এবং তৎসংশ্লিন্ট সমস্ত তর্করাশির সমাধান আমরা করছি সংগ্রাম চালিয়ে। কিন্তু এই বাস্তব তথ্যের বিরুদ্ধে তর্ক চলে না যে, পেটি-বুর্জোয়া গণতন্ত্রীরা আট মাস ধরে ‘আপস করেছে’ জমিদারদের সঙ্গে, ভূমিদাসপ্রথার ঐতিহ্য রক্ষকদের সঙ্গে আর আমরা কয়েক সপ্তাহেই এই সমস্ত জমিদার ও তাদের সবকিছ ঐতিহ্যকে রুশ মাটি থেকে নিঃশেষে ঝোঁটিয়ে দরি করেছি!

ধর্ম অথবা নারীদের অধিকারহীনতা, অথবা অ-রুশ জাতিসত্তাগুলির পীড়ন ও অসাম্যের কথা ধরুন। এসবই বুর্জোয়া-গণতান্ত্রিক বিপ্লবের প্রশ্ন। পেটি-বুর্জোয়া গণতন্ত্রের ইতরেরা আট মাস ধরে এই নিয়ে বুলি ঝেড়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে অগ্রণী দেশের কোনো একটিতেও বুর্জোয়া-গণতান্ত্রিক ধারায় এই সমস্ত সমস্যার পুরোপুরি সমাধান হয় নি। আমাদের দেশে তার পুরো সমাধান হয়েছে অক্টোবর বিপ্লবের আইনবিধিতে। ধর্মের সঙ্গে আমরা সত্যিকারের লড়াই চালিয়েছি ও চালাচ্ছি। সমস্ত অ-রুশ জাতিসত্তাকে আমরা দিয়েছি তাদের নিজস্ব প্রজাতন্ত্র অথবা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। নারীদের অধিকারহীনতা বা পূর্ণাধিকারহীনতার মতো নীচতা, জঘন্যতা ও পাষণ্ডতা আমাদের রাশিয়ায় নেই, নেই এই ভূমিদাসপ্রথা ও মধ্যযুগীয়তার বিরক্তিকর জের, যা বিনা ব্যতিক্রমে পৃথিবীর সমস্ত দেশেই অর্থগৃধ্নু বুর্জোয়া আর নির্বোধ ভীতিগ্রস্ত পেটি-বুর্জোয়ারা পুনরুজ্জীবিত করে।

এসবই বুর্জোয়া-গণতান্ত্রিক বিপ্লবের সারবস্তু। দেড় শ’ ও আড়াই শ’ বছর আগে এই বিপ্লবের (একই সাধারণ ধরনের প্রতিটি জাতীয় প্রকারভেদ ধরলে, এইসব বিপ্লবের) অগ্রণী নেতারা মধ্যযুগীয় বিশেষাধিকার থেকে, নারীদের অসাম্য থেকে, কোনো একটি ধর্মের (অথবা ‘ধর্মীয় ধ্যানধারণাগুলি’ সাধারণভাবে ‘ধার্মিকতা’) রাষ্ট্রীয় প্রাধান্য থেকে, জাতিসত্তাগুলির অসাম্য থেকে মানবজাতির মুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বটে, কিন্তু পূরণ করেন নি। পূরণ করতে পারেন নি, কেননা বাধা ঘটায় – – – ‘ব্যক্তিগত সম্পত্তির পবিত্র অধিকারের’ প্রতি ‘শ্রদ্ধা’। এই তিনগুণ অভিশপ্ত মধ্যযুগীয়তার প্রতি এবং এই ‘ব্যক্তিগত সম্পত্তির পবিত্র অধিকারের’ প্রতি এই অভিশপ্ত ‘শ্রদ্ধাটা’ আমাদের প্রলেতারীয় বিপ্লবে ছিল না।

কিন্তু রাশিয়ার সমস্ত জাতির ক্ষেত্রে বুর্জোয়া-গণতান্ত্রিক বিপ্লবের সুকৃতিগুলিকে সংহত করার জন্য আমাদের আরও এগিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন ছিলো এবং এগিয়ে আমরা গেছি। বুর্জোয়া-গণতান্ত্রিক বিপ্লবের সমস্যাগুলি সমাধান আমরা করি আমাদের যাত্রাপথে, এগুতে এগুতেই, আমাদের পক্ষে যা প্রধান ও সত্যিকার, প্রলেতারীয় ধরনে বৈপ্লবিক, সমাজতান্ত্রিক ক্রিয়াকলাপের ‘উপজাত’ হিসেবে। আমরা চিরকাল বলে এসেছি যে, সংস্কার হলো বিপ্লবী শ্রেণিসংগ্রামের উপজাত। আমরা বলেছিলাম এবং কাজে দেখিয়েছি যে, বুর্জোয়া-গণতান্ত্রিক রূপান্তর হলো প্রলেতারীয়, অর্থাৎ সমাজতান্ত্ৰিক বিপ্লবের উপজাত। প্রসঙ্গত বলি, কাউটস্কি, হিলফের্ডিং, মার্তভ, চের্নোভ, হিলকুইট, লঁগে, ম্যাকডোনাল্ড, তুরাতি প্রমুখ ‘আড়াই’[২]  মার্কসবাদের সমস্ত বীরপুঙ্গবেরা বুর্জোয়া-গণতান্ত্রিক ও প্রলেতারীয়-সমাজতান্ত্ৰিক বিপ্লবের মধ্যে এই অনুপাতটা বোঝেন নি। প্রথমটা বেড়ে ওঠে দ্বিতীয়টাতে। দ্বিতীয়টা তার যাত্রাপথেই সমাধান করে প্রথমটার সমস্যাগুলি। দ্বিতীয়টা প্রথমটার কর্ম সংহত করে। দ্বিতীয়টা প্রথমটাকে কতদূর ছাড়িয়ে উঠবে তার সমাধান হয় সংগ্রামে এবং একমাত্র সংগ্রামে ।

একটা বিপ্লব থেকে আরেকটা বিপ্লব উদ্ভবের জাজ্বল্যমান প্রমাণ বা অভিব্যক্তি হলো সোভিয়েত ব্যবস্থা। সোভিয়েত ব্যবস্থা হলো শ্রমিক ও কৃষকদের জন্য সর্বোচ্চ গণতান্ত্রিকতা এবং সেইসঙ্গেই এটার মানে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিকতা থেকে বিচ্ছেদ এবং গণতন্ত্রের নতুন, বিশ্ব-ঐতিহাসিক একটা ধরনের অর্থাৎ প্রলেতারীয় গণতান্ত্রিকতার বা প্রলেতারিয়েতের একনায়কত্বের অভ্যুদয়।

মুমূর্ষু বুর্জোয়া ও তার লেজুড় পেটি-বুর্জোয়া গণতন্ত্রের কুকুর ও শুকরেরা আমাদের সোভিয়েত ব্যবস্থা নির্মাণের অসাফল্য ও ভুলত্রুটি নিয়ে রাশি রাশি অভিশাপ, গালাগালি ও উপহাস বর্ষণ করতে চায় করুক। মুহূর্তের জন্যও আমরা একথা ভুলব না যে অসাফল্য ও ভুলত্রুটি আমাদের সত্যিই অনেক হয়েছে এবং অনেক হচ্ছে। অদৃষ্টপূর্ব ধরনের এক রাষ্ট্রব্যবস্থা সৃষ্টির মতো নতুন, সমস্ত বিশ্ব-ইতিহাসের পক্ষে অভিনব একটা ব্যাপারে অসাফল্য ও ভুল এড়াবে কে! আমাদের অসাফল্য ও ভুলত্রটি সংশোধনের জন্য, সোভিয়েত নীতিগুলির ব্যবহারিক যে-প্রয়োগ এখনো মোটেই নিখুঁত নয়, তার উন্নতিসাধনের জন্য আমরা অটলভাবে লড়ে যাব। কিন্তু গর্ব করার অধিকার আমাদের আছে এবং এ গর্ব আমরা করব যে সোভিয়েত রাষ্ট্রের নির্মাণ শুরু করার সৌভাগ্য, তাতে করে বিশ্ব-ইতিহাসের নতুন একটা যুগ — সমস্ত পুঁজিবাদী দেশে যারা নিপীড়িত, সর্বত্রই যারা চলেছে নতুন জীবনে, বুর্জোয়ার ওপর বিজয়ে ও প্রলেতারিয়েতের একনায়কত্বে, পুঁজির জোয়াল থেকে, সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ থেকে মানবজাতির পরিত্রাণের দিকে — তেমন একটা নতুন শ্রেণির প্রভুত্বের যুগ শুরু করার সৌভাগ্য আমাদের হয়েছে।

সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের প্রশ্ন, ফিনান্স পুঁজির যে আন্তর্জাতিক নীতি বর্তমানে সারা দুনিয়ায় প্রভুত্ব করছে, অনিবার্যই যে-নীতি নতুন নতুন সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ সৃষ্টি করে, অনিবার্যই মুষ্টিমেয় ‘অগ্রণী’ শক্তির হাতে দুর্বল, পশ্চাৎপদ ও ছোটো ছোটো জাতিসত্তার জাতীয় পীড়ন, লুন্ঠন, দস্যুতা ও দলন অভূতপূর্ব রকমে বাড়িয়ে তুলছে, সেই প্রশ্নটা ১৯১৪ সাল থেকে ভূগোলকের সমস্ত দেশের সমস্ত রাজনীতির মূল প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ হলো কোটি কোটি লোকের জীবন-মরণের প্রশ্ন। আমাদের চোখের সামনে বুর্জোয়ারা যা তৈরি করে তুলছে, আমাদের চোখের সামনেই পুঁজিবাদ থেকে যা বেড়ে উঠছে, সেই পরবর্তী সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধটায় কি নিহত হবে ২ কোটি লোক (১৯১৪-১৮ সালের যুদ্ধ ও তার পরিপারক ‘ছোটো ছোটো’ যে-যুদ্ধ এখনো থামে নি তাতে নিহত ১ কোটির বদলে), অনিবাৰ্যরূপেই আসন্ন (যদি বজায় থাকে পুঁজিবাদ) এই যুদ্ধে কি পঙ্গু হবে ৬ কোটি লোক (১৯১৪-১৮ সালে পঙ্গু, ৩ কোটির বদলে) — এই হলো প্রশ্ন। এবং এই প্রশ্নে আমাদের অক্টোবর বিপ্লব বিশ্ব-ইতিহাসে নতুন যুগের উদ্বোধন করেছে। ‘সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধকে গৃহযুদ্ধে পরিণত করার’ ধ্বনি নিয়ে বুর্জোয়ার ভৃত্যেরা সোশ্যালিস্ট-রেভলিউশনারি ও মেনশেভিক রূপধারী, সারা বিশ্বের পেটি-বুর্জোয়া নাকি ‘সমাজতান্ত্রিক’ গণতন্ত্রের ভেকধারী বুর্জোয়ার তল্পিবাহকেরা টিটকারি দিয়েছিলো। অথচ দেখা গেল, রাশি রাশি অতি সক্ষম জাতিদম্ভী ও শান্তিসর্বস্ববাদী ছলনার মধ্যে এই ধ্বনিটাই একমাত্র সত্য ধ্বনি — অপ্রীতিকর, রুঢ়, নগ্ন ও নিষ্ঠুর হতে পারে, তাহলেও তা সত্য। সেসব ছলনা চূর্ণ হচ্ছে। ব্রেস্ত শান্তির স্বরূপ উদ্ঘাটিত হয়েছে। ব্রেস্তের চেয়েও নিকৃষ্ট যে-শান্তি ভার্সাই শান্তি তার তাৎপর্য ও পরিণাম প্রতিদিনই উদ্ঘাটিত হচ্ছে নির্মমভাবে। এবং বিগত যুদ্ধ ও আসন্ন আগামীকালের যুদ্ধের কারণ নিয়ে ভাবিত কোটি কোটি লোকের কাছে ক্রমেই পরিস্কার, ক্রমেই সুস্পষ্ট, ক্রমেই অমোঘ হয়ে দেখা দিচ্ছে এই ভয়ঙ্কর সত্য: সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ থেকে এবং অনিবার্যই সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধজনক সাম্রাজ্যবাদী শান্তি থেকে (আমাদের যদি সাবেকী লিখন রীতির চল থাকত, তাহলে “শান্তি’ (রুশ ভাষায় — ‘মীর’) কথাটি আমি তার দুটি বানানে দুটি অর্থেই [৩] প্রয়োগ করতাম), এই নরক থেকে বলশেভিক সংগ্রাম ও বলশেভিক বিপ্লব ছাড়া পরিত্রাণের পথ নেই।

এ বিপ্লবকে বুর্জোয়া ও শান্তিসর্বস্ববাদীরা, জেনারেল আর মধ্যবিত্তরা, পুঁজিপতি আর কুপমণ্ডুকেরা, ধর্মপ্রাণ সমস্ত খ্রিস্টান আর দ্বিতীয় ও আড়াই আন্তর্জাতিকের সমস্ত মহারথীরা ক্ষিপ্ত হয়ে গালি দিতে চায় দিক। বিদ্বেষ, কুৎসা ও মিথ্যার কোনো তরঙ্গেই তারা এই বিশ্ব-ঐতিহাসিক ঘটনাটাকে মুছে দিতে পারবে না যে, শত শত ও হাজার হাজার বছর পরে গোলামেরা এই প্রথম গোলাম-মালিকদের মধ্যে যুদ্ধের জবাব দিয়েছে এই প্রকাশ্য ধ্বনি দিয়ে: লুঠের বখরার জন্য গোলাম-মালিকদের এই যুদ্ধকে পরিণত করব সমস্ত জাতির গোলাম-মালিকদের বিরুদ্ধে সমস্ত জাতির গোলামদের যুদ্ধে।

একটি তথ্যচিত্র দেখুন

শত শত ও হাজার হাজার বছরে এই প্রথম এই ধ্বনি ঝাপসা ও অসহায় একটা প্রতীক্ষা থেকে পরিণত হয়েছে সুনির্দিষ্ট একটি রাজনৈতিক সত্যিকার সংগ্রামে, পরিণত হয়েছে প্রলেতারিয়েতের প্রথম বিজয়ে, যুদ্ধ নির্মূলের যে-কর্মযজ্ঞ, — পুঁজির ক্রীতদাসদের ঘাড় ভেঙে, মজুরি-শ্রমিকদের ঘাড় ভেঙে, কৃষকদের ঘাড় ভেঙে, মেহনতীদের ঘাড় ভেঙে যে-বুর্জোয়া কখনো সন্ধি করে কখনো লড়ে, নানান দেশের সেই বুর্জোয়ার জোটের বিরুদ্ধে সমস্ত দেশের শ্রমিকদের জোট বন্ধনের যে-কর্মযজ্ঞ, তার প্রথম বিজয়ে।

এই প্রথম বিজয়টা এখনো চূড়ান্ত বিজয় নয়, এবং আমাদের অক্টোবর বিপ্লব এ বিজয় অর্জন করেছে অদৃষ্টপূর্ব চাপ ও দুরূহতায়, অশ্রুতপূর্ব কষ্টে ও আমাদের পক্ষ থেকে একগুচ্ছ প্রচন্ড অসাফল্যে ও ভুলে। ভূগোলকের সবচেয়ে পরাক্রান্ত ও সবচেয়ে অগ্রণী দেশগুলির সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের ওপর পশ্চাৎপদ একক একটি দেশের জনগণ বিজয় লাভ করবে, সে কি আর বিনা অসাফল্যে, বিনা ভুলে সম্ভব! নিজেদের ভুল স্বীকারে আমাদের ভয় নেই, সংশোধন শেখার জন্য আমরা স্থির মস্তিষ্কেই সেই ভুলের বিচার করব। কিন্তু ঘটনাটা ঘটনাই: শত শত ও হাজার হাজার বছরে এই প্রথম সমস্ত ও সর্ববিধ দাসমালিকদের বিরুদ্ধে দাসেদের বিপ্লব দিয়ে দাসমালিকদের যুদ্ধের জবাব দেবার প্রতিশ্রুতি পালিত হয়েছে পুরোপুরি — — — এবং সমস্ত দুরূহতা সত্ত্বেও পালিত হয়ে যাচ্ছে।

আমরা কাজটা শুরু করেছি। ঠিক কবে, কতদিনের মধ্যে, কোন জাতির প্রলেতারিয়েত কাজটা পরিসমাপ্ত করবে, সেই প্রশ্নটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো এই যে — বরফ ভেঙেছে, রাস্তা খুলেছে, পথটা দেখিয়ে দেওয়া গেছে।

আমেরিকার হাত থেকে জাপানী, জাপানের হাত থেকে মার্কিন, ইংলন্ডের হাত থেকে ফরাসী, ইত্যাদি ‘পিতৃভূমির রক্ষক’ সারা দেশের পুঁজিপতি মহাশয়েরা চালিয়ে যান নিজেদের ভন্ডামি! সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের বিরুদ্ধে সংগ্রামের পথের প্রশ্নটা নতুন ‘বাসেল ইস্তাহার’ দিয়ে (১৯১২ সালের বাসেল ইস্তাহারের ঢঙে) ‘এড়িয়ে যেতে’ থাকুন দ্বিতীয় ও আড়াই আন্তর্জাতিকের মহারথী মহাশয়েরা এবং সারা বিশ্বের শান্তিসর্বস্ববাদী পেটি বুর্জোয়া ও কুপমণ্ডুকেরা! সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ ও সাম্রাজ্যবাদী শান্তি থেকে পৃথিবীর প্রথম দশ কোটি লোককে ছিনিয়ে এনেছে প্রথম বলশেভিক বিপ্লব। পরের বিপ্লবগুলি তেমন যুদ্ধ ও তেমন শান্তি থেকে মুক্ত করবে: সমগ্র মানবজাতিকেই।

আমাদের শেষ কাজটা — কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সবচেয়ে কঠিন এবং সবচেয়ে অসমাপ্ত কাজটা হলো অর্থনৈতিক নির্মাণ, চূর্ণবিচূর্ণ সামন্তবাদী ও অর্ধচূর্ণ পুঁজিবাদী ইমারতটার জায়গায় নতুন সমাজতান্ত্রিক ইমারতের অর্থনৈতিক বনিয়াদ স্থাপন। এই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সবচেয়ে কঠিন কাজটায় আমাদের অসাফল্য ঘটেছে সবচেয়ে বেশি, ভুল হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এমন বিশ্ব-ঐতিহাসিক নতুন কাজটা শুরু করতে গেলে কি আর অসাফল্য ও ভুল হবে না! কিন্তু কাজটা আমরা শুরু করেছি। কাজটা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। ঠিক এই বারই আমরা আমাদের ‘নয়া অর্থনৈতিক কর্মনীতি’[৪] দিয়ে আমাদের একগুচ্ছ ভুল শুধরে নিচ্ছি, ক্ষুদে-কৃষকপ্রধান এক দেশে সমাজতান্ত্ৰিক ইমারতটার নির্মাণ কীভাবে চালিয়ে যেতে হয় ভুল না করে, সেটা আমরা শিখে নিচ্ছি।

দুরূহতা অপরিমেয়। অপরিমেয় দুরূহতার সঙ্গে লড়তে আমরা অভ্যস্ত। আমাদের শত্রুরা আমাদের ‘কড়া পাথর’ বলে, ‘হাড়-ভাঙা রাজনীতির’ প্রতিনিধি বলে যে অভিহিত করত, তার কিছু কারণ আছে বৈকি। কিন্তু সেইসঙ্গে আমরা শিখেছি, অন্ততপক্ষে কিছুটা পরিমাণে শিখেছি বিপ্লবের পক্ষে প্রয়োজনীয় আরেকটি বিদ্যা: নমনীয়তা, পরিবর্তিত বাস্তব পরিস্থিতির হিসাব নিয়ে প্রাক্তন পথটি নির্দিষ্ট পর্বে অনুপযোগী ও অসম্ভব হয়ে দাঁড়ালে লক্ষ্যার্জনের অন্যপথ নির্বাচন করে দ্রুত ও আমূল ভাবে কর্ম কৌশল বদলাতে পারার নৈপুণ্য।

উদ্দীপনার তরঙ্গে উত্থিত হয়ে, প্রথমে জনগণের সাধারণ রাজনৈতিক ও পরে সামরিক উদ্দীপনাকে জাগিয়ে তুলে আমরা সরাসরি ওই উদ্দীপনার জোরেই (সাধারণ রাজনৈতিক ও সামরিক কর্তব্যের মতো) সমান বৃহৎ অর্থনৈতিক কর্তব্যকেও সাধন করার ভরসা করেছিলাম। আমরা ভরসা করেছিলাম, অথবা বোধ হয় সঠিকভাবে বললে, যথেষ্ট বিচার না করেই আমরা অনুমান করেছিলাম যে, প্রলেতারীয় রাষ্ট্রের সরাসরি আদেশেই একটা ক্ষুদে-কৃষকপ্রধান দেশে কমিউনিস্ট ধরনে রাষ্ট্ৰীয় উৎপাদন এবং উৎপাদের রাষ্ট্রীয় বণ্টনের সুব্যবস্থা করা যাবে। বাস্তব জীবন আমাদের ভুল ধরিয়ে দিয়েছে। দরকার হয়েছে একগুচ্ছ উৎক্রমণ পর্যায়ের — রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্রের, যাতে কমিউনিজমে উত্তরণের প্রস্তুতি করতে হবে বহু-বছরের কাজের মাধ্যমে। সরাসরি উদ্দীপনা দিয়ে নয়, বরং মহাবিপ্লবে প্রসূত উদ্দীপনাটার সাহায্য নিয়ে, ব্যক্তিগত স্বার্থের ভিত্তিতে, ব্যক্তিগত স্বার্থপ্রেরণার ভিত্তিতে, অর্থনৈতিক হিসাবিয়ানার ভিত্তিতে আগে সেইসব মজবুত সাঁকোগুলো নির্মাণের কাজে লাগুন যা ক্ষুদে-কৃষকপ্রধান দেশকে সমাজতন্ত্রে পৌছে দেয় রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদের মধ্য দিয়ে, অন্যথায় আপনারা কমিউনিজমে পৌছবেন না, অন্যথায় কোটি কোটি লোককে আপনারা কমিউনিজমে নিয়ে যেতে পারবেন না। এই কথা আমাদের বলেছে বাস্তব জীবন। এই কথা বলেছে বিপ্লব বিকাশের বাস্তব গতি।

এবং তিন-চার বছরে প্রচন্ড মোড় নিতে পারার (যখন প্রচন্ড মোড় নেওয়া প্রয়োজন হয়) খানিকটা শিক্ষা পেয়ে আমরা নতুন মোড় ফেরাটা, ‘নয়া অর্থনৈতিক কর্মনীতিটা’ রপ্ত করতে শুরু করেছি সাগ্রহে, সমনোযোগে, অধ্যবসায় নিয়ে (যদিও এখনো পর্যন্ত যথেষ্ট সাগ্রহে, যথেষ্ট মনোযোগে, যথেষ্ট অধ্যবসায়ে নয়)। প্রলেতারীয় রাষ্ট্রকে হুশিয়ার, অধ্যবসায়ী ও কুশলী এক ‘কারবারী’, নিপুণ এক পাইকারী বণিক হয়ে উঠতে হবে, নইলে সেই রাষ্ট্র ক্ষুদে-কৃষকপ্রধান দেশকে অর্থনৈতিকভাবে খাড়া করে তুলতে পারবে না। এই মুহূর্তে, বর্তমান পরিস্থিতিতে পুঁজিবাদী (এখনো পর্যন্ত পুঁজিবাদী) পশ্চিমের পাশে থেকে কমিউনিজমে পৌঁছবার জন্য কোনো পথ নেই। পাইকারী বণিক, এটা এমন একটা অর্থনৈতিক ধরন যার সঙ্গে কমিউনিজমের যেন-বা আকাশপাতাল তফাৎ। কিন্তু এটা ঠিক সেইসব স্ববিরোধেরই অন্যতম যা বাস্তব জীবনে ক্ষুদে কৃষি-অর্থনীতি থেকে সমাজতন্ত্রে পৌঁছয় রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদের মধ্য দিয়ে। ব্যক্তিগত স্বার্থপ্রেরণায় উৎপাদন বাড়বে। যে করেই হোক না কেন, সর্বাগ্রে আমাদের দরকার উৎপাদন বৃদ্ধি। পাইকারী বাণিজ্যে অর্থনৈতিকভাবে সম্মিলিত হয় কোটি কোটি ছোটো চাষী, স্বার্থপ্রেরণা পায় তারা, গ্রথিত হয়, এগিয়ে যায় পরের পর্যায়ের দিকে — খোদ উৎপাদনের ক্ষেত্রেই সংযুক্তি ও সম্মিলনের নানা রূপের দিকে। আমাদের অর্থনৈতিক কর্ম নীতির প্রয়োজনীয় অদলবদল আমরা শুরু করেছি এবং ইতিমধ্যেই কিছুটা সাফল্যও হয়েছে। সত্যি, এগুলি বৃহৎ নয়, আংশিক, তাহলেও সাফল্য তো বটে। নতুন ‘বিদ্যার’ এই ক্ষেত্রটায় প্রাক-প্রবেশিকা ক্লাস আমাদের ইতিমধ্যেই শেষ হতে চলেছে। অটল ও অবিচল শিক্ষা নিয়ে, ব্যবহারিক অভিজ্ঞতায় নিজের প্রতিটি পদক্ষেপ যাচাই করে, বার বার কেঁচে গণ্ডুষ  করতে, ভুল সংশোধন করতে ভয় না পেয়ে, ভুলের তাৎপর্য গভীরভাবে বিচার করে আমরা উত্তীর্ণ হবো পরের ক্লাসেও। সমস্ত ‘পাঠ্যক্রমটাই’ আমরা উত্তীর্ণ হবো, যদিও বিশ্ব-অর্থনীতি ও বিশ্ব-রাজনীতির অবস্থায় সেটা হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের বাসনার চেয়ে অনেক বেশি দীর্ঘ ও দুরূহ। যে করেই হোক না কেন, উৎক্রমণকালের যন্ত্রণা, দুর্ভাগ্য, দুর্ভিক্ষ, ভগ্নদশা যত দুঃসহই হোক না কেন, আমরা মনোবল হারাব না, নিজেদের কর্ম যজ্ঞকে নিয়ে যাব বিজয়ী পরিণতিতে।[৫]

১৪ অক্টোবর, ১৯২১

আরো পড়ুন

টিকা

১. নার্সিসাস – গ্রীক পুরাকথার এক সুন্দর তরুণ। জলে নিজের চেহারার প্রতিফলন দেখে সে নিজের প্রেমে পড়ে যায়।
২. আড়াই আন্তর্জাতিক — মধ্যপন্থী সমাজতন্ত্রী পার্টি ও দলের একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন। বিপ্লবী জনগণের চাপে এটি দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক ত্যাগে বাধ্য হয়েছিল। সংস্থাটি গঠিত হয় ভিয়েনা সম্মেলনে, ১৯২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। এটির আনুষ্ঠানিক নাম — ‘সমাজতন্ত্রী পার্টিগুলির আন্তর্জাতিক সম্মিলন’। দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের সমালোচনা করলেও এর নেতারা সুবিধাবাদী নীতি অনুসরণ করেন এবং কমিউনিস্টদের বর্ধমান প্রভাব প্রশমনে গঠিত সম্মিলন ব্যবহারে সচেষ্ট থাকেন। ১৯২৩ সালে মে মাসে দ্বিতীয় ও আড়াই আন্তর্জাতিক তথাকথিত ‘সমাজতন্ত্ৰী শ্রমিক আন্তর্জাতিকে’ একত্রিত হয়।
৩. ‘বিশ্ব’ ও ‘শান্তি’ — সম্পাদক
৪. নয়া অর্থনৈতিক কর্মনীতি গৃহীত হয় ১৯২১ সালের মার্চ মাসে দশম পার্টি কংগ্রেসে লেনিনের প্রতিবেদন অনুসারে। নয়া অর্থনৈতিক কর্মনীতির ভিত্তি ছিলো কর হিসেবে দ্রব্য দেয়া, যা ‘যুদ্ধকালীন কমিউনিজমের’ সময়কার বাড়তি সামগ্রী দখলের বদলি হয়েছিলো। নয়া অর্থনৈতিক কর্মনীতি প্রবর্তনের উদ্দেশ্য ছিলো সমাজতন্ত্র নির্মাণে কোটি কোটি কৃষককে শরিক করা, শ্রমিক ও কৃষকের ঐক্য মজবুত করা ও সমাজতান্ত্রিক সমাজের অর্থনৈতিক বুনিয়াদ সৃষ্টি।
৫. লেনিন লিখিত এই প্রবন্ধটি প্রগতি প্রকাশন মস্কো ১৯৮৬ কর্তৃক সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব বক্তৃতা ও প্রবন্ধ সংকলন গ্রন্থের ৫৫৮-৫৬৬ পৃষ্ঠা থেকে সংকলিত। এটি ১০ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে রোদ্দুরে.কমে প্রকাশ করা হয়, এবং সেখান থেকে ৬ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে ফুলকিবাজ.কমে হুবহু প্রকাশ করা হলো।

Leave a Comment

error: Content is protected !!