সাম্যের নারীবাদী ভাবনা হচ্ছে ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও মালিকানা অর্জনে সমতা

সাম্যের নারীবাদী ভাবনা বা সাম্য সম্পর্কে নারীবাদী চিন্তা (ইংরেজি: Feminist ideas on equality বা Equality feminism) হচ্ছে পুঁজিবাদী সমাজ টিকিয়ে রেখে নারীকে রাষ্ট্র ও সমাজে পুরুষের সাথে সমানতালে কাজ, ব্যবসা, মুনাফা, ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও ব্যক্তিগত মালিকানা অর্জনের সমতার জন্য চেষ্টা করা। রাষ্ট্রচিন্তায় বুর্জোয়া পুরুষদের সাথে বুর্জোয়া নারীদের সমানাধিকারের চেষ্টা করে নারীবাদীরা।

নারীবাদীদের সাম্যের ধারণা হচ্ছে সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদবিরোধী একটি পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদী প্রতিক্রিয়াশীল চিন্তাধারা। নারিবাদীদের সমতার ভাবনা হচ্ছে পুরুষতান্ত্রিক পুঁজিবাদী সমাজে নারীরাও যাতে শিল্পকারখানার মালিক, ব্যবসায়ী, পুঁজিপতি, ক্ষমতা ও আধিপত্য, ভোটাধিকার, শ্রম বিক্রির অধিকার ইত্যাদির অর্জন ও চর্চা করতে পারে তার দাবি বাস্তবায়নের লড়াই। অর্থাৎ নারীবাদীদের সাম্যের ধারণা হচ্ছে পুঁজিবাদের স্বার্থে নারীদেরকেও প্রলেতারিয়েত ও গরিব কৃষককে শোষণ ও লুটপাটে সমভাবে বুর্জোয়া নারীদের মতো অংশগ্রহণে সমানাধিকার নিশ্চিত করা।

সাম্যের নারীবাদী ভাবনা

নারীবাদের দৃষ্টিতে মূল ক্রিয়া হলো রাষ্ট্রতত্ত্বে লিঙ্গ প্রভুত্বের ভাবনাকে তার নিন্দা করেন। প্রচলিত রাষ্ট্রতত্ত্বের পুরুষতান্ত্রিক স্রোতের বা তথাকথিত মূল স্রোতের (Malestream or Mainstream) ভাষা, ভাবনা, বিধি নিয়ম তারা মানেন না। নারীত্ব নির্মাণের পুরুষতান্ত্রিক ভাষা, যেমন সিমোন দ্য বোভোয়ারের কথায় ‘দ্বিতীয় লিঙ্গ’, ছাড়াও নারীত্বের সংজ্ঞা, নারীর প্রান্তিকীকরণ (Marginalization) তাদের কাছে ভেদনীতি বলে চিহ্নিত। এঁদের মধ্যে সমতার ধারাগুলি হলো: 

১. উদারবাদী ধারা: যার মূল কথা রাষ্ট্রতত্ত্বের পুরোনো কাঠামো তথা শোষণ ও নিপীড়নের কাঠামো বজায় রেখে নারীকে এর সঙ্গে যুক্ত করার ভাবনা। ম্যারি উলস্টনক্র্যাফট এই ভাবনাকে প্রথম প্রচার করেন তাঁর Vindication of the Rights of Women (১৭৯২) গ্রন্থে। হ্যারিয়েট টেলর, লুসিক্রিয়া মোট, এলিজাবেথ স্ট্যানটন সকলেই নারীর এই সমানাধিকার নীতির সমর্থক। 

২. র‍্যাডিকাল ধারা: তাদের মতে প্রতিষ্ঠিত তত্ত্ব আজ অচল হয়ে পড়েছে। তাদের দৃঢ় ধারণা হলো প্রতিষ্ঠিত তত্ত্বের সমালোচনা করে, আবার নতুন করে গড়ো। পুরুষতন্ত্রের নির্মিত তত্ত্বকে ভেঙে এঁরা চান নারীর সপক্ষে আমূল সংস্কারবাদী ভাবনা। 

৩. বিনির্মাণের তত্ত্ব: এক্ষেত্রে মূল ভাবনা হলো তর্ক ও বিতর্কের মধ্যে পুরোনোকে জানা, তাকে সমালোচনা এবং তার পুনর্বিন্যাস। বিনির্মাণ ও পুনর্বিন্যাসের এই ধারাই ‘Deconstruction, Reconstruction’ নামে পরিচিত হলো।

নারীবাদ সমতার প্রশ্নে গৃহবধুর নৈতিকতা ছেড়ে, বিচ্ছিন্নতার প্রবণতা ছেড়ে, প্রচলিত ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত বিতর্ক (Private-Public Debate) অতিক্রম করে লিঙ্গ-সাম্যের ভাবনাকেই শেষপর্যন্ত লালন করতে চায়। পুরুষের মতোই তাদের অধিকার ও ক্ষমতার জগতে সমতা আসুক, নারীকে নিয়ে সংগঠিত ভাবনা চলুক, জাতীয় সীমা অতিক্রম করে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নারীদের ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদী আন্দোলন বিস্তারিত হোক, সন্ত্রাস ও বিশ্বায়ন সৃষ্ট বিপন্নতা কাটিয়ে নারীরাও শ্রমবাজারে নিজেদের শ্রম বিক্রির স্বাধীনতা অর্জন করুক—এটাই নারীবাদী রাজনীতির প্রতিক্রিয়াশীল গতি।

তথ্যসূত্র

১. দেবাশীষ চক্রবর্তী, রাষ্ট্রচিন্তার বিষয়সমূহ, নেতাজী সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় পুনর্মুদ্রণ ডিসেম্বর ২০১৯, পৃষ্ঠা ৫৩-৫৪।

Leave a Comment

error: Content is protected !!