সুভাষচন্দ্র বসুর ফ্যাসিবাদী চিন্তা হচ্ছে মহামানব সৃষ্টিকারী, একদলীয়, অগণতান্ত্রিক

সুভাষচন্দ্র বসুর ফ্যাসিবাদী চিন্তা (ইংরেজি: Fascist thoughts of Subhas Chandra Bose) হচ্ছে মহামানব সৃষ্টিকারী, একদলীয়, অগণতান্ত্রিক। অর্থাৎ তাঁর রাজনৈতিক চিন্তাধারার সারবস্তুতে প্রতিক্রিয়াশীল অংশ হচ্ছে তাঁর ফ্যাসিবাদী চিন্তাধারা।

সুভাষচন্দ্র বসুর রাষ্ট্রচিন্তায় এক সময় ফ্যাসিবাদের প্রভাবও প্রকট ছিল। সম্ভবত তিনি লক্ষ্য করেছিলেন যে ফ্যাসিবাদের জনক মুসোলিনি অতি অল্প সময়ের মধ্যে ইতালীর রাষ্ট্রিক ও আর্থনীতিক ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করেছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই তার ধারণা জন্মে যে ফ্যাসিবাদী পন্থায়ই অতি দ্রুত দেশের রাজনীতিক-অর্থনীতিক উন্নয়ন প্রয়াস সফল করা যায়। সুভাষ বসুর বিভিন্ন উক্তি থেকে তার ফ্যাসিবাদী প্রবণতা ধরা পড়ে।[১] এ বিষয়ে নিচের উদ্ধৃতিগুলি লক্ষণীয়ঃ

এক. Superman-এর যে রূপ জার্মান দার্শনিক Nietzsche দিয়েছেন ….. তা আপনারা অখণ্ড সত্য বলে গ্রহণ না করতে পারেন – কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য যে সাধু ও মনুষ্য জাতির পক্ষে কল্যাণকর এবং তাদের প্রচেষ্টা যে প্রশংসনীয় সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নাই।
দুই. ……আদর্শের চরণে আত্মবলিদান করতে পারলে – মানুষের চিন্তা, কথা ও কার্য – এক সুরে বাধা হবে।
তিন. অরাজকতা দমন করে স্বাধীন ভারতের ঐক্য ও অখণ্ডতা বজায় রাখার জন্য মধ্য ভিক্টোরীয় গণতন্ত্র নয়, (এজন্য দরকার সামরিক নিয়মানুবর্তিতা দ্বারা আবদ্ধ শক্তিশালী একদলীয় সরকার। 
চার. সমাজতান্ত্রিক ভিত্তিতে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা করতে হলে তথাকথিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের দ্বারা চলবে না। 
পাঁচ. ভারতবর্ষের রোগ একটা নয়। তার এত রকমের রাজনৈতিক ব্যাধি একমাত্র একজন নির্মম ডিক্টেটরই সারাতে পারেন।[২]

উপরের উদ্ধতিসমূহ থেকে বুঝা যায় যে সুভাষচন্দ্র বসুর ফ্যাসিবাদী চিন্তা ফ্যাসিবাদীদের মতোই Cult of Superman, অভিন্ন রাষ্ট্রিক আদর্শ, সামরিক নিয়মানুবর্তিতা, একদলীয় সরকার, রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত অর্থনীতি এবং একনায়কী শাসনে বিশ্বাসী ছিলেন। আবার এরূপ ঢালাওভাবে সুভাষচন্দ্রকে ফ্যাসিবাদের প্রবক্তা বলাও যুক্তিসঙ্গত নয়। তিনি নিজেই আবার ফ্যাসিবাদ বা নাৎসিবাদের বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন:

“হিটলারবাদের আমি বিরোধী, তা সে কংগ্রেসের মধ্যেই থাকুক বা অন্য দেশেই থাকুক। আমার মনে হয় হিটলারবাদের হাত থেকে বাঁচবার একমাত্র উপায় হলো সমাজতন্ত্র”।

এছাড়া সুভাষচন্দ্র বসু ফ্যাসিবাদীদের ‘উগ্রতর সাম্রাজ্যবাদী’ বলতেও দ্বিধা করেন নি। প্রকৃতপক্ষে তিনি ফ্যাসিবাদের মধ্যে কিছু গুণ দেখেছিলেন এবং কমিউনিজমের মধ্যেও অনুরূপ কিছু গুণ প্রত্যক্ষ করে উভয়ের সমন্বয়ে এক স্বতন্ত্র মতবাদ প্রচার করেন।

তথ্যসূত্র

১ . সৈয়দ মকসুদ আলী, রাজনীতি ও রাষ্ট্রচিন্তায় বাংলাদেশ, বাংলা একাডেমী, ঢাকা, দ্বিতীয় পুনর্মুদ্রণ জানুয়ারি ১৯৯৬, পৃষ্ঠা ১৮১-১৮২।
২. সুভাষচেন্দ্র বসু, সৌরেন্দ্রমোহন গঙ্গোপাধ্যায় কর্তৃক উদ্ধৃত, বাঙালির রাষ্ট্রচিন্তা, দ্বিতীয় খণ্ড, জি এ ই পাবলিশার্স, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৯৬৮, পৃষ্ঠা ২০৩।

Leave a Comment

error: Content is protected !!