সাম্য কী? সাম্য সামাজিক বিকাশের চালিকাশক্তি, স্বাধীনতা ও অধিকারের গ্যারান্টি

সাম্য কী? সাম্য বা সমতা (ইংরেজি: Definition of Equality) হচ্ছে সামাজিক বিকাশের চালিকাশক্তি, স্বাধীনতা ও অধিকারের গ্যারান্টি। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একটি আলোচিত বিষয় হচ্ছে সাম্য। বর্তমান গণতান্ত্রিক প্রেক্ষাপটে সাম্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। প্রাচীন গ্রিক দার্শনিকগণ ও আধুনিক দার্শনিকগণ সাম্যের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। সাধারণত সাম্য বলতে সকলের সমান সুযোগ সুবিধার কথা বলা। হয়। তবে এই ধারণা যথার্থ নয়।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় সাম্য হচ্ছে সকলের ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনের জন্য উপযুক্ত সুযোগ সুবিধার বিকাশ সাধন। সাম্য সম্পর্কে বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বিভিন্ন বক্তব্য রেখেছেন। সাম্যের কয়েকটি সংজ্ঞা নিম্নে তুলে ধরা হলো:

১) R. C Agarwal এর ভাষায়, “By equality, we generally mean that all men are equal and all should be entitled to identity of treatment and income.”

২) Prof. Barker বলেন, “সাম্য বলতে ব্যক্তিত্ব বিকাশের ক্ষেত্রে সকলের সমান সুযোগ সুবিধার সমতাকে বোঝায়, কিন্তু এর ফলে প্রত্যেকের ব্যক্তিত্ব সমানভাবে বিকশিত হবে এবং প্রত্যেকে একই রকম গুণগত যোগ্যতা অর্জন করবে তা বোঝায় না।”

৩) ভি আই লেনিন সাম্যের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, “Equality is the opportunity there are no real, actual equality until all possibility of exploitation of one class by another has been totally destroyed.”

৪) অধ্যাপক হ্যারল্ড লাস্কি সাম্যকে তিনটি ভিন্ন অর্থে প্রকাশ করেছেন – যথা: 

ক) সাম্যের অর্থ হচ্ছে বিশেষ সুযোগ সুবিধার অপসারণ;
খ) সাম্যের অর্থ হচ্ছে যোগ্যতা অনুসারে সকল নাগরিকের জন্য যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধার সৃষ্টি করা;
গ) সাম্য হচ্ছে এমন কতিপয় সুযোগ যেগুলো ছাড়া মানুষের জীবন অর্থহীন, সেগুলো নির্বিচারে মেটানোর ব্যবস্থা করা।

৫) পেঙ্গুইন অভিধান অনুসারে, “Equality implies the condition of having equal dignity, rank or privileges with other and equal for power ability, achievement or excellence.”

৬) মার্কসবাদীদের ধারণা: তারা অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষিতে সাম্যের প্রয়োজন ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁদের মতে, “ব্যক্তিগত সম্পত্তি, শ্রেণি বৈষম্য ও শ্রেণিশোষণ প্রভৃতির অবসানের মাধ্যমে সমাজে সকলের সম সুযোগ সুবিধার পরিবেশ সৃষ্টি করাই হচ্ছে সাম্য।”

৭). J. C Johari এর ভাষায়, “Equality implies equal conditions guaranteed to each for making the best of himself.”

৮) Dictionary of Social Science -এর ভাষায়, “The concept of equality refers sometimes to certain properties which men are held to have in common but more often to certain treatment which men either receive or ought to receive.” 

সুতরাং উপরোক্ত প্রশ্ন সাম্য কী এর জবাবের আলোকে বলা যায়, সাম্য হচ্ছে এমন এক অবস্থা যেখানে সমাজের সকল মানুষ সমান সুযোগ সুবিধা, সমান অধিকার ও স্বাধীনতা ভোগ করে। যোগ্যতা অনুসারে মানুষের সমান সুযোগ সুবিধার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করাই হচ্ছে সাম্য বা ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশ সাধন করা।

উপসংহার

ন্যায়বিচারের মতো সাম্য কী প্রশ্নে রাষ্ট্রতাত্ত্বিকদের মধ্যে ঐকমত্য নেই। সাম্যের অর্থ বিচারেই হোক বা তাত্ত্বিক নির্মাণেই হোক এক্ষেত্রে মূল বিতর্ক হলো সাম্যের মান বা মাত্রা কি হবে এবং সাম্যের সঠিক পরিবেশ কোনটি। রক্ষণশীল, প্রতিক্রিয়াশীল, প্রগতিশীল কত কথাই না সাম্যের প্রশ্ন এসে পড়েছে। বিশ শতকে সাম্যের ভাবনায় লিঙ্গ-সাম্যের প্রশ্নও বিচারে এসেছে। সাম্যের সঙ্গে আইন, স্বাধীনতা, গণতন্ত্রকে সম্পর্কে এনে আলোচনা চলেছে। সমতা যে রাজনীতির স্তরেই বাঁধা পড়েনি, অর্থনীতিই যে এর মূলাধার রাষ্ট্রচিন্তায় এই সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াসটি লক্ষণীয়।

এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই সাম্যের গতি আমোঘ। সাংবিধানিক ও আইনি ব্যাখ্যা এই অমোঘ গতির ন্যায্যতা আংশিকভাবে প্রতিপাদন করেছে এবং এর তীব্রতা অনুভূত হয়েছে র‍্যাডিক্যাল তথা সাম্যবাদী ভাবনায়। সাম্য যে কোনো অলীক ভাবনা নয় শিক্ষার্থী পাঠক একথা উপলব্ধি করতে পেরেছেন। শুধু তাত্ত্বিক দৃষ্টিতে নয়, রাষ্ট্রভেদে সাম্যের অবস্থান যে এক থাকে না, এটাও লক্ষণীয়। সঠিক প্রয়োগেই ধারণাটি সফল রূপ পেতে পারে। সমতার পক্ষে সামাজিক আন্দোলন ও জনমত সৃষ্টিই এক্ষেত্রে শেষ কথা।

তথ্যসূত্র

১. মো. আবদুল ওদুদআলেয়া পারভীন, রাজনৈতিক তত্ত্বের পরিচিতি, মনন পাবলিকেশন, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ আগস্ট ২০১১, পৃষ্ঠা ১৪৬।

Leave a Comment

error: Content is protected !!