বলশেভিকবাদ রাষ্ট্রচিন্তা এবং রাষ্ট্রশাসন প্রণালীর বিপ্লবী মার্কসবাদী ধারা

বলশেভিকবাদ বা বলশীবাদ (ইংরেজি: Bolshevism) একটি রাষ্ট্রচিন্তা এবং রাষ্ট্রশাসন প্রণালীর বিপ্লবী মার্কসবাদী-লেনিনবাদী ধারা যা সংযুক্ত একটি গণতান্ত্রিকভাবে কেন্দ্রিভূত, সংহতিশীল ও শৃঙ্খলাবদ্ধ সামাজিক বিপ্লবের সাথে সম্পর্কিত পার্টি গঠনের সাথে জড়িত; যে পার্টি বিদ্যমান পুঁজিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ক্ষমতাচ্যুত করার মাধ্যমে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল এবং “প্রলেতারিয়েতের একনায়কত্ব” প্রতিষ্ঠার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।

বলশেভিকবাদ শব্দটি অনেক সময় লেনিনবাদের সঙ্গে সমার্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে; বস্তুত এটি মার্কসীয় সমাজতন্ত্রী বিপ্লবকে বোঝায়; পক্ষান্তরে লেনিনবাদ হলো সমাজতন্ত্রী বিপ্লবের তত্ত্ব ও প্রয়োগগত বিশ্লেষণ। বলশেভিকবাদের প্রবর্তক ছিলেন লেনিন । কার্যত বৈপ্লবিক পরিবর্তনে এটিকে একটি পদ্ধতি হিসাবে নিয়েছেন কোনও কোনও মার্কসীয় নেতা যেমন স্তালিন, ত্রৎস্কি, মাও সেতুং।[১]

লন্ডনে ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত রুশ সোসাল ডেমোক্রেটিক লেবার পার্টির দ্বিতীয় কংগ্রেসে বলশেভিকবাদের জন্ম হয়। সেই থেকে লেনিন এই মতবাদকে “একটি রাজনৈতিক চিন্তার ধারা এবং একটি রাজনৈতিক দল” হিসাবেও দেখতেন। ওই কংগ্রেসের আলোচনায় পার্টির নিয়মাবলির প্রথম ধারায় পার্টির সদসাপদ গ্রহণের বিষয়ে লেনিন ও তাঁর অনুগামীদের সঙ্গে মার্তভের বিতর্কে ভোটাভুটি হয়। লেনিন চেয়েছিলেন যাঁরা সক্রিয় এবং রাজনৈতিক মতাদর্শে পার্টির প্রতি অনুগত তাঁদেরই কেবল সদস্যপদ দেওয়া হোক; সোসাল ডেমোক্রেটিক পার্টির অন্যান্য নিষ্ক্রিয় সদস্যদের মতো কেবল ট্রেড ইউনিয়নের ভিত্তিতে সদস্যপদ প্রদান অর্থহীন। এই মতপার্থক্য থেকে সদ্যোজাত আর এস ডি এল পি দল বলশেভিক অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং মেনশেভিক অথাৎ সংখ্যালঘিষ্ঠ এই দুটি গোষ্ঠীতে ভাগ হয়ে যায়। 

পার্টির এপ্রিল, ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের সপ্তম সম্মেলনের পর থেকে বলশেভিক শব্দটি সরকারিভাবে পার্টির নামের শেষে বন্ধনীতে যুক্ত হয়। ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের মার্চ থেকে পার্টির পরিবর্তিত নাম হয় রুশ কমিউনিস্ট পার্টি (বলশেভিক) এবং ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর থেকে অল ইউনিয়ন কমিউনিস্ট পার্টি (বলশেভিক)। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দ থেকে বলশেভিক শব্দটি বাদ গিয়ে পার্টির নাম হয় কমিউনিস্ট পার্টি অব সোভিয়েত ইউনিয়ন।

অনেকের মতে বলশেভিকবাদ হলো লেনিনবাদের নামান্তর, যেটা পার্টির কর্মসূচি ও লেনিনের তত্ত্বে বিধৃত। তাতে মেনশেভিকদের নিয়মতান্ত্রিক পরিবর্তনের বদলে সহিংস বিপ্লবের সুপারিশ করা হয়। তাতে গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা ও সর্বহারা শ্রেণির নামে যাবতীয় ক্ষমতা বর্তাবে রাষ্ট্রের উপর এবং ওই শ্রেণিরই নামে চলবে একনায়কতন্ত্র। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে বলশেভিকরা রাশিয়ায় বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে। ভ্লাদিমির লেনিন তাঁর বামপন্থী কমিউনিজম, শিশুসুলভ ব্যাধি গ্রন্থে বলশেভিকবাদ সম্পর্কে স্বল্প আলোচনা করেছেন।

তথ্যসূত্র

১. সৌরেন্দ্রমোহন গঙ্গোপাধ্যায়,রাজনীতির অভিধান, আনন্দ পাবলিশার্স প্রা. লি. কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ, জুলাই ২০১৩, পৃষ্ঠা ১৯৭।

Leave a Comment

error: Content is protected !!