ধর্ম প্রসঙ্গে শ্রমিক পার্টির মনোভাব

রাষ্ট্রীয় দুমায়[১] সিনোদ[২] এস্টিমেট আলোচনায় প্রতিনিধি সুর্কোভের[৩] বক্তৃতা এবং আমাদের দুমা গ্রুপের অভ্যন্তরে সে বক্তৃতার খসড়া নিয়ে বিতর্কে (যা নিচে মুদ্রিত হলো) অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং ঠিক বর্তমান মুহূর্তের পক্ষে জরুরি একটা প্রশ্ন উঠেছে। ধর্মের সঙ্গে যা কিছু সম্পর্কিত তা নিয়ে বর্তমানে ‘সমাজের’ ব্যাপক অংশ আগ্রহান্বিত, শ্রমিক আন্দোলনের সন্নিকটস্থ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যেও তথা কিছু কিছু শ্রমিক গোষ্ঠীর মধ্যেও সে আগ্রহ প্রবেশ করেছে। ধর্ম সম্পর্কে সোশ্যাল-ডেমোক্রাসির মনোভাব কী তা প্রকাশ করতে সে অবশ্যই বাধ্য।

সোশ্যাল-ডেমোক্রাসির সমস্ত বিশ্বদৃষ্টি গড়ে উঠেছে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র অর্থাৎ মার্কসবাদের ওপর। মার্কস[৪] ও এঙ্গেলস[৫] একাধিকবার যা ঘোষণা করেছেন, মার্কসবাদের দার্শনিক ভিত্তি হলো দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ, যা পুরোপুরি গ্রহণ করেছে আঠারো শতকের ফ্রান্সের বস্তুবাদ এবং জার্মানিতে ফয়েরবাখের[৬] (১৯ শতকের প্রথমার্ধ) বস্তুবাদের ঐতিহাসিক ঐতিহ্য — এ বস্তুবাদ নিঃসন্দেহেই নিরীশ্বরবাদী, দৃঢ়ভাবেই সবকিছু ধর্মের বিরোধী। স্মরণ করিয়ে দিই যে মার্কস যে পাণ্ডুলিপিটি পড়ে দেখেছিলেন, এঙ্গেলসের সেই ‘অ্যান্টি-ড্যুরিং’ গ্রন্থের সবটাতেই বস্তুবাদী নিরীশ্বরবাদী ড্যুরিং[৭] বস্তুবাদে সঙ্গতিহীনতা এবং ধর্ম ও ধর্মীয় দর্শনের জন্যে ফাঁক রেখে যাবার জন্যে সমালোচিত হয়েছেন। স্মরণ করিয়ে দিই যে এঙ্গেলস ল্যুডভিগ ফয়েরবাখ গ্রন্থে[৮] তাঁকে ভর্ৎসনা করে বলেছেন যে তিনি ধর্ম নিশ্চিহ্ন করার জন্যে নয়, ধর্মের ‘নবীকরণ’, নতুন একটা ‘উচ্চমার্গীয়’ ধর্ম প্রণয়নের জন্যেই ধর্মের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছিলেন ইত্যাদি। ধর্ম জনগণের পক্ষে আফিমস্বরূপ[৯], মার্কসের এ উক্তিটা ধর্ম প্রসঙ্গে মার্কসবাদের সমস্ত বিশ্বদৃষ্টির মূলকথা। আধুনিক সমস্ত ধর্ম ও গির্জা, সমস্ত ও সর্ববিধ সংগঠনকে মার্কস সর্বদাই মনে করতেন বুর্জোয়া প্রতিক্রিয়ার সংস্থা, শ্রমিক শ্রেণির শোষণ বজায় রাখা ও তাদের ধাপ্পা দেওয়া তার কাজ।

সেই সঙ্গে কিন্তু যারা সোশ্যাল-ডেমোক্রাসির চেয়েও ‘বাম’ বা ‘বৈপ্লবিক’ হতে চায়, ধর্মের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণার অর্থে নিরীশ্বরবাদের সরাসরি স্বীকৃতিকে পার্টি কর্মসূচির অন্তর্ভূত করতে ইচ্ছুক, তাদের প্রচেষ্টা এঙ্গেলস একাধিকবার নিন্দিত করেছেন। ১৮৭৪ সালে কমিউনের পলাতক[১০] লন্ডনে দেশান্তরী ব্লাঙ্কিপন্থীদের[১১] বিখ্যাত ইশতেহার প্রসঙ্গে মন্তব্যে এঙ্গেলস ধর্মের বিরুদ্ধে তাদের সকলরকম যুদ্ধ ঘোষণাকে নির্বুদ্ধিতা বলে অভিহিত করেছেন, বলেছেন, এরূপ যুদ্ধ ঘোষণাই হলো ধর্মে আগ্রহ জাগিয়ে তোলার সেরা পদ্ধতি, সত্যিকারের ধর্ম লুপ্তি তা কঠিন করে তুলবে। এঙ্গেলস ব্লাঙ্কিপন্থীদের এইজন্যে দোষ দিয়েছেন যে তারা বুঝতে অক্ষম যে কেবল শ্রমিক জনতার শ্রেণিসংগ্রামই সচেতন ও বৈপ্লবিক সামাজিক কর্মের মধ্যে প্রলেতারিয়েতের ব্যাপকতম স্তরকে সর্বাঙ্গীণ ভাবে টেনে ক্রমেই বাস্তবে ধর্মের নিগড় থেকে উৎপীড়িতদের মুক্তি দিতে পারে, অন্যদিকে ধর্মের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে শ্রমিক পার্টির রাজনৈতিক কর্তব্য হিসেবে ঘোষণা করা হলো নৈরাজ্যবাদী বুলি[১২]। ১৮৭৭ সালে ‘অ্যান্টি-ড্যুরিং’ গ্রন্থে ভাববাদ ও ধর্মের প্রতি দার্শনিক ড্যুরিংয়ের ন্যূনতম প্রশ্রয়দানকে নির্মম সমালোচনা করলেও এঙ্গেলস সমাজতান্ত্রিক সমাজে ধর্ম নিষিদ্ধ হবে ড্যুরিংয়ের এই তথাকথিত বৈপ্লবিক ভাবনাকেও কম জোরে নিন্দিত করেন নি। ধর্মের বিরুদ্ধে এরূপ যুদ্ধ ঘোষণার অর্থ, এঙ্গেলস বলেন, ‘বিসমার্কের[১৩] চেয়েও বেশি বিসমার্কিপনা’, অর্থাৎ যাজকদের বিরুদ্ধে বিসমার্কী সংগ্রামের নির্বুদ্ধিতা করা (কুখ্যাত ‘সংস্কৃতি অভিযান’ Kulturkampf অর্থাৎ ১৮৭০-এর দশকে ক্যাথলিকবাদের পুলিশী দমন মারফত জার্মান ক্যাথলিক পার্টি, ‘মধ্যপন্থী’ পার্টির বিরুদ্ধে বিসমার্কের সংগ্রাম)। এ সংগ্রামে বিসমার্ক কেবল ক্যাথলিকদের জঙ্গী যাজকতন্ত্রকেই জোরদার করেন, সত্যকার সংস্কৃতির স্বার্থকেই ক্ষতিগ্রস্ত করেন, কেননা রাজনৈতিক ভেদের বদলে প্রধান করে তোলেন ধর্ম ভেদটা, শ্রেণিগত ও বৈপ্লবিক সংগ্রামের জরুরি কর্তব্য থেকে শ্রমিক শ্রেণি ও গণতন্ত্রীদের কিছু স্তরের মনোযোগ বিচ্যুত করেন অতি ভাসা ভাসা ও বুর্জোয়াসুলভ মিথ্যা যাজক-বিরোধিতায়। অতি-বিপ্লবী হয়ে ওঠার বাসনায় ড্যুরিং অন্য রূপে বিসমার্কের ওই নির্বুদ্ধিতারই পুনরাবৃত্তি করতে চাইছেন বলে অভিযোগ করে এঙ্গেলস শ্রমিক পার্টির কাছে দাবি করেছেন ধৈর্য ধরে প্রলোতরিয়েতের সংগঠন ও আলোকদানের কাজটা চালাতে পারার নৈপুণ্য, যাতে পরিণামে ধর্ম লোপ পাবে, ধর্মের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক যুদ্ধ ঘোষণার হঠকারিতায় নামা নয়। এই দৃষ্টিভঙ্গিটা জার্মান সোশ্যাল-ডেমোক্রাসির অস্থিমজ্জাগত হয়ে গেছে, দৃষ্টান্তস্বরূপ, তারা জেশুইটদের স্বাধীনতার জন্যে, জার্মানিতে তাদের প্রবেশদানের জন্যে, যে কোনো ধর্মের বিরুদ্ধেই পুলিশী দলন ব্যবস্থা লোপের জন্যে দাবি করে। ‘ধর্মকে ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে ঘোষণা’— এরফুর্ট কর্মসূচির[১৪] এই বিখ্যাত ধারাটিতে (১৮৯১ সাল) সূত্রবদ্ধ হয়েছে সোশ্যাল-ডেমোক্রাসির উল্লিখিত রাজনৈতিক রণকৌশল।

এ রণকৌশল ইতিমধ্যে গতবাঁধা হয়ে ওঠে, উল্টোদিকে, সুবিধাবাদের দিকে মার্কসবাদের নতুন বিকৃতির জন্ম দিয়ে বসে। এরফুর্ট কর্মসূচির ধারাটার এই অর্থ করা শুরু হয় যে আমরা সোশ্যাল-ডেমোক্রাটরা, আমাদের পার্টি ধর্মকে ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে মনে করি, সোশ্যাল-ডেমোক্রাট হিসেবে আমাদের পক্ষে,পার্টি হিসেবে আমাদের পক্ষে ধর্ম ব্যক্তিগত ব্যাপার। এই সুবিধাবাদী মতামতের সঙ্গে সোজাসুজি বিতর্কে না নেমে এঙ্গেলস ১৮৯০-এর দশকে এ মতের বিরুদ্ধে বিতর্ক মাধ্যমে নয় সদর্থক পদ্ধতিতে দৃঢ়ভাবে দাঁড়ানো প্রয়োজন মনে করেন। যথা: এঙ্গেলস এটা করেন একটা বিবৃতি দিয়ে, তাতে ইচ্ছে করেই জোর দেন যে সোশ্যাল-ডেমোক্রাসি ধর্মকে ব্যক্তিগত ব্যাপর মনে করে রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে, মোটেই নিজের ক্ষেত্রে নয়, মার্কসবাদের ক্ষেত্রে নয়, শ্রমিক পার্টির ক্ষেত্রে নয়[১৫]।

ধর্মের প্রশ্নে মার্কস ও এঙ্গেলসের উক্তিসমূহের বাইরের ইতিহাসটা এই। মার্কসবাদ প্রসঙ্গে যারা ঢিলেঢালা, যারা চিন্তা করতে পারে না বা চায় না, তাদের কাছে এ ইতিহাসটা মার্কসবাদের অর্থহীন স্ববিরোধিতা ও দোলায়মানতার একটা বাণ্ডিল: দেখো-না, সঙ্গতিপরায়ণ নিরীশ্বরবাদ আর ধর্মকে প্রশ্রয়দানের কেমন একটা খিচুড়ি, একদিকে ঈশ্বরের সঙ্গে বি-বি-বিপ্লবী যুদ্ধ আর অন্যদিকে ধর্মপ্রাণ মজুরদের তোষণ, তাদের ভড়কে দেবার ভয়ের মধ্যে ‘নীতিহীন’ দোল ইত্যাদি। নৈরাজ্যবাদী বুলিবাগীশদের সাহিত্যে এই সুরে মার্কসবাদের ওপর আক্রমণ কম মিলবে না।

কিন্তু যে কিছুটা গুরুত্বসহকারে মার্কসবাদকে নিতে পারে, তার দার্শনিক মূলকথা ও আন্তর্জাতিক সোশ্যাল-ডেমোক্রাসির অভিজ্ঞতা নিয়ে ভাবতে পারে, সে সহজেই দেখবে যে ধর্ম প্রসঙ্গে মার্কসবাদের রণকৌশল অতি সঙ্গতিপরায়ণ, মার্কস ও এঙ্গেলস কর্তৃক সুচিন্তিত। পল্লবগ্রাহী ও অজ্ঞরা যেটা দোলায়মানতা ভাবে সেটা দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ থেকে সোজাসুজি টানা অনিবার্য একটা সিদ্ধান্ত। খুবই ভুল হবে যদি ভাবি যে ধর্ম প্রসঙ্গে মার্কসবাদের আপাত ‘নম্রতার’ কারণ বুদ্ধি ‘ভড়কে না দেওয়া’ ইত্যাদির তথাকথিত ‘ট্যাকটিকাল’ বিবেচনা। উল্টে বরং এ প্রশ্নেও মার্কসবাদের, রাজনৈতিক কর্মনীতি তার দার্শনিক মূলকথার সঙ্গে অচ্ছেদ্য জড়িত।

মার্কসবাদ হল বস্তুবাদ। সেই দিক থেকে তা আঠারো শতকের এনসাইক্লোপিডিস্টদের বস্তুবাদের মতোই নির্মম ধর্মবিরোধী। তাতে কোনো সন্দেহই নেই। কিন্তু মার্কস ও এঙ্গেলসের দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ এনসাইক্লোপিডিস্ট বা ফয়েরবাখের চেয়ে আরো এগোয়, বস্তুবাদী দর্শনকে প্রয়োগ করে ইতিহাসের ক্ষেত্রে, সমাজ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে। ধর্মের বিরুদ্ধে আমাদের লড়তে হবে। এটা সমস্ত বস্তুবাদের, সুতরাং মার্কসবাদেরও অ-আ-ক-খ। কিন্তু মার্কসবাদ অ-আ-ক-খ-তেই থেমে যাওয়া বস্তুবাদ নয়। মার্কসবাদ আরো এগোয়। সে বলে, ধর্মের সঙ্গে লড়াই করতে জানা চাই, তার জন্যে জনগণের কাছে ঈশ্বর বিশ্বাস ও ধর্মের উৎস বোঝানো দরকার বস্তুবাদী পদ্ধতিতে। ধর্মের বিরুদ্ধে সংগ্রাম একটা বিমূর্ত ভাবাদর্শগত প্রচারে সীমাবদ্ধ রাখা চলে না, প্রচারে পরিণত করা চলে না, সে সংগ্রামকে হাজির করতে হবে ধর্মের সামাজিক মূলোচ্ছেদের লক্ষ্যে চালিত শ্রেণি আন্দোলনের মূর্ত-প্রত্যক্ষ কর্মের সঙ্গে সম্পর্কিত করে। কেন ধর্ম টিকে থাকছে শহুরে প্রলেতারিয়েতের, পশ্চাৎপদ স্তরগুলোর মধ্যে, আধা- প্রলেতারিয়েতের ব্যাপক স্তরের মধ্যে, কৃষকদের মধ্যে? জনগণের অজ্ঞতাবশে, উত্তর দেয় বুর্জোয়া প্রগতিবাদী, র‍্যাডিক্যাল অথবা বুর্জোয়া বস্তুবাদী। সুতরাং ধ্বংস হোক ধর্ম, নিরীশ্বরতা জিন্দাবাদ, নিরীশ্বরবাদী মতের প্রচারই হলো আমাদের প্রধান কর্তব্য। মার্কসবাদী বলে, তা ঠিক নয়। এ মত হলো ভাসা-ভাসা, বুর্জোয়া-সীমাবদ্ধ সংস্কৃতিপনা। এ মত ধর্মের মূল ব্যাখ্যা করছে যথেষ্ট গভীরে নয়, বস্তুবাদীর মতো নয়, ভাববাদীর মতো। সমসাময়িক পুঁজিবাদী দেশগুলিতে এ মূল প্রধানত সামাজিক। মেহনতী জনগণের সামাজিক দলিতাবস্থা, পুঁজিবাদের অন্ধ শক্তির সামনে তাদের বাহ্যত পূর্ণ অসহায়তা, – যুদ্ধ ভূমিকম্প ইত্যাদি যত কিছু অসাধারণ ঘটনার চেয়েও এ পুঁজিবাদ সাধারণ মেহনতী মানুষদের ওপর প্রতিদিন প্রতি ঘণ্টায় হাজার গুণ বেশি ভয়ঙ্কর কষ্ট, প্রচণ্ডতম যন্ত্রণা চাপিয়ে দিচ্ছে এই হলো ধর্মের গভীরতম সাম্প্রতিক শিকড়। ‘দেবতাদের জন্ম ভয় থেকে’। পুঁজির অন্ধ শক্তির সামনে ভয় – সে শক্তি অন্ধ কারণ জনগণের কাছে তা আগে থেকে গোচরীভূত নয়, প্রলেতারীয় ও ক্ষুদে মালিকদের জীবনের প্রতি পদে তা ‘আচম্বিত’ ‘অপ্রত্যাশিত’ ‘আকস্মিক’ সর্বনাশ, ধ্বংস, নিঃস্বতা, কাঙালবৃত্তি, গণিকাভূতি ও অনশন মৃত্যুর হুমকি দেয় ও তা ঘটায় — এই হলো সাম্প্রতিক ধর্মের শিকড়, বস্তুবাদী যদি শিশু পাঠের বস্তুবাদী হয়ে না থাকতে চায়, তাহলে সর্বাগ্রে ও সর্বোপরি এটা তার খেয়াল রাখতে হবে। পুঁজিবাদী কয়েদখাটুনিতে জর্জরিত, পুঁজিবাদের অন্ধ ধ্বংস-শক্তির অধীনস্থ জনগণ যতদিন নিজেরাই সম্মিলিত, সংগঠিত, সুপরিকল্পিত ও সচেতন ভাবে ধর্মের এই শিকড়ের বিরুদ্ধে, পুঁজির সব ধরনের প্রভুত্বের বিরুদ্ধে লড়াই না করতে শিখছে, ততদিন কোনো জ্ঞানপ্রচারণী পুস্তিকাতেই এই জনগণের মধ্য থেকে ধর্ম মোছা যাবে না।

এ থেকে কি এই দাঁড়ায় যে ধর্মের বিরুদ্ধে জ্ঞানপ্রচারণী পুস্তিকা ক্ষতিকর অথবা অবান্তর? মোটেই তা নয়। এ থেকে দাঁড়ায় যে সোশ্যাল-ডেমোক্রাসির নিরীশ্বরবাদী প্রচারকে হতে হবে তার মূল কর্তব্য, শোষকদের বিরুদ্ধে শোষিত জনগণের শ্রেণিসংগ্রাম বৃদ্ধির অধীনস্থ

দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ অর্থাৎ মার্কস ও এঙ্গেলসের দর্শনের মূলকথা নিয়ে যে ভাবে না, তেমন লোক হয়ত এ বক্তব্যটি বুঝবে না (অন্তত, সঙ্গে সঙ্গেই বুঝবে না)। সে আবার কী? ভাবাদর্শের প্রচার, নির্দিষ্ট কতকগুলি ধারণার প্রচার, সংস্কৃতি ও প্রগতির যে শত্রু হাজার হাজার বছর টিকে আছে (অর্থাৎ ধর্ম) তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম হবে শ্রেণিসংগ্রামের অধীনস্থ, অর্থাৎ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের নির্দিষ্ট কয়েকটি ব্যবহারিক লক্ষ্যার্জন সংগ্রামের অধীন?

আরো পড়ুন

এরূপ আপত্তি মার্কসবাদের বিরুদ্ধে চলতি নানা আপত্তির একটি, যাতে মার্কসীয় দ্বন্দ্বতত্ত্ব বোঝার পূর্ণ অক্ষমতাই প্রমাণিত হয়। এরূপ আপত্তিকারীরা যে স্ববিরোধে বিচলিত হয়, সেটা বাস্তব জীবনের বাস্তব স্ববিরোধিতা, অর্থাৎ মৌখিক নয়, স্বকপোলকল্পিত নয়, দ্বান্দ্বিক স্ববিরোধিতা। নিরীশ্বরবাদের তাত্ত্বিক প্রচার অর্থাৎ প্রলেতারিয়েতের কিছু কিছু স্তরের মধ্যে ধর্মবিশ্বাসের সংহারকে সে সব স্তরের শ্রেণিসংগ্রামের সাফল্য, গতিধারা ও শর্ত থেকে একটা চূড়ান্ত, অনতিক্রম্য সীমা টেনে ভাগ করার অর্থ অদ্বান্দ্বিকের মতো বিচার, যে সীমাটা চঞ্চল ও আপেক্ষিক তাকে চূড়ান্তে পরিণত করা, বাস্তব জীবনে যেটা অচ্ছেদ্য জড়িত তাকে জোর করে ছেঁড়া। দৃষ্টান্ত দেওয়া যাক। নির্দিষ্ট এলাকায় ও শিল্পের নির্দিষ্ট একটি শাখায় প্রলেতারিয়েত, ধরা যাক, যথেষ্ট সচেতন সোশ্যাল-ডেমোক্রাটদের একটা স্তর (যারা বলাই বাহুল্য নিরীশ্বরবাদী) এবং যথেষ্ট পশ্চাৎপদ, এখনো গ্রামাঞ্চল ও কৃষকদের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের মধ্যে বিভক্ত, যারা ঈশ্বরে বিশ্বাসী, গির্জায় যায়, অথবা এমনকি সরাসরি স্থানীয় পুরোহিতেরই প্রভাবাধীন, যে ধরা যাক খ্রীষ্টীয় শ্রমিক ইউনিয়ন গড়ছে। আরো ধরা যাক এ রকম একটি এলাকায় অর্থনৈতিক সংগ্রাম ধর্মঘটে পৌঁছেছে। মার্কসবাদীর পক্ষে ধর্মঘট আন্দোলনের সাফল্যটাকেই প্রধান করে ধরা অবশ্যকর্তব্য, এ সংগ্রামের মধ্যে খ্রীষ্টান ও নিরীশ্বরবাদীতে শ্রমিকদের ভাগাভাগির দৃঢ় প্রতিরোধ করা, এ বিভাগের বিরুদ্ধে দৃঢ় লড়াই চালানো অবশ্যকর্তব্য। এরূপ পরিস্থিতিতে নিরীশ্বরবাদী প্রচার হয়ে উঠতে পারে অবান্তর ও ক্ষতিকর – সেটা পশ্চাৎপদ স্তরদের ভড়কে না দেওয়া, নির্বাচনে হেরে যাওয়া ইত্যাদির ছেঁদো যুক্তিতে নয়, শ্রেণিসংগ্রামের সত্যকার অগ্রগতির দৃষ্টকোণ থেকে, আধুনিক পুঁজিবাদী সমাজের পরিস্থিতিতে সে সংগ্রাম খ্রীষ্টীয় শ্রমিককে সোশ্যাল-ডেমোক্রাসি ও নিরীশ্বরবাদে পৌঁছে দেবে নগ্ন নিরীশ্বরবাদী প্রচারের চেয়ে শতগুণ ভালো ভাবে। এরূপ মুহূর্তে ওএরূপ পরিস্থিতিতে নিরীশ্বরবাদী প্রচারক কেবল পাদ্রীটি ও পাদ্রীদের হাতই জোরদার করবে, যারা ধর্মঘটে অংশগ্রহণ নিয়ে শ্রমিকদের ভাগাভাগির বদলে ঈশ্বর বিশ্বাস নিয়ে শ্রমিকদের ভাগ করতে পারলে আর কিছুই চায় না। যে করেই হোক ঈশ্বরের বিরোধী যুদ্ধের প্রচার মারফত নৈরাজ্যবাদীরা আসলে পাদ্রী ও বুর্জোয়াদেরই সাহায্য করে বসবে (বাস্তবক্ষেত্রে বরাবরই তারা যেমন বুর্জোয়াদের সাহায্য করে থাকে)। মার্কসবাদীকে হতে হবে বস্তুবাদী, অর্থাৎ ধর্মের শত্রু, কিন্তু বস্তুবাদী দ্বান্দ্বিক, অর্থাৎ ধর্মের সঙ্গে সংগ্রামটাকে যে বিমূর্ত ভাবে নয়, নিরাকার, বিশুদ্ধ তাত্ত্বিক, নিত্য একরূপ প্রচারের ভিত্তিতে নয়, হাজির করবে মূর্ত প্রত্যক্ষ ভাবে, শ্রেণিসংগ্রামের ভিত্তিতে, যা বাস্তবে চলছে জনগণকে যা সবচেয়ে বেশি করে ও ভালো করে শিক্ষিত করে তুলছে। মার্কসবাদীর উচিত সমগ্র প্রত্যক্ষ-নির্দিষ্ট পরিস্থিতিটা হিসাব করতে পারা, সর্বদাই নৈরাজ্যবাদ ও সুবিধাবাদের মধ্যে সীমা টানতে পারা (এ সীমাটা আপেক্ষিক, চঞ্চল, পরিবর্তমান, কিন্তু তা আছে), নৈরাজ্যবাদীর বিমূর্ত, বাক্যসর্বস্ব ও আসলে ফাঁপা ‘বিপ্লবীয়ানাতে’ সে পা দেবে না, পা দেবে না পেটি বুর্জোয়া বা উদারনীতিক বুদ্ধিজীবীর কুপমণ্ডূকতা ও সুবিধাবাদে, যে ধর্মের সঙ্গে সংগ্রামে ভয় পায়, নিজের এ কর্তব্যটা ভুলে বসে, ঈশ্বর বিশ্বাসকে মেনে নেয়, চালিত হয় শ্রেণিসংগ্রামের স্বার্থে নয়, তুচ্ছ, শোচনীয় হিসেবিপনায়: কাউকে চটিয়ে না, কাউকে ধাক্কিয়ো না, কাউকে ভড়কিয়ো না, চালিত হয় অতিপ্রাজ্ঞ এই নিয়মে: ‘নিজে বাঁচো, অন্যদের বাঁচতে দাও’ ইত্যাদি।

ধর্ম প্রসঙ্গে সোশ্যাল-ডেমোক্রাসির মনোভাব সংক্রান্ত সমস্ত গৌণ সমস্যার সমাধান করা উচিত পূর্বোল্লিখিত দৃষ্টিকোণ থেকে। যেমন, প্রায়ই প্রশ্ন ওঠে, যাজক কি সোশ্যাল-ডেমোক্রাটিক পার্টির সব্য হতে পারে, এবং সাধারণত তার উত্তর দেওয়া হয় বিনা শর্তে হ্যাঁ, নজির দেওয়া হয় ইউরোপীয় সোশ্যাল-ডেমোক্রাটিক পার্টিগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে। কিন্তু এ অভিজ্ঞতার সৃষ্টি হয়েছে শুধু শ্রমিক আন্দোলনে মার্কসবাদ প্রয়োগের ফলেই নয়, পশ্চিমের বিশেষ ঐতিহাসিক পরিস্থিতির ফলেও, যা রাশিয়ায় অনুপস্থিত (পরে সে সব পরিস্থিতির কথা আমরা বলব), তাই বিনা শর্তে হ্যাঁ উত্তর দেওয়া এক্ষেত্রে সঠিক নয়। যাজকরা সোশ্যাল-ডেমোক্রাটিক পার্টির সভ্য হতে পারবে না, বরাবরের মতো সমস্ত পরিস্থিতিতেই এ রায় দেওয়া যায় না, ঠিক, কিন্তু বরাবরের মতো উল্টো নিয়ম জারি করাও চলে না। পাদ্রীটি যদি একত্র রাজনৈতিক কাজের জন্যে আমাদের কাছে আসে এবং সবিবেকে পার্টি কর্তব্য পালন করে, পার্টি কর্মসূচির বিরুদ্ধাচরণ না করে, তাহলে আমরা তাকে সোশ্যাল-ডেমোক্রাটিক পার্টির মধ্যে নিতে পারি, কারণ আমাদের কর্মসূচির সুর ও মূলকথার সঙ্গে পাদ্রীটির ধর্মবিশ্বাসের বৈপরীত্যটা এরূপ পরিস্থিতিতে শুধু তার ব্যাপার, তার ব্যক্তিগত স্ববিরোধ হয়ে থাকবে, আর পার্টি কর্মসূচির সঙ্গে পার্টি সভ্যদের দৃষ্টিভঙ্গির স্ববিরোধ লুপ্ত হয়েছে কিনা তার পরীক্ষা নেওয়া রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষে অসম্ভব। কিন্তু বলাই বাহুল্য, অনুরূপ ঘটনা এমনকি ইউরোপেও কেবল এক একটি বিরল ব্যতিক্রম, আর রাশিয়ার ক্ষেত্রে তা খুবই অবিশ্বাস্য। আর দৃষ্টান্তস্বরূপ পাদ্রীটি যদি সোশ্যাল-ডেমোক্রাটিক পার্টিতে এসে তার ভেতর নিজের প্রধান ও প্রায় একমাত্র কর্তব্য হিসেবে ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির সক্রিয় প্রচার করতে থাকে, তাহলে অবশ্যই স্বপঙক্তি থেকে তাকে বহিষ্কার করা পার্টির উচিত। ঈশ্বরে বিশ্বাস যাদের টিকে আছে এমন সমস্ত মজুরদের সোশ্যাল-ডেমোক্রাটিক পার্টির মধ্যে অনুমোদন করা শুধু নয়, প্রচণ্ড ভাবে তাদের টেনে আনতেই হবে, অবশ্যই আমরা তাদের ধর্মবিশ্বাসের এতটুকু লাঞ্ছনারও বিরুদ্ধে, কিন্তু আমরা তাদের টেনে আনব আমাদের কর্মসূচির প্রেরণায় তাদের গড়ে তোলার জন্যে, সে কর্মসূচির বিরুদ্ধে সক্রিয় সংগ্রামের জন্যে নয়। পার্টির অভ্যন্তরে মতের স্বাধীনতা আমরা মানি, কিন্তু একটা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে, যা নির্ধারিত হয় জোট বন্ধনের স্বাধীনতা দিয়ে: পার্টির অধিকাংশ যে মত বর্জন করেছে তার সক্রিয় প্রচারকদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে যেতে আমরা বাধ্য নই।

অন্য আরেকটি দৃষ্টান্ত: ‘সমাজতন্ত্রই আমার ধর্ম’ বলে ঘোষণা, অথবা সে বিবৃতি অনুসারী মত প্রচার করলে সোশ্যাল-ডেমোক্রাটিক পার্টির সভ্যদের কি সর্ব পরিস্থিতিতেই সমান ভাবে নিন্দা করা চলে? চলে না। মার্কসবাদ থেকে (সুতরাং সমাজতন্ত্র থেকেও) বিচ্যুতি এখানে সন্দেহাতীত, কিন্তু এ বিচ্যুতির তাৎপর্য, তার বলা যেতে পারে আপেক্ষিক গুরুত্ব বিভিন্ন অবস্থায় বিভিন্ন রকম হতে পারে। একজন আন্দোলনকারী, অথবা শ্রমিক জনগণের সমক্ষে একজন বক্তা যখন কথাটা বলেন বেশি বোধগম্য হবার জন্যে, বক্তব্য সূত্রপাতের জন্যে, অবিকশিত জনগণের কাছে অভ্যস্ত ভাষায় নিজের মত বাস্তব ভাবে প্রকাশের জন্যে, তখন এক কথা। আর লেখক যখন ঈশ্বর-গড়া[১৬] অথবা ঈশ্বর নির্মাণী সমাজতন্ত্র (দৃষ্টান্ত স্বরূপ আমাদের লুনাচারস্কি[১৭] কোম্পানির ঢঙে) প্রচার করতে শুরু করে, তখন অন্য ব্যাপার। প্রথম ক্ষেত্রে নিন্দা করলে তা যে পরিমাণে হবে ছিদ্রান্বেষণ, এমনকি বক্তার স্বাধীনতা সঙ্কোচন, ‘মাস্টারী পদ্ধতি মারফৎ’ প্রভাবিত করার যে স্বাধীনতা দরকার, তার সঙ্কোচন, দ্বিতীয় ক্ষেত্রে ঠিক সেই পরিমাণেই পার্টি নিন্দা আবশ্যক ও বাধ্যতামূলক। ‘সমাজতন্ত্রই ধর্ম’, একথাটা এক দলের কাছে ধর্ম থেকে সমাজতন্ত্রে উত্তরণের এবং অন্যদের ক্ষেত্রে সমাজতন্ত্র থেকে ধর্মে উৎক্রমণের একটা রূপ।

‘ধর্মকে ব্যক্তিগত ব্যাপার ঘোষণা’র থিসিসটির সুবিধাবাদী ব্যাখ্যা দেখা দিয়েছিল পশ্চিমের যে সব পরিস্থিতিতে এবার তাতে আসা যাক। বলাই বাহুল্য, এক্ষেত্রে সাধারণ ভাবে সুবিধাবাদ উদ্ভবের সাধারণ কারণগুলির প্রভাবও আছে, যথা ক্ষণিক সুবিধার যুপকাষ্ঠে শ্রমিক শ্রেণির মৌলিক স্বার্থ বলিদান। ধর্মকে ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে ঘোষণার জন্যে প্রলেতারিয়েতের পার্টি রাষ্ট্রের কাছে দাবি করে, কিন্তু জনগণের আফিমের বিরুদ্ধে সংগ্রাম, ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ইত্যাদিকে মোটেই ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে ভাবে না। সুবিধাবাদীরা ব্যাপারটা এমন ভাবে বিকৃত করে যেন সোশ্যাল-ডেমোক্রাটিক পার্টিই বুঝি ধর্মকে ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে ভেবেছে!

কিন্তু চলতি সুবিধাবাদী বিকৃতি (ধর্ম নিয়ে বক্তৃতাটার আলোচনা কালে আমাদের দুমা গ্রুপ যে বিতর্ক চালায় তাতে তা আদৌ ব্যাখ্যা করা হয় নি) ছাড়াও আছে বিশেষ ঐতিহাসিক পরিস্থিতি যাতে দেখা দিয়েছে ধর্মের প্রশ্নে ইউরোপীয় সোশ্যাল-ডেমোক্রাটিক পার্টিগুলির সাম্প্রতিক, বলা যেতে পারে, মাত্রাতিরিক্ত উদাসীনতা। পরিস্থিতিটা দুই ধরনের। প্রথমত, ধর্মের সঙ্গে সংগ্রামটা হলো বুর্জোয়া বিপ্লবের ঐতিহাসিক কর্তব্য এবং পশ্চিমে বুর্জোয়া গণতন্ত্র তার বিপ্লবের যুগে অথবা সামন্তবাদ ও মধ্যযুগীয়তার ওপর আক্রমণের যুগে সে কর্তব্য অনেক পরিমাণে পূরণ করেছিল বা পালন করতে নেমেছিল। ফ্রান্স এবং জার্মানি উভয় দেশেই আছে ধর্মের বিরুদ্ধে বুর্জোয়া সংগ্রামের ঐতিহ্য, যা শুরু হয় সমাজতন্ত্রের অনেক আগেই (এনসাইক্লোপিডিস্টরা, ফয়েরবাখ)। রাশিয়ায় আমাদের বুর্জোয়া-গণতান্ত্রিক বিপ্লবের পরিস্থিতি হেতু এ কর্তব্যটাও বর্তেছে প্রায় পুরোপুরি শ্রমিক শ্রেণির উপর। পেটি বুর্জোয়া (নারোদনিক) গণতন্ত্র এদিক থেকে আমাদের দেশে কাজ করছে অত্যন্ত বেশি নয় (যা ভাবেন ‘ভেখি’র[১৮] নবাবির্ভূত কৃষ্ণশতমার্কা কাদেতরা অথবা কাদেতমার্কা কৃষ্ণশতরা) বরং ইউরোপের তুলনায় অত্যন্ত কম।

অন্যদিকে, ধর্মের বিরুদ্ধে বুর্জোয়া সংগ্রামের ঐতিহ্য থেকে ইউরোপে দেখা দিয়েছে সে সংগ্রামের নৈরাজ্যবাদী বিকৃতি, যে নৈরাজ্যবাদ বুর্জোয়াকে আক্রমণের সমস্ত ‘প্রচণ্ডতা’ সত্ত্বেও দাঁড়ায় বুর্জোয়া বিশ্বদৃষ্টিরই ওপরে, — মার্কসবাদীরা তা বহুদিন এবং বহুবার দেখিয়েছে। রোমক দেশগুলিতে নৈরাজ্যবাদী ও ব্লাঙ্কিপন্থীরা, জার্মানিতে মস্ট[১৯] (প্রসঙ্গত ড্যুরিংয়ের চেলা) কোং, অস্ট্রিয়ায় ৮০’র দশকে নৈরাজ্যবাদীরা ধর্মের বিরুদ্ধে সংগ্রামে বিপ্লবী বুলিকে ঠেলে নিয়ে যায় nec plus ultra[২০] পর্যন্ত। অবাক হবার কিছু নেই যে ইউরোপীয় সোশ্যাল-ডেমোক্রাটরা এখন নৈরাজ্যবাদীদের হাতে বাঁকানো লাঠিটাকে উল্টো দিকে বাঁকাচ্ছে। এটা বোঝা যায় এবং কিছুটা পরিমাণে তা সঙ্গত, কিন্তু পশ্চিমের এই বিশেষ ঐতিহাসিক পরিস্থিতিটা ভুলে যাওয়া আমাদের রুশ সোশ্যাল-ডেমোক্রাসির সাজে না।

দ্বিতীয়ত, পশ্চিমে জাতীয় বুর্জোয়া বিপ্লব সমাপ্তির পর, ধর্মবিশ্বাসের মোটামুটি পূর্ণ স্বাধীনতা প্রচলনের পর, ধর্মের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক সংগ্রামে প্রশ্নটা বুর্জোয়া গণতন্ত্রের সঙ্গে সমাজতন্ত্রের সংগ্রাম দ্বারা ঐতিহাসিক ভাবে এতটা গৌণস্থানে পড়ে যায় যে বুর্জোয়া সরকাররা ইচ্ছে করে সমাজতন্ত্র থেকে জনগণের দৃষ্টি সরাবার চেষ্টা করে যাজকতন্ত্রের বিরুদ্ধে মেকি উদারনীতিক ‘অভিযান’ খাড়া করে। জার্মানিতে Kultur-kampf এবং ফ্রান্সে যাজকতন্ত্রের বিরুদ্ধে বুর্জোয়া প্রজাতন্ত্রীদের সংগ্রামটা ছিল এই চরিত্রের। সামজতন্ত্র থেকে জনগণের মনোযোগ বিকর্ষণের উপায়স্বরূপবুর্জোয়া যাজকবিরোধিতা – এইটে দেখা দেয় পশ্চিমে ধর্মের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রতি সোশ্যাল-ডেমোক্রাটদের মধ্যে ‘উদাসীনতা’ ছড়াবার আগে। এটাও বোধগম্য এবং সঙ্গত, কেননা বুর্জোয়া ও বিসমার্কী যাজকবরোধিতার বিপরীতে সোশ্যাল-ডেমোক্রাসিকে বলতেই হতো যে ধর্মের বিরুদ্ধে সংগ্রামটা সমাজতন্ত্রের জন্যে সংগ্রামের অধীন

কয়েকটি গান শুনুন

রাশিয়ায় একেবারেই অন্যরকম পরিস্থিতি। প্রলেতারিয়েতই হলো আমাদের বুর্জোয়া-গণতান্ত্রিক বিপ্লবের নেতা। সমস্ত মধ্যযুগীয়তার বিরুদ্ধে, সেই সঙ্গে সাবেকী সরকারি ধর্ম ও তার নবায়ন বা নবপ্রতিষ্ঠা বা অন্যবিধ প্রতিষ্ঠা ইত্যাদির সমস্ত প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে সংগ্রামে প্রলেতারিয়েতের পার্টিকেই হতে হবে ভাবাদর্শগত নেতা। সেইজন্যেই, রাষ্ট্র ধর্মকে ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে ঘোষণা করুক শ্রমিক পার্টির এই দাবির বদলে যারা খোদ সোশ্যাল-ডেমোক্রাসি ও সোশ্যাল-ডেমোক্রাটিক পার্টির কাছেই ধর্মকে ব্যক্তিগত ব্যাপার ঘোষণা করতে চেয়েছিল, সেই জার্মান সোশ্যাল-ডেমোক্রাটদের সুবিধাবাদকে যদি এঙ্গেলস অপেক্ষাকৃত নরম ঢঙে শুধরে দিয়ে থাকেন, তাহলে বোঝাই যায় যে রুশ সুবিধাবাদীগণ কর্তৃক এই জার্মান বিকৃতিটির আমাদানিটা এঙ্গেলসের কাছে শতগুণ তীব্র সমালোচনার যোগ্য হতো। 

ধর্ম জনগণের পক্ষে আফিমস্বরূপ, দুমা মঞ্চ থেকে আমাদের গ্রুপ এই ঘোষণা করে একান্ত সঠিক কাজই করেছেন এবং এইভাবে ধর্মের প্রশ্ন নিয়ে রুশ সোশ্যাল-ডেমোক্রাটদের সমস্ত বক্তৃতার পক্ষেই একটি নজির রেখেছেন। আরো বিস্তারিত ভাবে নিরীশ্বরবাদী সব বক্তব্য উপস্থিত করে আরো এগুনো উচিত ছিল কি? আমাদের ধারণা উচিত হতো না। তাতে প্রলেতারিয়েতের রাজনৈতিক পার্টির পক্ষ থেকে ধর্মের সংগ্রামে বাড়াবাড়ির আশঙ্কা দেখা দিতে পারত; ধর্মের বিরুদ্ধে বুর্জোয়া সংগ্রাম ও সমাজতান্ত্রিক সংগ্রামের সীমা রেখাটা মুছে যেতে পারত। কৃষ্ণশত দুমায় সোশ্যাল-ডেমোক্রাটিক গ্রুপের সর্বাগ্রে যেটা করার ছিল তা সসম্মানে করা হয়েছে।

দ্বিতীয়টা — সোশ্যাল-ডেমোক্রাটদের কাছে যা প্রায় প্রধান কাজ অর্থাৎ শ্রমিক শ্রেণির বিরুদ্ধে সংগ্রামে কৃষ্ণশত সরকার ও বুর্জোয়াদের যে গির্জা ও যাজকসম্প্রদায় সমর্থন জানায় তার শ্রেণি চরিত্র ব্যাখ্যা — এটাও সসম্মানে করা হয়েছে। বলাই বাহুল্য এ বিষয়ে অনেক কথাই বলা সম্ভব এবং কমরেড সুর্কোভের বক্তৃতা পরিপূরণ করার মতো অবকাশ সোশ্যাল-ডেমোক্রাটদের পরবর্তী বক্তৃতাগুলোয় থাকবে, তাহলেও বক্তৃতাটি তাঁর হয়েছে চমৎকার, এবং সমস্ত পার্টি সংগঠনগুলি কর্তৃক তার প্রচার আমাদের পার্টির সরাসরি কর্তব্য।

তৃতীয়ত — ‘ধর্মকে ব্যক্তিগত ব্যাপার ঘোষণা’ এই যে কথাটাকে জার্মান সুবিধাবাদীরা অত বার বার বিকৃত করেছে তার সঠিক তাৎপর্য সর্বাঙ্গীণরূপে ব্যাখ্যা করা উচিত ছিল। দুঃখের বিষয় কমরেড সুর্কোভ সেটা করেন নি। এটা আরো আক্ষেপের কথা কারণ গ্রুপের বিগত ক্রিয়াকলাপে কমরেড বেলোউসভের ভুল হয়েছিল এই প্রশ্নে এবং প্রলেতারি’ পত্রিকা[২১] তা যথাসময়ে উল্লেখও করে। দুমা গ্রুপের অভ্যন্তরীণ আলোচনা থেকে দেখা যাচ্ছে যে নিরীশ্বরবাদ নিয়ে তর্কের ফলে ধর্মকে ব্যক্তিগত ব্যাপার ঘোষণা করা হোক এই কুখ্যাত দাবিটিকে সঠিক ভাবে পেশ করার প্রশ্নটা চাপা পড়ে। গোটা গ্রুপের এই ভুলের জন্যে একা কমরেড সুর্কোভকে আমরা দোষ দেব না। শুধু তাই নয়, সোজাসুজি স্বীকার করব যে এখানে গোটা পার্টিরই দোষ আছে, এ প্রশ্নটাকে তা যথেষ্ট ব্যাখ্যা করে নি, জার্মান সুবিধাবাদীদের উদ্দেশে এঙ্গেলসের মন্তব্যটির তাৎপর্য সোশ্যাল-ডেমোক্রাটদের চৈতন্যে পৌঁছে দেবার জন্যে যথেষ্ট তৈরি থাকে নি। গ্রুপের আলোচনা থেকে দেখা যাচ্ছে যে সমস্যার উপলব্ধিটাই ঝাপসা, মার্কসের শিক্ষা গ্রহণে অনিচ্ছা মোটেই ব্যাপারটার কারণ নয়, এবং আমাদের স্থির বিশ্বাস যে দুমা গ্রুপের পরবর্তী বক্তৃতাগুলোয় ত্রুটিটা সংশোধিত হবে।

মোটের ওপর, ফের বলি, কমরেড সুর্কোভের বক্তৃতাটি চমৎকার এবং সমস্ত সংগঠন থেকে তার প্রচার হওয়া উচিত। এ বক্তৃতার আলোচনা থেকে প্রমাণ হয় যে গ্রুপ তার সোশ্যাল-ডেমোক্রাটিক দায়িত্ব সবিবেকে পুরোপুরি পালন করছে। গ্রুপকে পার্টির সন্নিকট করার জন্যে, গ্রুপ যে কঠিন অভ্যন্তরীণ কাজ চালাচ্ছে তার সঙ্গে পার্টির পরিচয় সাধনের জন্যে, পার্টি ও গ্রুপের কার্যকলাপে ভাবাদর্শগত ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্যে আশা করা যাক যে গ্রুপের অভ্যন্তরীণ আলোচনার রিপোর্ট পার্টি সংবাদপত্রে ঘন ঘন প্রকাশিত হবে।

৪৫ নং প্রলেতারি,
১৩ (২৬) মে, ১৯০৯

আরো পড়ুন

টিকা:

[১] রাষ্ট্রীয় দুমা — ১৯০৫ সালের বৈপ্লবিক ঘটনাবলির ফলে বাধ্য হয়ে জার সরকারের আহূত প্রতিনিধিত্বমূলক সংস্থা। আনুষ্ঠানিকভাবে এটা ছিল বিধানিক সংস্থা, কিন্তু সত্যিকারের কোনো কর্তৃত্ব এটার ছিল না। নির্বাচন ছিল পরোক্ষ, অসম, আর তাও ছিল না সর্বজনীন। মেহনতী শ্রেণিগুলি এবং রাশিয়ায় অধিবাসী অ-রুশ জাতিগুলির ভোটাধিকার ছিল অত্যন্ত সংকুচিত; শ্রমিক আর কৃষকদের বেশ একটা অংশের ভোট ছিলই না আদৌ। ১৯০৫ সালের ১১(২৪) ডিসেম্বরের নির্বাচনী আইন অনুসারে একজন ভূস্বামীর ভোট ছিল শহুরে বুর্জোয়াদের ৩ ভোট, কৃষকদের ২৫ ভোট এবং শ্রমিকদের ৪৫ ভোটের সমান।
প্রথম দুমা (১৯০৬ সালের এপ্রিল-জুলাই) এবং দ্বিতীয় দুমা (১৯০৭ সালের ফেব্রুয়ারি-জুন) ভেঙে দিয়েছিল জার সরকার। ১৯০৭ সালে ৩ জুনের কূদেতা-র পরে সরকার জারি করে নতুন নির্বাচনী আইন, তাতে আরও সংকুচিত করা হয় শ্রমিক, কৃষক আর শহুরে পেটি বুর্জোয়াদের ভোটাধিকার, আর তৃতীয় (১৯০৭-১৯১২) এবং চতুর্থ (১৯১২-১৯১৭) দুমা-য় ভূস্বামী আর বৃহৎ পুঁজিপতিদের প্রতিক্রিয়াশীল কৃষ্ণশতক জোটের আধিপত্য নিশ্চিত করা হয়।
[২] সিনোদ – জার-শাসিত রাশিয়ায় অর্থোডক্স যাজনতন্ত্রের পরিচালন সংস্থা।
[৩] প. ই. সুর্কোভ (১৮৭৬-১৯৪৬) – সোশ্যাল-ডেমোক্রাট, তৃতীয় দুমা-র ডেপুটি।
[৪] কার্ল মার্কস (১৮১৮-১৮৮৩) –মার্কসবাদের প্রতিষ্ঠাতা মহান দার্শনিক।
[৫] ফ্রিডরিখ এঙ্গেলস (১৮২০-১৮৯৫) – মার্কসবাদের বিশ্ব সাম্যবাদী আন্দোলনের পথিকৃৎ, জার্মান সমাজবিজ্ঞানী, লেখক, দার্শনিক ও বিপ্লবী।
[৬] ল্যুডভিগ ফয়েরবাখ (১৮০৪-১৮৭২) – প্রাক-মার্কসীয় কালের শ্রেষ্ঠতম জার্মান বস্তুবাদী দার্শনিক।
[৭] ওগেন ড্যুরিং (১৮৩৩-১৯২১) – জার্মান অর্বাচীন বস্তুবাদী আর দৃষ্টবাদী।
[৮] এঙ্গেলসের ‘ল্যুডভিগ ফয়েরবাখ এবং ক্ল্যাসিকাল জার্মান দর্শনের অবসান’-এর (১৮৮৮) কথা বলা হচ্ছে।
[৯] দ্রষ্টব্য ― ক. মার্কস, ‘হেগেলের অধিকার দর্শনের পর্যালোচনা প্রবন্ধ ভূমিকা।’ মার্কস এবং এঙ্গেলস, ধর্ম প্রসঙ্গে, মস্কো, ১৯৫৭, ৪২ পৃঃ।
[১০] ১৮৭১ সালের প্যারিস কমিউনের কথা বলা হচ্ছে।-সম্পাঃ
[১১] ব্লাঙ্কিপন্থীরা – লুই অগ্যুস্ত ব্লাঙ্কি-র অনুগামী ফরাসী সমাজতন্ত্রীরা। ‘প্রলেতারিয়ান শ্রেণিসংগ্রাম দিয়ে নয়, বুদ্ধিজীবীদের ক্ষুদ্র সংখ্যালঘুর ফাঁদা চক্রান্তের সাহায্যে মানবজাতি মজুরি-দাসত্ব থেকে মুক্ত হবে’ বলে তারা মনে করত (লেনিন)।
[১২] দ্রষ্টব্য – ফ. এঙ্গেলস, ‘Fluchtlings-Literatur II, Das Programme der Blanguisten’.
[১৩] বিসমার্ক, অট্টো এডুয়ার্ড (১৮১৫-১৮৯৮) – প্রাশিয়ার রাজতন্ত্রী রাষ্ট্রনীতিক; জার্মান সাম্রাজ্যের প্রথম চ্যান্সেলর (১৮৭১-১৮৯০)।
[১৪] এরফুর্ট কর্মসূচি – ১৮৯১ সালে অক্টোবর মাসে জার্মান সোশ্যাল-ডেমোক্রাটিক পার্টির এরফুর্ট কংগ্রেসে গৃহীত কর্মসূচি।
[১৫] ক. মার্কসের ‘ফ্রান্সে গৃহযুদ্ধ’ পুস্তিকায় (দ্রষ্টব্য – মার্কস এবং এঙ্গেলস ‘নির্বাচিত রচনাবলি’, ১ম খণ্ড, মস্কো, ১৯৬২, ৪৭৯ পৃঃ) এঙ্গেলসের ভূমিকার কথা বলা হচ্ছে।
[১৬] ঈশ্বর-গড়া, বা ভগবান গঠন বা ভগবান-সন্ধান — মার্কসবাদের বিরোধী ধর্মীয়-দার্শনিক এক ধারা। ১৯০৭ থেকে ১৯১০ সালের স্তলিপিন প্রতিক্রিয়াশীলতার সময় এই ধারাটির উদ্ভব হয় এমন কিছু, পার্টি বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে যাদের মার্কসবাদ থেকে বিচ্যুতি ঘটে ১৯০৫-১৯০৭ সালের বিপ্লবের পরাজয়ের পর। ঈশ্বর-গড়িয়েরা নতুন ‘সমাজতান্ত্রিক ধর্ম সৃষ্টির কথা বলত, চেষ্টা করত ধর্মের সঙ্গে মার্কসবাদের আপস করাতে। ১৯০৯ সালের জুন মাসে ‘প্রলেতারি’র সম্পাদকমণ্ডলীর এক বর্ধিত সভায় ইশ্বর-গড়ার নিন্দা করে বিশেষ এক সিদ্ধান্তে বলা হয় যে, ‘বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের এমন ধরনের বিকৃত ভাবধারার সঙ্গে বলশেভিক গ্রুপের কোনো সম্পর্ক নেই।
[১৭] লুনাচারস্কি, আনাতোলি ভাসিলিয়েভিচ – রুশী পণ্ডিত ব্যক্তি, সোশ্যাল-ডেমোক্রাট। রাশিয়ার সোশ্যাল-ডেমোক্রাটিক শ্রমিক পার্টির দ্বিতীয় কংগ্রেসের পরে বলশেভিক। ১৯০৫-১৯০৭ সালের বিপ্লবের পরাজয়ের পরে পার্টি-বিরোধী ‘ভপেরিওদ’ গ্রুপে শামিল হন, ঈশ্বর-গড়ার প্রচার চালান। অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পরে শিক্ষা জন-কমিসার।
[১৮] ‘ভেখি’ (‘সীমার নিশানা’) – ১৯০৯ সালে একদল প্রতিবিপ্লবী কাদেতদের প্রকাশিত প্রবন্ধ-সংগ্রহ। এইসব প্রবন্ধে লেখকেরা রাশিয়ায় মুক্তি-আন্দোলনের বৈপ্লবিক-গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যকে অপদস্থ আর জার সরকারের উদ্দেশে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছিলেন ১৯০৫- ১৯০৭ সালের বিপ্লব দমন করার জন্যে।
[১৯] ইয়োহান মস্ট (১৮৪৬-১৯০৬) – জার্মান সোশ্যাল-ডেমোক্রাট, ড্যুরিং-এর ইতর বস্তুবাদের দর্শন সমর্থন করতেন; পরে নৈরাজ্যবাদী।
[২০] চূড়ান্ত মাত্রা। — সম্পাদক
[২১] ‘প্রলেতারি’ (প্রলেতারিয়ান) – অবৈধ বলশেভিক সাপ্তাহিক পত্রিকা, রুশ সোশ্যাল-ডেমোক্র্যাটিক শ্রমিক পার্টির কেন্দ্রীয় মুখপত্র, পার্টির তৃতীয় কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত অনুসারে স্থাপিত; প্রকাশিত হয় জেনেভায় ১৯০৫ সালের ১৪ (২৭) মে থেকে ১৩ (২৬) নভেম্বর পর্যন্ত। পত্রিকাটির সম্পাদনা করতেন ভ. ই. লেনিন। ২৬টি সংখ্যা বেরোয়, লেনিন রাশিয়ায় চলে আসার পর শেষের সংখ্যাগুলো সম্পাদনা করেন ভ. ভ. ভরোভস্কি।

Leave a Comment

error: Content is protected !!