আইন-ই-আকবরী হচ্ছে আবুল ফজল রচিত একটি বিখ্যাত গ্রন্থ

‘আইন-ই-আকবরী’ বা ‘আইন-ই-আকবরি’ (ইংরেজি: Ayen-E-Akbari) হচ্ছে আবুল ফজল বা আকবরের নবরত্নের একজন শেখ আবুল ফজল ইবন মুবারকের একটি বিখ্যাত গ্রন্থ। কেউ কেউ আইন ই আকবরীকে বিখ্যাত গ্রন্থ আকবর নামার অংশ বিশেষ হিসেবে উল্লেখ করার প্রয়াস পেলেও আইন-ই-আকবরীর ইংরেজি অনুবাদক এইচ ব্লখম্যান এই গ্রন্থকে ভারতে মুসলমানদের সমগ্র ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ রচনা বলে বর্ণনা করেন।

আইন-ই-আকবরীতে মুঘল সাম্রাজ্যের আইনকানুন, শাসন পদ্ধতি ও পরিসংখ্যানের উল্লেখ আছে। ব্লখম্যান (H. Block Mann) উল্লেখ করেন,

“আইন-ই-আকবরীতে আকবরের শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে এমন সব তথ্য আছে, যা সূক্ষ্ম অর্থে ঐতিহাসিক না হলেও সেই সময়কাল সঠিকভাবে অনুধাবন করার পক্ষে অপরিহার্য। সুতরাং আইন-ই-আকবরীতে এমন সব তথ্য আছে যার জন্য আমরা আধুনিক সময়ে প্রশাসনিক রিপোর্ট, পরিসংখ্যান সংকলন বা গেজেটিয়ারের দিকে দৃষ্টিপাত করতাম। আইন-ই-আকবরীতে আকবরের আইন (শাসন রীতি) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এবং ইহা প্রকৃত পক্ষে ১৫৯০ সালের দিকে প্রচলিত তাঁর সরকারের প্রশাসনিক রিপোর্ট ও পরিসংখ্যান বিবরণী। তাই আইন-ই-আকবরীতে স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন বিষয়ের বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।”

আইন-ই-আকবরী গ্রন্থে আবুল ফজল মুঘল সাম্রাজ্যের ধর্মীয় অবস্থা ও শাসন ব্যবস্থার বিস্তারিত বর্ণনা তুলে ধরেছেন। এই গ্রন্থটি ৫ খণ্ডে সমাপ্ত। এগুলোতে নিচের বিষয়গুলো আলোচিত হয়েছে

(i) দরবার ও হেরেম, (ii) সভাসদবর্গ, (iii) ইলাহী বর্ষ, অর্থ সম্পদ এবং প্রদেশসমূহের শাসন কর্তাদের বিবরণ, (iv) হিন্দু সম্প্রদায় এবং তাদের সাহিত্য, সংস্কৃতি; তাদের প্রতিষ্ঠা, ভারত উপমহাদেশের উপর বৈদেশিক আক্রমণ পর্যটক ও মুসলিম সুফী, (v) আবুল ফজল সংকলিত সম্রাট আকবরের বাণীসমূহ। এছাড়াও রয়েছে সামরিক-বেসামরিক সার্ভিস, নির্বাহী ও বিচার বিভাগ সংক্রান্ত বিধিবিধান, ভূমি জরিপ ইত্যাদি বিষয়ের বর্ণনা।

মূল ফারসি লেখাটিকে তিন খণ্ডে ইংরেজী অনুবাদ করা হয়েছিল। প্রথম খন্ড, হেইনরিখ ব্লকম্যান অনুবাদ করেছেন ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে প্রথম অংশ ও দ্বিতীয় অংশ হিসেবে। দ্বিতীয় খন্ড, কর্নেল হেনরি সুলিভান জারেট ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে অনুবাদ করেছেন অংশ তৃতীয় হিসেবে এবং বাকী খণ্ডটিও জ্যারেট ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে অনুবাদ করেছেন চতুর্থ ও পঞ্চম অংশ হিসেবে। এই তিনটি খণ্ড কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটি দ্বারা প্রকাশিত হয়েছিল তাদের বিলিওথিকা ইন্ডিকা সিরিজের অংশ হিসেবে।

আবুল ফজলের আরো যেসব গ্রন্থাবলি উল্লেখযোগ্য সেগুলো হলো ইয়ার ই দানিশ, দীবচাহ-ই রাম নামাহ, বা মহাভারতের ফারসি অনুবাদের ভূমিকা, ইনঞ্জিল বা বাইবেলের ফারসি অনুবাদ, মুনাজাত যেটি একটি দীর্ঘ কবিতা, ইনশা-ই-আবুল ফজল বা মাকতুবাদই আবুল ফজল। এটি আবুল ফজলের পত্রাবলির সংকলন, এটি ৪ খণ্ডে সমাপ্ত। রুচেআত ই আবুল ফজল বা আবুল ফজলের ব্যক্তিগত পত্রাবলির সংকলন। দীবা চাহ-ই তারিখই আলকী এটি ছিল তারিখ ই আলকীর ভূমিকা।

তথ্যসূত্র

১. অধ্যাপক একেএম শহীদুল্লাহ ও এম রফিকুল ইসলাম, প্রাচ্যের রাষ্ট্রচিন্তা, গ্রন্থকুটির ঢাকা, প্রথম পুনর্মুদ্রণ জানুয়ারি ২০১৮/১৯, পৃষ্ঠা ১২৪।

Leave a Comment

error: Content is protected !!