আমাদের জীবনে মিটিমিটি জ্বলে একটি লঙ্কাজবা ফুল
সন্ধ্যার পিদিমগুলোয় কখনো গন্ধরাজের ঘ্রাণ আসে না
সারারাত জেগে আমরা দুজনে স্বপ্নের আবছা আলো দেখি,
ছোট ছোট পাখা মেলে রঙধনুগুলোর আকাশে উড়া দেখি
শ্রমময় দিনগুলোতে একদিন সবাই দেখে একটি শাহবুলবুলি
ডাক দেয়, যান্ত্রিক পাখনায় ভর দিয়ে এগোবে শ্রমিক কৃষক।
আমরা মুক্তির আশায় রাত জেগে কয়েকটি খাতায় আঁকি
অজস্র লাইন, নকশা বানাই এমন এক বায়ুযানের যা
সামনের আকাশকে চিহ্নহীন করে দিতে পারে এক ঝটকায়;
আমরা সমাজতন্ত্রের জন্য ভুল পথে প্রশিক্ষণ নিতে যাই,
জীবনগুলো সুন্দর হবে এই আকাঙ্ক্ষায় ছোট টুকরো সুতোখানা
হয়ে যায় বন্দুকের সামনে দুলতে থাকা এক কাটা মুণ্ডু লাশ।
আমরা নির্ঘুম থেকে প্রতিদিনের ব্যর্থতার জন্য প্রস্তুত হই
আমরা ভয় পাই সাহসি হবার জন্যে;
জয়ী হবার জন্য আমরা ক্লান্তি ভুলে সুন্দরায়তনে ওড়াই রক্তপতাকা।
সূর্যের আলোয় আমরা মাঝ বিকেলে এক মুঠিতে আলোকিত হই
আদর্শের আলোয় আমরা ঝিরঝির অন্ধকার পর্দায় পথ খুঁজে ফিরি
আজ রাতের আবছায়া পথে আমরা স্বাভাবিক উত্তাপ দেখি
দেখি গ্রামের পর গ্রামে পেরিয়ে এক চিলতে উড়ন্ত নিশানা,
অনাহারে খুঁটে খাওয়া শহরের পর আবার গ্রাম, চট্টগ্রাম নন্দিগ্রাম
হাতের চিহ্নে এঁকেছি রাইফেল, নরপিশাচ নিজামের তেলেঙ্গানায় যুদ্ধ
যুদ্ধে যুদ্ধে ফিরে আসে অজস্র ভিয়েতনাম অমর স্তালিনগ্রাদ
দৈনন্দিন বেঁচে থাকার লড়াইয়ের সাথে মিশে যায় লালফৌজ
আমার পাহাড়ের সংগ্রামের নিজস্ব শব্দভূমি অমর নকশালবাড়ি
যে বেদনা মুক্তির যুদ্ধে ছোট ছোট চেষ্টার ছাপ রেখে যায়
তার অঙ্কিত চিহ্ন গান হয়ে বাজুক আজকের মেঘবন্দি রাতে।
একটি ছোট্ট ভ্রমণের বিরক্তি পেরিয়ে এলো দুজনার সারাদিন
শীতার্ত রাতে বইয়ের পাতা উল্টিয়ে বুঝতে চেষ্টা করা
হৃদয়ের ক্ষতগুলো অতল গহ্বরে হারিয়ে গেছে কিনা
এমন লালাভ রাতে বেঁচে থাকাটাই কেবল সার্থকতা নয়
তোমার আর আমার প্রথম নির্ঘুম রাতে কবিতায় বেঁচে থাকা
এক জীবনের ছোট্ট এই টুকরোটুকু যেন অভিলাষী ছোঁয়া
চোখে যেন কেটেছে ছুরির ফলার মতো ক্ষণিক সময়
তুলি হাতে নিয়ে দেখি আঁকা হয়ে গেছে ভালোবাসার ভুলগুলো,
চিরচেনা শ্রম দিয়ে আঁকা ছোট ছোট কারখানাগুলোয়
অজানা পথের ধুলোয় পিছলে পড়ে থাকা আন্দোলনগুলোয়
কামনা দিয়ে আঁকা প্রতিদিনের ছোট ছোট প্রস্তুতিগুলোয়
আমরা দুজনে আছি।
আমাদের ঘাম বিশ্রাম আর এক জীবনের ব্যর্থতায় যা কিছু থাকে
তারও অনেক উপরে সত্যম মঙ্গলম সুন্দরম আর মনোরম
এই পৃথিবীর অনেক মানুষের রক্তাক্ত ইতিহাসের কানাগলিতেও
থাকে আনন্দায়তন ও সুন্দরায়তনের সাথে সমতা সৃষ্টির পুলক,
যা কিছু শক্তিময় আর যা কিছু তোমাকে মঙ্গলায়তনে নিয়ে যায়
সেসবের বেদিমূলে উৎসর্গিত যে লক্ষ লক্ষ প্রাণ মূল্য না দেখেই
হারিয়ে যায় কোনো শাপলা শালুক আর পদ্ম বিলের নরম শ্যাওলায়,
তাদের অসমাপ্ত আশাগুলোকে বাঁচাতে রাষ্ট্রের খাঁচাতে আগুন লাগাতে
তোমার কাছে আনবো জল্লাদের কোষাগার থেকে পাওয়া সমস্ত সম্পদ
হাতে তুলে নেব মুক্ত হবার এই আবছা রাতের মহামন্ত্রখানা,
তোমার বিহ্বলতায় এড়ানো সামান্য দৃষ্টিও যেন অপলক থেকে
নির্দেশিত পথে সাহস নিয়ে চলতে পারে একটানা।
আরো পড়ুন
- সুন্দর নান্দনিক সমতাঘর
- তোমার বিজয় সমতার জয়
- ঐ পারে স্বপ্নগতিগাড়ি
- আমরা দুজনে স্বপ্নের আবছা আলো দেখি
- শোনা যায় সেই ডাক, ভালোবাসি
- সম্পর্ক, মানে শক্তির নিত্যতা
- তুমি আসবেই আমার শ্রেণিহীন রক্তে
- আমরা সেদিন, বহুদিন তারপর কিছুদিন জীবনের গল্প বলেছি
- প্রত্যাশার স্বাপ্নিক আমরা ফেরি করি আশার আলো
- বেদনার নীল রঙে রাঙানো কষ্টগুলো
- সৃষ্টির শব্দে মুখরিত আমাদের যৌথ খামার
- সরসী
- On First Looking into Chapman’s Homer কবিতার মূলভাব ও সারমর্ম
- ফ্যানির প্রতি, জন কিটসের Ode To Fanny কবিতার অনুবাদ
১৩ ডিসেম্বর ২০০৮
পার্বতীপুর, দিনাজপুর
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক ও গবেষক। তাঁর লেখা ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা এগারটি। ২০০৪ সালে কবিতা গ্রন্থ প্রকাশের মাধ্যমে তিনি পাঠকের সামনে আবির্ভূত হন। ‘সমাজতন্ত্র’ ও ‘মার্কসবাদ’ তাঁর দুটি পাঠকপ্রিয় প্রবন্ধ গ্রন্থ। সাহিত্য ও রাজনীতি বিষয়ে চিন্তাশীল গবেষণামূলক লেখা তাঁর আগ্রহের বিষয়।