আবার, হঠাত আবার,
ঝড় উঠেছে ঝড়, তীব্র হিংস্র ঝড়, উঠেছে হঠাত ঝড়।
ঝড়ের পরে আমাদের সমগ্র মহাদেশ আবিষ্কার
আমার জন্মগ্রামে তোমার জন্মভূমে কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ
পুরনো উপমায় আমি চাঁদের মতো তোমাকেই ভালবাসি
আমি জানি তুমি আসবেই, তোমাকে আসতেই হবে,
আমার শ্রেণিহীন রক্তে
আমার রক্তের রঙ লাল
শ্রমিকের রক্তের রঙ লাল
তোমার আমার প্রিয় রক্তের রঙের নাম আন্তর্জাতিক
আমাদের দুনিয়ার নাম রক্তলাল
রক্তলাল সাম্যের দুনিয়ায় আমি দিয়েছি ঘাম, রক্ত, শ্রম
তোমার রক্ত ও কান্না, মুক্তির সমস্ত আশা,
মাঠঘাট প্রান্তর অলিগলি আমাদের পদচিহ্ন।
তুমি বহুদিন হেঁটেছিলে রাজপথে,
পারাপার করেছিলে মানুষ আর মানুষ
একদিন পিতৃভূমি দ্বিখণ্ডিত হয়েছিলো স্বার্থ আর ক্ষমতার প্রয়োজনে
সেই যে আমরা উদ্বাস্তু হলাম, এর পর আমরা … …
এরপর আমরা কোনোদিন শিকড় পাইনি
আমাদের অগ্রগতি হয়নি গত ষাটটি বচ্ছর
আমি শুধু গণনা করে করে কাটিয়েছি প্রত্যেকটা দিন
আশা ছিলো একদিন তুমি আর আমি একত্রিত হবো সমতার প্রয়োজনে
তোমার প্রিয় নদী পদ্মায় এখনো স্রোত আছে,
পলিমাটি আর বাংলাদেশ মিশেছে ঘোলাজলে
ভালবাসি ভালবাসি
চারদেয়ালবিহীন মুক্ত দুনিয়া মুক্ত মানুষ
ভালোবাসি আমাদের পিতৃভূমি।
তুমি আসবেই আমার শ্রেণিহীন রক্তে
যখন আকাশে উড়বে একটি লাল পতাকা
পথে পথে গোলাপগুচ্ছ তোমাকে অভিবাদন জানাবে
তোমার আগমনী পথে ধ্রুপদী গান আর কালজয়ী কবিতা হবে,
সেইসব গান ভূমিদাসী নারীর থরো থরো বেদনায় পূর্ণ
মানবিক অনুভূতির সেকাল একাল আর
শ্রমিক নারীর পুঁজির শোষণ বিদেয় করবে।
তুমি সাথে এনো শ্রমে ঘামে শ্রান্তিতে পূর্ণ তোমার শয্যা
শয্যাপাশে এনো ফুলগাছ নদী মাঠ প্রজাপতি
এনো ছোট ঘর ছোট প্রাণ বড় ব্যথা
ভবিষ্যতের ভাবনায় হাহাকার করা হুহু বুক
দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া ব্যর্থ বোকা শ্রমিকের লাল শার্ট,
এনো বিশ শতকের মিছিলের স্মৃতিচিহ্ন।
তুমি এসো অনেক অজস্র অগণন হাত একত্র করতে
সেইসব হাত যারা শ্রমে শ্রমে পুষ্ট পাথরের মতো
যারা স্বপ্ন দেখে বেঁচে থাকে খেতে খেতে কাজ করে
লাল সূর্য বুকে রেখে হৃদয়ের বাম পাশে
সাম্যের মৈত্রীর টানে জীবনের কুঁড়েঘরে আবৃত্তি করে কাবিতার গান।
তুমি আসবেই আমাদের শ্রেণিহীন সমাজের রক্তে
দেখবেই কীভাবে মানুষের তৈরি ভুলচিহ্ন মুছে দেয় মানুষ
তাদের নিকৃষ্ট সৃষ্টি তারা নিশ্চিহ্ন করে
কষ্ট হলেও ভেঙে ফেলে ভুল নির্মাণ, ভুল ধারনা
তাই আমিও ভাঙছি নিজেকে।
আমাদের পিতামহ মাতামহদের অনেক ভুল ছিলো
সেসব ভুল ভাঙতেই তুমি আসবে,
আমার অনেক পুরনো একটা মিনার ছিলো
তোমার এক ধাক্কাতেই তা ভেঙে পড়বে
আমার নিজস্ব একটা ভুল পঞ্জিকা আছে
তুমি সেটি ছিঁড়ে আকাশে উড়িয়ে দাও
আমাদের পূর্ব প্রজন্মের অনেক নোংরা কাজের খাতা আছে
তুমি পুড়িয়ে দিও সেগুলো, ছাইগুলো ভাসিয়ে দিও আকাশগঙ্গায়
তাদের অনেক পাপ
তুমি সব পাপ শুষে নিও তোমার শরীরে।
তুমি আসবেই আমাদের শহরে, তুমি আসবেই
মোটরগাড়িগুলো রাজপথে চলবেই
আমরা মিছিলের শেষে ঘুরে ঘুরে এসে দাঁড়াবো তোমার সামনে
তুমি দেখবে শহরের অগণিত উচ্চাভিলাষী আর কর্মমুখর মানুষ,
তুমি দেখবে নাগরিক নাটক আর বাণিজ্যের শোষণ;
শ্রমিকের মতো পাথর সরাতে হবে, পাথর ভাঙতে হবে
পাথরে ফোটাতে হবে সাধনা গোলাপ
তুমি পৃথিবীর শক্তি নিয়ে করো পাথরে আঘাত
আমি সেই পাথুরে মাটি খুঁজে তুলে আনবো ফসলের বীজ,
আমার রক্ত স্রোত মিশিয়ে দেবো তোমার আকাশগঙ্গায়।
তুমি আসবেই কেননা দুনিয়ার অভাবীরা তোমাকে ডাকছে
আমার গান ভুলে যাওয়া বিষণ্ণ পিয়ানোটি তোমাকে ডাকছে
যে বাঁশীটি সময়ের আগুনে পুড়েছে সেও তোমাকে ডাকছে
প্রেমিকের চুমু খাওয়া রৌদ্রজ্জ্বোল ছাদ তোমাকে ডাকছে
পথভোলা আত্মভোলা মানুষেরা তোমাকে ডাকছে
যে মানুষটি নিজেকে জানে সেও তোমার প্রতিক্ষারত
যে সর্বদাই মুক্তির প্রেরণায় প্রার্থনারত, সেও তোমাকে ডাকছে
নাচ আর কোরাস গায়েনরা তোমাকে সমবেত হতে ডাকছে
লাল আকাশের নিচে মহাসমাবেশে মানুষেরা তোমাকে ডাকছে
পুনর্জন্ম প্রত্যাশী মানুষ সব কাজ ছুঁড়ে ফেলে তোমাকে ডাকছে
শ্মশানের রুগ্ন চিতা তোমাকে পরিবর্তনের কাজে ডাকছে
যে প্রতিবন্ধী মানুষটি সংগ্রাম করে টিকে আছে
তোমাকে তার তুমুল প্রয়োজন আজ।
আরো পড়ুন
- সুন্দর নান্দনিক সমতাঘর
- তোমার বিজয় সমতার জয়
- ঐ পারে স্বপ্নগতিগাড়ি
- আমরা দুজনে স্বপ্নের আবছা আলো দেখি
- শোনা যায় সেই ডাক, ভালোবাসি
- সম্পর্ক, মানে শক্তির নিত্যতা
- তুমি আসবেই আমার শ্রেণিহীন রক্তে
- আমরা সেদিন, বহুদিন তারপর কিছুদিন জীবনের গল্প বলেছি
- প্রত্যাশার স্বাপ্নিক আমরা ফেরি করি আশার আলো
- বেদনার নীল রঙে রাঙানো কষ্টগুলো
- সৃষ্টির শব্দে মুখরিত আমাদের যৌথ খামার
- সরসী
- On First Looking into Chapman’s Homer কবিতার মূলভাব ও সারমর্ম
- ফ্যানির প্রতি, জন কিটসের Ode To Fanny কবিতার অনুবাদ
তোমাকে খুব প্রয়োজন এশিয়া আফ্রিকা আর লাতিন আমেরিকায়
এসব জায়গায় যারা লড়ছে তারা দুঃস্বপ্নের রাত শেষ করার জন্য
তোমাকে লিখিত অলিখিত সমস্ত ভাষায় ডাকছে কাছে
তুমি আসলেই জীবনে জ্বলবে বর্ণিল আলো
সে আলোয় ভেসে যাবে মানবজাতির সমস্ত পঙ্কিলতা
পৃথিবীর কক্ষপথে জন্ম নেবে নতুন পৃথিবী তোমার আগমনে
বানী আর বিহ্বলতা আর বিমুগ্ধতায় পূর্ণ হবে মানব হৃদয়।
আর আজ তুমি এসে সফল করো আমার নিপীড়িত জনগণকে
টিকিয়ে রাখো সাফল্যের প্রত্নচিহ্নরেখা,
ব্যর্থতা যা কিছু তা একান্তই রাত বারোটায় গোপনে থাকুক লেখা
পাঠকের হাতে আজ পৌঁছানো যাক তবে কবিতার এইসব কথা।
৩১ অক্টোবর ২০০৭;
গফরগাঁও ময়মনসিংহ
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক ও গবেষক। তাঁর লেখা ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা এগারটি। ২০০৪ সালে কবিতা গ্রন্থ প্রকাশের মাধ্যমে তিনি পাঠকের সামনে আবির্ভূত হন। ‘সমাজতন্ত্র’ ও ‘মার্কসবাদ’ তাঁর দুটি পাঠকপ্রিয় প্রবন্ধ গ্রন্থ। সাহিত্য ও রাজনীতি বিষয়ে চিন্তাশীল গবেষণামূলক লেখা তাঁর আগ্রহের বিষয়।