Tintern Abbey বা Lines Written a Few Miles above Tintern Abbey বা টিনটার্ন মঠ হচ্ছে ইংরেজি ভাষার রোমান্টিক কবি উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ রচিত একটি কবিতা। কবিতাটি সুন্দর একটি গদ্য কবিতা। কবিতাটি কবি প্রকৃতির বর্ণনা দিয়ে রচনা করেছেন। কবিতাটি এমনভাবে লেখা হয়েছে যে, মনে হবে এখানে তিনি প্রকৃতির পূজা করেছেন। তাঁর লেখা কবিতাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর কবিতা এটি। কবিতাটি তাঁর বিখ্যাত “Lyrical Ballad” এর সাথে ১৭৯৮ সালে প্রকাশিত হয়। ১৭৯৩ সালে কবি স্যাসব্যারী হতে নর্থ ওয়ে-স এ পদব্রজে ভ্রমন করার সময় টিনটার্ন মঠটি দেখেছিলেন। মঠটি ছিল Wye নদীর তীরে অবস্থিত। এখানে ওয়াই নদীর তীরের দৃশ্যাবলি তাঁকে মুগ্ধ করে। এই ভ্রমনের বহু পরে কবি দ্বিতীয় বার তার ছোট বোন ডরোথীকে সাথে নিয়ে এখানে ভ্রমনে আসেন। এই দ্বিতীয় বার আসার পর তার হৃদয়ে যে অনুভূতি জাগ্রত হয় তা দিয়েই এই কবিতাটি রচনা করেছেন।
কবিতাটিতে কবি প্রকৃতির সাথে মানুষের সম্পর্ক ও প্রকৃতি সম্পর্কে কবির চিন্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। ভাবার্থের দিক থেকে কবিতাটি তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা যায়। যথা- দৃশ্যাবলির বর্ণনা, প্রকৃতি সম্পর্কে কবির চিন্তাধারা ও তাঁর বোনের প্রতি তাঁর বক্তব্য।
অর্থের দিক থেকে কবিতাটিকে কয়েকটি ধাপে ভাগ করা যায়। কবিতাটির প্রথম ধাপে কবি প্রকৃতির সৌন্দর্যের বর্ণনা দেন। যেমন জলের ধারা, নদীর প্রবাহ, খাড়া খাড়া পাহাড়, অপক্ব ফল শোভিত সবুজ গাছের বাগান, সবুজ বনানী, বনের থেকে উঠে আসা ধোঁয়ার কুণ্ডলী ইত্যাদি। দ্বিতীয় ধাপে তিনি প্রকৃতির নিরাময় ক্ষমতাকে বর্ণনা করেছেন। তিনি তুলে ধরেছেন যে, মানুষ যন্ত্রণাকাতর হৃদয়ে প্রকৃতির কাছে গেলে তার মন ভালো হয়ে যায়। তৃতীয় ধাপে শৈশব ও বার্ধক্যের মাঝে পার্থক্য খুঁজে বের করেছেন কবি। তিনি দেখিয়েছেন যে, শিশু মন এটা বুঝতে অক্ষম যে, প্রকৃতির মাঝে কি রহস্য রয়েছে। কিন্তু শিশুদের মূল্যও কম নয়। কারণ তারা সব সময় স্বর্গীয় প্রভা দেখতে পায় প্রকৃতির মাঝে। সবই তাদের কাছে স্বর্গের মতো মনে হয়। অপর দিকে বয়স বাড়তে বাড়তে মানুষ প্রকৃতি থেকে স্বর্গীয় প্রভার পরশ হারাতে থাকে। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার মাঝে সৃষ্টি হয় দার্শনিক সত্তার। সেই সত্তার প্রভাবে সে খুঁজে পায় প্রকৃতির অপার রহস্যকে।
শেষ ধাপে এসে কবি নিজের বোনকে সম্বোধন করে তুলে ধরেন মানুষের প্রকৃতির সাথে কীভাবে মিশে যাওয়া দরকার। তিনি বলেন যে, মানুষ প্রকৃতিকে ভালোবেসে তার সাথে মিশে গেলে প্রকৃতি তার সাথে কখনোই প্রতারণা করবে না। তাছাড়া প্রকৃতির মাঝে শুদ্ধতার উপাদান বিদ্যমান। আর এই শুদ্ধতা এক অপার আনন্দঘন জীবন উপহার দিতে পারে।
উক্ত কবিতায় কবি প্রকৃতি পূজারির মতো প্রকৃতির প্রশংসা করেছেন। কবিতাটিতে তিনি প্রকৃতির নৈস্বর্গিক বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি প্রকৃতির মাঝে এক বিশেষ শক্তিকে উপলব্ধি করেন। কবিতাটি পাঠকের মনে এক গভীর ভাব সৃষ্টি করে। আরও গভীরভাবে প্রকৃতিকে কাছ থেকে উপলব্ধি করার উৎসাহ প্রদান করে কবিতাটি।
কবি প্রকৃতির মাঝে খুঁজে পেয়েছেন এমন শক্তি যা মানুষের যন্ত্রণাকাতর মনকে ভালো করে দিতে পারে। প্রকৃতিকে যদি কেউ ভালোবাসে তবে প্রকৃতি কভু তার সাথে প্রতারণা করে না। বরং প্রকৃতি তার মাঝে এমন এক অনুভূতি জাগ্রত করে দেয় যা যে কোনো স্থানে বসে মনে করলে কল্পনায় সে প্রকৃতির মাঝে ডুবে যেতে পারে। আর এতে সে একই আনন্দ পেতে পারে যেমনটি বাস্তবে প্রকৃতির কোলে গিয়ে পেয়েছিল।
তথ্যসূত্র
১. কল্যাণী ব্যানার্জী সম্পাদিত ও সৈয়দ আহমেদ রুবেল অনূদিত, নির্বাচিত ইংরেজি রোমান্টিক কবিতা, দি বুক সেন্টার, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ জুলাই ২০১৬, পৃষ্ঠা ১৯৯-২০০।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক ও গবেষক। তাঁর লেখা ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা এগারটি। ২০০৪ সালে কবিতা গ্রন্থ প্রকাশের মাধ্যমে তিনি পাঠকের সামনে আবির্ভূত হন। ‘সমাজতন্ত্র’ ও ‘মার্কসবাদ’ তাঁর দুটি পাঠকপ্রিয় প্রবন্ধ গ্রন্থ। সাহিত্য ও রাজনীতি বিষয়ে চিন্তাশীল গবেষণামূলক লেখা তাঁর আগ্রহের বিষয়।