সৃষ্টির শব্দে মুখরিত আমাদের যৌথ খামার

সাবধানে তোমাকে ভাবি যদি ঝিরঝির ঝরে পড়ে তোমার আহ্বান
এ সময়ে ভালো লাগে দূর হতে ভেসে আশা সুর আর বর্ষার গান,
পাঠালে তুমি আমাকে এ শহরে খুঁজে পেতে স্বপ্ন থোকা থোকা
আমি খুঁজেছি মানুষ আর লড়তে লড়তে তাদের ফিবছর বেঁচে থাকা,
খুঁজেছি সঞ্চিত আধুলি, ভালোবাসার বাড়িতে পাওয়া পাকা লাল ফল
পেয়েছি যবের দানা, নক্ষত্র লিপি, উষ্ণতা, শীতের সম্বল,
দেখেছি চারপাশে পরমাণু বোমা, তিমির ফসিল আর আগুনের নদী
উত্তাল উদ্দাম, আর অষ্টাদশী কল্পনার রঙে মাখা তন্বী অবধি
সাঁতার কেটেছি আমরা, উদ্ধত ঝঞ্ঝাক্ষুব্ধ কম্পনময় বুকের মোহনায়
স্রোত, জল, খলখল তীব্রতা এইসব প্রাণবন্ত জলে ভরা বর্ষণময়,
সমগ্র শরীরে আমার আপ্লুত শিহরণ বৃষ্টির বর্শার চুম্বকে বিদ্যুতে
তোমার ছোঁয়ায় উঠছে জ্বলে রক্তিম কামনা প্রদীপ দিনে কিংবা রাতে
জ্বালালে প্রাণের ঘর রুদ্ধশ্বাস বুকপাথর জমকালো বাসনামন্দির
জ্বালালে নিজেকে যেন বারুদের স্তুপ বা দেশলাই কাঠি, থাকলে উদ্বেগে অধীর
সেই তুমি কাঠিন্যে কোমলে বিপ্লবে শুদ্ধতায় লক্ষ্যচূড়ায় প্রজ্ঞাপারমীতা
আমার দৃঢ়তায় তুমি পেলে প্রথমাস্বাদিত জীবনবেদ সার্থকতা
কেঁপে কেঁপে ভিজেছো গভীর কামনার আবেগি আগ্নেয়জলে
শক্ত হয়েছ লজ্জায়, কিছু পরে গিয়েছ আগুনস্পর্শে মোমের মতো গলে
পৃথিবী সৃষ্টির শব্দে মুখরিত আমাদের আলো ঝলমলে যৌথ খামার
শ্রুতির স্বপ্নে অনুভবে মুগ্ধতায় আলোড়িত আমাদের বেদনার যৌথ সাঁতার
চেতনার রক্তে আনন্দে উদ্বেগে আকুলতায় মনে চলে স্নিগ্ধ কৃষিকাজ
পৃথিবীর সমান বয়েসি তুমি দুই হাতে রেখেছো সৌভ্রাত্রসমাজ

তোমাকে দেখেছি আমি ফুলফল সোভিত জ্ঞানবৃক্ষের সতেজ বাগানে
আমি দৃঢ় অশোভন এক বাঁশের বাঁশি বাজিয়েছি জ্বলন্ত আগুনে
উরুর মধ্যে প্রতিধ্বনির যৌথ গানকে আমরা গভীর ভালোবাসি
কামাতুর এই নগরীতে আমরা মানুষের কাছে বারবার আসি
সেইখানে আমি আরেক তুমি রাতজাগা ভোরেডাকা দুটি পাখি
আমাদের অশান্ত দুইহাতে ফলানো ধানগুলো ঘরে ধরে রাখি
ফলের উদ্যানে আমি লাগিয়েছি বহু গাছ যেন সে প্রেরণা বাগান
আমরা মিলেছি আজ জোড়াশালিকের প্রেমে বুঝেছি কামনা সাবান
আজকের সব সত্য হচ্ছে, বুকে ঘনীভূত জীবনের অনন্ত সমারোহ
আমরা ঘুরেছি ফুল বনে, মাঠে ময়দানে, অঙ্গনে বিদ্যুৎ প্রবাহ
আমরা বুঝেছি জেনো, কোথা হতে কোথা গেলে স্বপ্নের সাথে দেখা হয়
তোমার জন্য আমার বাড়ন্ত গন্ধরাজ দিনরাত একা একা সুগন্ধ বিলোয়
শ্রমিকের রক্তে ঘোরে কারখানার চাকা, সন্তানের সুদিনের শুভ প্রত্যাশায়
নয়াবাজারে ঝুড়িবোঝাই মৃত্যু আর মৃত্যুভয় অহরহ কেনাবেচা হয়।

আমরা এখন লড়াকু সৈনিকের মতো দিনের কাজ দিনে শেষ করি
পাথরে পাথর ঘষে আগুন জ্বালাই, খাবার বণ্টন করি, অবসরে নড়ি,
তোমার খোলা চুলে আগুনের আঁচ লাগে, তুমি নিজেকে সামলাও
তোমার শরীরঘেরা আঙুলের আলোড়নে জীবনের বীজাধারে শস্য ফলাও
তোমার উচ্ছ্বাসভরা স্বপ্নমাখা বুকে যেন উদগত সমগ্র স্বদেশ
স্বাধীনতা সমতা আর শ্লোগানে শ্লোগানে ঢাকা আমাদের ছোট মহাদেশ
তোমার ঘরে বসে সভা করে এশিয়া ও আফ্রিকার কালো মানুষেরা
তারা শক্তি নিয়ে কথা বলে রাজপথে মিছিলে চলে তারা সর্বহারা
তাঁদের সামনে তুমি স্বপ্নের ফণা তোলা উতলা বাতাস
তাঁদের সামনে তুমি উত্তাল জলরাশি, ভূমিকম্প সুনামি পার্থিব উচ্ছ্বাস
তুমিই প্রথম নারী জানিয়েছি আহবান বর্ণিল কামনাপ্রহরে
মুক্ত সূর্যের আলো জ্বালিয়েছি আমি তোমার সমগ্র দুয়ারে
তখনো দ্বন্দ্বগুলো যুদ্ধরত, মুক্তবাজার আর ঠোঁটে ও স্বদেশে
যুদ্ধরত দ্বন্দ্বগুলো রাজ পথে ফুটপাতে উরুতে সভায় আর স্বপ্নাদেশে।

আরো পড়ুন

১১ জুন ২০০৭,
গফরগাঁও ময়মনসিংহ

Leave a Comment

error: Content is protected !!