কে তুমি?
কিছুক্ষণ বসে থাকা আর কেন কথা বলা,
বাসে-ট্রেনে করে কেন ছুটে চলা, কোন অনির্দিষ্ট পথে,
সবাই চলছে ছুটে কেন আঁধারে-আলোতে,
এসব কিসের গতি, কেন হঠাত থামে,
কোথাকার ধাবমান সিঁড়ি, ডানে বামে
এসব কিসের ছবি: জীবনের
নাকি শৈশবের নাকি বুড়ো সময়ের?
কে তুমি?
কী গান শোনাবো তোমায়?
কোথা থাকে গানের স্মৃতি?
কাকে কে ডাকে আর কাকে কে ডাকায়,
কীভাবে ডাকায়, কোন সে পিরিতি,
ডাকাতের ঘরে কার রাত্রিযাপনে স্বপ্ন ঝরে যায়,
আমাদের টিয়াপাখি কার কথা বলে,
নদীকে গোপনে ডেকে কোনখানে ঝাড়বাতি জ্বলে,
এখনো আঁধারে থেকে কাকে পাবে ঘরে
কোনখানে এক দুই তিনটি পাখি একসাথে ওড়ে,
দেখোতো এসেছে সে কি নিজেদের বানানো শ্মশানে
কার স্মৃতিকথা জমা মাথার মধ্যিখানে?
তুমি কে?
তুমিও কি আমার মতো, তবে আমি কে?
তুমিও কি আবোল তাবোল প্রেমিক,
আমি এক সুচতুর পারস্য সৈনিক,
পত্র লিখি, প্রেমপত্র তুমিও কী সেসবের পাঠক,
সেসব থেকেই কেন চারিদিকে জন্মে নাটক,
রোদ হলে আলো জ্বলে কোন কামরায়,
কাদের অন্তর্বাস ভোরবেলা ঘরেতে শুকায়,
আমি কেন এসব ভাবি
আমি কেন যে অভাবী
কেন আমি বিশ বছর আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁইনি
তুমিও আমায় কেন কখনো ডাকোনি
সাধের মানুষ বড় নাকি বড় রাজধানীখানা,
গাছের পাতারা কী এসব ভেবেছে, নাকি তারা কিছুই ভাবে না,
কারা যেন বলে সত্য মঙ্গল সুন্দর পাঠাও,
কারা যেন এই অকালে বদলাতে চায় রাষ্ট্রনীতিটাও,
লড়াই লড়াই বলে শুরু করে কারা রাষ্ট্রনীতি
তাদের অন্তরে তবে কেন খেলা করে রবীন্দ্রগীতি,
কেন সূর্য ডুবলে তবে আবার লড়াই কেন হবে,
এতদিন কেন বসে থাকা,
কেন নয় যুদ্ধ শুরু, অস্ত্র পরীক্ষা।
তুমি কে?
মাবাবার মাতৃভূমি এখন কে দেখে?
কোথায় পাবে তুমি আশাপ্রদ যোদ্ধার বাড়ি,
পাটকাঠি থেকেও কী আমরা শক্তির উৎস পেতে পারি
আমি বহুদিন কেন অস্ত্র বেচিনি
বহুদিন কোথাও কেন তোমাকে ভাবিনি
জীবনে জীবন ঘষে কখনো কী দেখেছ আগুন জ্বালাতে
শক্তিমান মানুষদের দেখেছো কী শক্ত লাঠি হাতে
সাধনা শক্ত ছিলো নাকি শক্ত ছিলো সামন্তপ্রভুর দড়ি
তখনো কী চালু ছিলো সমাজপ্রগতির ঘড়ি
কাকে নিয়ে তারপরে গিয়েছি কার বাড়ির দরজায়
কে আর এ-বয়সে দাঁড়িয়ে থাকে তোমাকে পাবার প্রত্যাশায়
কেন চলে যায় চাকরি মধ্যরাতে
হাত দুটো চলে যায় কোথায় অজানাতে
ধুলো উড়িয়ে কার গাড়ি আসে তোমার বন্দরে
এখনো সন্তান ধারণ করো কার অন্দরে
আহারে ঘরের বউ ঘরে ঘরে প্রহরে প্রহরে কত কী ঘটে
তার কিছু একেবারে গুলিয়ে যায় কার পেটে কার ভজকটে
তুমি কে? সে কে?
তার সাথে সে সময় আর কে থাকে?
শুনেছ কী চীৎকার, শোনা যায় কার কার ঘরে
কী কথা ছাপা হয় রাতের বাতাসে পত্রিকার অক্ষরে
কোন সে কথা লেনিন জোর গলায় বলে,
মাও সেতুং এগোলেন কোন সে কৌশলে
কোন কথা বললে পরে তীব্র আঘাত আসে
কী কী যুক্তি থাকে ন্যায় যুদ্ধের চারপাশে
ভোরের মেঘ উড়ে উড়ে চলেছে কোথায়,
কেন বিরক্ত হয় মানুষ তোমার প্রতিভায়
কেউ কী একা হাঁটে রাজপথে
মন খারাপ রাখে কেউ কী শরতে বসন্তে
কখন সাধের দেশে আসে মহামারী
জনগণ ছাড়া রাষ্ট্র কবে ছিলো দরকারি
কোথায় মোকাবেলা হয় রাষ্ট্রে, গুলি বা বুলেটে
কেন স্বর্ণ জমে না একুশ শতকে গরিবের ঘটে
লাল রক্ত কালো রক্ত রক্তে দেখো কী
একটুখানি সবুর কর, আগুন বুনেছি
মনে ঘৃণা জমিয়ে রেখে কে যায় পাতালে
এ যুগে প্রেম দিয়ে কী হবে, সমতা না এলে
এতো দ্বান্দ্বিকতার পরে কেউ কী ভুলে যায় সব
কেন তবে বিদ্রোহীরা থেকেছে সরব
আহারে গানের পাখি, আছিস বসে কখন থেকে
ভুলের হিসাব কখনো কেউ কী আনে অভিষেকে
শুভক্ষণ আসবে কীভাবে তা কী ভেবেছো
কেন একা হিমালয় পাড়ি কোন পথে পাড়ি দিয়েছো
পথের মানুষ হলেই কী কাব্যক্ষয় হয়
কবিতার শেষ প্রান্তে কেন থাকে গভীর প্রণয়।
টাকা আর তাস জুয়ায় কেন এইকালে ঠেলাঠেলি লাগে,
উত্তর পাবার আগেই কেন মনে প্রশ্ন জাগে
বলো তো কোথায় সেসব প্রশ্নের বাড়িঘর
প্রশ্ন এলেই কী থাকবে উত্তর
তোমরা কী কেউ পারো বলতে
কোন সে প্রশ্নের উত্তর পারে দেয়া যেতে
উত্তর খুঁজতে গিয়ে কে পায় ফরসা গায়ের রঙ
প্রতীকে প্রতীকে চলে কোন সে ভোটের সঙ
কেন কেউ দৌড় দেয় পুঁজির পেছনে
ঠোকাঠুকি লাগে কার সাথে সেয়ানে সেয়ানে
কেউ কেউ আকথা কুকথা কেন বারবার বলে
কেন জানি কেউ কেউ বারবার ভয়ে ভয়ে চলে
এতে মন খারাপের কি কিছু আছে
আগুনে আগুন ঘষে কেউ কী জলকে দেখেছে
দুই হাতে অস্ত্র ধরো কোন বাগানে
যুদ্ধ কেন হবে তবে আম্রকাননে
হিসেবের শেষ খাতা কোন সন্ধ্যায় দেব তোমাকে
আমাদের কার হাতে কত টাকা থাকে
টাকা নিয়ে আমরা কেন খুঁজেছি পেছন দরজা
আমরা হেঁটেছি কেন মাথায় নিয়ে একরাশ বোঝা
কোনখানে থাকে নদীর পাগল করা মাটি
আমরা কজন মানুষ কেন তার পাশ দিয়ে হাঁটি
ঘুম আর ক্লান্তিতে হারালে সম্পদ কী হবে আবার
কোথায় চলবে তবে বাঁচাবার প্রকাশ্য কারবার
মাথার উপরে ছাদ যদি নড়ে তবে, কেন মনে হয় ঘুরছে পৃথিবী
দুপাতা লিখলেই কেন মনে হয় তুমি কবি
পাবে কী তুমি ঢিল ছুঁড়ে বটগাছে সাদা দেহের ভূত
শীত বসন্তকালে তোমরা পাবে কী সাদা হাতির মাহুত
[পাবে না পাবে না তোমরা মুক্তি বা স্বাধীনতা একথা যারা বলে
তাদের জগতে নাকি মানুষের ইতিহাস শুরু থেকে শেষাবধি চক্রাকারে চলে]
কেন তবে কিছু মানুষ ভুলপথে এঁকেবেঁকে চলে
স্বপ্নের চিলগুলো কেন ঘরে ঘরে ডানা মেলে
তার সাথে উনত্রিশ বসন্ত পেরোলে কখন হয় দেখা
তখনো কী নির্জনতায় দুজনের কাটবে একা একা
কেন তবে একলা চলো রে বলে ডাক দিলো কবিগুরু
চলতে চলতে পথে কেন তবে হয়ে যায় সম্পর্কের শুরু
তবে কী সম্পর্ক মানে শক্তি এই কথা মিথ্যা হয়ে যায়
তবে কেন সময় কেটে যায় সম্পর্কের প্রেরণায়
তোমরা কী জানো বহুমুখী একটি গাছের নাম
কীভাবে হাঁটবে বলো যদি না জান পথের পরিণাম
জাগেনি কেউ বলেই কী দিনগুলো যাবে আলাভোলা
যখন লড়তে হবে তখন কী পাবে অস্ত্রের ঝোলা
কি কি ঘটে জীবনে কলকাতা কিংবা ঢাকায়
কত মানুষ কেন যে জীবনে ঘটনা ঘটায়
রাজপথে প্রতিবাদ করে কেন, কেউ কেউ মরে যায়
কেন যে শিকড়হীন মনগুলো চায় স্বদেশভূমি
মাথায় হুলিয়া নিয়ে কেন ছোটে রক্তপতাকা চুমি
এখনো কেন ছুটতে হয় রাত্রিদিন
বেনামী স্বাধীন দেশে কেন প্রমাণিত হয় সবকিছু পরাধীন
আরো পড়ুন
- সুন্দর নান্দনিক সমতাঘর
- তোমার বিজয় সমতার জয়
- ঐ পারে স্বপ্নগতিগাড়ি
- আমরা দুজনে স্বপ্নের আবছা আলো দেখি
- শোনা যায় সেই ডাক, ভালোবাসি
- সম্পর্ক, মানে শক্তির নিত্যতা
- তুমি আসবেই আমার শ্রেণিহীন রক্তে
- আমরা সেদিন, বহুদিন তারপর কিছুদিন জীবনের গল্প বলেছি
- প্রত্যাশার স্বাপ্নিক আমরা ফেরি করি আশার আলো
- বেদনার নীল রঙে রাঙানো কষ্টগুলো
- সৃষ্টির শব্দে মুখরিত আমাদের যৌথ খামার
- সরসী
- On First Looking into Chapman’s Homer কবিতার মূলভাব ও সারমর্ম
- ফ্যানির প্রতি, জন কিটসের Ode To Fanny কবিতার অনুবাদ
হায়রে সোনার দেশ কেন যে ছারখার হয় বারবার
কেন ইঁদুর আর উইপোকা সবকিছু কেটেকুটে চালায় কারবার
তবুও সৃষ্টির আশা কেউ কী পড়েছ সন্ধ্যাবেলা
তবুও কেন যে সবাই সৃষ্টিকে করেছে অবহেলা
এখনো কী বুঝেছি অনেক দূরের কথা
সেও কী জানাতে চেয়েছিলো তারও আছে এক বুক ব্যথা
তখনো কী সেভাবে ভেবেছি গোপন প্রেমের অভাবে
তখনো কী ছুটেছিলাম গোপন শক্তির অমোঘ প্রভাবে
এখনো কী সময়ের পাখনায় আছে সাময়িক দহন
আগুনে পুড়ে পুড়ে কোনখানে শেষ হয় স্বপন বহন
তবুও একত্র হয়ে কেন খুঁজতে যাই ভালোবাসার শিহরণ
এর পরেও সম্পর্কের জটিলতা বাড়ে কেন হৃদয়ে আসে আলোড়ন
জীবনে রুটিন নেই তবু কেন কেউ কেউ জীবনকে মাপে
জীবনের শেষ প্রান্তে হারিয়ে যায় কেউ কেউ কোন অভিশাপে
কেন তবে খুঁজে ফিরি একটি ভালো দিন
নোংরামিকে পেরিয়ে কেন হতে হয় যৌথ স্বাধীন
কেন কোনমতে বেঁচে থেকে সামনে এগোনো যায় না?
এসব জবাব আমাদের ভালোভাবে চেনা।
০১-০২ সেপ্টেম্বর, ২০০৭,
গফরগাঁও ময়মনসিংহ
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক ও গবেষক। তাঁর লেখা ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা এগারটি। ২০০৪ সালে কবিতা গ্রন্থ প্রকাশের মাধ্যমে তিনি পাঠকের সামনে আবির্ভূত হন। ‘সমাজতন্ত্র’ ও ‘মার্কসবাদ’ তাঁর দুটি পাঠকপ্রিয় প্রবন্ধ গ্রন্থ। সাহিত্য ও রাজনীতি বিষয়ে চিন্তাশীল গবেষণামূলক লেখা তাঁর আগ্রহের বিষয়।