কবি অনুপ সাদি বাস্তবতার মাটিতে দাঁড়িয়ে আশাবাদকে সঙ্গে নিয়ে রাষ্ট্র ও সমাজের মূর্ত ছবি এঁকেছেন। কবির প্রথম কবিতার বই ‘পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি ও তোমাদের বংশবাতি’ (২০০৪) প্রকাশের পর আরও তিনটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। সর্বশেষ গত ফ্রেব্রুয়ারি ২০০৭-এ প্রকাশিত হয়েছে ‘বৃষ্টির ফোঁটায় আসে আমাদের ঠোঁটে ঠোঁটে কবিতা বাগান’। তার প্রতিটি বইয়ে প্রকাশ পেয়েছে সমাজের অবহেলিত শ্রমজীবি মানুষের কথা, শ্রেণি বৈষম্য, সমকালীন দেশীয় রাজনীতি, বিশ্বপট, স্বচিন্তা ইত্যাদি নানা বিষয়। এসবের মাঝে আরেকটি বিয়ষ সবচেযে বেশি প্রতিফলিত হয়েছে তা হলো সমাজ তথা রাষ্ট্র ব্যবস্থা বদলে দেবার তীব্র বাসনা। সাথে সাথে প্রেম বা রোমান্টিকতার প্রকাশ দেখা যায় তাঁর কবিতায়।
এই কবির বইগুলোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো কবিতা গুলোর শিরোনাম, যা বইগুলোকে দিয়েছে অন্যমাত্রা। অনুপ সাদির প্রথম কবিতার বই ‘পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি ও তোমাদের বংশবাতি’-তে তিনি যে কবি মনের পরিচয় দিয়েছেন তা সত্যিই অনন্য। কবিতাগুলোর শিরোনামই বলে দেয় তাঁর অনন্যতাকে। তিনি এই বইয়ের প্রতিটি কবিতায় তুলে ধরেছেন তার দেখা সময় তথা কাল, সমাজ বা রাষ্ট্রকে এক অনন্য বৈশিষ্ট্যে। দেশ, বিচিত্রা, শিরোনামের কবিতায় তার প্রমাণ মেলে
“একটু খানি বাঁচার লোভে হালকা মেকাপে ডুবে,
কুম্ভকর্ণের বড়ি খেয়ে অশান্ত পাখিরা আজ
বেঘোরে ঘুমায় নিথর ড্রেনের বালিশে;”
এই বইয়ের অধিকাংশ কবিতায় কবি খেটে খাওয়া মানুষের কথা বলেছেন, করেছেন শ্রমজীবি সেই সব মানুষের সেইসব মানুষের জয়গান, যারা সভ্যতা নির্মাণে অবদান রেখে চলেছে। সতত, তবু তারা থেকে গেছে অবহেলিত। কবি কবিতায় —
“জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করেই জন্মেছো তুমি,
উঠেছো বেড়ে কন্টককীর্ণ সুবিস্তীর্ণ জনমানববহুল মাঠে।”
তরুণ কবি অনুপ সাদি তার কবিতা গুলোতে আমাদের সামনে সমাজ, রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও এর মাঝের বৈপরীত্যকে উপস্থাপন করেছেন অত্যন্ত প্রকট ভাবে। এই বিষয় গুলো যেমন তাকে নাড়া দিয়েছে, তেমনি কবিতাগুলোয় তার স্বচ্ছ প্রকাশ, পাঠক মনে নাড়া দিতে সফল। যেমন —
“অনাথ শিশুরা ফেরি করে কচি শরীরের ঘাম
দুপুরে প্রখর রোদে জৈষ্ঠোর চল্লিশ ডিগ্রী তাপমাত্রায়। ”
অথবা
“বিকেলে ভিআইপি রোডের রেলিংয়ে
শতচ্ছিন্ন শাড়ি শুকোয় বৃদ্ধা ভিখারিনী।?
(সভ্যতায় বাংলাদেশ ২০০১)
এই বইয়ের কবিতাগুলোতে কবির অকৃত্রিম স্বদেশ চিন্তার প্রকাশ পাওয়া যায়। আর এই স্বদেশ চিন্তা থেকেই তাঁর মাঝে এসেছে ক্ষোভ, সমাজ তথা রাষ্ট্র পরিচালনাকারী। সেই সব মানুষের উপর, যারা দেশের সাধারণ মানুষকে বাণিজ্য করে। শুধু তাই নয়, তিনি প্রতিবাদ না করার জন্য সেই সব সাধারণ মানুষের উপরও তার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তার প্রমাণ পাওয়া যায়, “পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি ও তোমাদের বংশবাতি’; শিরোনামহীন আগ্রাসন” শিরোনামের কবিতায়।
কবির কবিতায় সমসাময়িক বিশ্ব পরিস্থিতি উঠে এসেছে তাই তার কবিতায় বারে বারে প্রকাশ পেয়েছে সাম্রাজ্যবাদ, আমেরিকর, ইরাক ২০০৩’ কবিতায় ইরাক যুদ্ধের এমন বর্ণনা দিয়েছেন তা সত্যিই হ্নদয়স্পর্শী। “যে শিশুটির হাত দুটো উড়ে গেছে যুদ্ধের দাবানলে/হাত সে কোথায় পাবে এই ভয়াবহ রাত শেষ হলে;/ যে মায়ের বুক হতে চলে গেছে বুকের প্রতিমা/সেই মায়ের কান্নার দামটুকু সভ্যতা দিতে পারবে না;”
আমাদের চার পাশের নানা অরাজক প্রতিকুল পরিবেশের মাঝে থেকেও কবি দেখেছেন স্বপ্ন একটি সুন্দর স্বাভাবিক পৃথিবীর, শুনিয়েছেন আশার গান, আহবান করেছেন সেই সুদিনকে — “বিলুপ্ত হিমের মতো দুরের জাদু বাস্তবতা/ থেকে তুমি এসো,” (চিরন্তন প্রত্যাখ্যানের আগমনি গান)।
তিনি আরো বলেছেন যে, সেই দিন খুব সহজ ভাবে আসবে না, অনেক ত্যাগের পর আমরা পৌঁছাব সেই আলোকজ্জ্বল দিনের প্রভাতে। যার প্রমাণ মেলে “হে উপমানব, সুপথে এসো” শিরোনামের কবিতায়
“প্রচলিত কিছুই সহজে ভাঙবে না; —
ভুঁড়ি, চর্বি, চিতার, আগুন,
ছায়ামুর্তির বাস্তবতা, অন্ধকারের শক্তি।”
অনেক কঠিন বাস্তবতার ভিতরও কবি স্বপ্ন দেখেন একটি সুন্দর অবসর কিংবা কিছু রোমান্টিক মুহুর্তের, যেখানে থাকবে না কোন পার্থিব চিন্তার কোলাহল। কবির ভাষায়
—কী দেখতে পাচ্ছে?
—আলোর উজ্জ্বলতা?
—কী স্পর্শ করেছো?
—তার মুখ? এলোমেলো দীপ্ত চিবুক, সুবুজ স্নিগ্ধ বনানি, লাস্যময় জারুল, বেগুনি
—শিশির স্নাত কচুরির ফুল। (চুম্বন ও স্বাধীনতা) ।
তরুণ কবি অনুপ সাদি তাঁর প্রথম কবিতার বই ‘পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি ও তোমাদের বংশবাতি’ তে তিনি তার যে স্বকীয় কবি মনের যে সাবলীল প্রকাশ করেছেন, তা সত্যিই অনন্য।
অনুপ সাদির দ্বিতীয় কবিতার বই ‘উন্মাদনামা’। পূর্বোক্ত বইয়ের ধারাবাহিকতায়, এই বইয়েও কবি এক গুচ্ছ অনন্য শিরোনামের কবিতায় সমাবেশ ঘটিয়েছেন। সমসাময়িকতায় প্রভাবিত তরুণ কবি অনুপ সাদির এই বইয়ের কবিতায় প্রধান বিষয় হলো সমসাময়িক দেশীয় ঘটনা, প্রবাহ, যার সাথে সাথে উঠে এসেছে ঐতিহাসিক কিছু সত্য। এই বইয়ের কবিতায় কবি আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন তাঁর দৃষ্টিতে দেখা আমাদের অতি পরিচিত স্বদেশকে। তাঁর এই চিত্রায়ন সম্পুর্ণ বাস্তব এবং সত্য। এই বইয়ের প্রথম কবিতা ‘উন্মাদনামা’ —-তে কবি এক উন্মাদের কন্ঠে যে সব কথা আমাদের সামনে উপস্থাপন করেছেন তা আমাদের দেশের সমসায়িক দৃশ্যকে উপস্থাপন করে। যেমন—-
‘‘চাচা বা ভাইয়েরা আমার, একবার শুধু চোখ তুলে তাকান
এইবার শুধু এইবার হামাক ভোট দেন। ’
পুঁজিবাদ, সাম্রাজ্যবাদ, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কবির দীপ্ত উচ্চারণ এই বইয়ে খুব প্রকট ভাবে প্রকাশিত হয়েছে। যেমন — “এসে গেছে ভারত মাতার সুগন্ধে টাটা সাহেব শিশ্ন নিয়ে, লালন তোমার ছেউরিয়ায় এখন প্রিন্স পুঁজিবাদ, জমা ও জন্মাও টাকা;” (মানুষ মানুষ আর মানুষ অথবা প্রজন্মে ধারাবাহিক গল্প অথবা উন্মাদনামা)।
প্রথম বইয়ের এই বইয়েও কবি বলেছেন অবহেলিত শ্রমজীবি মানুষের কথা, তাদের বঞ্চনার ইতিহাসের কথা। যেমন— আমরা কী? কবিতায় তার প্রমাণ পাওয়া যায়। আমাদের দেশের রাজনীতি, নির্বাচন, রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রভিৃতি নিয়ে তার যে তীব্র অনাস্থা তার প্রমান মেলে তার বিভিন্ন কবিতায়। যেমন— “ এক টুকরো তেনা কেনা হবে তাই কমিটি গঠন চাই,/ অজস্র কমিটি বিক্রেতা কমিটি, ক্রেতা কমিটি।”(গর্ততত্ত্ব ও সঙগ্রাম )
কিংবা,
“চা বেচার শুভদিন
এই চা একদিন মঙ্গল গ্রহের ইলেকশনে কাজে লাগবে।
(চা ইলেকশন ও ইতিহাস)
অনেক বেদনা, আশাভঙ্গের মাঝে ও কবি দেখেছেন এবং দেখিয়েছেন স্বপ্ন, একটি সুন্দর আগামীর, একটি সুন্দর পৃথিবীর। তার জন্য তিনি আকাঙ্খা করেছেন-
“আমার প্রথম টার্গেট শিশুরা সুন্দর হবে
ওরা ভূল পথে যাবে না।” (শ্রমিকের বেদনা গীত)
সর্বপরি উন্মাদনামা বইটিতে কবি আমাদের দেশের এবং দেশের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের যে চিত্র রচনা করেছেন তা অত্যন্ত বাস্তব এবং জীবন্ত।
অনুপ সাদির তৃতীয় কবিতায় বই ‘মনোজগতে মঙ্গা উপরিকাঠামোকে লেহেঙ্গা, উৎসর্গ করেছেন, সেইসব তরুণ- তরুণীদের যারা এই অকালেও কবিতা পড়ে। এখানে কবি যে, তার পাঠককুলকে কতখানি সমীহ করেন তার প্রমাণ পাওয়া যায়। তাঁর পূর্বোক্ত দুটি বইয়ের মতো এই বইয়েও কবি এক গুচ্ছ কবিতার সমাবেশ ঘটিয়েছেন, প্রতিবারের মতো অনন্য কিছু শিরোনাম নিয়ে। তার কবিতায় উঠে এসেছে আরো নতুন কিছু বিষয়,যেগুলো আমাদের সমাজকে প্রতিনিয়ত কলুষিত করছে। এই বইয়ের নাম শিরোনামের কবিতায় কবি আমাদের দেশের একটি অঞ্চলের মানুষের জীবন সংগ্রামের যে বর্ণনা দিয়েছেন, তা সত্যিই তাদের জীবনের জীবন্ত দলিল।
“তারা অভাবি আর সাংসারিক ছিলো,
তারা পশুর মতো বাঁচতে শিখেছিলো”
(মনোজগতে মঙগা উপরিকাঠামোতে লেহেঙগা)
আগের বই গুলোর মতো এই বইয়েও কবি সাম্রাজ্যবাদ পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে হয়েছেন। কবিতার ভাষায়—-
“কঙগো,
তোমাকে নিয়ে লেখা হবে অজস্র কবিতা
কেননা
তোমাকে ধর্ষন করেছে সাম্রাজ্যবাদীরা”
(কঙগো তুমি আমাদের কবিতা)।
অনুপ সাদির কবিতায় খুব বেশি প্রেম বা রোমান্টিকতার প্রকাশ মেলে না। তারপরও এই বইয়ে বেশ কিছু প্রেমের কবিতার দেখা মেলে। যেমন — ‘ অনুভবে কণা’ বৃষ্টি তোমাকে দিলাম; কাছে আসি ভালো লাগে’ প্রভৃতি।
কবি তাঁর ‘প্রতিক্ষার অবসানে’ কিংবা ‘বিশ বছর পরের এই দিনে’ কবিতায় যে আশার বাণী শুনিয়েছেন তার প্রতীক্ষায় আমরা সবাই।
সত্যিই আসলো মানুষ প্রতীক্ষার সাথে কর্মি হবার জন্য উদগৃব
অনুভূতির তীক্ষ্ণ; হ্নদয়ে গভীর ব্যক্তিতে বিশাল”
(প্রতীক্ষার অবসানে)।
এই বইয়ের কিছু কিছু কবিতার লাইন মনে হয় সতত বাস্তব এবং নিজের কথা। যা কবিকে দিয়েছে এক অনন্য কৃতিত্ব । যেমন —
“দেশ বাঁচানোর কত চেষ্টা, শুধু মানুষ বাঁচে না।”
(চৈত্রের দুপুরে দুই শ্রমিক ও আমার প্রেমিক)
অথবা,
“আমার রাজকন্যার হাত বদল, তার এক বুক দুঃখ
আর সবটুকু সেই শিল্প যা আমাদের কর্মে বেঁচে থাকে।”
(আর্ট)
অথবা,
“ভালবাসায় জন্ম নেয়া একুশ শতকের নারী
তুমি জান কি তোমার মতোই এক নারী তোমার- প্রধানমন্ত্রি
সেও পারেনি তোমাকে বাঁচাতে;”
(বিষ খেয়ে এ পচা দেশকে লাথি দে)।
অথবা,
“তুমি জেগে ওঠে বাঁচবার প্রয়োজনে”
(গরিবের পথ)
তরুণ কবি অনুপ সাদি তাঁর আগের বইগুলোর ধারাবাহিকতায় এই বইয়েও তার কবি গুনের যে অসামান্য প্রকাশ করেছেন তা তার রচনা ধারাকে দিয়েছে এক অনন্যতা। অনুপ সাদির আগের তিনটি বইয়ের মতো এই বই ‘বৃষ্টির ফোঁটায় আসে আমাদের ঠোঁটে ঠোঁটে কবিতাগান;- এ এক অনন্য কবিভঙ্গির প্রকাশ পাওয়া যায়। বরাবরে মতো তিনি আমাদের সামনে তুলে এনেছেন সেই সব বিষয় যা আমরা সবাই অনুধাবন করছি সময়ের পথ পরিক্রমায়।
এই বইয়ের দ্বিতীয় কবিতা ‘অবাস্তব দিনলিপি’-তে কবি এক কাব্য ধারা সৃষ্টি করেছেন। যেখানে প্রতিফলিত হয়েছে আমাদের সমাজ জীবনের বাস্তব কিছু চিত্র। কবিতার পংক্তিতে —
“আমরা তো জানি এখনকার ছেলেরা ভীরু কাপুরুষ
দুশো টাকায় অনায়াসে বিক্রি হয়ে যায়
তারা তাকে পারেনি বাঁচাতে; ভবিষ্যতেও বাঁচাতে পারবে না”।
কবি সয়মকে ধারণ করেছেন খুব তীব্র ভাবে তাই তার কবিতায় বারেবারে উঠে এসেছে, বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাত্তয়া ঘটনাবলী। যেমন— “জীবন কয়লা কোম্পানি” কবিতায় তার প্রমাণ পাওয়া যায়।
“তুমি ছোট যমুনার তীরের গল্প শোনে
তোমার শহরে এখন ধোয়া পানি
তোমার পানিতে এখন রক্তের রঙ।”
রাষ্ট্র, রাজনীতি তথা রাষ্ট্রব্যবস্থা সমাজ ব্যবস্থা নিয়ে তার যে তীব্র অনাস্থা; তিনি তার প্রকাশ করেছেন অত্যন্ত জোরেসোরে এই বইয়ের বিভিন্ন কবিতায়। যেমন-
“তুমি তো জান রাষ্ট্র এখন গরিবের শত্রু
রাষ্ট্র গুলি করে মারে এখন সব অভাবিদের”
(জীবন কয়লা কোম্পানি)
পুনরায় তিনি আহবান করেছেন, গণমানুষের মুক্তির পথে; আলোকোজ্জ্বল সেই প্রভাতে। তার প্রমাণ পাওয়া যায়, ‘ নতুন সরকে তোমাকে নিমন্ত্রন’ কবিতায় —
“তোমাকে অপরাজেয় রুপালি শুভেচ্ছা
দেখো; দেখো, নতুন তারারা ডাকছে
নতুন সড়কে তৈরি হচ্ছে”
প্রখর বাস্তবতার মাঝে ও কবি যে রোমান্টিকতার প্রকাশ দেখিয়েছেন তা তার কবি দক্ষতার প্রমাণ দেয়। যেমন—
“রাতে তোমার সংগে ট্রেনে চড়ে দার্জিলিং বেড়াতে যাওয়া
চিম্বুক পাহাড়ে মেঘের মধ্যে স্নান।”
(তোমার আলোয় আমাকে গ্রহণ করো)
অথবা,
আমাকে তোমার গভীর মমতায় গ্রহণ করো
আমাকে তুমি গভীর মমতায় গ্রহণ করো”
(তোমার আলোয় আমাকে গ্রহণ করো)।
অথবা,
“সাজাবো তোমাকে সকালের আলোর মতো
প্রকৃতির উদারতা পাওয়া গাছের পাতায়, ফুলের মালায় পাখিদের রঙে
তোমাকে শোনাব নিজের লেখা গান, বিষ্ণুদের কবিতা”
(তোমাদের জন্য উপহার)
অথবা,
“রাত্রি এলে তোমায় নিয়ে ঘুরতে যাব গহীন বনে,
এই কথাটি লুকিয়ে থাকুক তোমার মনের গোপন কোনে।”
(প্রেমবার্তাগুলি)
কবির আগের তিনটি বইয়ের মতো; এই বইয়ে ও কবি বলেছেন মানুষের কথা; দেশের কথা দেখিয়েছেন গণ মানুষের মুক্তির পথ। তিনি এই বইয়ে যে মাত্রা মাত্রার রোমান্টিকতার প্রকাশ ঘটিয়েছেন তা তার অনন্য মাত্রার কবি মনের পরিচয় বহন করে।
পরিশেষে তরুণ কবি অনুপ সাদির চারটি কবিতার বইয়ে যে বহুমাত্রিকতার প্রকাশ লক্ষ্যে করা যায়, তা এই তরুণ কবিকে শুধু অনন্য পরিচয়ে পরিচিতই করেনি দিয়েছে এক স্বকীয় মাত্রা। শেষে শুধু কবির একটি উদ্ধৃতি দিয়ে সমাপ্তি টাকা যাক —
“পরিপূর্ণরূপে হাজার ফুলকে ফোটাতে আমরা আবার
আমাদের মাঝে বুড়িগঙ্গার উপকন্ঠে রাজ্য বানাবো। ”
(গন্ধরাজের গন্ধে ভরা ঘর নেই; পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি ও তোমাদের বংশবাতি)।
তরুণ কবি হিসেবে অনুপ সাদি সময়কে যেভাবে দেখেছেন, তারই প্রকাশ করেছেন তারই কবিতায়। তাই তার কবিতাগুলো হয়েছে সময় তথা রাষ্ট্র বা সমাজের র্মূত প্রতিচ্ছবি।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: অনুপ সাদি সম্পর্কিত এই মূল্যায়নটি এনামূল হক পলাশ সম্পাদিত সাহিত্যের ছোট কাগজ অন্তরাশ্রম-এর অনুপ সাদি সংখ্যা, সংখ্যা ৪, পৃষ্ঠা ৬৩-৬৮, ময়মনসিংহ থেকে ৩০ নভেম্বর ২০২২ তারিখে প্রকাশিত এবং সেখান থেকে ফুলকিবাজ.কমে প্রকাশ করা হলো।
ফুলকিবাজ ডট কমে অতিথি লেখক হিসেবে রাজনৈতিক বিশ্লেষণ, কলাম, অনুবাদ, নিবন্ধ ও প্রবন্ধ লেখায় সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন পূরবী সম্মানিত, ইভান অরক্ষিত, রনো সরকার, দিল আফরোজ, অনাবিলা অনা এবং রণজিৎ মল্লিক। এছাড়াও আরো অনেকের লেখা এখানে প্রকাশ করা হয়।