আমার হৃদয় কোনো দেয়াল মানে না

আমি চেয়েছি পরিবর্তন আর বদলে যাওয়া – তুমি তা জানো
আমি খুঁজেছি গভীর মনোযোগের সাথে – তুমি তাও জানো
আমি দেখেছি হৃদয় ভেদ করে যা থাকে – তুমি তাও জানো
আমি জানি তুমি চেয়েছিলে প্রগতি সমৃদ্ধি আর রাজহাঁস
অনেকে রিক্ত, বারবার খুঁজে খুঁজে ফেরে গভীর আশ্বাস;
আমি খুঁজেছি হারানো আশা আর পাল্টে ফেলার পথের ঠিকানা
কারো অন্যায় আদেশে আমাদের স্বপ্নে আঘাত লাগে না
আমার হৃদয় কোনো নির্মম আদেশ কখনো মানে না
আমার হৃদয় কোনো দেয়াল, প্রাচীর বা ব্যারিকেড মানে না।

আমি বলেছিলাম দূর পাহাড়ের তীরে যে স্বর্ণগাঁয়ে আমরা যাবো
আমি বলেছিলাম আমরা আরেকদিন মানুষের কাছে ফিরবো
তুমি বলেছিলে আমরা ভালোবাসব আর বহু মানুষের ভালোবাসা পাবো
আমাদের বিস্বাদে মোড়া দিন আর রাতগুলো লাল আলোয় আলোকিত হবে
আমাদের বামধারে প্রতিবাদী বৃক্ষের মাঝখানে আমরা বসতি বানাবো
তুমি মনে রেখো, মৃত্যুর মুখোমুখি ফাঁসির মঞ্চে বা ঝড়ের মাঝখানে
আমার হৃদয় কোনো অন্যায় আদেশ কখনো মানে না
আমার হৃদয় কোনো দেয়াল, প্রাচীর বা ব্যারিকেড মানে না।

২.
নদীকে জড়িয়ে থাকে যেমন মাছেদের উথাল পাথাল ঢেউ
বায়ুকে জড়িয়ে থাকে যেমন জীবের সমস্ত নিঃশ্বাস
তেমনি সত্য জেনো, আমার উদ্বেলিত হাতে লিখে রাখা সমস্ত কথা
তেমনি সত্য জেনো, বহুদিন ধরে লেখা আমার সমস্ত রক্ত গান
সকল গানকে তুমি তোমার উঠানে রেখে গড়ে তোলো স্বাধীন বাগান
যাও তুমি এগিয়ে যাও তোমার চারপাশের সমস্ত বাঁধন ছিঁড়ে
তুমি এগোলেই তবে আবার জাগবে গ্রাম জাগবে সর্বহারা
দাঁড়াতে শিখবে মানুষ নিজের পায়ের উপর নিজের কৌশলে
আবার এগোবে তারা নিজেদের ক্ষমতায়, নিজেদের সম্বলে

যদি জ্বলে উঠে মানুষ, আমাদের সামনে পাবো অমলিন দিন
আমাদের প্রিয় শহরের মানুষগুলো বাঁচবে হাতে হাত ধরে
আমাদের সাথে যাবে আমাদের প্রিয় শহরের বিস্তৃত কবিতা
তুমিও সঙ্গে চলো আমাদের আশা জাগানিয়া রাজপথে
আর মনে রেখ আমার হৃদয় কোনো দেয়াল মানে না।

আমার হৃদয় কোনো বাঁধন মানে না একথাটি মনে রেখ
গোপন মুদ্রা যেমন গোপনেই জড়িয়ে থাকে, আমি সেরকম নই
আমি আছি আর আছে হৃদয়ের গান, কবিতার পিরামিড, স্বপ্নের ধাঁধাঁ
আরো আছে বাঁচাবার প্রেরণা, জীবন বন্দনা, খাদ্যশস্য কণা
আলেয়ার আবছায়া পেরিয়ে, অনেক অনেক পথ পাড়ি দিয়ে
যে আলো পাওয়া যায় আমরা তার কাছে অনেক শক্তি পাই
আমাদের সম্পর্কের শুদ্ধতায় সুন্দর আলো জ্বলে ওঠে একথা ভুলো না
কল্লোলে কোলাহলে কল্পনায় আমরা করবো অমলিন জীবন রচনা।

৩.
শিকল ছেঁড়া স্বাধীনতার ডাকে উজ্জ্বলতায় বাঁচার আশা থাকে
আন্দোলনে আন্দোলিত ইতিহাসের হাতে হৃদয়গুলো ভালোবাসা রাখে
এই অসম সমাজ দূর হলে তুমি চিনবে নিজের গভীর শক্তিকে
এই অসময়ের দিনগুলো শেষ হলে তুমি চিনবে তোমার আমাকে
ছায়াপথের মতো দীর্ঘ শস্যখেতে যখন শুনবে মানুষের সুর আর গান
বৃষ্টির শব্দে আর স্রোতের ছন্দে জাগবে জীবনের বালুকা বাগান
সে সময় হেঁটে হেঁটে পৌঁছাবো তোমাদের রঙ মাখা স্নিগ্ধ দরজায়
সে সকালে সূর্য উঠবে আমাদের সাম্যের পাহাড়চূড়ায়
সেদিন ধ্বংস হবে আগ্রাসি সেনার কুৎসিত কেল্লার চারধার
সে বিকেলে লোকালয়ে বসবে মেলা আসবে প্রিয় মানুষ আর
সে রাতে করবে প্রতীক্ষা প্রিয় বন্ধু, আলোয় ভরে আসবে রাতে
সে সন্ধ্যায় হর্ষ ধ্বনি দেবে তুমি অমৃত সুধা সংকেতে
সে ভোরে আলোকিত আকাশে ঘোষিত হবে শ্রমিকের বিজয় গাঁথা
সে সময়ে রাষ্ট্রের সীমারেখা দূর হবে, আসবে আমাদের যৌথতা
সেইসব দিনগুলোতে খুশি হবে তুমি সোনালি শস্য কাটতে
সেই ভয়ঙ্কর সময়ে যখন শত্রুরা তোমাকে নেবে হত্যা করতে
অথবা যখন তুমি ব্যর্থ হতে হতে নিজেকে হত্যা করতে উদ্যত
তুমি মনে রেখো এই অমোঘ বানী, বুলেট তোমার প্রাণ কেড়ে নেবার মুহূর্ত,
কৃষক শ্রমিকের উৎপাদনশীল হৃদয়ের মতো
আমার হৃদয় কোনো ব্যারিকেড মানে না,
মুক্ত সিংহের মতো সকল বাঁধন ছিন্ন করা ভিন্ন এ হৃদয় অন্য কিছু জানে না।

আরো পড়ুন

০২ ফেব্রুয়ারি ২০০৮
গফরগাঁও ময়মনসিংহ

Leave a Comment

error: Content is protected !!