প্রিয়তম
জীবনকে নিয়েই কবিতা, কবিতা তোমাকে নিয়েও
কবিতার ভাষা সুন্দর, কিন্তু সব কবিতা সুন্দর নয়,
সব জীবনও সুন্দর নয়, কেবল প্রেমময় জীবনই সুন্দর,
সেই জীবন আমরা চেয়েছি,
অর্থ খুঁজে বেড়িয়েছি সেই জীবনের।
প্রিয়তম, কিছু মানুষ শক্তি নিয়েই বেঁচে থাকে
তাদের ভেতরে রয়েছে অফুরন্ত তেজস্ক্রিয়তা
তারা, অসাধ্যকে সাধন করে, অপূর্ণকে পূরণ
অদৃশ্যকে ডেকে আনে, সামনে জনগণ
তারা, ঝড় মৃত্যু ও মহামারীকে ভয় পা না
যেমন ভয় পায় না পরমাণু বোমা
আর আমি এখন ভয় পাই হৃদয় ভাঙার
তবু সব সম্পর্কই কেন শেষ হয়?
শেষ হয় চার বাহুর গভীর প্রণয়?
কিছুই কী থাকে না বাকি?
ডাক দিই প্রিয়তম, জীবনের ছন্দকে
নিঃশ্বাসের সাথে মোড়ানো এক ফালি জীবনকে
আমরা অধিকার হারাবো না নির্বাসন বা প্রস্থানের
জীবন সবাইকে ফেলে দেয় অপ্রয়োজনের ঝুড়িতে
এসব কথা বলে, কেউ কেউ ছুটে চলে জীবনেরই ভিতে;
আমি ছুটেছি আর হতে চেয়েছি জ্ঞানবৃক্ষ
আর আজ চোখে মুখে কোনো প্রতিজ্ঞা নেই
স্বপ্ন নেই আশা নেই ক্লান্তি নেই
আছে শুধু ভীত হবার স্বাধীনতা
আর কী হারাব আমি, কীই বা পেয়েছি আমি
পরাজয়ে ভীত হই, আমি কোনো বীর নই।
সাহসি নই, তাই চাইনি কখনো সম স্বর্গোদ্যান
তবু জানি প্রেমের পরে থাকে পরাজয়,
প্রেম সে তো বেদনার হুল বেদনাবহুল অভিজ্ঞতার ছেঁড়া ত্যানা
তাই ভরসা থাকে, থাকে বাঁচবার প্রেরণা।
রক্তের স্পন্দন থাকলে, প্রিয়তম, আমি বেঁচে থাকি
সব প্রাণীরাই বাঁচে আমাদের চেনাজানা পরিবেশে
সূর্যই বাঁচিয়ে রাখে, কে তাকে শক্তি দেয় সহযোগী হতে,
সেই আমাদের লাল টুকটুকে লড়াকু সূর্য, আমাকে বাঁচাতে চেয়েছিলো
তুমি কী হারিয়ে গেছো, প্রিয়তম, দূর কোনো গ্রহে
ডেলাইলারা বারবার হারিয়েই যায়, ওফেলিয়া কোথায় উধাও!
কোনোদিন ফিরে আসে না তারা হারাবার পরে
তুমি কি আসবে না আমার সম্মুখে
আমি সমগ্র সত্ত্বা নিয়ে বহুক্ষণ বসে আছি
আমি সমগ্র জীবনকে হাতের তালুতে নিয়ে বসে আছি
আমাদের উঠোন, মঙ্গলদ্বীপ আর সাম্যের সমাজকে নিয়ে বসে আছি
তুমি এসবের মাঝখানে এসো একজন হয়ে
মনে রেখো আমরা কেউ একার কারো নই, আমরা সবার।
এ জীবনে চায়ের পেয়ালায়, প্রিয়তম, দেখেছি প্রেম
কচুপাতার জলের মতো ক্ষণস্থায়ী মুখে দেখেছি প্রেম
নিদ্রাহীন রাতগুলোয় দেখেছি মনখারাপ করা প্রেম
যে যুদ্ধে দৈনিক লক্ষ লোক মারা যায় সেখানেও দেখেছি প্রেম
লোহা তামা টিন কাঠ, ইট সিমেন্ট কাদামাটির মাঝে দেখেছি প্রেম
শ্রমিকের মুক্তির স্বপ্নের সাথে পেয়েছি একঝাঁক প্রেম
অন্ধকার কালো বিষণ্ণ শহরেও খুঁজেছি প্রেম
রেলগাড়ির হুইসেলের শব্দে শোনা যায় সেই ডাক ভালোবাসি।
আরো পড়ুন
- সুন্দর নান্দনিক সমতাঘর
- তোমার বিজয় সমতার জয়
- ঐ পারে স্বপ্নগতিগাড়ি
- আমরা দুজনে স্বপ্নের আবছা আলো দেখি
- শোনা যায় সেই ডাক, ভালোবাসি
- সম্পর্ক, মানে শক্তির নিত্যতা
- তুমি আসবেই আমার শ্রেণিহীন রক্তে
- আমরা সেদিন, বহুদিন তারপর কিছুদিন জীবনের গল্প বলেছি
- প্রত্যাশার স্বাপ্নিক আমরা ফেরি করি আশার আলো
- বেদনার নীল রঙে রাঙানো কষ্টগুলো
- সৃষ্টির শব্দে মুখরিত আমাদের যৌথ খামার
- সরসী
- On First Looking into Chapman’s Homer কবিতার মূলভাব ও সারমর্ম
- ফ্যানির প্রতি, জন কিটসের Ode To Fanny কবিতার অনুবাদ
১৩ জুন ২০০৮
ব্রাহ্মন্দি, নরসিংদী
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক ও গবেষক। তাঁর লেখা ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা এগারটি। ২০০৪ সালে কবিতা গ্রন্থ প্রকাশের মাধ্যমে তিনি পাঠকের সামনে আবির্ভূত হন। ‘সমাজতন্ত্র’ ও ‘মার্কসবাদ’ তাঁর দুটি পাঠকপ্রিয় প্রবন্ধ গ্রন্থ। সাহিত্য ও রাজনীতি বিষয়ে চিন্তাশীল গবেষণামূলক লেখা তাঁর আগ্রহের বিষয়।