হাজার বছর পরে মুক্তির উৎসব শুরু হলো আমার শহরে
বহুদূর পথ পাড়ি দিয়ে তুমি এলে হৈ হৈ কোলাহল করে
তোমার যাত্রার পর উত্থান পতন হলো কত কত সভ্যতার
মানুষ শিখল আগুন পাথর ব্রোঞ্জ লোহা কৃষির ব্যবহার
দাস ও সামন্ত যুগের শেষে লড়াই করল কিছু মানুষ
মহাকাব্য, নাটকের মহড়া হলো, গল্প উপন্যাস আর কবিতার ফানুস
মানুষ পেরোলো বহু প্রহসনের কাল, বহু যুগ কালো কালো
শৈশব পেরোলো তারা, কত শত যন্তর মন্তর বানালো
চলল ট্রেন জ্বলল বৈদ্যুতিক বাতি উড়ল পাখির আকাশে
তারপর তুমি এলে প্রগতির আশাকে সাথে করে আমাদের পাশে
নিয়ে এলে থরো থরো ভালবাসা কল্পনার রঙিন শহরে
ছোটাছুটি সবখানে, স্বর্গীয় অনুভূতি এনে দিলে সমতার ঘরে।
সবচেয়ে সাহসী যে দিন, তারচেয়ে সাহসী আমাদের গান
আমাদের কবিতারা খেলা করে ছুটে বেড়ায় সংগ্রামী ময়দান
দুপুরেরা রাতে যায়, রাত পেরোলে আসে এক ঝাঁক আগুন সকাল
কতো আশা ভালবাসা ঝড় যুদ্ধ মহামারী দিয়েছি সামাল
অনেক অনেক বড় হতে হবে, কর্মমুখরতার মাঝে হতে হবে বড়
আকাশের সমান হতে হবে, বৃহস্পতি গ্রহের চেয়ে বড়সড়
মানুষের জন্যে দিন এলে সেদিনই আসবে পূর্ণতা
সাম্য আর প্রীতি এলেই তবে আমাদের মগ্ন সার্থকতা
তুমি এলে তাই গাছে গাছে ফুল পাখি বসন্তের নীল সমাহার
ফুলে ফুলে পরাগায়ন, মোড়ে মোড়ে লাল রঙ শ্রমিকের বাহার
বদলাল জীবনের প্রবাহ পূর্ণতার দিকে যাওয়া স্বদেশভূমি
জন্মালো নতুন গাছ, নতুন বীজে এলো সমাজের মুক্তি দ্রুতগামী
জয়যাত্রা হবে তাই সাম্যের গান শোনা, জীবনের নয়া প্রস্তুতি
জনসভা হবে তাই, যাবো কী যাবো না এই দোটানায় ইতি
হাতে হাত ধরে ধরে ব্যারিকেড দেয়া হবে, তাই পড়ি অতীতের কথা
ঠোঁটে ঠোঁটে কথা হবে, তাই তৈরি হয়ে গেছে নতুন কালের নৈতিকতা
আবারো উঠবে নড়ে এই দেহঘর, তাই গোপনে প্রকাশ্যে আলোচনা
প্রত্যাশার আলোড়ন আমাদের বুকে বুকে তাই, বহু কর্মের প্রণোদনা।
আধুনিক সৃষ্টি ঘরে আমরা কয়েকদিন প্রত্যাশায় করি কলরব
হালকা আলোর নিচে যে প্রাণি হেঁটে চলে তারাই কী পুলকে সরব!
অতি গাঢ় অন্ধকারে যে জোনাকি আলো জ্বালে, তাও অতি মহামূল্যবান
দাবি কিছু থাকে যদি, দাও ঢেলে রক্তকণা, মহা মূল্যপ্রাণ
প্রেমকলার নির্মাণে আমাদের মাঝে ছিলো অতীতের মহাপরিচয়
প্রতিরোধে প্রতিশোধে চারিদিকে আরো ছিল সংগ্রামী হৃদয়
এ পৃথিবী হতে দূরে যে গ্রহেরা নিজে নিজে কক্ষপথে ঘোরে
তাদেরও শক্তি জেনো, ডুবে কী যাবে আবার বৈষম্যের জোরে
আলোচনা করে আমরা চিহ্ন পাই সময়ের পোড়া মাটি নীতি
কবিতার স্বাক্ষরে যে বানান লেখা থাকে তা থেকে বানাই কীর্তি
সংগ্রামের প্রেরণা, শত্রুনিপাতের জেদ থেকে জন্মে লড়াই
চোখের গভীরে দেখে আমাদের মুক্তি থেকে আদর্শ খুঁজে পাই
কাকে তুমি ডাক দাও আমি আছি সুবিচার ভাত আর মাঠের কাছে
রাইফেল মাটি আর নির্ভীকতার চারপাশে আমার সাম্য রাখা আছে
পরাজিত হবে না কেউ, তাই যুদ্ধে নিতে চাই কলম আর খাতা
শুষে নিয়ে জনগণের সকল যন্ত্রণা, হয়ে যাই কালজয়ী অগ্নিপাতা
আমরা ঘুরে ঘুরে দেখি জাদুঘর, প্রাণের প্রদীপ আর শ্রেণি সংঘাত
কেড়ে নিয়ে ফেলে দেই ময়লার ঝুড়িতে, ব্যর্থতার অভিসম্পাত
আমরা পরিকল্পনা করে কাজ করি অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষালাভ
দিগন্তের শেষ প্রান্তে আঁধারের ঝোপ থেকে বাড়ে আলোর অভাব
এক বিন্দু, এক অক্ষর, বাঁধাহীন আমরা পেয়েছি সৃষ্টির সময়
টানাপোড়েনের শেষে সিদ্ধান্তের পরে, পেয়েছি কুসুম বলয়
গভীর ঘুমের মাঝে ডুবিয়ে ফিরেছি সুতীব্র আবেগের স্রোতে
আশার বাঁধন খুলে আমরা চেয়েছি ঘর হতে আকাশে উড়তে।
তোমার হাতে আছে রাশি রাশি ভরপুর সোনালী ধানের গুচ্ছ
অভিবাদন করে সবাই সবার হাতের সব রঙিন ময়ূরপুচ্ছ
কাঁচের বেলুন তুমি, সবেগে ঘোষণা কর পাকা ফসলের মুক্তি
হৃদপিণ্ডের রক্তের দ্রুতগামি প্রবাহে যে স্রোত ওঠে, তাই তো প্রযুক্তি
ডেকে নিয়ে যাই আমি, জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা বাদন
বাংলাদেশের ঘরে যে আলো ছড়িয়ে গেল, সেইখানে এমন নন্দন
সুন্দরতম তুমি, যেন আজ প্রজ্জ্বলিত মায়াবী আলোক ভুবন।
আরো পড়ুন
- ৫৬,০০০ বর্গমাইল
- পরাজিত শ্রমিক
- স্বদেশ শ্মশান
- সমাজতন্ত্র আকাশ থেকে পড়ে না
- আমাদের আশাগুলোর বয়স বাড়ে না
- একটি নাটাবটের একটি তিতির হবে একটি সেতু
- ভিখারিনী থেকে জ্যান্ত পুঁজির দানব, কলকাতা
- হাজার বছর পরে মুক্তির উৎসব
- যৌথতার গান
- জীবনের নব সূর্যস্নান
- আমাদের অম্লান চেতনা
- আমার হৃদয় কোনো দেয়াল মানে না
- পিতৃভূমি, তোমার হৃদয়ে আলো জ্বেলে আমাদের ক্রমমুক্তি হবে
- তুমি আসবেই আমার শ্রেণিহীন রক্তে
- আমরা সেদিন, বহুদিন তারপর কিছুদিন জীবনের গল্প বলেছি
১১ জুন ২০০৮
ব্রাহ্মন্দি, নরসিংদী
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক ও গবেষক। তাঁর লেখা ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা এগারটি। ২০০৪ সালে কবিতা গ্রন্থ প্রকাশের মাধ্যমে তিনি পাঠকের সামনে আবির্ভূত হন। ‘সমাজতন্ত্র’ ও ‘মার্কসবাদ’ তাঁর দুটি পাঠকপ্রিয় প্রবন্ধ গ্রন্থ। সাহিত্য ও রাজনীতি বিষয়ে চিন্তাশীল গবেষণামূলক লেখা তাঁর আগ্রহের বিষয়।