একটি নাটাবটের একটি তিতির হবে একটি সেতু

হারিয়ে যাওয়া শিকড় খুঁজতে এসে দেখি
নদীর ঢালে কাতরাচ্ছে একটি তিতির পাখি,
শিকড়ের টানে খুঁটে খুঁটে খাচ্ছে
কোনো এক ঘাসফল, একটি নাটাবটের,
মাত্র আধা মাইল পথ পাড়ি দিয়ে এসেছে
এ কোন ফলের সন্ধানে?
এতো তীব্রতা থাকে কোন হৃদয়ের টানে
দীর্ঘ ছয় দশক পর পরবর্তী প্রজন্মের এক অর্ধভগ্ন তরুণ আমি
ফিরেছি পিতামাতার শৈশবের মাঠে;
শুরু থেকে শেষ রেখা পর্যন্ত মানুষ ক হাজার মাইল পথ হাঁটে?

ফেলে আসা কলকাতা,
ঢাকা চাটগাঁ কিংবা ঠাকুরগাঁ
বা এসবের থেকে আরো দূরে
ছোট একটি স্টেশন সামসি
অর্থহীন অনুপ্রাসে পূর্ণ এই স্টেশনের তীরে মালদহ
যেন শিয়ালদহ, শিলাইদহ, ঝিনাইদহ, পোড়াদহ’র
পাশে সমগ্র বাংলাদেশ ছুঁয়ে দেখি এই সামসিতে
কেন ট্রেনগুলো এইখানে হাহাকার করে উঠে?

ভালবাসা মানুষকে আদৌ আটকে রাখতে পারে?
ঘৃণা মানুষকে কত দূরে ঠেলতে পারে?
কুত্তা জিন্নাহ আর গান্ধীপোকার গণহত্যার খেসারত দেয় কারা?
হায়রে দেশভাগ!

ঋত্বিক ঘটক, তোমার যন্ত্রণা কী খুব বেশি ছিলো?
আমার পিতার চেয়েও তুমি কী খুব কষ্ট পেয়েছিলে?
আমার পিতার মুখে যন্ত্রণার ক্ষত ছিলো,
যেন খুবলে খেয়েছে কোনো মাংসাশী প্রাণি আমার পিতার মুখ
যে বাঙলায় জন্মায় সে দুটো বাংলা পায় কেন?
মানুষের শক্তি বেশি নাকি ইতিহাসের, নাকি ভাইরাসের?

হে আগামি দিনের ইতিহাস?
তুমি কি জানো এইসব ভাঙচুরের শেষ কোথায়?
রাষ্ট্র টুকরো হলে কেন গরিবের কষ্ট বাড়ে?
রাষ্ট্র ভাঙলে কেন অভাবী অভাবে পড়ে?
রাষ্ট্র কেন নিপীড়ক সাজে?

তাই আজো আমি দেখি জীবনের শক্তিতে
দণ্ডায়মান কিছু মানুষ
আর ভাবি
একটি নাটাবটের একটি তিতির হবে একটি সেতু
দুই বাঙলার মাঝখানে;
যে সেতু মানুষের তৈরি বিভেদকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে।

আরো পড়ুন

২৬ সেপ্টেম্বর ২০০৮
বমপাল, সামসি, মালদহ, পশ্চিমবঙ্গ

Leave a Comment

error: Content is protected !!