লেখক ও কবি
তরুণ কবি দোলন প্রভার চিন্তা চেতনার গভীরতা মহাসাগরের মতো। তিনি তাঁর কবিতার ভুবন নির্মাণ করেছেন বাস্তবতার সুকঠিন উপকরণে। তাঁর ‘স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে’ আমার হাতে এসেছে প্রায় আট মাস আগে। কাব্যগ্রন্থটি পড়ে আমি বিমোহিত। কারণ যেমন তার নির্মেদ নির্মোহ ভাষার বুনন, তেমনি তার চিন্তার প্রাখর্য। নানা ব্যস্ততার কারণে বইটি নিয়ে লিখতে পারিনি। ভেবেছিলাম তাঁর জন্মদিনে লিখব, ইতোমধ্যে সেই সময় অতিক্রান্ত হয়েছে।
“স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” কাব্যগ্রন্থের ছাপান্নটি কবিতা রয়েছে। কবিতাগুলোর অন্তরদেশে সংগুপ্ত দেশ, কাল জাতি এবং জাতীয় জীবনের অবক্ষয়, গণতন্ত্রের অবমূল্যায়ন, রাজনীতিদের দৌরাত্ম সাধারণ মানুষের হাহাকার, কৃষকের – শ্রমিকের আর্ত্মচিৎকার। বহু কবিতায় স্মৃতির মায়াময় ছবি ভাস্বর। তাঁর সেই স্মৃতিরাও নদী, পথ ধানক্ষেতের ঢেউ এর ভেতর দিয়ে অস্থিচর্মসার মানুষের বেঁচে ওঠার স্বপ্ন দেখে। তিনি আসলে স্বপ্ন দেখেন সাম্যবাদী সমাজের। তাঁর কবিতায় জীবনানন্দ দাশের ছায়া দেখতে পাই। শব্দ চয়ন, ছন্দ বিন্যাস জীবনানন্দ দাশের মতো। যেমন ‘বিকেলের কূলে’ কবিতায় তিনি বলেছেন
‘একদিন এই পৃথিবীর বুকে ছিল আমাদের রক্তিম বিকেল
ছিলো লুটিয়ে পরা প্রেমে লুকোচুরি মনের শব্দ গাঁথামালা
ছিলো উথাল ঢেউ ওঠা নগরের বুকে সাঁতারু উষ্ণ শরীর
হৃদয়ে ছিলো এক সাথে চলার বিরহরহিত কিছু মিলনের ধ্বনি’।
সমকালীন কবিতা সম্পর্কে একটি আলোচনা দেখুন
তাঁর বিপ্লবী কবিতার চেতনজমিনে কোনো একক এলাকা সুদৃশ্য নয় তিনি পাহাড়ের সমসমতলে সমকালে চলেন। ঝরনা হয়ে যে লাল মিছিল এখানে দানা বাঁধে প্রেমের কোমলতা ছেড়ে একদিন পরিচিত পথে ছড়িয়ে পড়বে তার বিপ্লবী চেতনা দশ দিকে ছড়িয়ে যাবে। মানুষ বাঁচার স্বপ্নের সোচ্চারিত হবে এবং শক্তিমান হয়ে উঠবে। তাঁর এই বিপ্লবী চেতনা আমাকে নতুন করে বিপ্লবী হওয়ার মন্ত্রে দীক্ষিত করেছে।
“আমি দিনের করা রোদে টই টই করে ঘুরেছি দিকে দিকে,
শক্ত মাটির মাঠে যার বুক চিরে লাঙ্গল চলে,
উনুনের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি মাতৃ হৃদয় ফুটন্ত হাড়িতে কাঁদে,
পাশেই দেখেছি কীভাবে কোমল হাত বিক্রি হয় ইট ভাঙার কাজে,
বস্তি ঘুরে ঘুরে দেখেছি ছিনিয়ে নিতে জীবিকার শেষটুকু,
সভ্যতার সভ্য দালানের দেয়ালে লেপটে আঁকা যে ক্ষত ,
সে ছবি কষ্ট হয়ে কাঁটার মতো কাতরে উঠেছে মহাকালের বুকে,”
তাঁর কবিতা প্রাকৃতিক পরিবেশ ও প্রেমের ভিতর সমান্তরালভাবে সংগ্রামের পথ তৈরি করেছে।
‘দুর্ভিক্ষ দুয়ারে এসেছে এখনো ঘুমাও কেন শ্রমপাড়া!
হতাশার সময় নয় এখন;
চোখগুলোকে শাসন করে বলো,
ম্লান দৃষ্টিতে তাকাবার সময় নেই আর,
বৈশাখী ঝড়ের মতো উদ্দামতা নিয়ে
জেগে ওঠো।’
প্রেমের কবিতাগুলোও বিপ্লবের চেতনাবাহী।
‘তোমাকে সাজাব সূর্য রাঙা পলাশ দিয়ে
তোর পা রাঙাব কৃষ্ণচূড়া লাল আলপনায়’
বীর স্বপ্ন দেখে সব সময় নতুন ভূমির, নতুন পৃথিবীর। সেই নতুন পৃথিবীতে যখন বীর আসে তখন প্রেমিকেরাও জেগে ওঠে, জেগে ওঠে শান্ত নিভৃতচারী মানুষ। চমৎকার লিখেছেন তিনি ‘স্বপ্নবাজ বীর’কবিতায়
‘পথ ভোলানো মরীচিকাকে পরাজিত করে বীরেরা
যখন আসে ডাঙ্গার মাটি ছুঁতে
নিঃশ্চুপ প্রেমিকেরা তখনই মাথা তুলে,
উষ্ণ রক্ত নিয়ে প্রতিবাদে জেগে ওঠে’।
তিনি নতুন সভ্যতা বিনির্মাণ করতে চান যে, সভ্যতার কারিগর হবেন শ্রমিক ও কৃষক। তাঁর কবিতা আরো বলশালী হয়ে উঠুক। তিনি নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন বাস্তব রূপ লাভ করুক। মেহনতি মানুষের জয় হোক।
আরো পড়ুন
- শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ-এর একটি মূল্যায়ন
- সিমন দ্য বোভেয়া: ব্রিজিত বার্দো এবং ললিতা সিনড্রোম ও অন্ধ হয়ে আসা চোখ গ্রন্থের আলোচনা
- নিজকথায় লোককথায় হুমায়ুন আজাদ গ্রন্থের আলোচনা
- স্পার্টাকাস আমেরিকান লেখক হাওয়ার্ড ফাস্টের ১৯৫১ সালের উপন্যাস
- লু স্যুনের ছোটগল্প-এর চরিত্রগুলো সামন্তবাদের বিরুদ্ধে লড়ায় করেছে
- ‘অতপর একটি পোর্ট্রেট’ গল্পগ্রন্থে মধ্যবিত্ত নারীর জীবনচিত্র ফুটে উঠেছে
- বাঙালির ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ বই দুই বাংলার লেখকদের বিভিন্ন রচনার সংকলন
- নারী বই দুই বাংলার লেখকদের নারী মুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন রচনার সংকলন
- অনুপ সাদি রচিত মার্কসবাদ বইয়ের ভূমিকা
- অনুপ সাদির কবিতা তুলে এনেছে শ্রমঘনিষ্ঠ রাজনীতির স্বপ্নকাহন
- কবি অনুপ সাদি বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে সমাজের মূর্ত ছবি আঁকেন
- তানিয়া ছিলেন রাশিয়ান সাম্যবাদী লীগের একজন তরুন বিপ্লবী
- ‘অতপর একটি পোর্ট্রেট’ গল্পগ্রন্থটি পাঠককে ঘোরের জগতে নিয়ে যাবে
- বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা হচ্ছে অনুপ সাদি সম্পাদিত গণতন্ত্র বিষয়ক গ্রন্থ
- অনুপ সাদি গ্রন্থাবলী বা অনুপ সাদি রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থসমূহ হচ্ছে বারোটি বই
ফুলকিবাজ ডট কমে অতিথি লেখক হিসেবে রাজনৈতিক বিশ্লেষণ, কলাম, অনুবাদ, নিবন্ধ ও প্রবন্ধ লেখায় সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন পূরবী সম্মানিত, ইভান অরক্ষিত, রনো সরকার, দিল আফরোজ, অনাবিলা অনা এবং রণজিৎ মল্লিক। এছাড়াও আরো অনেকের লেখা এখানে প্রকাশ করা হয়।