অনুপ সাদির কবিতার মূল বিষয় শ্রমঘনিষ্ঠ রাজনীতি। তার কবিতায় ফুটে উঠেছে শ্রমিক ও কৃষকের রাজনীতি এবং সেই রাজনীতির সাফল্য-ব্যর্থতার প্রতিবিম্ব।
অনুপ সাদিকে শুধু বাঙালি কবি বললে তাঁর প্রতি অবিচার করা হবে; তিনি খাঁটি বাঙালি কবি। ভারতমাতার বিভক্তি কবিকে মর্মাহত করেছে কিন্তু বাংলা মায়ের বিভক্তি কবির অন্তরাত্মাকে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করেছে। এই বিভক্তিতে যে হরিলুটের সম্পর্ক তা সকলের কাছে স্পষ্ট না হলেও কবির কাছে স্পষ্ট। সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে একটি জাতি হারাল তার নিজস্ব সত্তা।
সাম্রাজ্যবাদের কালো ছোবল, গণতন্ত্রের নামে ফ্যাসিবাদ, অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদ, সাধারণ মানুষের প্রতি ভেলকিবাজি, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও ইউরোপীয় অর্থনৈতিক আগ্রাসনকে বাহবা দিয়ে যারা বাঙালি জাতিকে নতুন নেতৃত্ব দেবে বলে প্রতিশ্রুতি জানাল তারা আসলে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য অন্ধ অনুকরণ ও অনুসরণে মেতে থাকল। ফলে সাধারণ মানুষের ভাগ্যে যা হবার তাই চালু থাকল, অথচ সহজ সরল এ জনতা যেভাবে বৃটিশদের স্বার্থে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল এবার নতুন উদ্যমে নতুন করে ব্যবহৃত হতে থাকল স্বজাতীয় ও স্বদেশীয় দালালচক্রের হাতে। চামচাগিরি ও তোষামোদে ব্যস্ত দেশি দালালেরা দেশ ও জাতির প্রাণের চেয়ে ঐসব প্রভুদের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত, কেননা ক্ষমতার কলকাঠিতো এদের হাতেই। এসব রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা কবিকে উন্মত্ত করে দেয়। তাই তার “উন্মাদনামা” (২০০৬) গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন–
“ভুষি খেয়েই খুশি দেশি দালালেরা
তাদের মাঝে ইয়েস বস, জ্বি বস, জ্বি স্যার জ্বি হুজুর”
(গর্ততত্ত্ব ও সংগ্রাম; উন্মাদনামা)
যুগের যন্ত্রণা ও বুকের বিষজ্বালাই কবির কথককে করেছে উন্মাদ। চারদিকে আজ আমেরিকার বেহায়াপনা, যুদ্ধ ও ধ্বংসের তান্ডবলীলা, ইউরোপের অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদ, স্বদেশে অর্থনেতিক সংকট, বেকার সমস্যা; শ্রমিকের মজুরির সাথে জোচ্চুরি; পুঁজিবাদি দালাল কন্ট্রাক্টর চোরাকারবারিদের দোর্দন্ড প্রতাপ, সাম্রাজ্যলিপ্সা, মানবাত্মার অপমান, ক্ষমতায়নের নামে একশ্রেণির নারীর বেহায়াপনা অথচ লক্ষ লক্ষ নারী সামাজিক ও ধর্মীয় বর্বরতার প্রতিনিয়ত শিকার, মুখোশপরা ভদ্রবেশী বর্বরতা, বর্তমান যুগের এ সমস্ত ঘটনা কবিচিত্তে তীব্র উত্তাপ ও চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে ফলে তিনি Art for art’s sake-এ না গিয়ে মানুষের জন্য শিল্প রচনায় এগিয়ে আসলেন। বেছে নিলেন সুকান্তের সেই কালজয়ী শিল্পযাত্রা: –
“ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়
পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি! ”
আগেই বলেছি অনুপ সাদির কবিতা প্রচলিত রাষ্ট্রীয় শাসন, সমাজব্যবস্থা, সংস্কারাদির মূলে কুঠারাঘাত, অন্যায়ের প্রতি দৃপ্ত বিরুদ্ধাচারণ। তাই কাব্য রচনায় তিনি অলংকার খুঁজেননি, খুঁজে বের করেছেন এ বিরাট বিশ্ব, বিশ্বের মানুষ– দারিদ্র, অশিক্ষা ও অত্যাচারে নিষ্পেষিত জনতার মহাস্রোত–যারা রুটি চায়, কাজ চায়, চায় বেঁচে থাকার ন্যুনতম অধিকার। আজকের শিল্পের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সাহিত্য ও শিল্পকে মেহনতি মানুষের দাবি ও অধিকার আদায়ের অমোঘ অস্ত্র মনে করা এবং শিল্পীরা ধনবাদ ও বিলাসের কাছে স্বাধীন শৈল্পিক সত্তা ও হৃদয়বৃত্তিকে বিকিয়ে দিতে রাজি নন। কবি অনুপ সাদিও এর ব্যতিক্রম নন। তাই তার কবিতায় স্থান করে নিয়েছে শ্রমজীবি মানুষের করুণ আর্তনাদ–
“তারা একদা মানুষ ছিল আর এখন শ্রমিক
তারা ভাতের থালাকে মাথার বালিশ বানিয়ে ঘুমায়
তারা রাত দুটোয় মৃদুকন্ঠে স্টেশনে গান গায়
তারা হঠাত রাতে রাস্তার পাশে প্রশ্রাব করে,
আবার গলা মেলায় গানে, হাই তোলে, ঢোক গেলে, মিনিট দশেক ঝিমায়;
(গর্ততত্ত্ব ও সংগ্রাম; উন্মাদনামা)
যুগ-পরিবেশ ও যুগ-মানসকে বাদ দিয়ে কোনো সাহিত্য ও শিল্পকলাকে বিচার করা যায় না; কারণ সাহিত্য ও শিল্পকলা যুগযন্ত্রণারই ফসল। তাছাড়া শিল্পকলার সমালোচনার ধারাও যুগে যুগে পরিবর্তন হচ্ছে। এরিস্টটলের মতে ‘শিল্প হচ্ছে জীবনের অনুকৃতি’ আর ম্যাথু আরনল্ডের মতে ‘সাহিত্য হচ্ছে জীবনের ভাষ্য।’ কলাকৈবল্যবাদীদের সম্বন্ধে আজকের বাস্তববাদী শিল্পীদের ধারণা ‘কেবলই স্বপন করিছ বপন পবনে।’ সমারসেট মম বলেছেন, ‘শুধু সৌন্দর্য সাধন নয় সঠিক উদ্দেশ্য সাধন শিল্পকলার উদ্দেশ্য।’ গোর্কীর মতে ‘মেহনত হতেই শিল্পকলার উৎস’ আর আধুনিক বাস্তববাদী ও মানবতাবাদী শিল্পীরা বলেন নিরন্নক্লিষ্ট মানুষের জন্য যে সাহিত্য ও শিল্পকলা নয় তাকে সাহিত্য ও শিল্পকলা বলে স্বীকার করা যায় না।
বিখ্যাত সমালোচকদের এসব কথা সামনে রেখে কবি অনুপ সাদিকে বিবেচনা করতে হবে। এ বিষয়গুলোকে সামনে না রেখে অনুপ সাদিকে বিচার করলে Art for Art’s Sake-এর জন্য তাকে ফাঁসি কাষ্ঠে না ঝুলালে যাবজ্জীবন কারাদন্ড হলেও দন্ড দেবেন পাঠক। তাই তার কাব্যপাঠে এ বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে যাতে করে কবির প্রতি অবিচার করা না হয়। কবি নজরুলের মত যুগের চাহিদা মেটাতে চেয়েছেন। সমাকালীন মলিন পৃথিবীকে দেখেছেন তিনি আপন হৃদয়ের স্বপ্নজালে– যে পৃথিবী কিছু নষ্ট মানুষের পদচারনায় মুখর থাকবে না। সাম্রাজ্যবাদী ও বুর্জোয়াদের চাপে পৃথিবী হবে না নিষ্পেষিত কঙ্কাল। প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে বসুন্ধরাকে সকলের বাসযোগ্য করতে হবে। তাই কবির অঙ্গিকার: –
“আমার রক্তে শুধু অগ্নিস্রোতের লাভা,
আমাদের রক্তে শুধু লাভার অগ্নিস্রোত;”
(মুক্তি গেরিলা; পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি)
কবি প্রচন্ড আশাবাদী পৃথিবী থেকে অন্যায় অত্যাচার দূর হবে। প্রতিষ্ঠিত হবে গণমানুষের অধিকার। সমগ্র বিশ্বে মুক্তিকামী জনতা নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে মুখর হবে। সমগ্র ইউরোপে শিল্প বিপ্লব হয়েছে এবং সেই পথে হয়েছে শ্রমিক বিপ্লব। রক্ত দিয়ে শ্রমিকেরা প্রতিষ্ঠিত করেছে তাদের ন্যায্য অধিকার। কবির জন্ম স্বাধীন বাংলাদেশে, জন্মেই দেখেছেন তিনি ক্ষুব্ধ স্বদেশভূমি; জন্মই যেখানে আজন্ম পাপ সেখানে তিনি সুন্দরের ধ্যান ও আর্দশকে চোখের সামনে টিকিয়ে রাখতে পারেননি। সুন্দর তাকে বার বার হাতছানি দিয়ে ডাকলেও তিনি দেখেছেন রাজনৈতিক ভন্ডামি, অর্থনৈতিক আগ্রাসন, চারদিকে ক্ষুধাতুর মানুষের হাহাকার। সামরিক শাসকদের নষ্টামিতে বাংলার স্বাধীনতার স্বপ্ন যখন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল, তখনি কবি খুঁজা শুরু করলেন প্রকৃত স্বাধীনতাকে। আর সেই স্বাধীনতাকে যখন পেলেন না তখনই আঘাত করতে চাইলেন প্রচলিত রাষ্ট্রীয় শাসন, সমাজব্যবস্থা। দারিদ্র্য, অশিক্ষা, অত্যাচারে নিষ্পেষিত জনতার দিকে কবির কলম ছুটে চলল– যারা রুটি চায়, কাজ চায়, চায় স্বাধীনতা নামক স্বপ্নকে হাতের মুঠোয় পেতে। এজন্য আবারও অস্ত্র হাতে নিতে হবে। গেরিলা হতে হবে, মিশে যেতে হবে মজদুর জনতার রক্তস্রোতে। ভাবতে হবে এ পৃথিবী ভোগ করার অধিকার সবার । কিছু দুর্বৃত্তের হাতে জিম্মি থাকতে পারে না পুরোজাতির ভাগ্য বিড়ম্বনার ইতিহাস। তাই গেরিলাদের চোখে ভাসে–
“……….মায়ের শুকনো করুণ মুখ
তার কিশোরি জীবনে নগরীর ফুটপাত,
বস্তির খুপরি ঘর, অন্যের ফাই ফরমাশ
বাবার কাশির ওষুধ, হঠাত আকাশ জুড়ে মেঘ,
হাতব্যাগ শূন্য, পলিথিনের মতো উড়ছে ঘৃণা,
প্রিয়তমা, ছেঁড়া জীবনের সূত্র পাওয়া সহজ নয়
রাষ্ট্রের প্রতিকূলে।
(মুক্তি গেরিলা; পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি)
এই প্রতিকূলতা অতিক্রম করে সুন্দর পৃথিবী, সকলের বাসযোগ্য পৃথিবী, মায়াবী পৃথিবী, ভালবাসা আর ভাললাগায় পূর্ণ পৃথিবীইতো কবির কাম্য।
কবি অনুপ সাদির কবিতার আর একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো মাটি ও মানুষের সাথে বাংলার নিসর্গ প্রকৃতির অফুরন্ত সেতুবন্ধন। রাষ্ট্রীয় দুর্বৃত্তায়ন ও অর্থনৈতিক সন্ত্রাসবাদের ফলে যেভাবে বাংলার জনজীবন ও প্রকৃতি ক্ষয়িষ্ণু থেকে ধ্বংসপ্রাপ্ত হচ্ছে তার বর্ণনা সাদি বহু জায়গায় বহুভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। কৃষকের জগতের কেন্দ্র তার চাষের জমি– যেখানে তার শৈশব কৈশোরের স্বপ্ন আর বেঁচে থাকা– এক হয়ে তাদের হৃদয়ের কথা বলে। সেটাই তার শক্তি সেটাই তার আবেগ। জমিদার রবীন্দ্রনাথের কাছেও বিষয়টি এক সময় স্পষ্ট হয়েছিল এভাবে–
“সপ্ত পুরুষ যেথায় মানুষ সে মাটি সোনার বাড়া
দৈন্যের দায়ে বেচিব সে মায়ে এমনি লক্ষ্মীছাড়া।
(দুই বিঘা জমি; চিত্রা)
কিন্তু সাম্রাজ্যবাদ ও বুর্জোয়া শ্রেণির নিষ্ঠুর যাঁতাকলে পিষ্ট হতে হতে ঐ কৃষক সমাজ ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। শহরে এসে কারখানার শ্রমিক হয়, সামান্য পয়সায় শ্রম বিক্রি করে; মেয়েরা হয় ভাসমান পতিতা, কাজের বুয়া, আয়া আর জীবনযাপন করে মানবেতর অবস্থায়। তার উন্মাদনামায় বিষয়টি উল্লেখিত হয়েছে এভাবে–
পরিশ্রম, দৈনন্দিন ঘাম, নাইট ডিউটি, ওভার টাইম ……..
পত্রিকা, টিভি, মাটি কাটা কঠিন কাজ,
সন্তানের জন্য কান্না, চম্পা ফুলের গন্ধ,
শিশুর ওষুধ, মায়ের শাড়ি, ………………
বিড়ির সংগে বন্ধুত্ব, সিগ্রেট প্রত্যাশি,
স্বপ্ন এবং কয়লাখনি,
কবে ঘরবাড়ি সব উধাও হলো নদীভাঙনে
ঘরবাড়ি নিলো সরকার, ক্ষতিপুরণবিহীন,
পুরোনো ঘাট কোথায় হারিয়েছে,
কে আর জল আনতে যায়
রাধারা সব বোতলে বোতলে লবনাক্ত জল খায়;
(শ্রমিকের বেদনাগীত; উন্মাদনামা)
এভাবেই একদিন গ্রাম বাংলার প্রকৃতিতে বেড়ে ওঠা সহজ সরল বাঙালি নিজের অস্তিত্ব ঐতিহ্য ও ফেলে আসা অতীতকে ভুলে হয় শহর নামক যান্ত্রিকতার শিকার। জোর করে নীল চাষ, চিংড়ির ঘের দিয়ে আবাদি জমি গ্রাস, শিল্পায়নের নামে সাধারণ মানুষের পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ, বনায়ন করার নামে বিদেশি রেন্ট্রি ইপিল ইপিল ইউক্যালিপটাস ইত্যাদি গাছ লাগানো; আর দেশি গাছগুলোকে বিলুপ্ত করা– এসবতো বাংলার মানুষের, বাঙালির প্রতিদিনের ভাগ্যবিড়ম্বিত ইতিহাস। কবি সাদি এসবকে তুলে এনেছেন তার কবিতায়।
“এসে গেছে টাকার যুগ বিদেশি ডলারের যুগ
বিদেশি গাছের ব্যাবসা রমরমা………….
হারালো শালিক দোয়েল মাছরাঙা
এলো বিদেশি কুকুর ডগ স্কোয়াড”
(গর্ততত্ত্ব ও সংগ্রাম; উন্মাদনামা)
শ্রমিকের সাধারণ জীবন সম্পর্কে কবির মন্তব্য,
‘ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় অভাবে স্বভাবে তারা বড়ই সরল
আর বেঁচে থাকতে পারলেই ধন্য।’
এই সামান্য চাওয়া পাওয়া নিয়েই যাদের জীবন, যাদের প্রাত্যহিক কার্যকলাপ; তারা কেন জীবনের ন্যুনতম অধিকারটুকু নিয়ে বেঁচে থাকতে পারবে না এটাইতো অনুপ সাদির মূল প্রশ্ন– এর জবাব কে দেবে? এর জন্য কবি দায়ি করেছেন বাংলার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক বেহায়াপনাকে। উপমহাদেশের বাঘা বাঘা রাজনৈতিক দল ও দলের নেতাদের যারা এ উপমহাদেশের ভাগ্য বিড়ম্বিত ইতিহাস সৃষ্টিতে বৃটিশদের সাহায্য সহযোগিতা করেছেন এবং আজও আমেরিকা ইউরোপের বুর্জোয়া সাম্রজ্যবাদিদের স্বার্থ রক্ষায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এভাবেই যখন গফুর আমিনারা শ্রমিক হয় তখনও কিন্তু এরা অকৃপণভাবেই কারখানাকে আপন করে নেয়। শ্রমিকের নিজের বলে কিছু না থাকলেও কারখানাকে সে ভালবাসে কৃষকের জমির প্রতি ভালবাসার মতো করেই। গ্রামকে তারা ফেলে এসেছে পেছনে, এখন কারখানা প্রাঙ্গনই তার গ্রাম।
কী গণতন্ত্র আর কী উৎপাদন প্রক্রিয়া দুইয়ের স্বার্থেই শ্রমিকদের গুরুত্ব অনেক। একটি কারখানা বন্ধ হলে কিংবা একজন শ্রমিকের বেকারত্বে কেবল মানবিক ও অর্থনেতিক ক্ষতিই নয়, তা জাতির শ্রমসম্পদের অপচয়, উৎপাদনের এত বড় সংগঠকদের বাদ দিয়ে গণতন্ত্রও পূর্ণ হতে পারে না। কিন্তু সব সময় কেন এমন হয় যে উৎপাদকের সর্বনাশ ঘটে অনুৎপাদকের সিদ্ধান্তে? কেন সর্বদা গরীবের ভাগ্য অন্যরাই ঠিক করে– এমনভাবে ঠিক করে যেন ঈশ্বর নিজেও ভাগ বসাতে পারে না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, গণতন্ত্রের সংগ্রামে কানসাটে বিদ্যুতের দাবিতে সংগ্রাম, ফুলবাড়ির কয়লা খনি বিরোধি সংগ্রামে যারা প্রাণ দিয়েছিল ওরা আমার আপনার ভাই বন্ধু, অথচ এরাই ভাগ্যবিড়ম্বিত। এদের অবস্থানকে তুলে ধরতে গিয়েই কবি ‘সভ্যতায় বাংলাদেশ, ২০০১’ নামক কবিতায় বাংলাদেশের প্রাত্যহিক জীবনের ছবি অনুপম ভঙ্গিমায় ফুটিয়ে তুলেছেন।
নষ্ট রাজনীতি, শাসক শ্রেণির দেশপ্রেমহীনতা তথা ঔপনিবেশিক আচরণ, আপামর জনতার নির্বিকার আচরণ সর্বস্তরে না হলেও নিম্নশ্রেণির মানুষদের প্রতি নির্মমতা প্রতিদিন প্রতিনিয়ত এদেশের প্রকৃতি, মাটি ও মানুষকে ক্ষত বিক্ষত করছে। এই নিমর্ম ও নিষ্পেষিত জনতার অলংকার ও ভনিতাবিহীন স্পষ্ট বাস্তব চিত্র অংকনে কবিমনে কাউকে খুশি করার কিংবা কাউকে ধোকা দেয়ার প্রবণতা নেই। আছে শুধু একটি সরল কবি আত্মা– যাতে ধরা পড়েছে কেবল ভাগ্যাহত ও ভাগ্য বিড়ম্বিত ঘানি টানা মানুষ, যারা শুধু দিল বিনিময়ে পেল না কিছুই। তাদেরই হাড়ভাঙা শ্রমের বদৌলতে সৌভাগ্যবান দালালচক্র, ধান্দাবাজ রাজনীতিক, আমলা, তথা বুর্জোয়া শ্রেণির মানুষ বিলাসের কোমল কেদারায় পা দোলায় অথচ তাদের ভাগ্যে জোটে না কিছুই। এ নগ্নতার ইতিহাস একদিনের নয়, দীর্ঘ দিনের। বংশ পরম্পরায় অমানবতার ইতিহাস রচনা করে এরা যে অত্যাচার নির্যাতনের ইতিহাস রচনা করেছে তার কিছুটা হলেও সাক্ষী হিসেবে দাঁড়াবে অনুপ সাদির কবিতা।
বাঙালি একটি সংকর জাতি। দীর্ঘদিনের পরাধীনতা, গ্লানি, অপমান সইতে সইতেই তারা হয়েছে সংকর জাতি। এই সংকরায়ন যে সুখকর তা কিন্তু নয়। আমাদের মধ্যবিত্ত সুবিধাভোগী শ্রেণিটি প্রতিবারই রঙ বদলায়, মিশে যায় স্বার্থপরতার মহাস্র্রোতে; ফলে নিজের দেশ, সমাজ, মানুষ, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, ইতিহাস, রাষ্ট্রব্যবস্থা ইত্যাদি সকল বিষয়ই হয়ে যায় তাদের ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার। নিজ জন্মভূমির জরাজীর্ণতা কবিকে বার বার ফিরিয়ে এনেছে জন্মভূমির পাদপীঠে । আর এই রূপকল্পটি এসেছে এভাবে–
‘তের কোটি জরাজীর্ণ পাহাড়ের পাদদেশ জল নেই,
সমুদ্রেও হাওয়া নেই, আছে শুধু প্রতিবেশির ঘাড় মটকে খাওয়া,
কান ধরে উঠ বস ও নাকে খত দিয়ে নিজ ভাইকে
সীমান্তের ওপারে পার করে দেয়া।’
(দু’ঠোঁটে ক্লান্তির বিষন্ন কাজল রেখা; পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি)
এই হলো আমাদের সার্বভৌমত্বের বর্তমান অবস্থা। এখানে একটি কথা মনে রাখতে হবে। অনুপ সাদি কিন্তু স্বদেশ থেকেই বিশ্বের ছবি এঁকেছেন। তৃতীয় বিশ্বের প্রতিটি দেশেরই স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের এমন করুণ চিত্র– যেখানে রাষ্ট্রনায়কদের ভূমিকা বিদেশি প্রভু ও দাতাগোষ্ঠীদের মন যুগিয়ে চলা। জনসাধারণ তাদের কাছে উচ্ছিষ্ট মাত্র।
কবি সাদির স্বপ্ন, আশা আকাঙ্খা এসব হতে মুক্ত একটি স্বদেশ তথা পৃথিবী। তার চোখেমুখে শুধু বিপ্লবের আহবান। সাম্যবাদের ভিত্তিতে সম্পদ বন্টন হবে। একটি শ্রেণি পৃথিবীর সমস্ত সম্পদের ৯০% ভোগ করবে আর ৯০% লোক পড়ে থাকবে রাস্তায়, ফুটপাতের নর্দমায় এবং বংশপরম্পরায় শুধু ঐ সম্পদশালি লোকদেরই দাস হয়ে অমানবেতর জীবনযাপন করবে, তা হতে পারে না এবং হওয়া উচিতও নয়। তাই তার কবিচিত্তে বিপ্লবের সুর বার বার উঁকি দিয়েছে এবং বিপ্লবের মাধ্যমেই তাদের মুক্তি সম্ভব একথাই বার বার ধ্বনিত হয়েছে। তাই প্রচন্ড আশা নিয়ে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন–
“এই দেখো রাত শেষ ভোর হবে নবযুগে জলপূর্ণ নদী
অস্ফুট শব্দ নয় কথা হবে ঠোঁটে ঠোঁট রেখে যদি
জন্ম হয় আমাদের শ্রমে গড়া জ্বলজ্বলে কল্পপাাখিঝাঁক
এমন শপথই হোক এই কথা শেষ কথা থাক।”
(বৃষ্টির ফোঁটায় আসে আমাদের ঠোঁটে ঠোঁটে কবিতাবাগান; ঐ)
এভাবেই কবি তার স্বদেশ স্বজাতি তথা বিশ্ব মজদুরদের সঠিক ঠিকানা ও দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। একাজে একা কেউ এগুলে হবে না দাঁড়াতে হবে ঐক্যবদ্ধ চেতনায়। পুরানো ব্যর্থতার ইতিহাস জয় করতে হলে এ মুহুর্তেই বেরিয়ে আসতে হবে যেমন করে এসেছিলেন মার্কস, এঙ্গেলস, মাও সেতুং, ফিদেল ক্যাস্ত্রোর মত শ্রমজীবি মানুষের নেতারা। ফরাসী বিপ্লব, চৈনিক বিপ্লব, রুশ বিপ্লব সবকিছুকেও ছাড়িয়ে নতুন পৃথিবী সৃষ্টি হবে যেখানে মানুষের জয়পতাকাই শুধু উড়বে পত পত করে।
আর এখন আমি তোমার সামনে বসে
তুমি কথা না বলে শুধু ভাবছো
বিপ্লব ও বিপ্লবির মৃত্যু নেই
জীবনের জয় অনিবার্য
আমরা সেইসব স্বপ্নের কয়েকজন লড়াকু সৈনিক
তোমার সমস্ত এ্যালবাম ঘোষণা করছে
স্থিরচিত্রই সর্বদা মুক্তির কথা বলে
পরিবর্তনের কথা বলে
ছবিরা গান গায় পরস্পর;
স্বপ্ন ও সৌন্দর্যের গান।
(তোমার এ্যালবাম ও একটি কবিতা; বৃষ্টির ফোঁটায় আসে আমাদের ঠোঁটে ঠোঁটে কবিতাবাগান)
পৃথিবী সৃষ্টির পর মানবজাতির ইতিহাস যেমনি গৌরবের তেমনি কলঙ্কেরও। মানবতার অপমান করে যারা সভ্যতাকে সুন্দর করতে চায় তা কোনোদিনও সুন্দর হয় না। কবি ঐ সব বাহ্যিক চাকচিক্য ও সভ্যতার বিলাসিতাকে মেনে নিতে পারেন নি। প্রকৃতি ও মানুষের সহাবস্থানকে তিনি সুন্দর করে সাজাতে চান, চান মানবতার ও মানুষের মাঝে সমতা ও সাম্য। কবি সে জন্য মানুষের ঐক্য চান। উপার্জনের সাথে যারা সরাসরি সম্পৃক্ত তারা হবে অপমান, তা কবি মেনে নিতে নারাজ। নীরবে নিভৃতে যারা অন্যায় সহ্য করে চলেছে তাদেরকে রুখে দাঁড়াতে হবে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজেও নিষ্পেষিত, নিপীড়িত জনতার মাঝে সম্ভাবনার স্বর্ণশিখর খুঁজে পেয়েছিলেন। আর তাই তিনি তাদের ঐকবদ্ধ চেতনায় বিপ্লবের ভাষা দিতে সকলকে আহবান জানান। দরিদ্র মানুষের ভাগ্য নির্মাতা সৃষ্টিকর্তার নাগালের বাইরে । ধনিক শ্রেণির ইচ্ছা অনিচ্ছার উপর যেহেতু তাদের অন্ন বস্ত্র বাসস্থান নির্ভরশীল সেহেতু বিচারের রায় চিরকালই থাকে উপেক্ষিত। তাই চিত্রা কাব্যে এবার ফিরাও মোরে কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ঘোষণা দিয়েছেন–
“নাহি জানে কার দ্বারে দাঁড়াইবে বিচারের আশে
দরিদ্রের ভগবানে বারেক ডাকিয়া দীর্ঘশ্বাসে
মরে সে নীরবে! এই সব মূঢ় ম্লান মূক মুখে
দিতে হবে ভাষা, এইসব শ্রান্ত শুষ্ক ভগ্ন বুকে
ধ্বনিয়া তুলিতে হবে আশা; ডাকিয়া বলিতে হবে
মুহূর্ত তুলিয়া শির একত্র দাঁড়াও দেখি সবে;
যার ভয়ে তুমি ভীত সে অন্যায় ভীরু তোমা চেয়ে,
যখনি জাগিবে তুমি তখনি সে পালাইবে ধেয়ে।”
রবীন্দ্রনাথ কিন্তু তাদের মুখে বিপ্লবের ভাষা দিতে চেয়েছেন। কিন্তু বিপ্লবীদের নেতৃত্ব কে দিবে, কিভাবে দিবে তা বলেননি কিন্তু সাদি সেক্ষেত্রে নিজেই দায়িত্ব নিতে চান, চান বিপ্লবীদের সাথে শরিক হতে, তাই তার বিপ্লবী আহবান,
“আমরা আগামীকাল হেঁটে হেঁটে পার হবো শহরের রক্তবর্ণ বৃজ
আমরা আগামীকাল হানবো আঘাত এই মৃত্যুহীন রাজার প্রাসাদে
আমরা বানাবো এক মুঠো মাটিতে আমাদের স্বপ্নের বিস্মিত পাহাড়
আমরা আনবো দেখো হাতে হাতে, সমতা, অমরত্বের হাত।
আমরা ফিরবো সবাই নিজেদের শহরে, হাতে হাতে থাকবে তোমার ছবি
আমরা সঙ্গে নেবো শ্রমিকের শ্রমপূর্ণ অমর দুইটি কারুশিল্পময় হাত
তুমিও সঙ্গে এসো দেরি আর করবো না হাত ধরো হাত ধরো আমার সমতা।”
(সমতা আর আমি, আমরা দুজনে; বৃষ্টির ফোঁটায় আসে আমাদের ঠোঁটে ঠোঁটে কবিতাবাগান)
আগেই বলেছি নজরুলের মত কবি সাদির কবিতা চারপাশের অনিয়ম দুর্নীতি ও উচ্ছৃঙ্খলতাকে ফুটিয়ে তুলেছে এবং তিনি সবকিছু দেখে ক্ষেপে গেছেন। মানুষের প্রতি মানুষের অবিশ্বাস অপমান, পরের সম্পদ চুরি এবং দেশের সিংহভাগ মানুষের করুণ পরিণতি কবিকে ক্ষেপিয়ে তুলেছে। প্রতিশোধ প্রতিরোধ ও প্রতিবাদের ভাষাকে টুটি চেপে ৯০% মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়ে পুঁজিপতিরা সম্পদের পাহাড় গড়ছে। প্রতি বিন্দু রক্তক্ষয়ী শ্রমের বিনিময়ে যারা সংসার চালায় তাদের সেই রক্ত ঘামে ভাগ বসিয়ে পুঁজিবাদি সমাজ মুনাফা অর্জন করে অথচ রাষ্ট্র নির্বিকার। দেশ ও জাতির হাহাকারে এহেন অপমান কবিকে ক্ষেপিয়ে দিয়েছে; ফলে অশ্লিল ও অর্মাজিত ভাষায় কবি গালি দিয়েছেন। নিম্নশ্রেণির মানুষের মুখের গালিকে তুলে এনেছেন কবিতার ভাষায়।
প্রমথ চৌধুরীর মতে, ভাষা যখন মুখ থেকে কলমে শিল্পরূপ পাবে তখনই তা সাহিত্য যদি একথা স্বীকার করি তবে অবশ্যই কবি সাদির এ অশ্লিলতাকে অস্বীকার করার কোনো জো নেই; কেননা ঐসব বেহায়াপনাকে তার চেয়ে মিষ্টি মধুর ভাষায় শিল্পিত করতে গেলে ন্যাকামিরই আশ্রয় নেয়া হত। তাই কবি সরাসরি গালি দিয়েছেন দেশ জননীকে– যে তার ৯০% সন্তানকে অভুক্ত রেখে ১০% কুলাঙ্গার বুর্জোয়াদের জন্ম দিয়েছে, লালন পালন করেছে, সর্বোপরি আশ্রয় প্রশ্রয় ও নিরাপত্তা দিয়ে রেখেছে। তাই মাতৃভূমির প্রতি কবির ক্ষোভ–
“বাইশ কোটি সন্তানের হে কুত্তি জননী, রেখেছো
আমার বাল রেখেছ ———————-।”
(মনচিত্র থেঁতলে গেছে জাতীয়তাবাদে; মনোজগতে মঙগা উপরিকাঠামোতে লেহেঙগা)
কেন তিনি এ ভাষার আশ্রয় নিয়েছেন তার প্রমাণ দেখুন:
‘হায়রে বাঙালের শ্রম চুরি করে শোষকেরা;
একদা বাঙাল সমান পরাধীন পাল
হায়রে বাঙালদেশ
সবকালে পরাধীন
সমস্ত সম্পদ গেলো সাম্রাজ্যবাদির ঘরে।
(মনচিত্র থেঁতলে গেছে জাতীয়তাবাদে; মনোজগতে মঙ্গা উপরিকাঠামোতে লেহেঙ্গা)
এ হলো কবির দর্শন, আত্মচেতনা ও আত্মপ্রসারের মানববর্ম।
মানুষ ও প্রকৃতি পাশাপাশি অবস্থিত এবং এই সহাবস্থানই কবিকে প্রকৃতি ও মানুষের সাথে এক অন্যরকম সেতুবন্ধনে আবদ্ধ করে দিয়েছে। রোমান্টিকতা কবিকে তাড়িত করেছে ঠিকই কিন্তু সাম্যবাদী চেতনার এ কবিকে তার রোমান্টিকতা হতে দূরে রেখেছে; কারণ চারদিকে ক্ষুধা ও দারিদ্রপীড়িত কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের আর্তনাদ। তাই তিনি তার প্রেমিকার হাত ধরে সেইসব শ্রমিকদের মাঝে চলতে চেয়েছেন। প্রকৃতির মাঝে খুঁজে পেয়েছেন জীবনের প্রতিটি ভালবাসার প্রতিদান।
জীবন মানুষ একবারই ধারণ করে অথচ এ জীবনের প্রতি যারা ভালবাসা হারিয়ে ফেলে তাদের কাছে বিপ্লব, প্রতিবিপ্লব আর অতিবিপ্লব অথবা জীবনসংগ্রাম কোনটাই আনন্দ দিতে পারে না। তাই তিনি জীবনের প্রতিটি ভাঁেজ ভাঁেজ সুন্দরের আহবান দেখতে পেয়েছেন। প্রকৃতি মানুষ এবং জীবনের ধর্ম একই–
‘বুঝবে শুধু জীবনই সুন্দর,
জীবনের প্রতিটি ভাঁজে সুন্দরের আহবান
কী মধুর আজকের সকাল, দুপুর, গৌধূলি, রাত’
(আবেগের ঝর্ণাধারায় একদিন; মনোজগতে মঙ্গা উপরিকাঠামোতে লেহেঙ্গা)
এভাবে প্রতিটি মুর্হুতকে কবি আপন মনে অনুভব করার চেষ্টা করেছেন। প্রকৃতিকেও কাছে টেনেছেন এভাবে–
‘আমরা মেহগনি, কড়ই বাবলা গাছের পাতায় শিশিরের শব্দ শুনেছি,
আমরা ভালবেসেছি শিশির শব্দ, গোলাপী রঙের চাঁদ,’
(বিশ বছর পরের এই দিনে; মনোজগতে মঙ্গা উপরিকাঠামোতে লেহেঙ্গা)
নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদীর রূপও কবির কাছে রোমান্টিকভাবে ধরা দেয়
‘অপরূপ ঢেউ, নীল মেঘ ঢেকে দেয়,
লাল নদী ওড়ে সাদা বকের ডানায়
সবুজ রঙের এই দেশ হয় বর্ণের আল্পনা;
ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তোমাকে দেখাবো আমার কাশফুল
আমরা আলাদা হয়ে যাই নিস্ব রিক্ত মানুষের থেকে,
আমরা ভুলে যাই আমাদের শপথের কথা।
ভুলি না প্রথম আনন্দে আমরা দুজন সমান অংশীদার।’
(আবেগের ঝর্ণাধারায় একদিন; মনোজগতে মঙ্গা উপরিকাঠামোতে লেহেঙ্গা)
এই হলো সাদির প্রকৃতি ও মানুষকে এক করে দেখার নিবিড় প্রয়াস। মানুষের উপর বিশ্বাস হারানো পাপ। তাই তিনি মানুষের পুজোয় আত্মনিবেদিত। মানুষ আছে বলেইতো মানুষের সভ্যতা ও সুন্দরের সাধনা। তাই আপন গতিতে প্রকৃতির মতো নির্মল আনন্দে মানুষ চলবে, একে অন্যকে ভালবাসবে, সহযোগিতা ও সহমর্মিতার হাত প্রসারিত করবে, বিশ্ব প্রকৃতিকে ব্যবহার করবে মানুষের কল্যাণে; এইতো কবির চাওয়া পাওয়ার হিসেব । এ হিসেব গরমিল বলেই কবির পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি (২০০৪), উন্মাদনামা (২০০৬), মনোজগতে মঙ্গা উপরিকাঠামোতে লেহেঙ্গা (২০০৭), বৃষ্টির ফোঁটায় আসে আমাদের ঠোঁটে ঠোঁটে কবিতাবাগান (২০০৭) নামক কাব্যগ্রন্থে বিপ্লবী ভাষার শিল্পিত প্রয়োগ।
পুর্নলিখন, ২৯ মে, ২০০৭, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: অনুপ সাদি সম্পর্কিত এই মূল্যায়নটি এনামূল হক পলাশ সম্পাদিত সাহিত্যের ছোট কাগজ অন্তরাশ্রম-এর অনুপ সাদি সংখ্যা, সংখ্যা ৪, পৃষ্ঠা ৪৯-৫৭, ময়মনসিংহ থেকে ৩০ নভেম্বর ২০২২ তারিখে প্রকাশিত এবং সেখান থেকে ফুলকিবাজ.কমে প্রকাশ করা হলো।
ফুলকিবাজ ডট কমে অতিথি লেখক হিসেবে রাজনৈতিক বিশ্লেষণ, কলাম, অনুবাদ, নিবন্ধ ও প্রবন্ধ লেখায় সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন পূরবী সম্মানিত, ইভান অরক্ষিত, রনো সরকার, দিল আফরোজ, অনাবিলা অনা এবং রণজিৎ মল্লিক। এছাড়াও আরো অনেকের লেখা এখানে প্রকাশ করা হয়।