চীনের দাস সমাজ (ইংরেজি: Slave society in China) হচ্ছে চীনের ইতিহাসে অষ্টাদশ থেকে একাদশ খ্রিস্টপূর্বাব্দ কাল পর্যন্ত বিরাজমান দাস যুগ। দাসপ্রথা চীনে শ্যাং রাজবংশের (১৮ তম-১২ খ্রিস্টপূর্ব শতাব্দী) রাজত্ব অবধি অস্তিত্ব ছিল বলে জানা যায়।
শাং রাজত্বের আমলের আরম্ভকে চীনের আদিম গোষ্ঠীবদ্ধ সমাজের ইতিহাস শেষ হয়েছে ধরা হয়। কারণ, সে সময় থেকেই যুদ্ধবন্দিদের দাস হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়ে যায়। অর্থাৎ খ্রিস্টপূর্ব ১৬০০ অব্দ থেকেই দাসের ব্যবহার শুরু হয় বলা যায়।[১] এই দাসত্ববাদী শাসন শেষ হয়ে আদি সামন্তবাদ শুরু হয় একাদশ শতাব্দীতে। অর্থাৎ চীনে দাস সমাজের স্থিতি ছিল খুব স্বল্প সময়, অষ্টাদশ থেকে একাদশ খ্রিস্টপূর্বাব্দ কাল পর্যন্ত। তবে চীন কখনই ক্রীতদাসনির্ভর সমাজে পরিণত হয়নি তার কারণগুলি অনেকগুলি এবং জটিল, তবে অবশ্যই কম দামে দাসহীন শ্রমের বাহুল্য ছিল অন্যতম প্রধান কারণ। বসন্ত এবং শরত কালের রাজত্বকালে, যে রাজত্ব ৭৭১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে শুরু হয়, চীনে লোহার ব্যবহার শুরু হয়।
চীনে দাস ব্যবস্থা প্রাচীন হান চীন (২০৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দ – ২৫ খ্রিস্টাব্দ) আমলে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অধ্যয়ন করা হয়েছে, যেখানে সম্ভবত জনসংখ্যার ৫ শতাংশ দাসত্বে বন্দি করা হয়েছিল। বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ পর্যন্ত দাসত্ব চীনা সমাজের বৈশিষ্ট্য হিসাবে অব্যাহত ছিল। সেই সময়ের ক্রীতদাসত্ব সেভাবেই তৈরি হয়েছিল বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যেমন অন্যত্রও একইভাবে তৈরি হয়েছিল, যেমন যুদ্ধে বন্দী হওয়া, দাস লুণ্ঠন এবং অসচ্ছল ঋণীদের বিক্রয়। অধিকন্তু, চীনারা দাসত্বের জন্য স্ব-বিক্রয়, নারী ও শিশুদের বিক্রয় (ঋণ মেটাতে বা বিক্রেতারা নারী ও শিশুদের খাওয়াতে অসমর্থ হওয়ায়) এবং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীদের আত্মীয়দের বিক্রি করার অনুশীলন করেছিল।[২]
সবশেষে, অপহরণের মাধ্যমেও মনে হয় যে কোনো কোনো সময় নিয়মিত দাস প্রবাহ অব্যাহত ছিল। স্থানীয় লোকদের দাসত্বের বেচাকেনায় ফড়িয়ারা ছিল গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি; তারা এমন দূরত্ব প্রদান করত যা এমন ছিল যাতে দাসগণ বহিরাগত হিসেবে পরিণত হয়েছিলেন, কারণ ক্রেতারা তাদের জন্ম ইতিহাস জানত না।
চীনা পারিবারিক সীমানা তুলনামূলকভাবে অনুমোদনযোগ্য ছিল, এবং কিছু মালিক তাদের দাসদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন; যখন কোনো প্রাকৃতিক বংশের অস্তিত্ব ছিল না তখন পুরুষ দাসদের উত্তরাধিকারী হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছিল। অন্যান্য দাস-মালিকানাধীন সমাজের ক্ষেত্রেও যেমন ছিল, চীনে দাসরা প্রায়শই বিলাসবহুল ব্যয়ের উপাদান (ইংরেজি: Item) ছিল যারা অর্থনীতির এক প্রবাহ গঠন করেছিল।
চীনের সামগ্রিক অগ্রগতি অন্যান্য সমাজের মতো একই সাধারণ পথে হয়েছে। এবং তাদের তুলনায় কখনো চীনের অগ্রগতির গতি ছিল দ্রুত, কখনো শ্লথ। ইউরোপের চেয়ে কয়েক শতাব্দী আগে চীনের আদিম সাম্যবাদী সমাজ থেকে দাস সমাজ এবং এবং দাস সমাজ থেকে সামন্তবাদী সমাজে চীনের উত্তরণ ঘটেছে এবং তাই এগিয়ে ছিল। তারপর ইউরোপের দ্বিগুণ সময় চীনে সামন্তবাদ থাকায় চীন পিছিয়ে পড়ে।[৩]
তথ্যসূত্র
১. অনুপ সাদি, ২৮ মার্চ ২০২১, “চীনের আদিম গোষ্ঠীবদ্ধ সমাজের ইতিহাস ও সংস্কৃতি এবং দাসব্যবস্থার রাষ্ট্র”, রোদ্দুরে ডট কম, ঢাকা, ইউআরএল: https://fulkibaz.com/history/history-of-the-primitive-clan-society-of-china/
২. Richard Hellie, “Slavery sociology”, এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা, ইউআরএল: https://www.britannica.com/topic/slavery-sociology/Historical-survey
৩. ইজরাইল এপস্টাইন, আফিম যুদ্ধ থেকে মুক্তি, মাহফুজ উল্লাহ অনূদিত, বিদেশী ভাষা প্রকাশনালয়, পেইচিং, প্রথম সংস্করণ ১৯৮৫, পৃষ্ঠা ৩।
রচনাকাল: ২৯ মার্চ ২০২১, এসজিআর।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক ও গবেষক। তাঁর লেখা ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা এগারটি। ২০০৪ সালে কবিতা গ্রন্থ প্রকাশের মাধ্যমে তিনি পাঠকের সামনে আবির্ভূত হন। ‘সমাজতন্ত্র’ ও ‘মার্কসবাদ’ তাঁর দুটি পাঠকপ্রিয় প্রবন্ধ গ্রন্থ। সাহিত্য ও রাজনীতি বিষয়ে চিন্তাশীল গবেষণামূলক লেখা তাঁর আগ্রহের বিষয়।