বাংলার সংস্কৃতি বাংলা ও ভারতের পূর্ব অংশে বাংলাভাষী প্রধান অঞ্চলের সংস্কৃতি

বাংলার সংস্কৃতি (ইংরেজি: Culture of Bengal) বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য, ত্রিপুরা ও আসামের বারাক উপত্যকাসহ ভারতীয় উপমহাদেশের পূর্ব অংশে বঙ্গ অঞ্চলকে ঘিরে রেখেছে, যেখানে বাংলা ভাষা সরকারী এবং প্রাথমিক ভাষা। বাংলার দালিলিক ইতিহাস হচ্ছে ১৪০০ বছরের। বঙ্গ অঞ্চলে বাঙালি জনগণ হচ্ছে প্রাধান্যকারী নৃভাষিক জাতি। এই অঞ্চলটি ঐতিহাসিক মিশ্রণস্থান হিসাবে কাজ করেছে, সর্ব-দেশীয় (ইংরেজি: Pan-Deshio) বা পূর্বদেশীয় অঞ্চলগুলির দেশজ ঐতিহ্যের সাথে উপমহাদেশীয় সাম্রাজ্যের অসাম্প্রদায়িক (ইংরেজি: Cosmopolitan) প্রভাবগুলির মিশ্রণ ঘটেছে এবং ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুত্ববাদের বিরোধিতা করে নিজস্ব সাংস্কৃতিক পথ নির্মাণ করেছে।

বাঙালি সংস্কৃতি বিভিন্ন ধর্ম ও ধর্মবহির্ভূত বিভিন্ন পেশাজীবী লোকের সংস্কৃতি। যেমন হিন্দু, মুসলমান, উচ্চবর্ণের হিন্দু, নিম্নবর্ণের হিন্দু, বৈষ্ণব, শৈব, শাক্ত, বাউল, আশরাফ, আতরাফ, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, প্রকৃতিপূজারি, সংশয়বাদী, অধার্মিকসহ সবার সংস্কৃতি। শহরের, গ্রামের, ধনীর, গরিবের – তাবৎ মানুষের সংস্কৃতি। এবং সে কারণে এ সংস্কৃতির অবয়ব আদৌ শাদামাটা অথবা একমাত্রিক নয়।

বাংলার সংস্কৃতি বৈচিত্র্য

পূর্ব আর পশ্চিমবঙ্গের রান্না অথবা হিন্দু আর মুসলমানের রান্না এক নয়। পূর্ববাংলার লোকসঙ্গীত আর মধ্যবঙ্গের লোকসঙ্গীত এক রকম নয়। উত্তরবঙ্গ আর পশ্চিমবঙ্গের লোকসঙ্গীতও ভিন্ন। কুষ্টিয়ার বাউল গান আর বীরভূমের বাউল গানে ফারাক অনেক। পূর্ব বাংলা এবং পশ্চিমবঙ্গের সাঁওতালদের নাচের ভঙ্গিতে পার্থক্য রয়েছে। এ ধরনের ভেদাভেদ সর্বত্র সূক্ষ্ম নয়, অনেক ক্ষেত্রে তা রীতিমতো মোটা দাগে চিহ্নিত। বস্তুত, এই ভেদ কোথাও কোথাও এতো বেশি যে, তাদের এক সংস্কৃতি বলে সনাক্ত করা কঠিন। 

তার ওপর, এই সংস্কৃতির স্বরূপ অনড় নয়। কোনো এক জায়গায় তা দাঁড়িয়ে নেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গেও তার বিবর্তন ঘটেছে। তা সত্ত্বেও এই বিচিত্র সাংস্কৃতিক উপাদান এবং বৈশিষ্ট্যের মধ্যে কোথাও কোনো অভিন্ন এলাকা আছে কিনা, সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সেই অভিন্ন বৈশিষ্ট্যগুলিই সত্যিকারের বাঙালি সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য।

পণ্ডিতদের মতে, শত বৈচিত্র্য সত্ত্বেও বাংলার সংস্কৃতির কোনো কোনো দিকে অভ্রান্ত মিল লক্ষ্য করা যায়। যেমন, বাঙালির সাহিত্য, সঙ্গীত, খাদ্যাভ্যাস, বাড়িঘরের প্রকরণ, পোশাক-আশাক, এমন কি, চেহারা এবং স্বভাবে লক্ষযোগ্য ঐক্য রয়েছে। বাংলার চালা ঘরের চেহারা হিন্দু মুসলমান – সবার মধ্যেই এক। এমন কি, ভাত এবং মাছ সকল বাঙালির প্রধান খাদ্য। একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বায়নের যুগে শহরের বাঙালিরা হট-ডগ খাচ্ছেন, কৌক খাচ্ছেন, থাই অথবা চীনা রান্না খাচ্ছেন, কিন্তু তাই বলে বাঙালির মাছ ভাতের বৈশিষ্ট্য আদৌ লোপ পায়নি।[১]

বাংলাকে ইসলামী মধ্যযুগীয় দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে ধনী অঞ্চল হিসাবে বিবেচনা করা হত, এবং বঙ্গ সুলতানি আমলের যুগে বিশ্বের একটি প্রধান বাণিজ্যিক দেশ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছিল। মুঘল আমলে বাংলায় শিল্পায়ন-পূর্ব-উন্নতির সূত্রপাত ঘটায়, যখন বাংলার অর্থনীতি বৈশ্বিক জিডিপির মোট ১২% মূল্য ছিল। বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অংশ হিসাবে এটি উপনিবেশিত ব্রিটিশ বাংলার সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার সর্বাধিক উন্নত রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত ছিল।[২]

বাঙালির সাহিত্য

আধুনিক দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাভাষী জনগোষ্ঠীর দ্বারা বাংলা ভাষায় রচিত সাহিত্যকে প্রধানভাবে বাংলা সাহিত্য (ইংরেজি: Bangla Literature) বলা হয়। রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের কোনাে ধারাই সেদিক থেকে অবজ্ঞা করবার মতো নয়। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসও বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাসের একটি অঙ্গ এবং বাঙালীর ইতিহাসেরই একটি শাখা।[৩]

মূল নিবন্ধ: বাংলা সাহিত্য

খাই খাই বিষয়টি দীর্ঘমেয়াদি পরাধীনতা ও দুর্ভিক্ষের ফল

মূলত ভারতবর্ষের বাঙালি গত আড়াইশ বছর অনেক দুর্ভিক্ষের ভেতর দিয়ে গেছে, এটা থেকেই তাদের ভেতরে খাই খাই ব্যাপার এসেছে। এরা মার খাওয়া, আছাড় খাওয়া, এসবকেও খাওয়া বলে, আজব ব্যাপার।

এদের ভেতরে সৌন্দর্যবোধ জন্মায়নি। হয়ত চিড়িয়াখানায় বেড়াতে গেছে, খুব সুন্দর একটা প্রাণী বা পাখি দেখে এরা মুগ্ধ হয় না, বাঙালি ওটাকে খেতে চায়, হয়ত পাশের ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করে, ভাই পাখিটা কি হালাল? এরা যে কোনো কিছু দেখেই খেতে চায়, অনেকটা শিশুদের মতো, সব কিছুই মুখে দিয়ে দেখতে চায়। বাঙালির দীর্ঘমেয়াদি পরাধীনতা এঁদেরকে অজস্র রোগে পীড়িত করেছে, যা আসলে রোগ কিন্তু এরা সংস্কৃতি বলে চালাচ্ছে। খাই খাই ব্যাপার একটা রোগ, এটা কোনো সংস্কৃতি না।

সর্বশেষ দুর্ভিক্ষটি যারা দেখেছে, তারাই যখন মধ্যবিত্ত নিম্নমধ্যবিত্ত হবার সুযোগ পেল, তখন শিশুদেরকে মুখ দিয়ে ঠুসিয়েছে। ফলে কিছু শিশু খেতেই চায় না। একটি বিজ্ঞাপনের কথা মনে থাকতে পারে, চুচুচু বলে মা শিশুর পিছে পিছে ঘুরে, শিশুকে খাওয়ানোর জন্য। আবার যেসব শিশুরা খুব খায়, তাদের আকার গোল হয়ে যায়, মূলত ২০০০ সালের পরে যারা স্কুল গেটে দাঁড়িয়েছেন, তারা দেখবেন শিশুরা কী রকম বেঢপ গোল আকার নিয়ে বেড়ে উঠেছে।

চট্টগ্রাম অঞ্চলে খাবারের অভাব আছে এইটা একেবারেই ভুল, বিয়ের বাড়িতে ওরা গোষ্ঠীসহ খেতে যায়। অনেক টাকা খরচ করে শুধু খাবারের পেছনে। ব্যাপারটা ঘৃণার বটে।[৪]

আলোকচিত্রের ইতিহাস: বাংলার সংস্কৃতির প্রধান অনুষঙ্গ রবীন্দ্রনৃত্যের ঋতুরঙ্গ পর্বের এই আলোকচিত্রটি বিশ্বরূপ গাঙ্গুলি তুলেছেন ৫ নভেম্বর ২০১১ তারিখে সায়েন্স সিটি কলকাতা থেকে।

তথ্যসূত্র:

১. গোলাম মুরশিদ, হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি, অবসর, ঢাকা, নবম মুদ্রণ, ফেব্রুয়ারি ২০১৬, পৃষ্ঠা ১৪-১৫।
২. Minahan, James B. (2012). Ethnic Groups of South Asia and the Pacific: An Encyclopedia. ABC-CLIO. ISBN 9781598846607.
৩. গোপাল হালদার, বাঙলা সাহিত্যের রূপ-রেখা, প্রথম খণ্ড প্রাচীন ও মধ্যযুগ, এ মুখার্জি এন্ড কোং প্রা লি, কলকাতা, দ্বিতীয় সংস্করণ শ্রাবণ ১৩৬৩, পৃষ্ঠা ০৩-০৪।
৪. অনুপ সাদি, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯, “বাংলার সংস্কৃতি বাংলা ও ভারতের পূর্ব অংশে বাংলাভাষী প্রধান অঞ্চলের সংস্কৃতি”, রোদ্দুরে ডট কম, ঢাকা, ইউআরএল: https://www.roddure.com/literature/culture-of-bengal/

Leave a Comment

error: Content is protected !!