চীন থেকে অস্ত্র আমদানি বাংলাদেশকে সাম্রাজ্যবাদের অধীনস্থ করেছে

চীন থেকে অস্ত্র আমদানিতে বাংলাদেশ এখন গুরুত্বপূর্ণ স্থান নিয়েছে। চীন বর্তমানে পৃথিবীতে পঞ্চম অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ। বিশ্বের অস্ত্র সরবরাহে চীনের অংশগ্রহণ ৫.২ শতংশ। চীনা অস্ত্রের বড় ক্রেতা দেশ হচ্ছে পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আলজেরিয়া।[১]

গণতন্ত্র হচ্ছে সামন্তবাদ, প্রাচ্য স্বৈরতন্ত্র ও জমিদারতন্ত্রের উৎখাত; জমির উপর কৃষকের পরিপূর্ণ মালিকানা। সেই গণতন্ত্রের কথা এখন আর কেউ বলে না। কিন্তু গণতন্ত্রের শত্রুরও অভাব নেই। চীনা সাম্রাজ্যবাদসহ সকল সাম্রাজ্যবাদ এখন গণতন্ত্র ও স্বাধীনতাবিরোধী হয়ে গেছে।

পুঁজিবাদ সাম্রাজ্যবাদে রূপান্তরের পর গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে অনবরত যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। এই যুদ্ধ চালাতে গিয়ে তারা ভোটকে গণতন্ত্র নাম দিয়েছে।  সাম্রাজ্যবাদীরা চার পাঁচ বছর অন্তর অন্তর গণহত্যাকারী সরকার নির্বাচিত করছে। চীনা সাম্রাজ্যবাদী সরকার এখন দেশে দেশে যুদ্ধ রপ্তানি শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই তারা মায়ানমার ও শ্রীলংকায় গণহত্যা সংঘটনে জড়িয়ে পড়েছে। তারা মায়ানমারের মুসলিমদের হত্যায় উসকানি দিয়েছে এবং মায়ানমারে গণহত্যাকারী সরকারকে সমর্থন দিয়েছে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে চীন নাক গলাতে শুরু করেছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, অন্য অনেক দেশের, বিশেষভাবে আফ্রিকার ও এশিয়ার পশ্চাৎপদ দেশগুলোর বাজার দখল করার জন্য চীনা সাম্রাজ্যবাদ এখন মরিয়া। “বাংলাদেশেও তারা নির্বিঘ্ন নির্বাচন দেখতে চায়”[২]। নির্বাচন হলেই মনে হয় বাংলাদেশে কৃষকরা জমির মালিকানা পাবে, স্বৈরতন্ত্রের উৎখাত হবে?

চীনা সাম্রাজ্যবাদ ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড কর্মসূচির মাধ্যমে এশিয়া-ইউরোপ-আফ্রিকায় নিজেদের ভাগবাটোয়ারায় অন্য সাম্রাজ্যবাদীদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের শত্রু চীনাসহ সকল সাম্রাজ্যবাদকে মোকাবেলার মাধ্যমেই বাংলাদেশে কেবল গণতন্ত্র আসতে পারে।

স্টকহোম আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা ইন্সটিটিউট বা ‘Stockholm International Peace Research Institute’ (SIPRI) জানাচ্ছে চীন বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ। বাংলাদেশ ২০১৩ থেকে ২০১৭ সালে, এই পাঁচ বছরে তার ৭১ শতাংশ অস্ত্র চীন থেকে আমদানি করে, আর মায়ানমার উক্ত সময়ে চীন থেকে অস্ত্র আমদানি করে ৬৮ শতাংশ।[৩] বাংলাদেশ ২০০৮-১২ সালের ভেতরে চীন থেকেই সর্বোচ্চ অস্ত্র আমদানি করে। শেখ হাসিনার আওয়ামি লিগ চীন, যুক্তরাস্ট্র এবং রাশিয়া তিনটি শক্তির সাথেই ভারসাম্য নীতি অবলম্বন করছে। ২০১১ সালের ২৭ জুন তারিখের ডেইলি স্টারের খবরে জানা যায় সে বছর চীনের কাছ থেকে ৪৪টি ট্যাংক এবং দুটি হেলিকপ্টার কেনার চুক্তি করে শেখ হাসিনা। ২০১১-১২ অর্থবছরের সামরিক বাজেট ছিল ১০,৯১৮ কোটি টাকার। সেসময় আমেরিকার কাছ থেকে আরো এসেছিল ১৬টি যুদ্ধ জাহাজ।[৪]

১ মার্চ ২০১৪ তারিখের টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবর এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়ার বরাতে জানা যায়, বাংলাদেশের সাথে চীন সরকার দুটি মাঝারি পাল্লার মিনি সবমেরিন বিক্রির চুক্তি সম্পূর্ণ করেছে। চীন এবং বাংলাদেশের মাঝে সাবমেরিন বাণিজ্য চুক্তিটি প্রায় ২০৬ মিলিয়ন ডলারের। এই চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর জন্য ২০১৯ সালের মধ্যে দুই ধরনের ডিজেল ইলেকট্রিক সাবমেরিন সরবরাহ করবে চীন।[৫] এর আগে ২০১৪ সালের জানুয়ারির দিকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করতে উন্নতমানের সাবমেরিন নৌ-বহরে সংযুক্ত করা হবে। ২০১৪ সালে চীন, আরেক দক্ষিণ এশিয় দেশ পাকিস্তানের কাছে ছয়টি সাবমেরিন বিক্রি করার চুক্তি সম্পন্ন করেছে। একই সাথে পাকিস্তান চীন থেকে বেশ কিছু অস্ত্র ক্রয় করছে। এদিকে টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে জানানো হয়, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান এমন সময় চিনের সাথে সাবমেরিন ক্রয় চুক্তি করল ঠিক যখন দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ ভারত সাবমেরিন সংকটে ভুগছে। এই চুক্তির ফলেই ১৫০০ কোটি টাকায় দুটি সাবমেরিন আসছে বলে প্রথম আলো ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে খবর প্রকাশ করে।[৬]

২০১৪ সালের কথিত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বাইরের তিন সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সমর্থন পেল যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণে তার দিকে একটু চোখ বুলানো যেতে পারে। সেগুলো হচ্ছে, ১. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে টিকফা চুক্তি ২. চিনের সাথে ৪০০০ কোটি টাকার অস্ত্র ক্রয় চুক্তি, ৩. রাশিয়ার সাথে ৭০০০ কোটি টাকার অস্ত্র ক্রয় চুক্তি এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ দেয়া। এই তিন সাম্রাজ্যবাদের কাছে নিজেকে বিকিয়ে আওয়ামি লিগ ক্ষমতায় টিকে আছে।

আওয়ামী লীগ জেনে গেছে বছরে গড়ে মাত্র ৫০০০ কোটি টাকা সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলোকে দিলেই তাদের সমর্থন পাওয়া যায়। আর বছরে গড়ে ২০০০ কোটি টাকাতেই ভারতের মুখ বন্ধ করা যায়, কারণ ভারত জানে আওয়ামিরা ভারতপন্থী। লিগ-বিএনপি গত চার দশকে তো ভারতের জন্য বাজার উন্মুক্ত করে দিয়েছে।

বাংলাদেশে গত চার দশকে কথিত মুক্তমনারা আওয়ামি লিগের সমস্ত অপকর্মকে জায়েজ করছে আওয়ামি লিগকে প্রগতিশীল হিসেবে জঘন্য রকম প্রচার চালিয়ে। এইসব মুক্তমনা এবং তাঁদের দোসর নাস্তিকরা ইউরোপ-আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্ত আর যুদ্ধ দেখে না, দেশে দেশে গণহত্যাকারী সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে দেখে না, কোটি বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ব্যবসা দেখে না, রক্তরঞ্জিত সাম্রাজ্যবাদের থাবা দেখে না। তাঁদের উদ্দেশ্যে বলা যেতে পারে, যারা সাম্রাজ্যবাদ এবং তার এদেশীয় দালাল দেখে না, তাদের চোখ কখনোই কিছু দেখেনি।

আওয়ামি লিগ ২০০৯-১৩ সময়ে ১৫১০৪ কোটি টাকার অস্ত্র কেনে।[৭] এই সময়ে চীন থেকে বাংলাদেশ তার প্রয়োজনের ৮২ শতাংশ অস্ত্র কেনে[৮] যা প্রায় ১২,০০০ কোটি টাকার বেশি।  ২০১৩ সালে ৮০০০ কোটি টাকার অস্ত্র কেনার চুক্তি করে রাশিয়ার কাছ থেকে[৯] , বাংলাদেশ ১ বিলিয়ন বা ৮০০০ কোটি টাকার অস্ত্র কেনার জন্য ঋণ নেবার চেষ্টা করে চীনের কাছ থেকে[১০] এবং এই ধারাবাহিকতায় ১৫৬৯ কোটি টাকার দুটি লক্কড় ঝক্কড় সাবমেরিন পায় বাংলাদেশ।[১১] এসব ক্রয় থেকেই রাশিয়া ও চীন দুই সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে পাশে পায় বাংলাদেশ এবং ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একটি নির্বাচনের নাটক খাড়া করে।

তথ্যসূত্র:

১. বাণিজ্য ডেস্ক, ১৬ মার্চ, ২০২১, সিপরির প্রতিবেদন, ‘বিশ্বে অস্ত্র রপ্তানির ৩৭ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রের‘ কালের কণ্ঠ, ইউআরএল: https://www.kalerkantho.com/print-edition/industry-business/2021/03/16/1014421,
২. কূটনৈতিক রিপোর্টার, বাংলাদেশে মসৃণ নির্বাচন দেখতে চায় চীন, দৈনিক যুগান্তর, ২১ মার্চ ২০১৮, ইউআরএল: https://www.jugantor.com/national/30124/.
৩. Staff, Scroll. “Arms Trade: China Is the Biggest Arms Supplier to Pakistan, Bangladesh and Myanmar, Says Study.” Scroll.In, 12 Mar. 2018, scroll.in/latest/871743/china-is-the-biggest-arms-supplier-to-pakistan-bangladesh-and-myanmar-says-study.
৪. Tusher , Hasan Jahid. “Army to Get 44 Tanks 2 Helicopters Also on Purchase List.” The Daily Star, 27 June 2011, www.thedailystar.net/news-detail-191737.
৫. অনলাইন ডেস্ক. “বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে সাবমেরিন দেবে চীন.” দৈনিক প্রথম আলো, 1 Mar. 2018, www.prothomalo.com/international/article/158409/.
৬. নিজস্ব প্রতিবেদক, “১৫০০ কোটি টাকায় দুটি সাবমেরিন আসছে”, দৈনিক প্রথম আলো, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৪, http://www.prothomalo.com/bangladesh/article/324946/.
৭. বিশেষ প্রতিনিধি, “১৫০০০ কোটি টাকার অস্ত্র-সরঞ্জাম ক্রয়”, দৈনিক প্রথম আলো, ২৪ আগস্ট ২০১৩, ইউআরএল: http://www.prothomalo.com/home/article/41672/.
৮. Mizan Rahman, http://www.gulf-times.com/, March 19 2014, “China biggest weapons supplier to Bangladesh”, url:  http://www.gulf-times.com/story/385209/China-biggest-weapons-supplier-to-Bangladesh.
৯. Staff Correspondent, The Daily Star, August 31, 2013, “Defence purchase govt’s priority” url; http://www.thedailystar.net/news/defence-purchase-govts-priority.
১০. Monitor, https://defence.pk, December 17, 2014, “Bangladesh Navy to get 1 Billion dollar credit from China”, url: https://defence.pk/pdf/threads/bangladesh-navy-to-get-1-billion-dollar-credit-from-china.350797/.
১১. নিজস্ব প্রতিবেদক, দৈনিক প্রথম আলো, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৪, “১৫০০ কোটি টাকায় দুটি সাবমেরিন আসছে”, ইউআরএল: http://www.prothomalo.com/bangladesh/article/324946.

Leave a Comment

error: Content is protected !!