উপমহাদেশের সামন্তবাদী প্রাক-মুঘল সুলতানী মধ্যযুগের ইতিহাসের উৎস হিসেবে প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান (ইংরেজি: Archaeological sources of Feudal sultanate of Indian history) হচ্ছে ইতিহাস রচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। বিদেশীদের বিবরণ ছাড়াও আমাদের কাছে মধ্যযুগের সামন্তবাদী ভারতের ইতিহাস পুনর্গঠনের জন্য এই উৎসটি প্রচুর ব্যবহৃত।
প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান
সুলতানি আমলের বহু শিলালিপি ও মুদ্রা আবিষ্কৃত হয়েছে। এছাড়াও আছে স্থাপত্য ও ভাস্কর্য। বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে খননকার্যের ফলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আবিষ্কৃত হয়েছে। প্রাচীন ভারতের ইতিহাস পুনর্গঠনের উৎস হিসাবে এগুলো যত গুরুত্বপূর্ণ, সুলতানি আমলের ইতিহাসের উৎস হিসাবে ততটা না হলেও এগুলো যথেষ্ট মূল্যবান। উৎস হিসাবে এগুলোর সাক্ষ্য একারণেই মূল্যবান যে এগুলো কেবলমাত্র সমসাময়িকই নয়, এগুলো উৎকীর্ণ হত সুলতান বা তাঁর উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের তদারকের মাধ্যমে।
উৎকীর্ণ অধিকাংশ শিলালিপি ও মুদ্রার ভাষা আরবী, তবে ফার্সি ভাষায় উৎকীর্ণ শিলালিপি ও মুদ্রাও দেখা যায়। শিলালিপিগুলোতে সাধারণত কোরানের আয়াত, রসুলের উক্তি, সুলতানের নাম, উপাধি, উত্তীর্ণকারী কর্মকর্তার নাম ও পরিচয় এবং তারিখ থাকত। শিলালিপিতে সুলতানের রাজ্য বিজয়, মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা প্রভৃতির মত জনহিতকর প্রতিষ্ঠান স্থাপনের কথাও উল্লেখ আছে যা থেকে সুলতানের রাজনৈতিক ও জনহিতকর কার্যাবলীর পরিচয় পাওয়া যায়।
মুদ্রায় সাধারণত কলেমা, খলিফাদের নাম, সুলতানের নাম ও পরিচয়, তারিখ, এবং টাকশালের নাম উৎকীর্ণ থাকত। কোনো কোনো শিলালিপিতে প্রশাসনিক বিভাগের নামের উল্লেখ আছে। মুদ্রায় মাঝে মাঝে খলিফার নামের উল্লেখ থেকে খিলাফতের গুরুত্ব এবং সুলতানের সঙ্গে খলিফার সম্পর্ক জানা যায়। শিলালিপি ও মুদ্রা থেকে সুলতানদের কালক্রম নির্ধারণ করা যায়। মুদ্রায় উত্তীর্ণ টাকশালের নাম এবং শিলালিপির প্রাপ্তিস্থানের সাহায্যে সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়।
সুলতানি আমলের ইতিহাসের পুনর্গঠনের অন্যান্য উৎস হচ্ছে প্রাপ্ত সমসাময়িক বহু শিলালিপি ও মুদ্রা। প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে পাওয়া প্রাচীন দ্রব্যাদি, সামন্তীয় যুগের মানুষের ব্যবহৃত উপাদান, ভাস্কর্য, মৃৎপাত্র থেকে তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গেছে।
পাথর, তামা, লোহা, ও পোড়ামািটর উপর খাদাই করা লিপি থেকে তৎকালীন রাজৈনিতক, আর্থ সামািজক এবং ধর্মীয় জীবনযাত্রার পিরচয় পাওয়া যায়। সেজন্য লিপিকে ইতিহাসের জীবন্ত দলিল বলে অভিহিত করা হয়। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে সাহিত্যের ভাষার ব্যাপক পরিবর্তন পিরবতন লিপি কিছুটা অপরিবর্তিত থেকেছে। ফলে তথ্য বিকৃত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। এগুলো থেকে সুলতানদের নাম, পরিচয়, কালক্রম, জনহিতকর কার্যাবলী, সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি সম্পর্কে জানা যায়।
তথ্যসূত্র
১. ড. আবদুল মোমিন চৌধুরী, মোকাদ্দেসুর রহমান ও আকসাদুল আলম, উপমহাদেশ ও বাংলার ইতিহাস, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, পুনর্মুদ্রণ ২০১৪, পৃষ্ঠা ২৩-২৪।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক ও গবেষক। তাঁর লেখা ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা এগারটি। ২০০৪ সালে কবিতা গ্রন্থ প্রকাশের মাধ্যমে তিনি পাঠকের সামনে আবির্ভূত হন। ‘সমাজতন্ত্র’ ও ‘মার্কসবাদ’ তাঁর দুটি পাঠকপ্রিয় প্রবন্ধ গ্রন্থ। সাহিত্য ও রাজনীতি বিষয়ে চিন্তাশীল গবেষণামূলক লেখা তাঁর আগ্রহের বিষয়।