“পৃথিবীর সব শিল্পই সামাজিক শিল্প। কোনো শিল্পই শুধু নিজের উপর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। চলচ্চিত্রকে একটা শিল্প বলা হয়। কাজেই, আমি যদি চলচ্চিত্রকে শিল্প হিসেবে গ্রহণ করি, তা হলে আমাদেরকে ধরে নিতেই হবে যে ছবির একটা সামাজিক দায়িত্ব আছে।”[১] চলচ্চিত্র সম্পর্কে ঋত্বিক বলেছিলে এই কথাগুলো।
সেই দায়িত্বের জায়গা থেকেই তিনি কাহিনী নির্বাচন করতেন। এজন্য চলচ্চিত্রকে ব্যবসায়িক করতে পারেন নি। জীবন মৃত্যুর মাঝে দাঁড়িয়ে বাস্তবতাকে দেখাতে চেয়েছেন। শিল্প যে ছেলেখেলা নয় সেই বিষয়টাকে বারবার নিজের উপলব্ধিতে এনে চলচ্চিত্র তৈরি করেছে দর্শকের জন্য। মানুষের আবেগ পুঁজি করে চলচ্চিত্র করেন নি বরং জীবন সংগ্রামকে তুলে ধরেছেন এবং দর্শকে ভাবতে শেখাতে চেয়েছেন।
১৯৬৫ সালে মুক্তি পায় বাংলাভাগ নিয়ে ঋত্বিকের ত্রয়ী চলচ্চিত্র ‘সুবর্ণরেখা’। এরপরে পত্র পত্রিকায় ছবিটি নিয়ে নানা জনের নানা আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়। ঋত্বিক সেইসব সমালোচনা পড়ে বুঝেছিলেন চলচ্চিত্রটি নিয়ে দর্শকদের ধারণা এটি নৈরাশ্যবাদের প্রচার। বিষয়টা ঋত্বিকে ভাবায় ও ব্যথিত করে; এরপরে ‘সুবর্ণরেখা প্রসঙ্গে’ লেখাতে বলেন-
‘যে বিশাল সংকট আস্তে আস্তে একটা দানবের রূপ পরিগ্রহ করেছে, ‘৪৮ সাল থেকে ‘৬২ সালের পরিধির মধ্যে, সেটাকে ধরবার চেষ্টা করেছি। এই সংকটের প্রথম বলি হচ্ছে আমাদের বোধশক্তি। সেই শক্তি ক্রমশ অসাড় হয়ে এসেছে আমাদের মধ্যে, আমি সেটাকেই ঘা দিতে চেয়েছিলাম।’[২]
তিনি উদ্বাস্তু সমস্যাকে অবলম্বন করে এই চলচ্চিত্রটি নির্মান করেন। সুবর্ণরেখা চলচ্চিত্রটি ষাটের দশকে মানুষের মনে খুব দাগ কাটে। কারণ এই বাস্তুহারা সমস্যাটি শুধু এক দেশে থেকে অন্য দেশে যাওয়া আসা নয়; মানুষের ভিটে মাটি থেকে উচ্ছেদ নয়; মানুষের জীবনকে তুচ্ছ করা নয়; এই বাংলা ভাগ পাল্টে দিয়েছে রাজনীতি, অর্থনীতি, জীবন ব্যবস্থা। একটু একটু করে গড়ে ওঠা সম্ভবনাময় সাহিত্য, সংস্কৃতি, রাজনৈতিক ব্যবস্থা থেকে মানুষকে নিক্ষেপ করেছে অন্ধকারে। টুকরো করে দিয়েছে বন্ধনকে।
সুবর্ণরেখা-এর কাহিনী সংক্ষেপ
১৯৪৮ সাল সবেমাত্র দেশ ভাগ হয়েছে। এক বাংলা থেকে অন্য বাংলায় মানুষ যাচ্ছিলো। পূর্ববঙ্গ থেকে দলে দলে উদ্বাস্তু পশ্চিম বঙ্গে চলে যাচ্ছে। কলকাতার নগরীর পাশে যে জমি ছিলো সেইসব দখল করে গড়ে ঔঠে কলোনি। সেরকম একটি কলোনীতে আশ্রয় নিয়েছে দুটি উদ্বাস্তু পরিবার ঈশ্বর চক্রবর্তী ও হরপ্রসাদ। ঈশ্বরের সাথে আছে তার ছোট বোন সীতা। এরমধ্যে কৌশল্যা নামে এক বাগদী বৌ এসেছে তার একমাত্র ছেলে অভিরামকে নিয়ে। সবাই যখন নিজেদের বাস্তু নির্মানে ব্যস্ত সেই সময় একটি জমিদারের ট্রাক এসে নিয়ে গেল বাগদী বৌ-কে। আশ্রয়হীন অভিরাম কাঁদতে থাকে। ঈশ্বর চক্রবর্তী নিজের ছোট বোনের একজন সঙ্গী হিসাবেই আশ্রয় দেয় তাকে।
জীবিকা ও আশ্রয়ের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতে থাকে ইশ্বর। হঠাৎ একদিন পথ চলতে ঈশ্বরের সঙ্গে তার কলেজ পুরোনো সহপাঠী মাড়োয়ারী বন্ধু রামবিলাসের দেখা হয়ে গেল। ঈশ্বরের দুরবস্থার কথা শুনে রাম বিলাস তাঁকে ছাতিমপুরের নিজের ব্যবসায় খাজাঞ্চীর দায়িত্ব অর্পণ করল। ছাতিম পুর ছোট জায়গা; পরিবেশও বেশ শান্ত। ঈশ্বরের বাসার পাশ দিয়ে প্রবাহিত ক্ষীণ নদী সুবর্ণরেখা।
ঈশ্বরের সংসারে তিনটি প্রাণী। সীতা, অভিরাম আর ঈশ্বর নিজে। দিন কাটতে থাকে। সীতা মার্গ সঙ্গীত শিখতে লাগল। অভি হোস্টেলে থেকে পড়তে লাগল। ঈশ্বরের পদোন্নতি হলো। এমনকি রামবিলাসের ব্যবসায়ের অংশীদার হবার সম্ভাবনাও দেখা দিল। ইতিমধ্যে অভি আর সীতা আবিষ্কার করল, তারা প্রেমে পড়েছে। ঈশ্বর এ ব্যাপারে কিছুই জানলেন না। অভি পাশ করল। একদিন ঘটনা চক্রে রামবিলাস জানতে পারল, অভি ঈশ্বরের কুড়িয়ে পাওয়া ভাই। তিনি অভিকে অন্যত্র সরিয়ে ফেলার পরামর্শ দিলেন ঈশ্বরকে। অন্যথায় তার উন্নতির সম্ভাবনা নেই, এমন আভাসও দিলেন। ইশ্বর নিজের অতীতকে ভুলে গিয়ে অভিরামের সাথে রূঢ় আচরন করে। এরফলে অভি ও সীতা পালিয়ে যায়।
কয়েক বৎসর পার হয়ে গেল। অভি ও সীতার একটি ছেলে হলো। দুঃখ-কষ্টে তাদের দিন কাটে। অভি বাস ড্রাইভার হলো। একদিন দুর্ঘটনায় অভি মারা গেল। সীতা নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ল। এদিকে বোনকে হারিয়ে ঈশ্বর পাগল প্রায় হয়ে গেলেন। একদিন ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করতে চাইলেন। হরপ্রসাদ তাঁকে নিয়ে শহরে এলো। দু’জনে বিলাসের স্রোতে ভেসে গেলেন। এক রাত্রে ঈশ্বর দেহ-জীবনীর সন্ধানে গিয়ে সীতাকে আবিষ্কার করলেন। সীতা দাদাকে দেখে আত্মহত্যা করল। সীতার ছেলেকে নিয়ে আবার নতুন জীবনের সন্ধানে ইশ্বর।[৩]
বিভাজন রাজনীতির বলি জনজীবন:
ঋত্বিক ঘটকের কাছে দেশ ভাগের চেয়ে বাংলা ভাগ ছিলো বেদনার। তিনি মেনে নিতে পারেন নি এই বিভাজন। ঋত্বিক বলেছিলেন ‘আমরা এক বিড়ম্বিত কালে জন্মেছি।’ এটা বলার যথেষ্ট কারণ ছিলো, বাংলায় বাল্যকাল বা কিশোরকাল ঋত্বিক যে সময়ে কাটেছিলেন সেসময়ে দেখেছি বাংলার পরিপূর্ণ এক রূপ। রবীন্দ্রনাথ প্রতিভার সিঁড়ি বেয়ে সাহিত্যকীর্তির তুঙ্গে অবস্থান করছেন, একদল কল্লোলগোষ্ঠীর প্রচেষ্ঠায় বাংলা সাহিত্যকর্মে নব বিকশিত ভুমি। ঠিক সেই সময়ে শুরু হলো যুদ্ধ, মন্বন্তর, রাজনীতির রেষারেষি। আমার ছবি লেখাতে ঋত্বিক বলেন-
‘মুসলিম লিগ আর কংগ্রেসরা দেশের সর্বনাশ ঘটিয়ে দেশটাকে টুকরো করে দিয়ে আদায় করলো ভগ্ন স্বাধীনতা। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বন্যা ছুটলো চারদিকে। গঙ্গা পদ্মার জল ভাইয়ের রক্তে লাল হয়ে গেল। এ আমাদের নিজের চোখে দেখা অভিজ্ঞতা। ……… এ কোন বাংলা, যেখানে দারিদ্র্য আর নীতিহীনতা আমাদের নিত্যসঙ্গী, যেখানে কালোবাজারি আর অসৎ রাজনীতিকের রাজত্ব, যেখানে বিভীষিকা আর দুঃখ মানুষের নিয়তি!’
একটি সম্ভবনাময় জনগোষ্ঠীকে চোখের সামনে মরতে দেখেছেন তিনি। তাই ঋত্বিকের যে কয়েকটি ছবি করেছেন, তাতে এই বিষয় থেকে মুক্ত করতে পারিনি। তিনি বলতেন ‘সেই বিভক্ত বাংলার জরাজীর্ণ চেহারাটাকে লোকচক্ষে উপস্থিত করা, বাঙালিকে নিজেদের অস্তিত্ব, নিজেদের অতীত ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সচেতন করে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা।’ শিল্পী হিসেবে নিজেকে সৎ রাখার চেষ্টা করেছিলেন ও যতটা সম্ভব সত্য ও বাস্তবকে তুলে আনার চেষ্টা করতেন।[৪]
সুবর্ণরেখা দেশভাগ ও অর্থনীতির পালাবদল:
দেশ ভাগের ফলে দুই বাংলায় অর্থনীতির বিশাল পরিবর্তন ঘটে। একসময়ের গড়ে ওঠা অর্থনীতি নগরী কলকাতা; সেখানে সারা ভারত থেকে প্রভাবশালীরা এসে ব্যবসা শুরু করে। উদবাস্তুদের শ্রমকে সস্তায় খাটিয়ে মুনাফা করে। এর সুদূর প্রভাব যে কি ভয়ংকর সেটা ঋত্বিক তুলে ধরেছেন। ইশ্বর একে উদ্বাস্তু ছিলো, নিজের ভবিষৎ-এর কথা চিন্তা করতেন না; নিজের ছোট বোনের চিন্তায় একটি মাথা গজার ঠাঁয় চেয়েছিলেন। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তাঁর মাড়োয়ারী বন্ধু রামবিলাস নিজের কারখানার দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিন্ত হন। ভাঙ্গা বাংলা যখন অর্থনীতির সংকটে সেই সময় অন্য প্রদেশের ব্যবসায়ীরা নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে থাকে।
ইশ্বর অর্থ ব্যয় করে অভিরামকে হোস্টেলে রেখে লেখাপড়া করান। কিন্তু কলকাতায় তাঁর ভবিষৎ অনিশ্চিত। এই রকম নিদারুণ সত্যের মুখোমুখি পড়তে হয় অভিরামকে। বাংলা ভাগের ১৮ বছর পড়ে ‘সুবর্ণরেখা’ মুক্তি পেয়েছে; সেখানে কলকাতার অর্থনৈতিক সমস্যার যে চিত্র ঋত্বিক তুলে ধরেছে, সেটা শুধু সেই সময়কে ইঙ্গিত করে না। বর্তমানকেও ফুটিয়ে তুলে। কলেজ পাশ করা একজন ছেলের চাকরি হয় না, গাড়ি চালক হিসাবে অনিশ্চিত জীবন সংগ্রামের ব্যর্থ হয়ে মৃত্যুর দিকে পতিত হয়।
ঋত্বিক চাইলেই শিক্ষিত অভিরামকে কোন কারখানায় চাকরি দিয়ে একটি মধ্যবিত্ত জীবনের দিকে নিয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু দেশভাগের পড়ে কলকাতায় বাঙালি মালিকের কারখানা কোথায়? বাঙালি শিল্পপতি পাওয়া তো মুসকিল; শিক্ষিত হলেই তখন যেতে হবে দিল্লি, বোম্বে। এজন্য জীবনের বাস্তবতাকে দেখাতে গিয়েই অভির করুণ মৃত্যু দেখিয়েছেন চলচ্চিত্রে।[৫]
মেরুদন্ডহীন পঙ্গু মধ্যবিত্তশ্রেণির উদ্ভব:
শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি সমৃদ্ধ একটি জনগোষ্ঠিকে বিভক্ত করে ছিলো সাম্প্রদায়িকতা। স্কুল-কলেজসহ যুবসমাজের মধ্যে জাতীয় আন্দোলনের পূর্ণ প্রসারী ছিলো। রূপকথা, পাঁচালী আর পূজা পার্বণের গ্রামবাংলা নবজীবনের আশায় থৈ থৈ করতো। এই সবকে চোখের নিমেষেই ধূলিসাৎ করে দিয়েছে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি। হাজার হাজার মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে পারাপার হয়েছে দুই বাংলায়। এরফলে কলকাতা কেন্দ্রিক প্রধান অর্থ ব্যবস্থার পতন হয়েছে। বিপুল পরিমানে উদ্বাস্তু তৈরি হয়েছে সস্তা শ্রমিক। সামান্য পারিশ্রমিকেই যাদের দিয়ে নানা অনৈতিক কাজ করা যেতো। এরমধ্যে অনেকেই আছে নিজের শ্রম, ব্যক্তিত্ব বিসর্জন দিয়ে ঠিকে থাকার লড়ায় করে। এক মেরুদন্ডহীন মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রকাশ ঘটতে থাকে। যারা সবসময় নিজের অতীত ঐতিহ্য ভুলে দাসত্বকে মেনে নেয়।
ঋত্বিক জীবনসত্যকে রেখেঢেকে প্রকাশ করেন নি; নিজে যেটা বুঝেছেন সেটা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। চলচ্চিত্র নির্মানে ছিলেন সৎ। সত্য মত প্রকাশের ক্ষেত্রে কোনো আপোষ করতেন না। তাই চলচ্চিত্রে চড়ায় উত্তরায় থাকলেও তিনি ছিলেন আশাবাদী। এজন্য শিশুর চোখের সামনে সোনালি শস্য দোলা ধান খেত তুলে ধরেছেন। অগামী প্রজন্মকে উজ্জীবিত করার চেষ্টা ছিলো তাঁর চলচ্চিত্রে শেষ অবধি।
তথ্যসূত্র:
১. ঋত্বিক কুমার ঘটক, চলচ্চিত্র মানুষ এবং আরো কিছু, “সমাজে চলচ্চিত্রের স্থান” দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, পুনর্মুদ্রণ নভেম্বর ২০১৫, পৃষ্ঠা, ১৭৭।
২. ঋত্বিক কুমার ঘটক, চলচ্চিত্র মানুষ এবং আরো কিছু, “সুবর্ণরেখা প্রসঙ্গে” দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, পুনর্মুদ্রণ নভেম্বর ২০১৫, পৃষ্ঠা, ১৫২।
৩. অমিত কুমার ভট্টাচার্য, সাজেদুল আউয়াল সম্পাদিত, ঋত্বিকমঙ্গল, “সুবর্ণরেখার ঘটক ও তৎপ্রসঙ্গ” বাংলা একাডেমী, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ জুন ২০০১, পৃষ্ঠা, ২২৩।
৪. ঋত্বিক কুমার ঘটক, চলচ্চিত্র মানুষ এবং আরো কিছু, “আমার ছবি” দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, পুনর্মুদ্রণ নভেম্বর ২০১৫, পৃষ্ঠা, ১৫৫।
৫. দোলন প্রভা,, ১৭ জুলাই, ২০২০, “অযান্ত্রিক চলচ্চিত্র মানুষ ও যন্ত্রের মধ্যকার দ্বান্দ্বিক সম্পর্কের প্রকাশ”, রোদ্দুরে ডট কম, ঢাকা, ইউআরএলঃ https://www.roddure.com/art/subarnarekha-film/
দোলন প্রভা বাংলাদেশের একজন কবি, লেখক, প্রাবন্ধিক, সম্পাদক ও উইকিপিডিয়ান। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। তার জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯ তারিখে বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার রেলওয়ে নিউ কলোনিতে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বাংলাদেশের আনন্দমোহন কলেজ থেকে এমএ সম্পন্ন করেছেন। তিনি ফুলকিবাজ এবং রোদ্দুরে ডটকমের সম্পাদক।
দারুণ এনালাইসিস!