আতিথ্য বা আতিথেয়তা বা আপ্যায়ন প্রসঙ্গে

আতিথ্য বা আতিথেয়তা (ইংরেজি: Hospitality) হচ্ছে একজন অতিথি এবং একজন নিমন্ত্রণকর্তার মধ্যে সম্পর্ক, যেখানে নিমন্ত্রণকর্তা অতিথি, দর্শনার্থী বা অপরিচিতদের অভ্যর্থনা করেন এবং বিনোদন বা কিছু পরিমাণ শুভেচ্ছাসহ অতিথিকে গ্রহণ করেন। শেভালিয়ার দে জাকোর্ট লুই এনসাইক্লোপিডিয়াতে আতিথেয়তাকে বর্ণনা করেছেন একজন মহান ব্যক্তির গুণ হিসাবে যা মানবতার বন্ধনের মাধ্যমে সমগ্র মহাবিশ্বের যত্ন নেয়। আতিথেয়তা হল যেভাবে লোকেরা অন্যদের সাথে আচরণ করে, যেমন হোটেলে অতিথিদের স্বাগত জানানো এবং গ্রহণ করার পরিষেবা। আতিথেয়তা একটি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি বা হ্রাস করার জন্য একটি মৌলিক ভূমিকা পালন করে।

আতিথ্য বা আতিথেয়তা নীতিশাস্ত্র হচ্ছে একটি শৃঙ্খলা যা আতিথেয়তার এই ব্যবহার অধ্যয়ন করে। ভারত ও নেপালে আতিথেয়তা অতিথি দেবো ভব নীতির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে, যার অর্থ “অতিথি ঈশ্বর”। এই নীতিটি বেশ কয়েকটি গল্পে দেখানো হয়েছে যেখানে একজন অতিথিকে একজন দেবতা হিসাবে প্রকাশ করা হয় যিনি আতিথেয়তা প্রদানকারীকে পুরস্কৃত করেন। এর থেকে ভারতীয় বা নেপালের গৃহে এবং সমস্ত সামাজিক পরিস্থিতিতে অতিথিদের প্রতি সদয় আচরণের অভ্যাস গড়ে ওঠে। তিরুক্কুরাল, নৈতিকতা এবং নৈতিকতার উপর একটি প্রাচীন ভারতীয় শাস্ত্রে, আতিথেয়তার নৈতিকতা ব্যাখ্যা করে এর শ্লোক ৮১ থেকে ৯০ পর্যন্ত, এর উপর একটি পৃথক অধ্যায় উৎসর্গ করে (৯ অধ্যায়) লেখা হয়েছে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাংবাদিকদের পছন্দ করতেন, তাঁদেরকে খাওয়াতেন, বৈঠকখনায় বসতে দিতেন, তাঁদের সাথে আলোচনা করতেন। সাংবাদিকতা পেশাটা অষ্টাদশ শতকে পণ্য বিক্রয়ের সাথে জড়িত ছিল। ‘ক্যালকাটা গেজেট’ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিজ্ঞাপন ছাপতো, আর ‘বেঙ্গল গেজেট’ মাত্র দুই বছরের জীবনে “মূলত বিজ্ঞাপন” ছাপিয়েছে। অন্যদিকে বই ছিলো তখন জ্ঞানের সাথে। পত্রিকায় খবর যুক্ত হয় উনিশ শতকের দিকে। বিশ শতকে সংবাদপত্র হয়ে যায় খবরের প্রধান উৎস। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে প্রচলিত মূলধারার সংবাদপত্র হয়েছে জনগণের কুসংস্কার আর পশ্চাৎপদতাকে নিয়ে ব্যবসা করার প্রধান উপাদান। বর্তমান সামাজিক প্রচারমাধ্যমগুলো হয়েছে জনগণের ভুল চিন্তাকে প্রচার করার আর টিকিয়ে রাখার আসল উপকরণ। এসব প্রচারমাধ্যম দেখাচ্ছে যে তাঁদের ভুল আর পশ্চাৎপদ চিন্তাসমূহ খুবই সংগত। উনিশ শতক এবং তার আগে সংবাদপত্র জ্ঞান বিজ্ঞানের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলো, কারণ তখন বুর্জোয়ারা সামন্তবাদের বিরুদ্ধে লড়ছিল। রবীন্দ্রনাথ যে সাংবাদিক ও সম্পাদকদের গুরুত্ব দিতেন তার পেছনে এরকম একটি প্রেক্ষাপট ছিলো।

কয়েকটি গান ও নাচ দেখুন

সংবাদপত্র মালিক শ্রেণির সাথে যুক্ত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত উদ্যোগে দাঁড়িয়েছে ছোট কাগজ আর কমিউনিস্ট পার্টিসমূহের নিজস্ব পত্রিকা। অর্থাৎ সংবাদপত্র শ্রমিক ও মালিক_ দুটি শ্রেণির হাতিয়ার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বিশ শতকে।

সাংবাদিকদের নিয়মিত আপ্যায়ন বা আতিথ্য করতে হয়, সেটি খাম দিয়ে হোক বা মজলিসি বৈঠকখানায় চা সিঙ্গাড়া দিয়ে হোক। এই আতিথেয়তা ঘটনাটি ক্ষুদে মালিকানা এবং বুর্জোয়া মালিকানা বিকাশের সাথে জড়িত। কিন্তু যখন মালিক এবং ক্ষুদে মালিকেরা শ্রমিকদের মজুরির বিনিময়ে কাজ করান তখন তো তারা আলাদাভাবে শ্রমিকদের বা কৃষকদের ড্রয়িংরুমে আপ্যায়ন করেন না। শ্রমিকদেরকে উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা ড্রয়িংরুমে বসিয়ে চা খাওয়ান না, তাঁদের সাথে পিণ্ডি চটকান না, রাজা উজির মারেন না। কেননা শ্রমিকরা এখনো মালিকানা ছুঁড়ে ফেলার মহত্তম চেষ্টায় রাষ্ট্রের মালিকানা কেড়ে নিতে পারেননি। আপ্যায়ন সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গিটি নিহিত আছে শ্রমিক শ্রেণির দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের সাথে জড়িয়ে বা তিনি কোন শ্রেণির মানুষ তার সাথে জড়িয়ে। কেউ যখন আতিথ্য বা আপ্যায়নে লালায়িত থাকেন তখন তার ভেতরের ক্ষুদে মালিকানাটি চাগাড় দিয়ে উঠে।

আরো পড়ুন

Leave a Comment

error: Content is protected !!