শ্রেণিহীন সমাজ হচ্ছে এমন সমাজ যেখানে কেউ সামাজিক শ্রেণিতে থাকে না

শ্রেণিহীন সমাজ বা শ্রেণীবিহীন সমাজ (ইংরেজি: Classless society) শব্দটি এমন একটি সমাজকে বোঝায় যেখানে কোনও সামাজিক শ্রেণিতে কেউ জন্মগ্রহণ করে না। এই ধরনের সমাজে শ্রেণির মর্যাদার উত্তরাধিকার হিসাবে অনুপস্থিত থাকে।

শ্রেণিহীন সমাজতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণ করবার লক্ষ্যেই অক্টোবর বিপ্লব সংঘটিত হয়। ১৯১৭ সালের অক্টোবর মাসে সংঘটিত রুশ বিপ্লব মানব জাতির ইতিহাসে এক নয়া অধ্যায়ের সূচনা করে। এই বিপ্লব তার লক্ষ্য হিসেবে সমাজতন্ত্র গড়ে তোলাই নির্দিষ্ট করে। মার্কস ও এঙ্গেলস সমাজতান্ত্রিক সমাজের বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন যে, সমাজতন্ত্র শুরু হবে ‘মানুষের জীবনধারণের সামগ্রীর চাহিদা মিটে যাওয়ার পর, পণ্য দ্রব্যের প্রাচুর্য সৃষ্টি হবার পর।[১] পশ্চাৎপদ পুঁজিবাদী রাষ্ট্র জারতান্ত্রিক রাশিয়ায় এরকম একটি মহান লক্ষ্যকে গ্রহণ করেছিল সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টি।  

সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিনির্মাণের ফলে মানুষ কর্তৃক মানুষের শোষণের অবসান ঘটানো হয়। ১৯৩৩ সালে যে দ্বিতীয় পঞ্চ-বার্ষিক পরিকল্পনার আমলে সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রবেশ করেছে, তার করণীয় হলো শ্রেণিহীন, সমাজতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তোলা। ১৯৩৩ সালের ফেব্রুয়ারীতে ‘যৌথ-খামার শক ব্রিগেড’ শ্রমিকদের কংগ্রেসে প্রদত্ত তার ভাষণে কমরেড স্তালিন বলেন:

“জাতিসমূহের ইতিহাসে বহুসংখ্যক বিপ্লবের পরিচয় পাওয়া যায়। কিন্তু অক্টোবর বিপ্লব থেকে এসব বিপ্লবের পার্থক্য এখানেই যে সেগুলো ছিল একপেশে বিপ্লব। শ্রমজীবীদের ওপর শোষণের এক রূপ পথ তৈরি করে দেয় শোষণের আরেক রূপের জন্য, কিন্তু শোষণ নিজে থেকে বহালই থাকে। নির্দিষ্ট শোষক ও নিপীড়কেরা পথ তৈরি করে দেয় আরেক শোষক ও নিপীড়কদের জন্যে, কিন্তু শোষণ আর নিপীড়ন, নিজে থেকে বহালই থাকে। একমাত্র অক্টোবর বিপ্লবই তার লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করে – সকল শোষণের অবসান এবং সকল শোষক ও নিপীড়কদের বিলুপ্তি।” [২]

শ্রেণিহীন, সমাজতান্ত্রিক সমাজের জন্যে সংগ্রামের পূর্ণ তাৎপর্য গভীরভাবে উপলব্ধির উদ্দেশ্যে, শ্রেণি-সমাজের মর্মবস্তু সম্পর্কে অবহিত হওয়া আবশ্যক। পুঁজিবাদী ব্যবস্থাধীনে কোন কোন শ্রেণি দ্বারা সমাজ গঠিত তা স্মরণ থাকা দরকার। শ্রেণি কি তা অবশ্যই মনে রাখতে হবে এবং শ্রেণি সব সময় বিরাজমান ছিল কি না সেই প্রশ্নেও পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে। বুঝতে হবে ঠিক কিভাবে পুঁজিবাদী সমাজ অন্যান্য সকল রূপের শ্রেণি-সমাজ থেকে ভিন্ন। পরিশেষে, পুঁজিবাদী দাসত্ব ছিন্ন করার জন্যে শ্রমিক শ্রেণির সংগ্রাম কোন গতিপথ ধরে অগ্রসর হবে এবং পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিকাশ ও অবক্ষয়ের নিয়মাবলী কি কি – এসব প্রশ্ন সম্পর্কে আয়ত্ত করতে হবে পূর্ণাঙ্গ উপলব্ধি।[৩]

তথ্যসূত্র

১. উৎপল দত্ত, প্রতিবিপ্লব সোভিয়েত ইউনিয়ন অবলুপ্তির কাহিনী, এমসি সরকার এন্ড সন্স, কলকাতা, দ্বিতীয় সংস্করণ, ভাদ্র ১৪০০, পৃষ্ঠা ৬।
২. জোসেফ স্তালিন, “যৌথ-খামার শক ব্রিগেড শ্রমিকদের প্রথম নিখিল-ইউনিয়ন কংগ্রেসে প্রদত্ত ভাষণ”, পৃ. ৮, মস্কো, ১৯৩৩।
৩. এ লিয়নতিয়েভ, মার্কসীয় রাজনৈতিক অর্থশাস্ত্র, সেরাজুল আনোয়ার অনূদিত, গণপ্রকাশন, ঢাকা, দ্বিতীয় সংস্করণ ফেব্রুয়ারি ২০০৫, পৃষ্ঠা ১৮।

Leave a Comment

error: Content is protected !!