উমা সেন ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী নারী বিপ্লবী

উমা সেন ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিযুগের নারী বিপ্লবী। কিশোরী বয়স থেকে পরিবারের মাঝে থেকেই রাজনৈতিক বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।

পরিবার ও শিক্ষা

উমা সেন (দাশগুপ্ত) ১৯১৬ সালের ১৮ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেছিলেন মেদিনীপুর জেলায়। তার পিতা সত্যেন্দ্রনাথ সেন ও মাতা বিনয়লতা সেন। তার দাদা ছিলেন বিপ্লবী অমরেন্দ্রনাথ সেন। বাবা সরকারী চাকরি করতেন। ১৯৪৪ সালে উমা সেন এম.এ. পাস করেন।

রাজনৈতিক প্রভাব

তার উপর দাদার বিপ্লবী কাজগুলো প্রভাব ফেলেছিলো। ১৯২৭-২৮ সালে মেদিনীপুরে এলেন তরুণ বিপ্লবী দীনেশ গুপ্ত। তিনি ‘বেণু’ পত্রিকার মাধ্যমে আনলেন একটা নতুন তরঙ্গ। উমা সেনের কিশোর মনের উপর কাগজখানির লেখাগুলি গভীর রেখাপাত করে। এছাড়া বিপ্লবী সত্যভূষণ গুপ্ত, হেমেন গুপ্ত, শান্তিগোপাল সেন, জ্যোতিষ গুহ প্রভৃতি বিপ্লবীদের আদর্শে তিনি অনুপ্রাণিত হয়েছেন।

রাজনৈতিক কর্মকান্ড

১৯৩৩ সালে তিনি বিপ্লবীদলে যোগদান করেন। সেই বছরই মেদিনীপুরের ম্যাজিস্ট্রেট বার্জকে হত্যা করা হয়। এই ঘটনার সঙ্গে উমা সেনের যোগাযোগের প্রত্যক্ষ প্রমাণ না থাকলেও সন্দেহক্রমে ইংরেজ সরকার তাঁর পিতা সত্যেন্দ্রনাথের ২৩ বছরের সরকারি চাকুরি এক কলমের খোঁচায় শেষ করে দেয়। ছেলেমেয়ের জন্য পিতার সহ্য করতে হয় ব্রিটিশ গভর্নমেন্টের অত্যাচার। দুঃখে তিনি ভেঙে পড়েন নি। বরং সন্তানদের লিখলেন, এই ভাগ্যবিপর্যয়ের জন্য দুঃখ না করতে। উমা সেনের ভাই অমরেন্দ্রনাথ প্রথমে হন পলাতক, কিছুদিন পরে রাজবন্দী।

এই দুর্যোগের দিনে ১৭ বছরের উমা এগিয়ে আসেন পরিবারকে আর্থিক বিপর্যয় থেকে বাঁচিয়ে রাখতে। দেশসেবার অপরাধে সেদিন আত্মীয়-স্বজন সকলে তাদের পরিত্যাগ করেছিল। ১৯৩৪ সালে তিনি পলাতক বিপ্লবী উজ্জ্বলা মজুমদারকে আশ্রয় দিয়ে রাখলেন কয়েকদিন। এই আশ্রয়দানের ফলে তার মা, বাবা, এমন-কি বৃদ্ধা দিদিমাকেও কারাবরণ করতে হয়েছিল। কিন্তু অবিচলিত মৌনতা দিয়ে তারা আত্মরক্ষা করেছেন।

পার্টির খবরের আদান-প্রদান, অর্থ সংগ্রহ করা ইত্যাদি কিছু কিছু কাজের দায়িত্ব ছিল উমা সেনের উপর। সর্বোপরি তিনি তাঁর দাদার স্থান হাসিমুখে পূর্ণ করেছিলেন। পিতামাতার সমস্ত ভার বহন করে। ১৯৪৬ সালে বন্ধু ও নেতৃবর্গ জেল থেকে বেরিয়ে আসার পর তাদের সঙ্গে তিনি ‘ফরওয়ার্ড ব্লক’-এ যোগদান করেন। নোয়াখালির দাঙ্গার পর, দাঙ্গাবিধ্বস্তদের মধ্যে গিয়ে তিনি লীলা রায়ের নেতৃত্বে সেখানে কিছুদিন কাজ করেন। বিনয়েন্দ্রনাথ দাশগুপ্তের সঙ্গে তার বিবাহ হয়।

তথ্যসূত্র:

১. কমলা দাশগুপ্ত (জানুয়ারি ২০১৫)। স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলার নারী, অগ্নিযুগ গ্রন্থমালা ৯। কলকাতা: র‍্যাডিক্যাল ইম্প্রেশন। পৃষ্ঠা ২৩০-২৩১। আইএসবিএন 978-81-85459-82-0

Leave a Comment

error: Content is protected !!